২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

অকৃষি লিজকৃত ভূমির নামজারি ও খাজনা নেয়ার দাবি

অকৃষি লিজকৃত ভূমির নামজারি ও খাজনা নেয়ার দাবি - ছবি : নয়া দিগন্ত

দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্তীয় অকৃষি খাসমহল ভূমির হস্তান্তর প্রক্রিয়া দ্রুততর ও সহজ করতে ২০০৫ ও ২০১১ সালের পরিপত্র বাতিল করে ১৯৮৫ সালের প্রজ্ঞাপন বহালের মাধ্যমে নামজারি ও খাজনা নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছে পুরানা পল্টন ও সেগুনবাগিচা খাসমহল ভূমির ভুক্তভোগী মালিক কমিটি।

মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।

ভুক্তভোগীরা বলেন, ‘১৯২৪ সালে পল্টন ও সেগুনবাগিচাসহ ঢাকাস্থ আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় বসতি গড়ে তোলার জন্য অকৃষি পতিত জমিগুলো দীর্ঘমেয়াদী লিজ বরাদ্দ দেন তৎকালীন সরকার। তারপর ১৯৫৪ সালে ভূমি মালিকগণ প্রথমবার তা নবায়ন করেন। পরে ১৯৮৫ সালে একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জানানো হয়, আগের খাসমহলের চিরন্তন নবায়নযোগ্য দীর্ঘমেয়াদী লিজ দেয়া অকৃষি খাস জমিগুলো স্থায়ী বন্দোবস্ত বলে বিবেচিত হবে এবং ভবিষ্যতে তা আর নবায়নের প্রয়োজন হবে না।’

তারা বলেন, ‘উক্ত প্রজ্ঞাপনের যারা অজ্ঞাতসারে লিজ নবায়নের জন্য আবেদন করেছিলেন, তা আর নবায়নের প্রয়োজনীয়তা নেই বলে সরকারের পক্ষ থেকে তাদেরকে লিখিতভাবে জানানো হয়। পরে ২০ বছর পর ভূমি মালিক ও সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতরগুলোর অজ্ঞাতসারে ১৯৮৫ সালের প্রজ্ঞাপণটি বাতিল করে ২০০৫ সালে আরেকটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। অথচ এই ২০ বছরে প্রায় প্রতিটি ভূমি মালিকানা পরিবর্তনসহ বিভিন্নভাবে পরিবর্তন করা হয়।

তারা আরো বলেন, তারপর সিটি জরিপের সময় এস এ ও আর এস নামজারি পর্চা মূলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নামে রেকর্ড করা হয়, ফলে রেকর্ডমূলে ভূমি বা ফ্ল্যাট মালিকগণও নিয়মিত খাজনা পরিশোধ করে নির্মিত ফ্ল্যাট বা অফিসগুলো সাফকবলা দলিলের মাধ্যমে যথারীতি বেচা-কেনাসহ যাবতীয় হস্তান্তর প্রক্রিয়া চলে, অথচ সরকারের পক্ষ থেকে ওজর আপত্তি ছাড়াই রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম সম্পন্ন হয়ে আসছে। এসব ভূমিতে আবাসিক বা বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের জন্য রাজউক থেকে নক্শা অনুমোদনের সময়েও কোনোরূপ আপত্তি করা হয়নি। এরপর ২০১১ সালে দু’টি সম্পূরক পরিপত্রের মাধ্যমে সরকার উক্ত জমির খাজনা গ্রহণ এবং সকল ধরণের হস্তান্তর প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়, ফলে লিজ সূত্রে ভূমি মালিকগণের নাগরিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হওয়ায় আমরা চরম ভোগান্তিতে পড়ি।

তারা জানান, ১৯৮৫ সালের পরিপত্র বাতিল করায় ভূমি, ফ্ল্যাট, অফিস স্পেস বিক্রি না হওয়ায় অনেক ভূমিতে ডেভেলপার দিয়ে ভবন নির্মিত হয়, কিন্তু রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ফ্ল্যাট ক্রেতারা অর্থ পরিশোধ করছেন না, ব্যাংক বা অর্থলগ্নী প্রতিষ্ঠানগুলোর নিকট থেকে গৃহায়ণ ঋণ পাওয়া যাচ্ছেনা। যার ফলে প্রকল্পের কাজও শেষ হচ্ছে না। এতে ভূমির মালিক বাড়ি ছাড়া হয়ে ভাড়া আয় হতে বঞ্চিত, ফ্ল্যাট মালিকগণ তাদের জীবনের সঞ্চয়টুকু ফ্ল্যাটে বিনিয়োগ করেও ফ্ল্যাট পজেশন বুঝে পাচ্ছেন না। আবার কেউ কেউ ফ্ল্যাট বুঝে পেলেও রেজিস্ট্রেশন না হওয়ায় নামজারি-খাজনা করাতে পারছেন না।

ভূমি মালিকরা আরো বলেন, ২০০৫ ও ২০১১ সালে জারি করা পরিপত্রের মাধ্যমে তৎকালীন সরকার দেশের বিপুল সংখ্যক নাগরিককে পারিবারিক, সামাজিক, আর্থিক ও বিভিন্ন আইনি জটিলতার দিকে ঠেলে দিয়েছে। মতিঝিল, পল্টন, সেগুনবাগিচা, রমনা, কাকরাইল, ওয়ারী, গেন্ডারিয়াসহ ঢাকার বেশ কয়েকটি এলাকায় সরকারের দীর্ঘমেয়াদী বন্দোবস্তীয় খাসমহল ভূমির মালিকগণ চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে দিনাতিপাত করছেন। বর্তমানে নিজের ভিটি-ভূমিতেই উদ্বাস্তু অবস্থায় আছেন।

২০০৫ সালের ও ২০১১ সালের সংশ্লিষ্ট সকল পরিপত্র বাতিল করে ১৯৮৫ সালের প্রজ্ঞাপনটি বহাল রেখে লিজ দেয়া ভূমিগুলোর নামজারি ও খাজনা পরিশোধের ব্যবস্থা নিয়ে নির্বাহী আদেশ প্রদানের মাধ্যমে এ বিশাল ভূক্তভোগী জনমানুষকে অসহায় অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে তারা গণবিপ্লবের মাধ্যমে গঠিত বর্তমান এই সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।

এ সময় সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পুরানা পল্টন ও সেগুনবাগিচা খাসমহল ভূমির ভুক্তভোগী মালিক কমিটির সভাপতি আবু খালিদ মোহাম্মদ বরকতউল্লাহ। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সহ-সভাপতি আবু জামাল সাঈদ আহমেদ, খন্দকার আবদুর রব ও জাজী ওসমান গণি, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম এবং সহ-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান।

প্রেস বিজ্ঞপ্তি


আরো সংবাদ



premium cement