২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

শহীদ জিয়ার অনন্য সৃষ্টি বিএনপি

শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান - ছবি : সংগ্রহ

শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান মহান আল্লাহর প্রতি অকৃত্রিম বিশ্বাস, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র ও সামাজিক ন্যায়বিচারের মূল নীতিমালার ভিত্তিতে এবং ১৯ দফা কর্মসূচিকে প্রাধান্য দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। গঠনকাল থেকেই বিএনপি বিপুল জনপ্রিয় ও গণমানুষের রাজনৈতিক দল। নেতাকর্মী-সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ীদের শ্রম, মেধা, ঘাম আর ভালোবাসায় দলটি আজ পূর্ণতা লাভ করেছে।

বিএনপির নেতৃত্বে পাঁচবার সরকার গঠিত হয়েছে। তা ছাড়া এই দলই দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে, সব রাজনৈতিক দলকে রাজনীতি করার অধিকার দিয়েছে। সেই সুযোগে আওয়ামী লীগও রাজনীতি করার অধিকার পায়। বিএনপি বাংলাদেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দিয়েছে। বন্ধ সংবাদপত্র খুলে দিয়েছে। বিএনপির হাত ধরেই বাংলাদেশের গণমাধ্যম বিকশিত হয়। বিএনপি দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে। পক্ষপাতহীন ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রতিষ্ঠা করে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা।
রাজনৈতিক দলের চালিকাশক্তি মূলত এর নেতৃত্ব। বিএনপি এক অসাধারণ ভূমিকা পালনকারী রাজনৈতিক দল ও এর নেতৃত্বও অনন্য। সময় যেমন বিএনপিকে সহায়তা করেছে, তেমনই বিএনপিও সময়কে কাজে লাগিয়েছে। জাতীয় ইতিহাসের কিছু ক্রান্তিকাল বিএনপিকে পার করতে হয়েছে এবং বিএনপি সেটি করেছে সফলতার সাথে। যুগোপযোগী অর্থনৈতিক নীতি ও স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ, রাজনীতিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মীয় মূল্যবোধের স্বীকৃতি, ভূখণ্ডকেন্দ্রিক জাতীয় পরিচয় ও জাতীয়তাবাদের দর্শন সমুন্নতকরণের মাধ্যমে বিএনপি রাজনীতিতে একটি বলয় বা প্ল্যাটফর্ম সৃষ্টিতে সক্ষম হয়, যা আমাদের জাতীয় রাজনীতিতে আনে গুণগত পরিবর্তন।

নৃতাত্ত্বিক ও আদর্শিক চেতনা মিশ্র স্বতন্ত্ররূপ ও পরিচয় রাষ্ট্রীয়ভাবে বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে জিয়া প্রবর্তন করেন ‘বাংলাদেশী জতিয়তাবাদ’। এটি বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ইতিহাসবোধ, অনুভূতি ও বিশ্বাসকে নাড়া দিয়েছে এবং প্রতিনিয়ত দিচ্ছে। তাই বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের’ পক্ষে অটল-অবিচল রয়েছে।

ধর্ম, ভাষা, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও অর্থনীতি ইত্যাদির সমন্বয়ে জাতীয়তাবাদ ভূখণ্ডকেন্দ্রিকতাই হয়ে থাকে এর প্রধানতম প্রেরণা ও শক্তি। বাংলাদেশে নানা ধর্মের মানুষ বাস করে। এখানে ভাষারও বৈচিত্র্য আছে। বাংলা, চাকমা, মারমা, উর্দুসহ অনেকগুলো ভাষা ও নৃতাত্ত্বিক পরিচয়ের জাতিগোষ্ঠীর মানুষÑ এরা সবাই বাংলাদেশ ভূখণ্ডে বসবাস করে। সেই অর্থে এরা সবাই বাংলাদেশী। এখানেই সবার জাতীয় পরিচয় ও জাতীয় স্বার্থ নিহিত। এর মাধ্যমে আমাদের জাতিসত্তার একটি সুস্পষ্ট কাঠামো প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যা ঐতিহাসিকভাবে আমরা ধারণ করে আসছি। এজন্য বলা যায়, বিএনপির জন্ম হয়েছে ঐতিহাসিক প্রয়োজনে।

বাংলাদেশ নিয়ে জিয়ার সুস্পষ্ট ভিশন ও পরিকল্পনা ছিল। এ লক্ষ্যে তিনটি খাতকে অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন তিনি- কৃষি, জনশক্তি ও তৈরী পোশাক শিল্প। জনশক্তিকে কাজে লাগাতে ও শিল্প বিকাশে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক উন্নত করার উদ্যোগ নেন জিয়া। তার রাষ্ট্রনায়কোচিত পররাষ্ট্রনীতি এবং পরিকল্পনা ও ভিশন অনুযায়ী অর্থনীতির উৎস বলে খ্যাত মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপ-আমেরিকার সাথে বাংলাদেশের ব্যবসায়-বাণিজ্যের দ্বার উন্মুক্ত হয়। শুরু হয় মধ্যপ্রাচ্যে জনশক্তি প্রেরণ ও ইউরোপ-আমেরিকায় তৈরী পোশাক রফতানি। এর ধারাবাহিকতায় আজ বাংলাদেশের অর্থনীতির হৃৎপিণ্ড হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে তৈরী পোশাক শিল্প ও জনশক্তি রফতানি। এই দু’টি খাতের কারণেই বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রেকর্ড বৃদ্ধি পায়। ইউরোপ-আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের সাথে সম্পর্ক উন্নত না করলে এটি সম্ভব হতো না। কেননা বাংলাদেশের রফতানির আয়ের ৯০ শতাংশই আসে আমেরিকা ও ইউরোপ থেকে।

১৯৭৭ সালে সৌদি আরবে জনশক্তি রফতানির মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্ব শ্রমবাজারে প্রবেশ করে। এরপর একে একে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ এবং ইউরোপ-আমেরিকায় বাংলাদেশের জনশক্তির বাজার সম্প্রসারণ হতে থাকে। প্রায় এক কোটির মতো বাংলাদেশী পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কর্মরত। এখানেও একটি সুস্পষ্ট পরিকল্পনা ও ভিশন কাজ করেছে। ভিশন ছাড়া কোনোভাবেই এটি এতদূর যেতে পারত না। এখানেও বিএনপির কৃতিত্ব ষোলআনা।

স্বনির্ভর দেশ গড়তে এবং মানুষের জীবনে অর্থনৈতিক মুক্তি আনতে জিয়া ঘোষণা করেন ১৯-দফা কর্মসূচি। এটি বিএনপির রাজনীতির অন্যতম স্তম্ভ। জিয়া বিএনপির মাধ্যমে এই কর্মসূচি ছড়িয়ে দিয়েছিলেন মাঠে-ঘাটে ও পথে-প্রান্তরে। আমাদের কৃষিভিত্তিক সভ্যতা ও অর্থনীতির নিজস্ব স্বকীয় রূপ ফুটে উঠেছে জিয়ার ১৯-দফা কর্মসূচিতে। তিনি গ্রামের পর গ্রাম, মাইলের পর মাইল হেঁটেছেন। নিজের হাতে কোদাল তুলে নিয়েছেন, খনন করেছেন খাল; তার দুই হাতের ছোঁয়ায় ফসলে ফসলে মাঠ ভরে উঠেছিল, ঘটেছিল কৃষিবিপ্লব। তলাবিহীন ঝুড়ির উপাধি পাওয়া দেশ পরিণত হয়েছিল ফুলে-ফল ও ফসলে ভরপুর এক দেশে, মানুষ পরিণত হয়েছিল কর্মমুখী মানুষে; গ্রামে গ্রামে সৃষ্টি হয়েছিল সামাজিক নেতৃত্ব। স্বনির্ভর গ্রাম ও স্বনির্ভর দেশ গড়তে জিয়ার ১৯-দফা কর্মসূচি বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে অনিবার্য দিকনির্দেশনা হয়ে আছে এবং থাকবে।

জিয়াউর রহমান বিএনপির জন্য রেখে গেছেন এক স্বর্ণোজ্জ্বল ইতিহাস। তার আদর্শ, সততা, কর্মোদ্যোগ ও চিন্তাচেতনা মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে আমাদের জাতীয় জীবনে। জাতিকে বড় করার সব গুণ জিয়ার মধ্যে ছিল। তিনি মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছেন বড় কিছু করতে। তার চিন্তা ছিল সুদূরপ্রসারী। জিয়ার আদর্শ ও দিকদর্শন বিএনপির নেতাকর্মীদের হাতে-কলমে শিক্ষা দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, বিএনপি শুধু একটি রাজনৈতিক দল নয়, এটি রাজনৈতিক শিক্ষালয়ও। শুধু ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য জিয়া এই দলের জন্ম দেননি, এর আলোকে জাতি গঠন, ত্যাগী, কর্মঠ ও দক্ষ মানুষ তৈরি এবং মানুষকে রাজনৈতিকভাবে সচেতন করাও বিএনপির অন্যতম লক্ষ্য।

পৃথিবীতে এক সময় শিল্পে যারা এগিয়ে ছিল, তারাই আজ বিশ্ব শাসন করছে; বর্তমানে তথ্য-প্রযুক্তিতে যারা এগিয়ে থাকবে, আগামীতে তারাই বিশ্ব শাসন করবে। তথ্য-প্রযুক্তিতে যারা পিছিয়ে থাকবে, তাদের কোথাও কোনো শ্রেষ্ঠত্ব থাকবে না। রাজনীতি ও অর্থনীতির মূল স্রোত থেকে তারা অবধারিত ছিটকে পড়বে। কাজেই বিএনপিকে গণমাধ্যমে প্রাধান্য বিস্তার করতে হবে। চৌকস সংগঠকদের গণমাধ্যমে কাজ করার সুযোগ করে দিতে হবে।

তৃণমূল নেতাকর্মীরাই বিএনপির প্রাণশক্তি। তাদের উদ্যম, সাহস, একাগ্রতা ও দলের প্রতি আনুগত্যই বিএনপিকে রাজনৈতিক দল হিসেবে দাঁড় করিয়ে রেখেছে। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা নজিরবিহীন দমন-পীড়ন ও জুলুম-নির্যাতন এবং হামলা-মামলা সহ্য করেও দলের হাল ধরে রাখেন। কার্যত একটি দীর্ঘ সময় ধরে তারা প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করছেন, যা বর্ণনাতীত। তাদের প্রতি বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সাহায্য ও সহযোগিতার হাত প্রসারিত করা একান্ত প্রয়োজন। মামলা পরিচালনা ও চিকিৎসা খরচসহ যারা অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন, তাদের আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করতে হবে, আগামী দিনের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে যাতে তারা রাখতে পারেন ভূমিকা।

বিএনপি জিয়ার এক অনন্য সৃষ্টি। সব বাধা বিঘ্ন পেরিয়ে বিএনপি পৌঁছে গেছে সাফল্যের শীর্ষ বিন্দুতে। বিএনপি ও জিয়া পরিণত হয়েছিলেন এক ও অভিন্ন সত্তায়। জনপ্রিয়তার সঙ্গে সঙ্গে উৎকৃষ্ট সৃষ্টিশীলতার সংমিশ্রণ জিয়ার প্রধানতম কৃতিত্ব। ইতিহাস জিয়া ও বিএনপিকে যেভাবে কাছে টেনে নিয়েছে, জিয়াও তেমনিভাবে সৃষ্টি করেছেন ইতিহাস। দারিদ্র্য, রাজনৈতিক সঙ্কট, আর্থসামাজিক ঝড় পেরিয়ে জিয়া যে জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছিলেন সেটি বিশ্বজয়ের চেয়ে কম নয়। দর্শন চিন্তা, সাংগঠনিক চিন্তা, রাজনৈতিক চিন্তার মাধ্যমে জিয়া জানিয়ে গেছেন তার বহুমাত্রিক প্রতিভা ও কৃতিত্বের জগৎ সম্পর্কে। তাই জিয়ার গড়া বিএনপি স্থান করে নিয়েছে ইতিহাসের সোনালি পাতায়।

লেখক : কলামিস্ট ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
[email protected]


আরো সংবাদ



premium cement
সংস্কারের কাজ দৃশ্যমান হলেই নির্বাচন হবে : মাহফুজ আলম সংখ্যালঘুদের রক্ষা করার প্রাথমিক দায়িত্ব বাংলাদেশ সরকারের : ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ‘রাষ্ট্রের কোনো প্রতিষ্ঠান কোনো দল বা গোষ্ঠির নয়’ রোহিঙ্গারা এনআইডি নেয়ার অপচেষ্টা চালালে ইসিকে জানানোর আহ্বান আলিফের পরিবারকে এক কোটি টাকা দেবে শামসুল হক ফাউন্ডেশন জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে যারাই যাবে, তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে : জামায়াত আমির এক সপ্তাহ পর বেনাপোল থেকে দূরপাল্লার পরিবহন চলাচলের সিদ্ধান্ত সমন্বয়কদের ওপর হামলা হালকাভাবে দেখছে না সরকার কমছে ৪৭তম বিসিএসের আবেদন ফি গাজীপুরে কোরআন অবমাননার অভিযোগে কলেজছাত্র গ্রেফতার অযাচিত অস্থিরতা নয়, দায়িত্বশীল হোন

সকল