২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

জনপ্রশাসনে অসন্তোষ অস্থিরতা

জনপ্রশাসনে অসন্তোষ অস্থিরতা - প্রতীকী ছবি

ইতিহাসে দেখা যায়, কোনো দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর, বিশেষ করে বিপ্লবের মাধ্যমে সূচিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অনেকে অতিমাত্রায় প্রত্যাশী হয়ে ওঠেন। এদের বেশির ভাগই সুযোগসন্ধানী। উদ্বেগের সাথে লক্ষ করা যাচ্ছে, বর্তমানে জনপ্রশাসনে কিছুটা অস্থিরতা বিরাজ করছে। বিগত সরকারের আমলে কোনো কারণ ছাড়াই বিপুলসংখ্যক অফিসারকে পদবঞ্চিত করা হয়। এদের মধ্যে আবার অনেকে চরম হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হন। এই নির্যাতনের মাত্রা বিভিন্ন প্রকারের। এগুলোর ভেতর ওএসডি, শাস্তিমূলক বদলি, শিক্ষা ছুটি বাতিল, পদোন্নতিবঞ্চনা, বিদেশ গমনে বাধা, সচিবালয়ে প্রবেশ নিষিদ্ধকরণ ও মিথ্যা মামলায় আসামি করাসহ নানা নিবর্তনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত।

উল্লেখ্য, অতীতে পদবঞ্চিত কর্মকর্তারা ২০০৯ সালে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের সাথে সচিবালয় দখলে নেন। তারা সংস্থাপন মন্ত্রণালয়কে চর দখলের মতো করে দখলে নেন এবং সংস্থাপন সচিবের অফিসকক্ষে ঢুকে সচিবকে লাঞ্ছিত করে পদোন্নতিসহ সব সুবিধা আদায় করেন। সেসময় কোনো রিভিউ কমিটি গঠনের প্রয়োজন হয়নি। কোনো নিয়ম-কানুনের প্রশ্ন প্রাসঙ্গিকতা পায়নি। পক্ষান্তরে, ২০২৪ সালে যখন বঞ্চিত কর্মকর্তারা তাদের দাবি আদায়ে তৎপর হয়ে ওঠেন, তখন এসব নিয়ম-কানুনের বিষয়াদির অবতারণা হয়। বিষয়টির বিলম্বীকরণ তাদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি করে। যথেষ্ট ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার পরিচয় দিয়ে এরা শান্তিপূর্ণভাবে সচিবালয়ে সমাবেশ করে তাদের দাবি তুলে ধরেন। কোনোরকম হঠকারিতা ও বিশ্ঙ্খৃলা ঘটেনি। সবাই শান্তি বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

এ দিকে রিভিউ কমিটি গঠনের কথা বলা হলেও কোনো এক অদৃশ্য শক্তির ইশারায় কথিত নিয়ম-কানুন অনুসরণের তোয়াক্কা না করেই রাতের আঁধারে পাঁচজন সিনিয়র অফিসারকে নিয়মবহির্ভূত উপায়ে সচিব পদে চুক্তভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়। এদের যোগ্যতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। তবে যে প্রক্রিয়ায় এদের পদোন্নতি দেয়া হলো তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এতে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের মনে একরকম বিভ্রান্তি ও ক্ষোভের জন্ম নেয়। এদিকে বিতাড়িত সরকারের আমলের অতিমাত্রায় সুবিধাভোগী কর্মকর্তাদের ষড়যন্ত্র ও অপতৎপরতার খবরে সংক্ষুব্ধ কর্মকর্তারা সহনশীলতার পরিধি অতিক্রম করেন। তারা এসব কর্মকাণ্ডের জন্য বিশেষ একজন ঊপদেষ্টাকে দায়ী করে প্রকাশ্যে সমালোচনামুখর হয়ে ওঠেন এবং কঠোর কর্মসূচি প্রয়োগের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তারা ওই উপদেষ্টার অপসারণ দাবি করে সচিবালয়ে তার প্রবেশাধিকার সীমিত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

বলা বাহুল্য, সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে নির্ধারিত সময়ে পদোন্নতি পাওয়া একজন কর্মকর্তার ন্যায্য অধিকার। কিন্তু পদায়নের বিষয়টি এর সাথে সম্পৃক্ত নয়। পদায়নের বিষয়ে তার সার্ভিস রেকর্ড, শিক্ষাগত যোগ্যতা, প্রশিক্ষণ, দক্ষতা, সততা ও সুনামের বিষয়টি গভীরভাবে বিবেচনার দাবি রাখে।

সুতরাং, এই মুহূর্তে প্রশাসন কাডারের একজন সিনিয়র অভিজ্ঞ সর্বজনগ্রাহ্য কর্মকর্তাকে উপদেষ্টা কিংবা উপদেষ্টার পদমর্যাদায় নিয়োগপূর্বক জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়ে জনপ্রশাসনে শৃঙ্খলা আনা এবং সচিবালয়ে উত্তেজনা প্রশমন করা বাঞ্ছনীয়।


আরো সংবাদ



premium cement