পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস আজ
- সাইফুল ইসলাম শুভ
- ১৪ আগস্ট ২০২৪, ০৬:৪১
পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস আজ। দেশটি এক সময় আমাদের অংশ ছিল। সাবেক পূর্ব পাকিস্তানের ভূখণ্ড নিয়েই বর্তমান বাংলাদেশ। অখণ্ড বাংলা ভাগের কারণে ৫০ হাজার ৩৪১ বর্গমাইল আয়তনের পূর্ববাংলা ও আসামের সিলেট জেলার ৪ হাজার ৭৮৫ বর্গমাইল নিয়ে প্রায় ৫৬ হাজার বর্গমাইল আয়তনের পূর্ব পাকিস্তান গঠিত হয়েছিল ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট। তাই আজও অনেক বয়স্ক বাংলাদেশীর কাছে দিনটির নস্টালজিক এক ধরনের আবেদন আছে।
প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় জাতীয়তাবাদীদের সব বাধা অতিক্রম করে ১৯৪৭ সালে একটি স্বতন্ত্র মুসলিম রাষ্ট্র অর্জন করেছিলাম আমরা। সেই রাষ্ট্র থেকে ১৯৭১ সালে দু’টি রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। দু’টি রাষ্ট্রই উপমহাদেশের মুসলিমের রক্ষাকবচ। বর্তমান ভারত রাষ্ট্রে যেসব মুসলিম রয়েছেন তাদের ওপরে আরো বেশি নিগ্রহ ও নির্যাতন নেমে আসত যদি না উপমহাদেশে মুসলিমদের স্বাধীন দু’টি রাষ্ট্র থাকত।
এ কথা সত্যি যে, স্বতন্ত্র রাষ্ট্র না হলে আজকের ভারতবর্ষে মুসলিম জনসংখ্যা আরো বাড়ত। কিন্তু সংখ্যালঘিষ্ঠ হয়ে থাকতে হতো এটাও বাস্তবতা।
বর্ণবাদী ও অত্যাচারী সেন রাজবংশের পতন ঘটিয়ে ১২০৪ সালে মুসলিম বিজেতা ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজী বঙ্গ জয় করেন। এর সাড়ে পাঁচশ বছর পর ১৭৫৭ সালে পলাশীর প্রান্তরে অস্তমিত হয় আমাদের স্বাধীনতা। আবার অন্ধকার দূর করে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট সৃষ্টি হয় উপমহাদেশে মুসলমানদের কাক্সিক্ষত স্বাধীন দেশ পাকিস্তান।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আমরা যে পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা অর্থাৎ স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ পেয়েছি তা ১৯৫৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত ২১৪ বছরের আমাদের পূর্বপুরুষদের অব্যাহত লড়াই-সংগ্রামের চূড়ান্ত অর্জন।
১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর যুদ্ধে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার পতনের পূর্বপর্যন্ত তৎকালীন মুসলিম শাসকরা একটা উদার ও অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থা বিনির্মাণ করেছিলেন। কিন্তু পলাশী-উত্তর রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতি ও সম্পর্কের দ্রুত অবনতি ঘটতে থাকে। যত দিন গড়ায় শাসক জাতি মুসলিমরা ততই অন্ধকারের অতল গহ্বরে হারিয়ে যেতে থাকেন। এ থেকে উদ্ধার পান ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির মাধ্যমে।
ভারতের মাটিতে নিজেদের অস্তিত্বের সঙ্কট নিয়ে মুসলমানদের মনে যে ভীতির সঞ্চার হয়েছিল তা আর প্রশমিত হয়নি। হিন্দুত্ববাদের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ ধারা উপমহাদেশের মুসলিম স্বাতন্ত্র্যচেতনাকে ‘সাম্প্রদায়িক’ আখ্যা দিয়ে পূর্বাপর এর বিরোধিতা করে। এখনো যা অব্যাহত।
আসলে দুই বাংলার জনগণের পারস্পরিক বিচ্ছিন্নতাবোধ একবিংশ শতাব্দীতে এসেও প্রত্যক্ষ করা যায়। এ প্রভেদ মন-মানসের, আবেগ-অনুভূতির, ধর্ম-কর্মের, সভ্যতা-সংস্কৃতির, জীবনবোধ ও জীবনদর্শনের।
একসময়ে ‘হিন্দু-মুসলিম মিলনের অগ্রদূত’ খ্যাত মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ তার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও দূরদর্শিতা থেকে ত্রিশের দশকে বাস্তবসম্মত ‘দ্বিজাতিতত্ত্ব’ ঘোষণা করেন। লাহোর প্রস্তাবে ভারতের পূর্বাঞ্চলের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলা প্রদেশ এবং এর আশপাশের মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চল নিয়ে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠনের ঘোষণা থাকায় তৎকালীন বাংলার মুসলমান ও তফসিলি সম্প্রদায় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তাদের কাছে ব্রিটিশ তাড়ানোর মানে শুধু স্বাধীনতা ছিল না, একই সাথে সেটি ছিল ব্রাহ্মণ্যবাদী শোষণ ও আগ্রাসন থেকে মুক্তি পাওয়াও।
১৯৪৭ সালে সৃষ্ট মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তান একাত্তরে আলাদা হয়ে দু’টি রাষ্ট্র তৈরি হলেও দু’টি রাষ্ট্রই উপমহাদেশের বিপুলসংখ্যক মুসলিমের উন্নয়নের মূল চালিকা তাতে সন্দেহ নেই।
লেখক : সাধারণ সম্পাদক, নবাব সলিমুল্লাহ একাডেমি
E-mail: [email protected]
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা