আন্দোলন ও অন্তর্বর্তী সরকার
- জিয়া আহমদ এনডিসি
- ০৮ আগস্ট ২০২৪, ০৬:২৭
গত ৫ আগস্ট, ২০২৪ বৈষম্যবিরোধী ছাত্রসমাজ ও দেশের আপামর জনসাধারণের অংশগ্রহণে সংঘটিত গণ অভ্যুত্থানে বাংলাদেশের তো বটেই, পৃথিবীর ইতিহাসের অন্যতম নিকৃষ্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতন হলো। দেশের সর্বস্তরের মানুষ এই মাহেন্দ্রক্ষণে ঘরবাড়ি থেকে রাস্তায় নেমে আসে অভাবিত এই সুসংবাদে, বিজয় উদযাপনে।
কিন্তু সমস্যা হলো, বিপ্লবের অব্যবহিত পরেই আসে প্রতিবিপ্লব। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও সেটিই লক্ষ করা যাচ্ছে। সেনাছাউনি থেকে প্রাসাদ পর্যন্ত চলছে এই চক্রান্ত। দেশের সেনাপ্রধান অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তা ও কৃতিত্বের সাথে ইতোমধ্যেই স্বৈরশাসকের পক্ষে অনুষ্ঠেয় একটি অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা রুখে দিয়েছেন বলে খবর পাচ্ছি। বাংলাদেশের অন্যতম নিকৃষ্ট খুনি মেজর জেনারেল জিয়াউলসহ কয়েকজনকে সেনাবাহিনীর চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। প্রয়োজনে এ ধরনের অব্যাহতির ঘটনা আরো ঘটতে পারে বলে মনে হচ্ছে।
সামরিক বাহিনী একটি শৃঙ্খলাবদ্ধ প্রতিষ্ঠান। সেখানে শৃঙ্খলার বিচ্যুতি সহজেই শনাক্ত করা যায়। কিন্তু বেসামরিক প্রশাসনের বিষয়টি ভিন্ন। সেখানে যারা কাজ করেন তাদের মধ্যে সচিব, অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্মসচিবপর্যায়ের বড় অংশ স্বৈরশাসক হাসিনার কৃপা ও অনুগ্রহভাজন এবং এদের মধ্যে একটি অংশই সরকারি অর্থ আত্মসাতে হাসিনার সহযোগী। এদের শৃঙ্খলার ধারণা ভিন্ন এবং এদের আচরণের পরিবর্তন সহজে বুঝা যায় না। ফলে, এরা কখন কী ষড়যন্ত্র করে নবীন বিপ্লবকে কিভাবে পথভ্রষ্ট করে ফেলে, তা আগে থেকে বোঝা অত্যন্ত দুষ্কর। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতারা ক্ষমতার লোভ দেখালেও সেটা ঠিক হবে না। ১৯৯০ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পরও লক্ষ করেছি, কতিপয় ছাত্রনেতার অর্থ ও ক্ষমতার প্রতি উদগ্র বাসনা এবং কিছু ক্ষেত্রে তাদের পরিণতিও দেখেছি।
বর্তমানে সামাজিক মাধ্যমে লক্ষ করছি কিছু মানুষ প্রচারণা চালাচ্ছেন যে, আওয়ামী লীগের পরিবর্তে বিএনপি, জামায়াত বা জাতীয় পার্টিকে তারা ক্ষমতায় দেখতে চান না! ভালো কথা। আমরা কোনো নির্দিষ্ট দলকে ক্ষমতায় দেখতে না চাইতেই পারি, কিন্তু যে গণতন্ত্রহীনতাকে কেন্দ্র করে গত ১২-১৩ বছর ধরে এই দেশে আন্দোলন চলছে, শত শত মানুষ জীবন উৎসর্গ করেছে, হাজার হাজার মানুষ পঙ্গু হয়ে গেছে, লাখ লাখ মানুষ লাখ লাখ মামলা নিয়ে পলাতক জীবন যাপন করেছে দীর্ঘ এই সময়, তাদের আত্মত্যাগ বিফলে যাবে?
আর মাত্র দেড় মাসের কোটাবিরোধী এই আন্দোলন দেশের কোটি মানুষকে রাস্তায় নামিয়ে এনে শেখ হাসিনার মতো স্বৈরাচারকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে? বিষয়টিকে এত সহজীকরণ করা কি বালখিল্যতা হয়ে যাচ্ছে না?
আমার কাছে বিষয়টিকে সেই কুখ্যাত ওয়ান-ইলেভেন সরকারের গণধিকৃত মাইনাস-২ ফর্মুলার পুনঃবাস্তবায়নের প্রয়াস বলেই মনে হচ্ছে। আমাদের মনে রাখতে হবে, গত ১৬ বছরের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে যেসব আন্দোলন হয়েছে, সেগুলো আপাত দৃষ্টিতে ব্যর্থ মনে হলেও তার প্রভাব জনমানসে রয়ে গেছে এবং এই আপাত ব্যর্থ আন্দোলনগুলোর সম্মিলিত প্রভাব জনমানসে পরিবর্তনের আকাক্সক্ষাকে তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে। এই ক্ষণে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে সরকার যখন কঠোর বল প্রয়োগের মাধ্যমে স্তব্ধ করার চেষ্টা করে, তখন পুরো জাতি তার বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠে। এর পরিপ্রক্ষিতেই সফল হয় ছাত্র-জনতার এই অভ্যুত্থান।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের যারা ক্ষমতার অংশীদার হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন, তারা তাদের মঙ্গলাকাক্সক্ষী নয়। তারা এই ছেলেদের বিপথে পরিচালিত করে দিতে চান, অতীতে যেমন সাবেক ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুরসহ আরো অনেককে তারা ধ্বংস করেছেন। এই মুহূর্তে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের উচিত হবে যত দ্রুত সম্ভব দেশের প্রথিতযশা নির্লোভ মানুষদেরকে খুঁজে এনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা করে নিজেদের কাজে ফেরত যাওয়া এবং যত দ্রুত সম্ভব দেশে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা। সে ক্ষেত্রে তাদের ‘ওয়াচ ডগের; ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া। যদি ইচ্ছা করেন, তারা রাজনীতিতেও আসতে পারেন; তবে সে ক্ষেত্রে তাদের আমি অপেক্ষা করার পরামর্শ দেবো। কিন্তু এই সময়টিকে সুযোগ হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা না করাটাই সমীচীন হবে, কারণ এতে তাদের সব অর্জন ধূলিসাৎ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আর, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ নিম্নতম সময়ে সীমাবদ্ধ রাখাটাও একটি চ্যালেঞ্জ। অনেকে এই ছাত্র ও অনভিজ্ঞ মানুষদের দীর্ঘদিন নামকাওয়াস্তে ক্ষমতায় রেখে তাদের গোপন এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা করবে, যার দায় বর্তাবে অনভিজ্ঞ এই মানুষগুলোর উপরই। এই বিপ্লবী মানুষগুলোকে ‘হিরো থেকে জিরোতে’ টেনে নামাতে তারা খুব বেশি সময় নেবে না। ভুলে গেলে চলবে না, এই মুহূর্তে আমরা প্রায় শূন্য রিজার্ভ ও বিশাল ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে আছি, যা অবিলম্বে শোধ করতে হবে। ফলে, এই ক্রান্তিকালে মন্ত্রিত্ব যতটা না উপভোগের, তার চেয়ে অনেক বেশি দায়িত্বের, যা একই সাথে বিপদসঙ্কুলও বটে।
সবশেষে আমি আবারো দেশবাসী ও ছাত্র-জনতাকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, এই দেশে কায়েমি স্বার্থবাদীরা (দেশী ও বিদেশী উভয়েই) কিন্তু এই মুহূর্তে ভীষণ তৎপর। তারা গত ১৬ বছরে অবৈধ বা দেশের স্বার্থবিরোধী যা কিছু অর্জন করেছে, তার অধিকার তারা এত সহজে ছেড়ে দেবে না। তাদের অবৈধ অধিকার ও সম্পদ রক্ষায় তারা বিভেদের চাষ তো বটেই, প্রয়োজনে দেশের জনগণের আরো অনেক রক্ত ঝরাতেও তারা পিছপা হবে না। এসব দিক ভুলে গেলে আমরা আবার ২০ বা ৫০ বছর পিছিয়ে যাবো, যা কারোরই কাম্য নয়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা