২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

বিপ্লবকে বেহাত হতে দেয়া যাবে না

বিপ্লবকে বেহাত হতে দেয়া যাবে না - ছবি : সংগ্রহ

সকল বিপ্লবী জনতা সতর্ক। কেউ গতরাতে ঘুমায়নি। বিপ্লবকে বেহাত হতে দেয়া যাবে না। ফলে গভীর রাতেও যখন কেউ নির্ভার হয়ে ঘুমায়নি, রাজপথ ছেড়ে যায়নি। অতএব বিপ্লব বেহাত হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। আমরা তো ৭১-এ অর্জিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা বেহাত হওয়ার ভুক্তভোগী । তাই সেই দগদগে ক্ষত আমাদের ভীত করবেই। স্বাধীনতার পরে একটা পরিবার নিজেই রাষ্ট্র হয়ে গিয়ে স্বাধীনতা, বিপ্লবকে দখল করেছিল। তাতেও যখন মন ভরেনি তখন বাকশাল কায়েম করে সব দলমতকে নিষিদ্ধ করে। জগদ্দল পাথরের মতো জাতির বুকের উপর চেপে বসেছিল। তার পরিণামও বাংলাদেশ দেখেছে।

বৃহৎ প্রতিবেশী দেশ ভারত আমাদের রক্তার্জিত বিপ্লবী স্বাধীনতাকে নির্মাণ করেছিল ভারতীয় ন্যারেটিভ দিয়ে। আমাদের স্বাধীনতা তাদের দয়ার দান। সেই ন্যারেটিভ ভেঙে ফেলতে হবে। আমাদের তরুণ ছাত্র-ছাত্রীরা কারো দয়ায়, দানে এই বিপ্লব করেনি। বুকের তাজা রক্ত ঢেলে স্বৈরাচারের হাত থেকে দেশকে স্বাধীন করেছে। এই স্বাধীনতা কেবলই আমাদের একার অর্জন।

বাংলাদেশের বিভিন্ন বাহিনীতে ভারতীয় ভাড়াটে সৈন্য রিক্রুট করা হয়েছিলো। যাদের দিয়ে বিগত ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশের নাগরিকদের গুম, খুন করেছে। গনহত্যা চালিয়েছে। তাদের কিছুসংখ্যক গত রাতে সেনাবাহিনীর হাতে ধরা পড়ার খবর পাওয়া গেছে। এদেরকে বন্দী করে তথ্য নিতে হবে এবং বিচারের মুখোমুখি করে সারা দুনিয়াকে দেখাতে হবে। ভারত কিভাবে আমাদের অস্থিতিশীল রেখেছে,কিভাবে আমাদের স্বাধীরতাকে হরণ করেছে। একজন লেন্দ্রুপ দর্জি মার্কা সরকার রেখেছে ।

আমাদের প্রধান কাজ হলো দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিপ্লবী সরকার গঠন করতে হবে। এই সংসদ ভেঙে ফেলতে হবে মঙ্গলবারের ভেতর (আজকের মধ্যে)। সুপ্রিমকোর্টের প্রশ্নবিদ্ধ বিচারপতিদের পদত্যাগে বাধ্য করতে হবে। বিগত ১৬ বছরে যারা বিচারক ছিলেন, আমলা ছিলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা ছিলেন। এদের মধ্যে যারা প্রশ্নবিদ্ধ তাদেরকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে। সরকারের খরচ মেটাতে লুটেরাদের সকল সম্পদ জব্দ করে রাষ্ট্রের কোষাগারে নিতে হবে। এসবই দ্রুততম সময়ের ভিতর করতে হবে।

বিপ্লবী সরকারে অবশ্যই ছাত্রদের প্রতিনিধি থাকতে হবে। জুলাই হবে বাংলাদেশের জাতীয় শোকের মাস। আগস্ট হবে জাতীয় বিজয়ের মাস।

যারা ভারতীয় হেজেমনিক প্যারডাইম নির্মাণের সাথে জড়িত তাদেরকে সব জায়গা থেকে বয়কট করতে হবে। যেসকল গ্রুপ অব কোম্পানি ফ্যাসিবাদের পৃষ্ঠপোষকতা করেছে। সেসব প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করতে হবে। যেসকল মিডিয়া ফ্যাসিবাদের পাটাতনকে শক্ত করেছে সেসব মিডিয়াকে বিচারের মুখোমুখি করা সময়ের দাবি। নাহলে আমাদের তরুণ-জনতার রক্তে অর্জিত এই নয়া স্বাধীনতা বেহাত হয়ে যাবে অপশক্তির কাছে।

আজ বাংলাদেশ দু'ভাগে বিভক্ত। বিপ্লবী ও পরাজিত ফ্যাসিবাদ। নতুন সরকারের কাছে দাবি থাকবে যতদ্রুত সম্ভব পিলখানা হত্যার বিচার শুরু করতে হবে। সকল নিগৃহীত সামরিক কর্মকর্তাদের সসম্মানে ফিরিয়ে আনতে হবে। শহীদ সামরিক অফিসারদের জাতীয়ভাবে সম্মান জানাতে হবে। ১৩ মে হেফাজতের উপর চালানো গণহত্যা, জুলাইয়ের মহান বাংলা বিপ্লবের উপর চালানো গণহত্যার বিচার করতে হবে। গণহত্যার পক্ষে যারাই সাফাই গাইবে তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে।

আমরা চাই এই বিপ্লবকে ধারন করে এক নতুন বাংলাদেশ গড়তে। যেখানে থাকবেনা বৈষম্য, দূর্নীতি। থাকবে কেবলই ইনসাফ,,মানবাধিকার,আইনের শাসন।

যারা বিপ্লবকে বেহাত করতে চায়। তারাই এদেশের সংখ্যালঘুদের হামলা করবে, রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিনষ্ট করে দেশের ভিতর অরাজকতা সৃষ্টি করে রাখতে চাইবে। এদেরকে শক্ত হাতে দমন করতে হবে। রক্তার্জিত একটা সুন্দর সকালকে আমরা পরাজিত ফ্যাসিবাদীদের হাতে নষ্ট হতে দেবোনা।

ইনকিলাব জিন্দাবাদ।

লেখক : ইতিহাস ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ


আরো সংবাদ



premium cement