২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

এত লাশ কেন

এত লাশ কেন - ফাইল ছবি

২০১৮ সালে ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে সরকার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের পরিপত্র জারি করেছিল। ২০২৪ সালের ৫ জুন সেই পরিপত্র অবৈধ ও আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করে রায় দেন উচ্চ আদালত। তাতে করে আন্দোলনে নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা। প্রথমে তারা অবস্থান কর্মসূচি দিয়েছিল। সময় ও পরিস্থিতি দেশের সাধারণ শিক্ষার্থীদের অবরোধের মতো কর্মসূচি দিতে বাধ্য করে।

২০২৪ সালের চলমান আন্দোলনের ভেতর উচ্চ আদালতের রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে যায় রাষ্ট্রপক্ষ ও ঢাবির দুই শিক্ষার্থী। গত ৯ জুলাই আবেদনের শুনানির পর কোটাসংক্রান্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেন সর্বোচ্চ আদালত।

এরপর কোটা সংস্কার আন্দোলন নানা কারণে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিতে রূপান্তর হয়েছে। গত ১৪ জুলাই রোববার গণভবনে চীন সফর পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে ‘রাজাকারের নাতি-পুতি’ সংক্রান্ত প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য মেধাবী ছাত্রদের আন্দোলনকে চরমভাবে উসকে দেয়। তাতে করে ১৬ জুলাই চলমান আন্দোলন সঙ্ঘাতে রূপ নেয়। প্রথম দিনেই আন্দোলনকারীদের প্রতিহত করতে পুলিশের সহায়তায় সামনে আসে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ। শুরু হয় সংঘর্ষ। এতে প্রাণ হারান ছয়জন।

অতঃপর গত ১০ দিনে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের পর পুলিশ মাঠে নামে। তাদের সাথে ক্রমেই নেমেছে র্যাব, বিজিবি; সর্বশেষ শুক্রবার (১৯ জুলাই) মধ্যরাত থেকে কারফিউ জারি এবং ঢাকাসহ সারা দেশে সেনা মোতায়েন হয়েছে। ১৮ জুলাই গণহত্যার পর মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, সরকার শিক্ষার্থীদের দাবি নীতিগতভাবে মেনে নিয়েছে। অথচ এর আগে তিনি বলেছিলেন, কোটা বিরোধীদের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগই যথেষ্ট। ছাত্রলীগই তাদের আন্দোলন দমন করবে। এর পরই ছাত্রলীগ শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা শুরু করে। বিভিন্ন পত্রিকায় স্পষ্টত দেখিয়েছে, হামলার সময় ছাত্রলীগ পিস্তল, হকিস্টিক, লাঠি ব্যবহার করে। তারা আহত ছাত্রদের ওপর মেডিক্যালে গিয়েও ন্যক্কারজনক হামলা করেছে। ছাত্রলীগের এ হামলার আগে আন্দোলনকারী ছাত্ররা কোনো সহিংস আচরণ করেনি। আর আজ দেশের জনগণের নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে।

২৬ জুলাই শুক্রবার রাত ১২টা থেকে কারফিউ জারি করে সেনা মোতায়েন করে সরকার। তবুও বিক্ষোভ সমাবেশ ও পুলিশি নিপীড়ন চলমান ছিল, এখনো আছে।

আন্দোলনে সমর্থন জানায় বিএনপি ও জামায়াতসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। এরই মধ্যে জামায়াত ও তার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির নিষিদ্ধ করেছে সরকার। শুরু করেছে গণগ্রেফতার। সাড়ে ১০ হাজারের বেশি মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু আবু সাঈদের মতো এতগুলো (প্রায় ৩০০ এর মতো) স্বপ্নধারীর রক্তে ভেজা এ দেশের মাটি আর পদানত করে রাখার সুযোগ নেই। বুকে ও মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত শিক্ষার্থী খালিদ হাসান সাইফুল্লাহর (আইডিয়াল কলেজ, প্রথম বর্ষ) বাবা কতটা অসহায় হলে বলেন, ‘ওরা তো পায়েও গুলি করতে পারত?’ শিক্ষার্থী তানভীর আহমেদের (আশেকানে আউলিয়া ডিগ্রি কলেজ, চট্টগ্রাম) বাবার অসহায়ত্ব যেন সর্বজনীন- ‘কার কাছে দিব বিচার?’ কোটা-মেধা, সরকারি কিংবা বিরোধী দল অথবা সাধারণ নাগরিক হয়ে রাস্তায় নামলে কোন আইনে এই দেশে অপরাধ? ফৌজদারি অপরাধের কত ধারায় এর যে কোনোটির শাস্তি কি মৃত্যুদণ্ড?’

অবশ্য ভোটবিহীন একটি সরকারের কাছে এর চেয়ে বেশি কী আশা করা যায়! এদের পিয়নও ৪০০ কোটি টাকার মালিক হয়। এদের আমলেই গত ১৫ বছর দেশের অধিকাংশ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়। লক্ষকোটি টাকা অবাধে বিদেশে পাচার হয়। শত শত সন্তানের বুক গুলিতে ঝাঁজরা হয়ে যায়। তার পরও এদের ক্ষমতার লোভ কমে না।

কিন্তু সময় ফুরিয়ে গেছে। জেগে উঠেছে গোটা বাংলাদেশ। এই জালিম সরকারের অবসান ঘটিয়ে এক দিন আমরা একটি গণতান্ত্রিক দেশ নিশ্চয়ই পাবো সেখানে সব মৌলিক মানবাধিকারের নিশ্চয়তা থাকবে।

লেখক : সাবেক ছাত্রনেতা


আরো সংবাদ



premium cement