দুর্নীতিও কি তাদের কাছে ‘নীতি’
- তোফাজ্জল হোসাইন
- ২৮ জুলাই ২০২৪, ০৬:২৫
দুর্নীতি হলো এক ধরনের অসততা বা ফৌজদারি অপরাধ যার সাথে জড়িত ব্যক্তি বা সংস্থার ব্যক্তিরা। সাংবিধানিক অথবা রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনে যাকেই কর্তৃত্বপূর্ণ পদ অর্পণ করা হয়, তিনি বা তারাই অবৈধ সুবিধা অর্জন বা নিজের ব্যক্তিগত লাভের জন্য ক্ষমতার অপব্যবহার করে থাকেন। দুর্নীতির সাথে অনেক ক্রিয়াকলাপ জড়িত থাকতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে- ঘুষ, অবৈধ লেনদেন এবং আত্মসাৎ।
আমাদের এ সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা, সুন্দর দেশে জন্ম নেয়ার পর রেমিট্যান্স যোদ্ধারা বিদেশে শ্রম বিকাতে গেলে আজো মিসকিন বলে গালি শোনেন। সাত সমুদ্র তেরো নদী পেরিয়ে লর্ড ক্লাইভ অথবা কলম্বাসের দেশে অভিজাত হয়ে সফরে গেলেও ‘পুওর’ বা গরিব অথবা দুর্নীতিবাজ হিসেবে সন্দেহ করে। আন্তর্জাতিক সমাজে আমাদের নাগরিক ও সামাজিক মর্যাদা এভাবে ধুলায় মিশে গেছে। এই ভাবমর্যাদা পুনরুদ্ধার করা জরুরি।
আমাদের দেশে দুর্নীতি অতি পুরনো সামাজিক সমস্যা। সাম্প্রতিক সময়ে দুর্নীতির ভয়ঙ্কর রূপ জাতির সামনে উন্মোচিত হলো। এখন অবিরত নেতিবাচক সামাজিক প্রতিযোগিতায় দুর্নীতির চর্চা চলে এবং এখনো শুধু বলাবলি চললেও ঢিলেঢালাভাবে কিছু প্রশাসনিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেয়া হলেও সামাজিক নীতি ও চলমান কৃষ্টিতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সহ্যের শূন্যসীমা (জিরো টলারেন্স) নীতি গ্রহণ করার কোনো নিয়ম তৈরি হয়নি।
বুক ছাপিয়ে ওঠা নির্মমতার ব্যথা নীরবে চেপে রেখে পরম ধৈর্যের সাথে একাকিত্বের জীবন পার করছে সাধারণ মানুষ। ভয় আতঙ্কে নিজের ওপর বিশ্বাস হারিয়ে মানসিক ভারসাম্য হারানোর উপক্রম অনেকের। অনেকে আত্মহত্যার মতো চরম পথ বেছে নেয়ার পর্যায়ে। আর এমনই সময়ে দেশে চলছে এক শ্রেণীর মানুষের অবাধ লুটপাট, দুর্নীতি, রাহাজানি, হয়রানি এমনকি ডাকাতি। জাতির দুর্দিনে অবৈধ অর্থের প্রাসাদ গড়েছে আজিজ, বেনজীর, আছাদুজ্জামান, মতিউর ও আরো অনেক কালোবিড়াল।
বেনজীর, আছাদ মিয়া, মতিউরদের ঘটনা সামনে আসায় বেশি অস্থিরতা পুলিশ ও কাস্টমসে। প্রশাসনসহ অন্যান্য সেক্টরের বিভিন্ন দফতরের ঊর্ধ্বতনরাও আতঙ্কে। কারণ এসব সংস্থায় দুর্নীতি অনেকটাই ওপেন সিক্রেট।
মাঠপর্যায়ের সব স্তরের উচ্চ পর্যায়েই অস্বস্তি চলছে। একজনের দুর্নীতি ধরা পড়লে স্বাভাবিকভাবেই অন্যদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা যায়। তবে এবারের ধাক্কাটা একটু বড়। তাই কে কখন কার বিরুদ্ধে তথ্য ফাঁস করেন সেই শঙ্কা ভর করেছে দুর্নীতিবাজ সবার মধ্যেই। এদের অভ্যন্তরীণ গাঁথুনি বড় পোক্ত। পদ-পদায়ন-পদোন্নতিসহ নানান সুযোগ-সুবিধা হাতানোতে তাদের কানেকশন আঠার মতো। যে কারণে বিভাগীয় পর্যায়ে দুর্নীতিসহ নানান অভিযোগ তারা উৎরে যান ম্যাজিকের মতো। জাতির এই দুর্দিনে যারা কুকর্মে লিপ্ত তাদেরকে যদি আইন সঠিক শাস্তি দিতে ব্যর্থ হয় তবে জাতি হিসেবে আমরা সবাই হবো নির্লজ্জ। অনেকে পেটের দায়ে অন্যায় করে। এমন লোকের অভাব নেই। কিন্তু যারা লোভ-লালসা এবং বিলাসিতার জন্য অন্যায় করে তাদেরকে কিভাবে প্রশ্রয় দেয়া যায়? বিচার হয়নি সুরঞ্জিতের মতো কালোবিড়ালের এবং বালিশকাণ্ডের, যার জন্য দুর্নীতি মহাব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। এ সব দুর্নীতিবাজরা পেটের দায়ে নয়, এরা অন্যায় করে চলছে রাষ্ট্রীয় ছত্রচ্ছায়ায় এবং এদের পাশবিক ও বিকৃত চরিত্রের তৃপ্তি মেটাতে।
আমাদের দুর্ভাগ্য যে, সমাজ এখন আপাদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে গেছে। দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়েছে সব সীমা ছাড়িয়ে সমাজের আরো গভীরে। সুসংগঠিতভাবে দুর্নীতি হচ্ছে।
এর প্রকৃত কারণ, সমাজের, প্রশাসনের কোথাও তেমন কোনো জবাবদিহির অবশিষ্টও নেই। সুশাসনের মূলনীতি হচ্ছে জবাবদিহি বা দায়বদ্ধতা। এটি প্রতিষ্ঠা করা না গেলে সুশাসন আসবে না। এটি আসতে হবে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে।
দুর্নীতির সব সঞ্চয় জমা হয় শেষে ব্যাংকে। দেখা যাচ্ছে, সরকার কর্তৃক একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিকে চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়ার পর ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ৮০ শতাংশ, আগে যা ছিল ১ দশমিক ৫ শতাংশ। শুধু একজন চেয়ারম্যান ও এমডির কারণে ব্যাংকটির এমন অবস্থা হয়ে গেল! ৮০ শতাংশ ঋণ যখন খেলাপি হয়ে গেল, তখন তো সরকারের উচিত কাউকে না কাউকে দায়ী করা। দায়ী ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া। আর এত ঋণ যে খেলাপি হয়ে গেল, তা তো কোনো শাখা ব্যবস্থাপকের জন্য হয়নি। চেয়ারম্যান-এমডি ছাড়া একটি ব্যাংকে এত খেলাপি হতে পারে না। কিন্তু চেয়ারম্যান দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তার মানে চেয়ারম্যানকে যারা রক্ষা করছেন, তারা দুদকের চেয়ে শক্তিশালী। এ কারণে তার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।
মূলত ব্যাংক খাতের রাজনীতিকীকরণ করতেই এমন পরিবর্তন। কিন্তু ব্যাংক রাজনীতির জায়গা নয়। একটি ব্যাংকের ১০ শতাংশ টাকা মালিকের বা সরকারের। বাকি টাকা পুরোটাই জনগণের আমানত। এই আমানতের টাকার সুরক্ষা দেয়ার দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের। এ কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর যত চাপ, যাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমানতকারীদের স্বার্থ না দেখে যারা লুটপাট করে তাদের স্বার্থ দেখে। এটি বলতে ভালো না দেখালেও বাস্তবতা এটিই।
সমস্যা হচ্ছে, আমানতকারীদের স্বার্থ দেখার জন্য যারা আছে তারাও দুর্নীতিগ্রস্ত। তাই বলতে হয়, অভাগা দেশের মানুষের চোখ থাকতেও তারা অন্ধ না হলে এসব ব্যাংক চেয়ারম্যানদের শাস্তি হতো। সবকিছু জানার পর মনে প্রশ্ন উদয় হয়েছে, এদের কারা রক্ষা করছে, কিসের বিনিময়ে রক্ষা করছে? প্রশ্ন হলো, দুর্নীতি কি তাহলে অর্থনীতি, পৌরনীতি, রাজনীতির মতোই একটি নীতি? নাকি সব কিছুর সমন্বয়ে গঠিত এই নীতি যা সব ধরাছোঁয়ার বাইরে! তাই যদি হয় তবে দুর্নীতিকেই বরং জাতীয় নীতি ঘোষণা করা হোক।
অনেকেই সরকারের সমালোচনা করে বলেছেন, দেশে আজ ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। জনগণের মধ্যে একটা ঐকমত্য গড়ে উঠেছে। তাদের এগিয়ে আসার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সরকার যেভাবে দেশ চালাতে চাচ্ছে, সেটি আর পারবে না। হয়তো মানুষ একদিন দাঁড়িয়ে বলবে, দেয়ালে আমাদের পিঠ ঠেকে গেছে। এর পরিবর্তন আনতে হবে। এখন কথা হলো, বিড়ালদের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে? বিদেশীরা? নাকি দেশের মুক্তিকামী সাধারণ মানুষ?
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা