পরম শান্তি ও চরম অশান্তি
- মো: সরোয়ার উদ্দিন
- ১২ জুন ২০২৪, ০৫:৩৬
মহান সৃষ্টিকর্তা এ পৃথিবীতে সব সৃষ্টির মধ্যে শ্রেষ্ঠ মেধাশক্তি দান করেছেন শুধু মানুষকে। এ শক্তিবলে মানুষ দক্ষতার সাথে সহজে বিশ্বের সবকিছু থেকে ইচ্ছানুযায়ী কেবল দরকারি অংশটুকু নির্বাচন, নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবহার সুসম্পন্ন করতে সক্ষম হয়।
লাল, সবুজ ও আকাশি- এ তিন মৌলিক রঙের সমন্বয়ে মানুষ যেমন হাজারের অধিক প্রকার রঙ উদ্ভাবন করেছে, তেমনই সাগরের তলদেশ ও ভূগর্ভ থেকে মণি, মুক্তা ও হীরা প্রভৃতি সংগ্রহ এবং সৌরজগৎ জয় করার মতো অসাধ্য সাধন করতে সক্ষম হয়েছে । আধুনিক প্রযুক্তি হিসেবে কম্পিউটার ‘সফটওয়্যার’ ও ‘হার্ডওয়্যার’ উদ্ভাবন, উন্নয়ন, ব্যবহারে দক্ষ প্রোগ্রামার, যোগ্য সিস্টেমস অ্যানালিস্ট ও অপারেটর প্রভৃতি তৈরি, ডাটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমসের (ডিবিএমএস) আওতায় নানা প্রকার প্রয়োজনীয় ডাটাবেজ ফাইল সার্ভারে (ডিবিএফএস) যথাযথভাবে সংরক্ষণ এবং আদান-প্রদানে সক্ষম হয় মানুষ। এ ছাড়াও তারা খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা, শিক্ষা, বাসস্থান, পরিবহন ও যোগাযোগব্যবস্থা; বিচার, প্রশাসন ও নির্বাহী বিভাগ; সমাজ ও সংস্কৃতি, রাজনীতি, অর্থনীতি, সরকার ও নির্বাচন প্রভৃতি প্রত্যেক ক্ষেত্রে বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা প্রণয়ন, বাছাই ও নিয়োগে সৎ, যোগ্য, দক্ষ, সাহসী, কর্তব্যপরায়ণ, দেশপ্রেমিক প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনাসহ সব কর্মক্ষেত্রেই সফলতা নিশ্চিত করেছে।
এভাবে মানুষ বিশ্বের বিশাল ভাণ্ডারের কেবল আংশিক জ্ঞানার্জনসহ আয়ত্তকরণ এবং ইচ্ছানুযায়ী কেবল প্রয়োজনীয় অংশটুকু ব্যবহারের কৌশল অর্জনের মধ্য দিয়ে এ পৃথিবীকে সুখকর আবাসভূমিতে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছে।
কিন্তু সামান্য বাতাস (শক্তি) ছাড়া গাছের পাতা পর্যন্ত একটুকুও নড়ে না। অথচ চন্দ্র সূর্য, গ্রহ নক্ষত্র সবকিছু একই নিয়মে আবর্তিত হচ্ছে।
বাতাসসহ সুষম খাদ্য, ফলমূল, জমি, পানি ও পাহাড় প্রভৃতি বস্তু সৃষ্টিকারী কে? কার আদেশ-নির্দেশে সুশৃঙ্খলভাবে আবর্তিত হচ্ছে মহাবিশ্ব? ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, সমুদ্রে তুফান ও সংক্রামক রোগব্যাধি প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগের উৎপত্তিই বা কোথায়? কার নির্দেশে আবারো শান্ত হয়?
উল্লিখিত সবকিছু সৃষ্টি, পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ সৃষ্টিকর্তার একক ক্ষমতায় ঘটছে। আসমানি কিতাব ও রাসূলের হাদিসে বিস্তারিতভাবে ও হুবহু বর্ণনা যথাযথ প্রমাণ পাওয়া যায়।
সৃষ্টিকর্তার বিধান মোতাবেক ও রাসূল সা:-এর নির্দেশিত পথ অনুযায়ী প্রতিদিন নিয়মিতভাবে পাঁচবার নামাজ আদায় করার মধ্য দিয়ে মানুষের লোভ, লালসা, প্রতিহিংসা, রাগ, আসক্তি ও প্রবৃত্তির উত্তেজনা উৎকণ্ঠা প্রভৃতি প্রশমিত হয়। নামাজ মানব হৃদয়কে সব ধরনের যন্ত্রণা থেকে মুক্ত ও পরিষ্কার করে।
ধনীরা ধনে, জনে ও ক্ষমতায় ভরপুর। সুখ ও আনন্দের কোনো ঘাটতি নেই। অপরদিকে গরিবের পেটে ক্ষুধার জ্বালা এবং কঠিন রোগব্যাধিতে আক্রান্ত। ধনীদের মহাসুখ এবং গরিবের চরম দুঃখ-কষ্টের মধ্যে সৃষ্টিকর্তা দ্বীনের প্রতি প্রকৃত মহব্বত ও আন্তরিকতা যথাযথভাবে পরীক্ষার জন্য সবার ওপর রোজা ফরজ করেছেন। শরীরের যেকোনো ধরনের অস্বাভাবিকতা ও কঠিন রোগব্যাধি থেকে রোজা মুক্ত রাখে।
দ্বীনদরদিদের জন্য সৎপথে ও বৈধভাবে উপার্জিত অর্থ দিয়ে ‘হজ’ পালন ফরজ ঘোষণা করেছেন মহান সৃষ্টিকর্তা। বিশ্ব মানবতার শ্রেষ্ঠ দূত এবং সৃষ্টিকর্তার অতি প্রিয় রাসূল হজরত মুহাম্মদ মোস্তফা সা:-এর জন্মস্থান আরবকে সব অত্যাচার, অনাচার ও হানাহানি প্রভৃতি অশান্তি ও বিশৃঙ্খলাপূর্ণ পৃথিবী থেকে মুক্ত করার জন্য এই আয়োজন। হজরতের দীর্ঘ ৬৩ বছরের নানা স্মৃতিবিজড়িত এ স্থান সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে ভরপুর। যথাযথভাবে হজ পালনের মধ্য দিয়ে সব রকমের মানসিক অশান্তি দূরসহ কঠিন হৃদয়ও শীতল হয়ে যায়।
দুনিয়ায় সম্পদশালীরা প্রত্যেক বছর শেষে মোট আয় থেকে ব্যয় বাদে উদ্বৃত্তের (নগদ টাকা, ব্যাংক জমা এবং মূল্যবান স্বর্ণালঙ্কার প্রভৃতি) ওপর ২.৫ (আড়াই) শতাংশ হিসেবে সদকা বা জাকাত ফকির, মিসকিন, (জাকাত বণ্টনে) নিয়োজিত কর্মী, দ্বীনের প্রতি অনুকরণ ও অনুযোগকারী, গোলামি (বন্ধন) ও ঋণের দায় থেকে মুক্ত, দ্বীনের প্রতি সংগ্রামীসহ মুসাফিরদের- হক (প্রকৃত দাবিদার)।’ (সূরা তাওবা, আয়াত-৬০)
প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, অগ্নিকাণ্ড ও সংক্রামক রোগব্যাধি প্রভৃতিতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, অঞ্চল ও প্রতিষ্ঠানকে সাহায্য সহযোগিতা ছাড়াও দ্বীনের সাথীরাও সাহায্য হিসেবে প্রত্যেক মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ এবং সদস্যরা বছর শেষে এক মাসের সমান আয়ের সমপরিমাণ অর্থ দিয়ে এতিম, অসহায়, ফকির ও শহীদ পরিবারের সদস্য প্রভৃতির মধ্যে অর্থ, খাদ্য, কাপড়, প্রয়োজনীয় সামগ্রীসহ নানা উপহার ইত্যাদি বিতরণ করে।
শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে পুঁজি সংগ্রহ এবং তা দিয়ে দ্বীনি ব্যবসায়, যথা- ব্যাংক ও বীমা প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পাশাপাশি কেবল সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রে ক্যারিশমেটিক ও দক্ষতার সাথে ব্যবসায় পরিচালনার মাধ্যমে অর্জিত লাভ-ক্ষতি থেকে প্রথমে কর্মচারীদের বেতন ও ভাতাদিসহ সব ধরনের খরচ পরিশোধ অতঃপর অবশিষ্ট অংশে বিনিয়োগকারী, সংগঠনসহ নানা ফান্ডে বণ্টন করা হয়।
সমপর্যায়ে দ্বীনের প্রতি আস্থাশীল কর্মীদের ভেতর সর্বাধিক যোগ্যকে দলকর্তা-নেতা হিসেবে নির্বাচন করা হয়। এক্ষেত্রে সবার প্রার্থী ও সমর্থনকারী। কিন্তু কেউই নিজেকে সমর্থন করতে পারে না। কেবল অন্যকে সমর্থন করার সুযোগ আছে। এভাবে সর্বাধিক সংখ্যক সমর্থনপ্রাপ্তকে নেতা হিসেবে নির্বাচন করা হয়।
আদর্শসহ দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টির পাশাপাশি যোগ্যতাসহ পছন্দের ভিত্তিতে কর্মসংস্থানের জন্য দ্বীনিরা প্রতিনিয়ত কাজ করছে। এ নিরিখে দেশীয় শিল্পে উৎপাদিত পণ্যে নানা বৈচিত্র্যকরণের ক্ষেত্রে সিলেটে চা, খুলনা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে-মাছ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও মেহেরপুরে আম, কুষ্টিয়ায় ধান ও কাপড় এবং উত্তরবঙ্গ, মধুপুর টাঙ্গাইলসহ পাহাড়িয়া অঞ্চলে-আনারস প্রভৃতি প্রকল্প স্থাপনে পরিকল্পনা বিবেচনায় আছে। কিছু মানুষ কেবল দুনিয়ার ভেতর ভোগবিলাসী জীবন বিশ্বাস ও পছন্দ করে। কখনো মৃত্যুর পর কবরে অবস্থান এবং রোজ হাশরে চূড়ান্ত বিচারের মাধ্যমে চির শান্তি (বেহেশত) ও চরম অশান্তি (দোজখ) কখনো বিশ্বাস করে না।
সবসময় এ দুনিয়ায় প্রাপ্তি, অর্জন, লোভ-লালসা ও প্রবৃত্তি প্রভৃতি স্বার্থ হাসিলের কৌশল নিয়ে ব্যস্ত। এ নিরিখে অর্থ, সম্পদ, নাম ও যশ, প্রতিপত্তি এবং সবার উপরে কর্তৃত্ব প্রভৃতিতে বিশ্বাসী। এক্ষেত্রে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, অঞ্চল, গোত্র ও জাতি প্রভৃতি স্বার্থ পুরাপুরিভাবে ভুলে যায়। নানা অপকর্ম, অপরাধ, অত্যাচার, জুলুম ও শোষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। সব ক্ষেত্রে কেবল গুরুত্বপূর্ণ পদ ও আসন চাই। অনেক ক্ষেত্রে সফলতাও পায় অতঃপর নানা অনিয়ম, ঘুষ, দুর্নীতিসহ খুনখারাবি প্রভৃতি অন্যায় অপরাধ করতে কোনো দ্বিধাবোধ করে না। অল্প সময়ের ভেতর দেশ-বিদেশে প্রচুর সম্পদসহ ব্যাংক ব্যালান্স, নানা ব্যবসায়, গাড়ি ও বাড়ি প্রভৃতির মালিকও হয়ে যায়। সম্পদ ও ক্ষমতার দাপটে সন্তানসহ নিকটতম আত্মীয়-স্বজনরা সবসময় নানা পার্টি ও অনুষ্ঠানসহ আমোদ-প্রমোদে ব্যস্ত থাকে। কেবল প্রোগ্রাম আর প্রোগ্রাম। খাওয়া ও ঘুমের প্রতি খেয়াল থাকে না। এভাবে বেশি দিন যায় না। কিছু দিনের ভেতর বিশৃঙ্খলাপূর্ণ জীবনে নানা দুর্ঘটনাসহ রোগব্যাধি কিছুতেই পিছ ছাড়ে না। পরিশেষে, অতিক্লান্ত হিসেবে বিছানায়, হাসপাতাল ও কারাগারে ঠাঁই হয়। এ অবস্থায় কেবল বিগত দিনের সব অন্যায়, অপরাধ ও জুলুম প্রভৃতি কষ্টের চিত্র ফুটে ওঠে। অন্তরটাকে কুরে কুরে খায়। শরীরে যন্ত্রণাসহ কঠিন রোগব্যাধিতে ভোগে। একদিন এ পৃথিবী হতে বিদায় নেয়।
ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীতে মানুষের জীবনে শ্রেষ্ঠ সম্পদ আবাদ। জন্মের পর হতে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এ আবাদ চলতে থাকে। মৃত্যুর সাথে সাথে আবাদ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়। এ নিরিখে দ্বীনভিত্তিকসহ পৃথিবীর মানুষ ও সব কিছুর উন্নয়ন ও কল্যাণের কার্যাবলি দ্বারা দুনিয়ায় সুখ ও সম্মান প্রভৃতিসহ এবং পরকালে চির শান্তি (বেহেশত) নিশ্চিত করা যায়। পক্ষান্তরে দ্বীনবিমুখীরা কেবল স্বার্থ হাসিলের জন্য বিপর্যয় ও ধ্বংসাত্মক কার্যাবলি সৃষ্টি করে। যা দ্বারা অশান্তি ও হানাহানি প্রভৃতিতে এ দুনিয়ায় নানা দুঃখ, কষ্ট ও যন্ত্রণা প্রভৃতিসহ পরকালে নিশ্চিতভাবে চির অশান্তি (দোজখ) ভোগ করতে হয়।
লেখক : সরকারি কলেজশিক্ষক
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা