দেশে মানবিক চিকিৎসা সঙ্কট
- ডা: মো: তৌহিদ হোসাইন
- ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২০:৩৫, আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২০:৫৯
পৃথিবীবাসী মূলত সুবিধাবঞ্চিত ও সুবিধাভোগী এই দুই ভাগে বিভক্ত। বিভিন্ন শ্রেণিপেশা, ধনী-গরিব, সুস্থ-অসুস্থ, দক্ষ-অদক্ষ ইত্যাদি সব ধরনের মানুষ নিয়েই সমাজ প্রতিষ্ঠিত। সবার যোগ্যতা, মেধা, শারীরিক সক্ষমতা, জন্মগত সুযোগ-সুবিধা এক নয়। মানুষ সৃষ্টির এই অসামঞ্জস্যতার তাৎপর্য হতে পারে পার্থিব জীবন পরস্পরের সহযোগিতায় পরিচালনা করা এবং পরকালীন জীবনের জন্য একজন আরেকজনের পরীক্ষা। কিন্তু আমরা মানুষেরা পৃথিবীবাসীকে কৃত্রিমভাবে দু’টি শ্রেণীতে বিভক্ত করে ফেলেছি। একটি শ্রেণী হলো সুবিধাবঞ্চিত, আরেকটি হলো সুবিধাভোগী। পৃথিবীতে কারো গরিব হওয়া তার পাপের ফসল নয়, আবার কারো ধনী হওয়াও যোগ্যতার ফসল নয়। পরকালীন বিচার হবে আল্লাহ যাকে যতটুকু সুযোগ-সুবিধা এই পৃথিবীতে দিয়েছেন তার আলোকে। যেমন- সূরা আনআমের ১৬৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন- ‘আর তিনি সেই সত্তা, যিনি তোমাদেরকে জমিনের খলিফা বানিয়েছেন কতককে কতকের ওপর মর্যাদা দিয়ে যাতে তোমাদের যাকে যা দেয়া হয়েছে তা দিয়েই পরীক্ষা করতে পারেন।’ সুবিধাবঞ্চিত বলতে তাদেরকেই বোঝানো হচ্ছে যাদের অধিকার থাকার পরও বিভিন্ন কারণে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সুযোগ থেকে বঞ্চিত।
স্বাস্থ্য সুরক্ষায় চিকিৎসা হলো মানুষের একটি অত্যাবশ্যকীয় পদক্ষেপ যা ছাড়া জাতি কোনোভাবেই সুস্থ ও কাজে সক্রিয় থাকতে পারে না। অসুস্থ হলে চিকিৎসা করা মানুষের অন্যতম একটি মৌলিক মানবিক চাহিদা। আমরা জানি, মানুষের বেঁচে থাকা, জীবনের বিকাশ ও সভ্য-সামাজিক জীবনের জন্য যে সব উপকরণ একান্তই অপরিহার্য যার কোনো বিকল্প নেই তাদের সমষ্টিকেই মৌলিক মানবিক চাহিদা বলে। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা- এই পাঁচটি হলো মানুষের মৌলিক মানবিক চাহিদা। এই চাহিদা পূরণে বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলো সঙ্কটে হাবুডুবু খাচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের ৬০ শতাংশ মানুষ প্রাথমিক স্বাস্থ্য সুবিধার ন্যূনতম সুযোগ থেকে বঞ্চিত। সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৪৩ শতাংশ পরিবার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করে, ধার-কর্জ করে বা নিকটাত্মীয়দের কাছ থেকে সহায়তা গ্রহণ করে এবং প্রয়োজনে চড়াসূদে ঋণ নিয়ে চিকিৎসার খরচ মেটায়। বাংলাদেশীদের তাদের মোট চিকিৎসা ব্যয়ের ৬৮.৫০ শতাংশ খরচ নিজেদেরই বহন করতে হয়। অথচ একটি কল্যাণরাষ্ট্র তার নাগরিকদের চিকিৎসাসেবা বিনামূল্যেই করে থাকে।
ভারতের বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বিদেশীদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে দেশটি যে ৮৮ কোটি ৯৩ লাখ ডলার আয় করেছে তার মধ্যে বাংলাদেশী রোগীদের কাছ থেকেই আয় করেছে ৩৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার। অর্থাৎ প্রায় দুই হাজার ৮০০ কোটি টাকা। প্রতিবেদনে প্রকাশ, গত অর্থবছরে চার লাখ ৬০ হাজার বিদেশী রোগী ভারতে চিকিৎসা নিয়েছেন, যাদের মধ্যে এক লাখ ৬৫ হাজার বাংলাদেশী যার মানে চিকিৎসা নেয়া বিদেশীদের প্রতি তিনজনের একজনই ছিলেন বাংলাদেশী।
সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, গড়ে প্রতি বছর পাঁচ লাখ মানুষ বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছে। এতে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে। এর বড় অংশই যায় ভারতে। এ ছাড়া প্রতিটি রোগীর ভ্রমণ, থাকা, খাওয়া ও আনুষঙ্গিক ব্যয় রয়েছে। বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমসিএ) ও বাংলাদেশ সোসাইটি অব প্রাইভেট হসপিটালস সূত্রের বরাত দিয়ে এ তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে অদক্ষতা ও আস্থার সঙ্কটে বিদেশে যাচ্ছে রোগীরা। ভারত ছাড়া মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরে যাচ্ছে চিকিৎসার জন্য। ‘কি রিজনস ফর মেডিক্যাল ট্রাভেল ফ্রম বাংলাদেশ টু ইন্ডিয়া’ শীর্ষক গবেষণার তথ্যে দেখা গেছে, বাংলাদেশের কোন শ্রেণিপেশার মানুষ চিকিৎসার জন্য ভারতে বেশি যাচ্ছে তা-ও উঠে এসেছে গবেষণায়। এতে দেখা যায়- ব্যবসায়ী, বেসরকারি চাকরিজীবী, ছাত্র-শিক্ষক, সরকারি কর্মকর্তা ও শ্রমিকরা বেশি যাচ্ছেন ভারতে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের প্রতিবেদনের তথ্য মতে, খরচের কথা মাথায় রেখে দেশের ১৬.৪ শতাংশ পরিবার, অর্থাৎ তিন কোটির বেশি মানুষ হাসপাতাল, ক্লিনিক বা কোনো চিকিৎসকের কাছে যায় না। প্রয়োজন থাকলেও তারা সেবা নেয় না। বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবার জন্য মোট যে ব্যয় হয় তার প্রায় ৭০ শতাংশই আসে নাগরিকদের নিজের পকেট থেকে। এটি সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি। গত কয়েক দশকের ব্যবধানে স্বাস্থ্য ব্যয়ে ব্যক্তি খরচ দ্বিগুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।
এক দিকে গরিব মানুষ দেশেই পয়সার অভাবে চিকিৎসা করতে পারছে না। অন্যদিকে ধনীরা দলে দলে চিকিৎসা নেয়ার জন্য ব্যাপকহারে দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও ভারতের বিভিন্ন হাসপাতালের অসংখ্য ইনফরমেশন সেন্টার বাংলাদেশে স্থাপন এ ইঙ্গিত দেয়, আসলে আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থারই চিকিৎসা দরকার।
এ বছর (২০২২-২৩) স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বরাদ্দ ৩৬ হাজার ৮৬৩, যা গত বছরের তুলনায় মাত্র চার হাজার ১৩২ কোটি টাকা বেশি। নতুন বরাদ্দের মাধ্যমে স্বাস্থ্য খাতে মোট বাজেটের ৫.৪ শতাংশ পাওয়া গেছে, যা গত বছরের বাজেটে ছিল ৫.২ শতাংশ। প্রকৃতপক্ষে চাহিদা ও মুদ্রাস্ফীতির কথা বিবেচনায় নিলে বাজেট গত বছরের তুলনায় কম বটে।
আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী, স্বাস্থ্য খাতে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির বরাদ্দ কমপক্ষে ৫ শতাংশ থাকা প্রয়োজন হলেও বাংলাদেশে তা শূন্য দশমিক ৯২ শতাংশ মাত্র। আমাদের দেশে রোগীর সংখ্যা বেশি, চিকিৎসার সরঞ্জামাদি ও ওষুধপত্র সীমিত, ডাক্তারসহ অন্যান্য লোকবলও সীমিত। ফলে সত্যিকারের সেবাদান আসলেই সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে দেশের ভঙ্গুর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বিশাল সঙ্কটে নিপতিত। দেশের রাজধানী ঢাকা এবং বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের হাসপাতালগুলোর নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রসহ (আইসিইউ) সাধারণ ওয়ার্ডে মারাত্মক শয্যা সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
শেরেবাংলা নগরস্থ সরকারি কিডনি হাসপাতালটি এখন অসংখ্য অসহায় কিডনি রোগীর ভারে ন্যুব্জ। কিডনি রোগীর সংখা ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়ার কারণে অন্যান্য সরকারি হাসপাতালের মতোই এই হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার মতো পর্যাপ্ত বিছানা নেই। অনেক রোগীই পাঁচ-ছয় হাসপাতাল ঘুরে শেষ হাসপাতালের দরজায় মারা যাচ্ছেন। আসলে এ দেশে গোটা চিকিৎসা ব্যবস্থাটাই পাতলা ছেঁড়া তারের ওপর ঝুলে আছে। একটু নাড়া লাগলেই সবটা ভেঙে পড়বে। এত সব সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও সরকারি হাসপাতালেই রোগীরা কম টাকায় সবচেয়ে ভালো চিকিৎসাটা পান।
দেশের বেশির ভাগ মানুষ শুধু সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপরই নির্ভরশীল। সরকার যখন স্বাস্থ্য খাতে কম বাজেট বরাদ্দ করে, তখন চিকিৎসা নিতে গিয়ে মানুষের নিজের পকেটের খরচ বেড়ে যায়। এ দেশের দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত মানুষ সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছেন। তাদের সংসারের ব্যয় মিটিয়ে চিকিৎসা খরচ চালানোর কোনো উপায় থাকে না। আবার তাদেরই অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি বেশি। অসুস্থতার কারণে সাধারণ মানুষের জমা টাকা খরচ হয়, আয় কমে যায়, উৎপাদন কমে যায় আর অভাব বাড়ে। দারিদ্র্য মানুষের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে দেয় না।
বাংলাদেশে প্রতি দুই হাজার ৩৯ জনের জন্য মাত্র একজন রেজিস্টার্ড চিকিৎসক আছেন। সীমিত লোকবলের মধ্যে স্বাস্থ্য খাতে ৪৩ হাজার পদ খালি রয়েছে বলে জাতীয় সংসদকে জানিয়েছেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তিনি জানান, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে ৩৪ হাজার ৯২৩টি, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগে আট হাজার ৫৭টি শূন্যপদ রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের অনেক দেশের সরকার নাগরিকদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দিয়ে থাকেন।
আমাদের দেশে প্রতি বছর গড়ে ১০ লাখ লোক মারা যাচ্ছে যার ৭০ শতাংশই হলো অসংক্রামক রোগের কারণে। সে হিসাবে প্রতিদিন এক হাজার ৯০০ লোক মারা যায় অসংক্রামক রোগে। আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সারের (আইএআরসি) অনুমিত হিসাব সূত্রে, প্রতি বছর বাংলাদেশে নতুন করে এক লাখ ৫০ হাজার মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। আর মারা যায় এক লাখ আট হাজার মানুষ।
ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) এবং পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) জরিপের চতুর্থ ধাপের গবেষণায় জানা গেছে, দেশে গত বছর মার্চে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর ২০২১ সালের আগস্ট পর্যন্ত ১৮ মাসে নতুন করে তিন কোটি ২৪ লাখ মানুষ দরিদ্র হয়েছে। মার্চে এই সংখ্যা ছিল দুই কোটি ৪৫ লাখ। গবেষণায় উঠে আসে, চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত নতুন করে দরিদ্রের সংখ্যা বেড়েছে ১৯.৫৪ শতাংশ। এই হার চলতি বছরের মার্চে ছিল ১৪.৭৫ শতাংশ। এই সমস্ত দরীদ্র জনগোষ্ঠী যারা দু’বেলা ভাতই জোগাড় করতে পারে না তারা, কীভাবে চিকিৎসার খরচ মেটাবে। বর্তমানে যত লোক গরিব হচ্ছে তার এক-তৃতীয়াংশই হচ্ছে ব্যয়বহুল চিকিৎসা করতে গিয়ে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০২১ সালের একটি আপডেটেড রিপোর্ট অনুসারে, সারা বিশ্বের দেশে দেশে ২০১৯ সালের ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য খরচের একটি চিত্র উঠে এসেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য খরচ সর্বোচ্চ এবং তা হলো ৭২.৩ শতাংশ। বাকি ৩১.৭ শতাংশ সরকারের আনুক‚ল্যে হয়ে থাকে। ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য খরচ যে সমস্ত দেশের নাগরিকদের বহন করতে হয়, তাদের মধ্যে ওই রিপোর্ট অনুসারে সর্বনি¤œ হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে (১১.৩ শতাংশ)। এ ছাড়াও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ৫৪.৮ শতাংশ, পাকিস্তানে ৫৩.৮ শতাংশ, মালয়েশিয়ায় ৩৪.৬ শতাংশ, দক্ষিণ কোরিয়ায় ও সিঙ্গাপুরে ৩০.২ শতাংশ, ব্রিটেনে ১৭.১ শতাংশ, জাপান ও জার্মানে ১২.৮ শতাংশ এবং নিউজিলান্ডে ১২.২ শতাংশ।
‘ডিজিজ-স্পেসিফিক ডিসট্রেস হেলথকেয়ার ফাইন্যান্সিং অ্যান্ড ক্যাটাস্ট্রোপিক আউট-অব-পকেট এক্সপেন্ডিচার ফর হসপিটালাইজেশন ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের ২৬.১ শতাংশ পরিবার গত কয়েক বছরে হাসপাতালে ভর্তির জন্য বিপর্যয়মূলক স্বাস্থ্য ব্যয় (সিএইচই) করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা স্বাস্থ্য ব্যয়কে বিপর্যয়মূলক হিসেবে তখনই চিহ্নিত করে যখন একটি পরিবারে খাবারের চাহিদা মেটানোর পর চিকিৎসার জন্য তাদের মোট উপার্জনের ৪০ শতাংশ খরচ করতে হয়।
সমীক্ষায় আরো দেখা যায়, বাংলাদেশে হাসপাতালে ভর্তির ক্ষেত্রে বিপর্যয়মূলক স্বাস্থ্য ব্যয়ের ঘটনা বাড়ছে। ২০১০ সালে ১৪.২ শতাংশ থেকে এবং ২০১৬ সালে তা হয়েছে ২৪.৬ শতাংশ এবং ২০২১ সালে হয়েছে ২৬.১ শতাংশ।
এ গবেষণার ফলাফল গত ২০ আগস্ট ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত হয়। ফলাফলে দেখা যায়, ৫৮ শতাংশ পরিবার হাসপাতালের খরচ মেটাতে গিয়ে দুর্দশার সম্মুখীন হয়। সমীক্ষা অনুসারে, ক্যান্সার ও কিডনি রোগের মতো বড় ধরনের রোগের জন্য একেকটি পরিবারকে সামর্থ্যরে বাইরে খরচ করতে হচ্ছে এবং এর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এই খাতে বীমার সুযোগ না থাকায় চিকিৎসার পুরো খরচ ডিস্ট্রেস ফাইন্যান্সিংয়ের মাধ্যমে মেটাতে হয় রোগীদেরই।
ডিস্ট্রেস ফাইন্যান্সিং বা চরম অর্থসঙ্কটের মধ্যে রয়েছে গৃহস্থালির সম্পদ, জমি বিক্রি বা বন্ধক রেখে টাকা ধার করা এবং বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়দের কাছ থেকে অর্থসাহায্য নিয়ে সাধ্যের বাইরে গিয়ে খরচের ব্যবস্থা করা।
দেশী-বিদেশী গবেষক দিয়ে পরিচালিত এই সমীক্ষায় ৪৫ হাজার ৪২৩টি পরিবারের এক লাখ ৮৩ হাজার ৭৫৭ জনের ওপর গবেষণা চালানো হয়। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগী ও তাদের হাসপাতালে ভর্তির খরচসহ পরিবহন খরচ, অতিরিক্ত খরচ এবং অন্যান্য দৈনিক খরচ-বিষয়ক তথ্যের ওপর ভিত্তি করে গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়।
ওই গবেষণায় উঠে আসে, বাংলাদেশীদের তাদের মোট চিকিৎসা ব্যয়ের ৬৮.৫০ শতাংশ খরচ নিজেদেরই বহন করতে হয়। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের হেলথ ইকোনমিক্স ইউনিট বলছে, রোগীদের মোট চিকিৎসা ব্যয়ের ৬৮ শতাংশ খরচ হয় ওষুধ কিনতে, ২৩ শতাংশ খরচ হয় হাসপাতালের খরচ মেটাতে এবং ৮ শতাংশ খরচ হয় রোগ নির্ণয়ের জন্য প্রয়োজনীয় টেস্ট করাতে।
মাত্র ৩ শতাংশ রোগী সরকারি হাসপাতাল থেকে ওষুধ পান এবং ১৪.৯ শতাংশ রোগী রোগ নির্ণয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সেবা পান। বেশির ভাগ রোগীকে প্রাইভেট ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনতে হয় এবং প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যেতে হয়।
স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের পরিচালক (গবেষণা) ডা: নুরুল আমিন বলেছেন, সামর্থ্যরে বাইরের ব্যয় কমাতে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা সুবিধাগুলো আরো কার্যকর হতে হবে। তা না হলে ২০৩০ সালের মধ্যে ব্যয় ৩০ শতাংশে নামিয়ে আনার এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে না। বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর আনুমানিক ৪৪ মিলিয়ন পরিবার বিপর্যয়মূলক স্বাস্থ্য ব্যয়ের মুখোমুখি হয়; এ ব্যয়ের মূল্য চুকাতে গিয়ে ২৫ মিলিয়ন পরিবার দারিদ্র্যের মুখে পতিত হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) পরিবারের নিম্ন অর্থনৈতিক অবস্থা, স্বাস্থ্য বাজেটে কম বরাদ্দ, বীমার অভাব ইত্যাদির কথা এ ক্ষেত্রে উল্লেখ করেছে।
স্বাস্থ্যের জন্য বাংলাদেশের বাজেট বরাদ্দ জিডিপির ১ শতাংশেরও কম যা ৪৬টি স্বল্পোন্নত দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন। গত দুই দশক ধরে পরিবারগুলোকে অসংক্রামক রোগের চিকিৎসার জন্য সামর্থ্যরে অনেক বাইরে ব্যয় করতে হচ্ছে; চিকিৎসা যেমন দীর্ঘমেয়াদি হচ্ছে তেমনি হাসপাতালেও থাকতে হচ্ছে অতিরিক্ত সময়। বিশেষ করে ইদানীং উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়ার কারণে ক্রনিক কিডনি ডিজিজের (সিকেডি) রোগীও অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে বাংলাদেশে।
জটিল ও ব্যয়বহুল রোগ বলতে কী বুঝায়?
ক্যান্সার, হৃদরোগ, কিডনি-ব্যাধি, হেপাটাইটিস, ডায়াবেটিস-মেলিটাস রোগজনিত জটিলতা, পক্ষাঘাত, বক্ষব্যাধি, কৃত্রিম অঙ্গপ্রত্যঙ্গ-সংযোজন সংক্রান্ত রোগ ও দুর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহত হওয়া এবং এ সংক্রান্ত মেডিক্যাল বোর্ড কর্তৃক জটিল ও ব্যয়বহুল রোগ বলে চিহ্নিত যেকোনো রোগও এর অন্তর্ভুক্ত হবে।
কিভাবে চিকিৎসা ব্যয়ভার চালিয়ে দরিদ্র হওয়া প্রতিরোধ করা যায়?
প্রথমত, দেশের সব মানুষকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ঘোষিত ‘সর্বজনীন স্বাস্থ্য কভারেজ-২০৩০’-এর আওতায় নিয়ে আসা। সর্বজনীন স্বাস্থ্য কভারেজ মানে হলো- সব লোকের তাদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরিষেবাগুলোতে প্রবেশাধিকার রয়েছে, যখন এবং যেখানে তাদের প্রয়োজন, আর্থিক অসুবিধা ছাড়াই। এটি স্বাস্থ্যের প্রচার থেকে প্রতিরোধ, চিকিৎসা, পুনর্বাসন ও উপশমকারী যত্ন পর্যন্ত প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরিষেবাগুলোর সম্পূর্ণ পরিসর অন্তর্ভুক্ত করে।
দ্বিতীয়ত, সরকারি ও বেসরকারি লেভেলে প্রত্যেক নাগরিকের স্বাস্থ্যবীমা নিশ্চিত করা। উন্নত বিশ্বে নাগরিকদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার জন্য স্বাস্থ্যবীমা ব্যবস্থা চালু আছে। এ ব্যাপারে আমাদের কাছাকাছি দেশ ভিয়েতনাম তার জ্বলন্ত উদাহরণ। সে দেশে মাত্র ৪ শতাংশ স্বাস্থ্যবীমা সুবিধা নিয়ে যাত্রা শুরু করে বর্তমানে ৮৭ শতাংশ মানুষকে এর আওতায় অন্তর্ভুক্ত করেছে।
ভিয়েতনামে মানুষের স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নে জিডিপির ১০ শতাংশই স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করা হয়। সে দেশে স্বাস্থ্যবীমার সুবিধা পেতে দেশের সচ্ছল মানুষের মোট আয়ের ৪ দশমিক ৫ শতাংশ হারে প্রিমিয়াম পরিশোধ করতে হয়। তবে দরিদ্রদের প্রিমিয়ামের টাকা সরকার দিয়ে থাকে। এ ছাড়া স্বল্প আয়ের লোকদের প্রিমিয়ামের ৭০ শতাংশ এবং শিক্ষার্থীদের ৩০ শতাংশ সরকার দিয়ে থাকে। রোগ ও রোগীর অবস্থান বিবেচনায় ৮০ থেকে ১০০ শতাংশ কভারেজ দেয়া হয়। বাংলাদেশ সরকার পরীক্ষামূলকভাবে কিছু এলাকায় স্বাস্থ্যবীমা চালু করেছে। সারা দেশে এই সুবিধা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে।
তৃতীয়ত, সরকারি ও বেসরকারি সব পর্যায়ে কর্মচারী কল্যাণ তহবিল এবং যৌথ বীমার তৎপরতা বৃদ্ধি করা।
চতুর্থত, ব্যক্তিগত-যৌথ মালিকানাধীন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি ইত্যাদি সব মহলের লাভের একটি অংশ (১-৫ শতাংশ) দুস্থ রোগীদের জন্য নির্ধারণ করা যা দিয়ে সুবিধাবঞ্চিতদের মানবিক সহায়তা করা যায়।
পঞ্চমত, জাকাত, দান বা কর্জে হাসানা ফান্ড গঠন করে দুস্থ রোগীদের সুস্থ করে তোলার কাজে সহায়তা করা।
ষষ্ঠত, খরচের বোঝা কমানোর জন্য জাতীয় স্তরের সামাজিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা প্রকল্প প্রণয়ন করা যাতে স্বল্প আয়ের পরিবারগুলোর ওপর বিশেষ নজর, বেসরকারি খাতের স্বাস্থ্য খরচ নিয়ন্ত্রণ ও ক্যান্সার, হার্ট, লিভার এবং কিডনি রোগীদের জন্য ভর্তুকিযুক্ত স্বাস্থ্যসেবা অন্তর্ভুক্ত থাকবে। দামি ওষুধ ও ল্যাবরেটরি টেস্টগুলোকে মানুষের জন্য ভর্তুকি দিয়ে হলেও সহজলভ্য করার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত থাকা উচিত।সপ্তমত, প্রত্যেক বেসরকারি হাসপাতালেই দরিদ্র কোটায় একটি পার্সেন্টেজ রোগীর ফ্রি চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।
আমরা জানি, এ দেশে এমনও শিল্প প্রতিষ্ঠান আছে, যারা চাইলে দেশের স্বাস্থ্য খাতকে দাঁড় করিয়ে দিতে পারে। অক্সফামের সমীক্ষা বলছে, ১ শতাংশ ধনীর হাতে দেশের অর্ধেক সম্পত্তি! ভারতের মুকেশ আম্বানি একাই যে আয় করেন, বাংলাদেশের পুরো বাজেটের চিকিৎসা, স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতা খাতে বরাদ্দ তার চেয়ে কম। দেশের ১ শতাংশ ধনীর এক দিনের আয় দুই হাজার ২০০ কোটি টাকা! চিকিৎসা করাতে গিয়ে একজন দরিদ্র মানুষকে যে টাকা পকেট থেকে হাসপাতালে খরচ করতে হয়, এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান অনুদান দেয়ার মাধ্যমে খুব সহজেই সেই খরচ বহন করতে পারে। বিত্তবানরা চাইলে এখনই সরকারি হাসপাতালগুলোর আইসিইউ ইউনিট সাজিয়ে দিতে পারেন। ট্রলি, বেড, হুইল চেয়ার, টেস্ট কিট, ওষুধ, ভেন্টিলেটরসহ অনেক কিছুই দিয়ে দিতে পারেন। বড় শিল্পপতিরা ব্যবসায় করার জন্য যেমন শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন, তার পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে বিনামূল্যে কিংবা স্বল্পমূল্যে বড় বড় হাসপাতাল গড়ে তুলতে পারেন, যেখানে সাধারণ গরিব মানুষ চিকিৎসা পাবে বিনা টাকায়। অথবা শিল্পপতিরা বিভিন্ন হাসপাতালে এভাবে চুক্তিবদ্ধ হতে পারেন, নির্ধারিত গরিব রোগীরা বিভিন্ন হাসপাতালে ফ্রি সার্ভিস নিয়ে সুস্থ হয়ে বাসায় চলে যাবেন, বিল দিয়ে দেবে বিভিন্ন সংস্থা বা সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল বা অন্য কোনো সংস্থা তাদের করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটির (সিএসআর) ফান্ড থেকে। বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো উৎপাদনই এখন কাজে আসবে না, যদি দেশের সব বিত্তবান মানুষের সাথে সাধারণ মানুষগুলোও চিকিৎসা সুবিধা না পায়। কুরআনে অন্যকে দান করাকে বঞ্চিতদের অধিকার হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
সরকারি লেভেলে যে উদ্যোগের গতি বাড়াতে হবে : সম্প্রতি (২০২১-২২ অর্থবছরে) বাংলাদেশ সরকারের সমাজসেবা অধিদফতর বাস্তবায়িত সরকারি ও বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত সমাপ্ত প্রকল্পের আওতায় ৩৭টি হাসপাতাল-সংস্থা থেকে ৩০ শতাংশ গরিব রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে নিম্ন বর্ণিত হাসপাতাল-প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়।
বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈষী সংঘ ও জ্বরা বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান, বারডেম জেনারেল হাসপাতাল, ইবরাহিম কার্ডিয়াক হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট। ঢাকা কমিউনিটি হাসপাতাল, বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, আহছানিয়া মিশন ক্যান্সার ও জেনারেল হাসপাতাল, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট, ডা: এম আর খান শিশু হসপিটাল অ্যান্ড ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথ, শিশুস্বাস্থ্য ফাউন্ডেশন মিরপুর, ইনস্টিটিউট ফর অটিস্টিক চিল্ড্রেন অ্যান্ড ব্লাইন্ড ওল্ড হোম অ্যান্ড টিএন মাদার চাইল্ড হসপিটাল সাভার, ফাইলেরিয়া অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতাল সাভার, ওজিএসবি হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট অব রিপ্রোডাকটিভ অ্যান্ড চাইল্ড হেলথ, শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল বিশেষায়িত হাসপাতাল, ডিবিকেপি হাসপাতাল, চনপাড়া, রূপগঞ্জ, সমন্বিত স্বাস্থ্যসেবা প্রকল্প। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির ফরিদপুর, রাজবাড়ী, সিরাজগঞ্জ, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, হবিগঞ্জ ও সিলেট, দিনাজপুর, নীলফামারী ও লালমনিরহাটের শাখাগুলো। শিশু হাসপাতাল যশোর, ঝিনাইদহ চক্ষু হাসপাতাল ও অন্ধ পুনর্বাসন কেন্দ্র এবং বাংলাদেশ জাতীয় অন্ধ কল্যাণ সমিতি হাসপাতাল কুমিল্লা, কিডনি ফাউন্ডেশন অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট পাবনা এবং গাউসুল আজম বিএনএসবি হাসপাতাল।
সরকারি হিসাব মতে, এ সব হাসপাতাল ও প্রতিষ্ঠানে ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট ১৪ লাখ ৯৫ হাজার ৪৪৮ জন দুস্থ রোগীর চিকিৎসা বিনামূল্যে কিংবা স্বল্পমূল্যে হয়েছে। এটিও প্রয়োজনের তুলনায় খুবই নগণ্য।
সেন্টার ফর জাকাত ম্যানেজমেন্টের একটি মহতী উদ্যোগ : আনন্দের বিষয় হলো- সম্প্রতি বাংলাদেশের একটি স্বনামধন্য মানবিক প্রতিষ্ঠান ‘সেন্টার ফর জাকাত ম্যানেজমেন্ট’ বড় ধরনের একটি মানবিক কাজে হাত দিয়েছে। বাংলাদেশে লাখ লাখ ডায়ালাইসিস ও কিডনি ট্রান্সপ্লান্টযোগ্য রোগী রয়েছে যারা কোনোভাবেই এই ব্যয়বহুল চিকিৎসা চালিয়ে যেতে না পেরে ধুঁকছেন। ডায়ালাইসিস ও ট্রান্সপ্লান্টযোগ্য কিডনি রোগী ক্যান্সার এবং হার্টের রোগীদের চেয়েও নাজুক অবস্থায় থাকে। প্রাথমিকভাবে ক্রনিক কিডনি ডিজিজ (সিকেডি) একটি প্রায় উপসর্গহীন নীরব ঘাতক রোগ। ৮৫ শতাংশ লোক বুঝতেই পারে না যে, তাদের দুটো কিডনিই স্থায়ীভাবে ডায়ালাইসিস ও ট্রান্সপ্লান্টযোগ্য বিকল হয়ে গেছে। ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা গেলে উপযুক্ত চিকিৎসায় রোগী সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যায়। সিকেডি একটি মরণঘাতী রোগ যা প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লেও শত চিকিৎসায়ও বিকল প্রক্রিয়া ঠেকিয়ে রাখা যায় না। তবে বিশেষজ্ঞদের চিকিৎসায় বিকল প্রক্রিয়া ধীর করা যায় কিন্তু একেবারে থামিয়ে দেয়া যায় না। গবেষণায় দেখা গেছে, পাঁচ বছর অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস রোগীদের প্রতি তিন জনে একজন এবং ১০ বছর অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের প্রতি পাঁচ জনে একজন ক্রনিক কিডনি ডিজিজে আক্রান্ত হন যার শেষ পরিণতি অবশ্যই অ্যান্ড স্টেজ রেনাল ডিজিজ (ইএসআরডি)। এর চিকিৎসা ডায়ালাইসিস অথবা ট্রান্সপ্লান্টেশন যার ব্যয়ভার বহন আমাদের দেশের ৯০ শতাংশ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। হার্ট ডিজিজের রোগী সাধারণত হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকে মারা যান। ক্যান্সারের রোগীও অপারেশন কিংবা অপারেশনের পর কেমোথেরাপি-রেডিওথেরাপি চলাকালীন সময়ে অর্থ ব্যয় হলেও চিকিৎসা এত বেশি প্রলম্বিত হয় না যেমনটি হয় কিডনি ডায়ালাইসিসের চিকিৎসায়।
আমরা জানি, কিডনি ডায়ালাইসিসের চিকিৎসা আজীবন ও অত্যন্ত ব্যয়বহুল। ফলে একজন সিকেডির রোগী নিজেও মরে এবং পুরো পরিবারটিও অর্থনৈতিকভাবে নিঃশেষ হয়ে হয়ে পথে বসে যায়। তাই একটি মহৎ মানবিক পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ‘সেন্টার ফর জাকাত ম্যানেজমেন্ট’ প্রতিষ্ঠানটি ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জে চার একর জায়গার উপর একটি বিশ্বমানের সেন্টার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে। সুবিধাবঞ্চিত কিডনি ডায়ালাইসিস ও ট্রান্সপ্লান্টযোগ্য রোগীদের ফ্রি মানবিক সেবাই এর লক্ষ্য। সে লক্ষ্য পূরণে প্রাথমিকভাবে পাইলট প্রকল্প হিসেবে কেরানীগঞ্জের গুইটা কৃষ্ণনগর গ্রামে শ্যামল বাংলা রিসোর্টে ১০০ জন এবং মিরপুরে ৫০ জনকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ডায়ালাইসিসের ব্যবস্থা করেছে। আপামর জনসাধারণসহ বিত্তবানরা চাইলে এই মহতী উদ্যোগে নিজদের সম্পৃক্ত করে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ অনায়াসে নিতে পারেন।
লেখক : স্বাস্থ্যবিষয়ক নিবন্ধকার ও কলামিস্ট
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা