৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস আজ : অধিকারভিত্তিক সমাজ জরুরি

আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস আজ : অধিকারভিত্তিক সমাজ জরুরি। - ছবি : সংগৃহীত

প্রতি বছর ৩ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস পালন করা হয়। সমাজের সব স্তরের কর্মকাণ্ডে প্রতিবন্ধীদের সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা ও উন্নয়নের সব ক্ষেত্রে তাদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা এই দিবস পালনের লক্ষ্য। জাতিসঙ্ঘের তত্ত্বাবধানে এই দিবসটি ১৯৯২ সাল থেকে পালন করা হচ্ছে। প্রতিবন্ধীদের মর্যাদা সমুন্নতকরণ, অধিকার সুরক্ষা, প্রতিবন্ধিতা বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে এই দিবসটি পালিত হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক জরিপ অনুসারে, আমাদের দেশের প্রায় ৮ থেকে ১০ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনোভাবে প্রতিবন্ধিতার শিকার। প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নের সাথে জাতীয় উন্নয়নের যোগসূত্র আছে। প্রতিবন্ধীদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হলে তারা জাতীয় উন্নয়ন ও উৎপাদনশীলতায় প্রভূত অবদান রাখতে পারবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।

অধিকারকর্মীদের মতে, আমাদের দেশে অনেকদিন ধরেই প্রতিবন্ধী দিবস পালন করা হলেও এর তাৎপর্য আমরা ঠিকভাবে উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছি। প্রায় এক যুগ হতে চলল- বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার সনদে অনুস্বাক্ষর করেছে। কিন্তু এতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ভাগ্যের তেমন একটা পরিবর্তন হয়নি। বিশেষ করে যারা দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা গ্রহণের হার আগের চেয়ে বাড়লেও চাকরির বাজারে দেখা যায়, অনেকেই যোগ্যতা অনুযায়ী টিকে থাকতে পারছে না। সরকার শিক্ষা ক্ষেত্রে উপবৃত্তি দিচ্ছে, ভাতার পরিমাণও বাড়ানো হয়েছে, কিন্তু সেবা গ্রহণের পথ এখনো সুগম হয়নি। এ ছাড়া প্রতিবন্ধী ব্যক্তি শনাক্তকরণ প্রক্রিয়ায় রয়েছে অনেক হয়রানি ও দীর্ঘসূত্রতা। আর সেই দীর্ঘসূত্রতার প্রভাব পড়ে ভাতা পাওয়ার উপরও।

বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড-২০১৭ এখনো মানা হচ্ছে না। দেশে এখনো প্রতিবন্ধীদের প্রবেশগম্যতার অভাব সর্বত্র, কারণ ইমারত নির্মাণ বিধিমালা মানছে না কেউ। তার জন্য কোনো শাস্তির ব্যবস্থাও দেখা যাচ্ছে না। এ ছাড়া গণপরিবহন ব্যবস্থা এখনো প্রতিবন্ধীবান্ধব নয়। কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও বৈষম্য বিরাজমান। প্রতিবন্ধীর জন্য আলাদা কোটা ব্যবস্থার বাস্তবায়ন নেই। তাদের অধিকার ও সুরক্ষা আইনের কমিটিগুলোও কার্যকর নয়। যার কারণে তাদের অধিকার অর্জনে কোনো অগ্রগতি নেই।
ফলে তারা কর্মসংস্থান, শিক্ষা, সামাজিক ও অন্যান্য ক্ষেত্রে সমান সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত।

দেশের বেশির ভাগ মানুষের মধ্যে প্রতিবন্ধিতা বিষয়ে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। যদিও এটা ঠিক যে, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা যদি প্রয়োজনীয় সমর্থন পায় তবে তারা তাদের সক্ষমতা প্রমাণ করতে পারে এবং জাতীয় উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে। প্রতিবন্ধীরা নানা ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে তাদের সম্পর্কে ভুল ধারণার কারণে। বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিবন্ধীদের মতামত সাধারণত গ্রাহ্য করা হয় না এবং প্রায় ক্ষেত্রেই তাদের অধিকার লঙ্ঘন করা হয়, যেটা শেষ পর্যন্ত তাদেরকে উন্নয়নের মূল স্রোতধারা থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় গঠন করা হলে তাদের অধিকার আদায় ও স্বার্থরক্ষায় সেটি সহায়ক হবে বলে অধিকারকর্মীরা মনে করেন।

জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের ৬১তম অধিবেশনে ১৩ ডিসেম্বর, ২০০৬ সালে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার ও সুরক্ষাবিষয়ক সনদ অনুমোদন করা হয়। প্রতিবন্ধীদের মানবাধিকার এবং মৌলিক স্বাধীনতা সুরক্ষা, অধিকার নিশ্চিতকরণ এবং তাদের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন এই সনদের লক্ষ্য। ৩ মে, ২০০৮ সাল থেকে এটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন হিসেবে কার্যকর হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার সনদটি ৩০ নভেম্বর, ২০০৭ সালে অনুস্বাক্ষর করে। আমাদের দেশে প্রতিবন্ধী বিষয়ে দু’টি আইন আছে। ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার ও সুরক্ষা আইন-২০১৩’ এবং ‘নিউরো-ডেভেলপমেন্ট প্রতিবন্ধী আইন-২০১৩’। এই আইন দু’টির বাস্তবায়ন জরুরি। আইনগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়ায় আমাদের দেশের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয় না।

ওই আইনের ১৬ ধারায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিভিন্ন অধিকার সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। সেগুলো হলো- যেকোনো বিষয়ে পরিপূর্ণ প্রবেশাধিকার, প্রতিবন্ধিতার ধরন অনুযায়ী সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে পরিপূর্ণ ও সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ, অত্যাচার ও নির্যাতন থেকে সুরক্ষা, নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ, সঙ্কেত ভাষার শ্রবণ এবং বাক-প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য প্রধান ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান, নিজের সাহায্য নিজেই করি এমন গ্রুপ (সেলফ হেল্প গ্রুপ) বা কল্যাণভিত্তিক সংগঠন তৈরি ও পরিচালনা করা।

জনসংখ্যার বিশাল একটি অংশকে উন্নয়নের বাইরে রেখে কোনো দেশের পক্ষে এগিয়ে যাওয়া কখনোই সম্ভব নয়। তাই উন্নয়নের স্বার্থে সবাইকে নিয়ে একটি সম্মিলিত সমাজ বিনির্মাণ করা অত্যাবশ্যক। জাতীয় উন্নয়নের বৃহত্তর স্বার্থেই প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ সংবিধানের ১৯ নং ধারায় সবার জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। আবার সংবিধানের ২৮ নং ধারায় বলা হয়েছে যে, ‘রাষ্ট্র কখনো ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, লিঙ্গ, বা জন্মস্থানের কারণে কোনো নাগরিকের সাথে বৈষম্য করবে না।’ একইভাবে সংবিধানের ২৮(৪) ধারায় সমাজের পিছিয়েপড়া জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়েছে।

তাই আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষে এটি আমাদের প্রত্যাশা, আমাদের দেশে প্রতিবন্ধীরা সমাজের মূল ধারায় সম্পৃক্ত হবে এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সবার অধিকার সুনিশ্চিত করার মাধ্যমে বৈষম্যহীন সমাজ গঠিত হবে। এর মাধ্যমেই জাতীয় উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে বলে আশা করা যায়।

লেখক : ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক


আরো সংবাদ



premium cement
মির্জা ফখরুল ১০ দিনের সফরে আজ যুক্তরাজ্যে যাচ্ছেন চিন্ময় দাসের গ্রেফতারকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে : জাতিসঙ্ঘে বাংলাদেশ গাজার উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলের গভীরে ইসরাইলি ট্যাংক, নিহত ৪২ রাজধানীতে আসছে শীতের প্রচুর সবজি ওপারে রাতভর বোমার বিস্ফোরণ আতঙ্কে নির্ঘুম টেকনাফবাসী সীমান্তের ওপারে ফ্যাসিস্ট বসে নতুন নতুন ষড়যন্ত্র করছে : মির্জা ফখরুল আওয়ামী শাসনামলের চেয়ে সংখ্যালঘুরা নিরাপদে আছে সেন্টমার্টিনে বছরে দেড় লাখের বেশি পর্যটক ভ্রমণ করে বিজেপি নির্দিষ্ট একটি ধর্মের প্রতি প্রতিহিংসাপ্রবণ : মমতা চতুর্মুখী ষড়যন্ত্র চলছে, সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে : ডা: শফিক ৫২ সেকেন্ডের ভিডিওতে খুনে জড়িতদের চেহারা

সকল