নিজের পরিচয় বুঝে কাজ করুন
- মুহাম্মদ মিজানুর রহমান
- ২৯ অক্টোবর ২০২২, ২০:০৩
সম্পদ ও ক্ষমতা দুটোই মূল্যবান। অনেক মানুষ আছে, যারা এ ধরনের নিয়ামত পেয়েও এর সঠিক ব্যবহার করে না। আপনি চাইলে একে ভালোর জন্য ব্যবহার করতে পারেন, আবার মন্দ দিয়ে এই সুযোগ হেলায় হারিয়ে ফেলতে পারেন। কোনটি আপনি বেছে নেবেন, সেটি আপনার সিদ্ধান্ত। যদি আপনি দ্বিতীয় অপশনকে বেছে নেন, সেটি হবে আপনার মূর্খতা। কারণ আপনি বিষকে অমৃত ভেবে গ্রহণ করছেন যে আপনার অলক্ষ্যে হলেও আপনার অনিষ্ট করবে। কারণ এটিই তার স্বভাবজাত ধর্ম।
হতে পারে, ক্ষমতা এখন আপনার হাতে। সম্পদও রয়েছে আপনার। কিন্তু মনে রাখবেন, এর নিয়ন্তা আপনি নন। যিনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী সেই আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা এর মালিক। আপনার ব্যবহার ও আচরণ যদি তাকে নাখোশ করে দেয়, আপনার শেষ রক্ষার সুযোগও থাকবে না। হয়তো দুনিয়ার কারণ তুলে তুলে একদিন নিঃশেষ হয়ে যাবেন, খোদার পূত কালিমা আপনার মুখ দিয়ে আর বের হবে না। চিরন্তন ক্ষতি আপনার জন্য নির্ধারিত হয়ে যাবে; সুতরাং সময় থাকতে নিজেকে সঠিক জায়গায় নিয়ে আসুন।
মনে রাখবেন, বাহুবল ও ক্ষমতা দিয়ে মানুষকে শাসন করা যায়। শোষণও করা যায়; কিন্তু ভালোবাসা অর্জন করা যায় না। মানুষের ভালোবাসা অর্জন করতে হলে একটি সুন্দর মানসিকতা থাকা চাই। যদি ক্ষমতাকে নিয়ামত হিসেবে ব্যবহার করে মানুষের কল্যাণের জন্য এগিয়ে যান, মানুষের ভালোবাসা আপনার জন্য অবধারিত হয়ে যাবে। মানুষের এই ভালোবাসা অর্জনে কোনো জোরজবরদস্তি চলে না। মানুষের ভালোবাসা পেতে হলে, সবার আগে মানুষ হয়ে উঠতে হয়। মানুষের কষ্ট বুঝতে হয়। আপনি দণ্ডমুণ্ডের কর্তা সেজে বসে আছেন, লোকে আপনাকে সালাম করবে। আপনার যে দুঃখে তার ব্যথিত হওয়ার কথা নয়, সেখানেও সে দুঃখ প্রকাশ করবে। আপনার প্রিয়ভাজন হওয়ার জন্য সে এমন কিছু করে দেখাতে চাইবে। কিন্তু তার অন্তর আপনার জন্য এই কথা বলছে না। তার উদ্দেশ্য, আপনার দৃষ্টি তার দিকে ঘুরিয়ে নেয়া আপনি যেন তার প্রতি সহানুভ‚তিশীল হয়ে উঠেন। এ জন্য প্রয়োজন হলে, সেও এক তরফা আপনার গুণকীর্তন করে চলবে।
আপনি যখন কোনো বড় পদে আসীন হবেন, নিজেকে অনেক বিচক্ষণ বানিয়ে নিন। আপনার মনটাকে অনেক বড় করুন। সীমাবদ্ধতার বেড়াজালে কখনোই আবদ্ধ থাকবেন না। সবসময় কেবল আত্মপ্রশংসা দিয়েও ব্যস্ত থাকবেন না। আপনার চারপাশে এমন লোকজনের আনাগোনা বাড়িয়ে দিন, যারা বিদ্বান ও বিচক্ষণ। তাহলে তারা আপনাকে গঠনমূলক সমালোচনা দিয়ে সাহায্য করবে। তাদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করুন। তাদের মতামত প্রকাশের সুযোগ দিন। তা হলে তারা আপনাকে সঠিক রাস্তা দেখাতে সাহায্য করবে। মানুষকে অবহেলা করবেন না। আবার মূর্খকেও জ্ঞানী বানিয়ে রাখবেন না। তাহলে ওরা আপনার সমূহ সুযোগকে কাজে লাগাবে। নিজের আখের গুছিয়ে একদিন ওরাই আবার আপনার সমালোচনায় লেগে পড়বে। তার চেয়ে বরং শুরুতেই প্রকৃত সমালোচককে খুঁজুন। তার সমালোচনার গুরুত্ব দিন।
আপনি যদি আপনার হিতাকাক্সক্ষীদের সমালোচনার মুখ বন্ধ করে রাখেন, তারা আপনার গুণকীর্তন ছাড়া আর কিছুই গাইবে না। কারণ আপনি সঠিক মূল্যায়নের বোধশক্তি হারিয়ে ফেলেছেন, এটি তারা বুঝতে পেরেছে। এমতাবস্থায় আপনার বিপক্ষে অবস্থান নেয়া তাদের জন্য বোকামি বৈ আর কিছুই নয়। আপনার বিরাগভাজন হয়ে কেউই তার আপন স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিতে চাইবে না। কেউ আপনাকে ভুল শুধরে দিয়ে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে, নাকি আপনার নির্বুদ্ধিসুলভ আচরণের জন্য মানুষের কাছে নির্বোধ প্রমাণ করবে, সে পরিবেশ আপনাকেই বানিয়ে দিতে হবে।
তাই শক্তিকে কখনোই অন্যায়ের হাতিয়ার বানাবেন না। একে ন্যায়ের জন্য ব্যবহার করুন। একজন দুর্বল মানুষ যখন ন্যায়ের চর্চা করে সেটি মানুষের ওপর খুব একটা প্রভাব ফেলে না। কিন্তু একজন শক্তিমান যখন ন্যায়কে জীবনে ধারণ করে ন্যায়ের সৈনিক হয়ে যায়, তার চারিত্রিক উজ্জ্বলতা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তাই একজন ন্যায়পরায়ণ শাসক বা দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে সবসময় সাধারণ জনতার কথাই ভাবতে হয়। সুবিধাভোগীরা আপনার সাথে ততক্ষণই থাকবে যতক্ষণ আপনি তাদের সুবিধা দিতে পারবেন।
তাই কাউকে বন্ধু বানানোর আগে তার প্রকৃতি জেনে নিন। এমন লোকদেরই কাছে ডাকুন, যে বিপদে আপনার প্রকৃত বন্ধু। আনন্দের সময় আপনার সহযোগী। ভুল কাজে আপনাকে বাধা প্রদানকারী। আপনি যখন কোনো জটিল বা কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হবেন আপনার দুর্বলতার সুযোগ কাজে লাগাবে না; বরং আপনাকে সঠিক পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করবেন। কখনোই মানুষকে ছোট ভেবে কথা বলবেন না। দুর্বলদের ওপর নিজের ক্ষমতা দেবেন না। এসব দাম্ভিক লোকদের কাজ। এ ধরনের মানসিকতা মানুষকে অনেক নিচে নামিয়ে দেয়।
তাই সবসময় নিজের দায়িত্বের ব্যাপারে সচেতন থাকুন। যারা আপনাকে দায়িত্বের জায়গায় এনে দিয়েছে তাদের প্রতি সম্মান রাখুন। পদ ও পদবি এমন একটি জিনিস যা কখনোই চিরস্থায়ী হয় না। এই দুটো জিনিস যাদের অমানবিক করে তোলে শেষ পর্যন্ত তাদের পরিণতি কখনোই ভালো হয় না। এখন আপনার ক্ষমতা আছে; ব্যবহার করতে পারছেন। কাক্সিক্ষত কোনো পদে আছেন; চাইলে অনেক ধরনের সুবিধা নিতে পারবেন; কিন্তু যখন এগুলোর একটিও আপনার সাথে থাকবে না, তখন আপনি মূল্যহীন হয়ে পড়বেন। আপনার কাছের লোকগুলোও আপনাকে ছেড়ে চলে যাবে। লোকে আপনাকে দেখে উপহাস করবে। নিজের মর্যাদাকে এভাবে কখনোই খাটো করবেন না।
জুলুমবাজ ছিলেন, এখন পদ ও পদবি কিছুই আপনার নেই, ভয় আপনার জন্য। মানুষের নিন্দা আপনার ওপর এসে পড়তে থাকবে। এতদিন তারা আপনাকে ভালোবেসেছে তা কিন্তু নয়; হয়তো এতদিন আপনি শক্তি প্রয়োগ করে মানুষকে জিম্মি করে রেখেছেন, তাই ভয়ে তারা মুখ খোলেনি। এখন আপনার শক্তি নেই, তাই আপনার প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করতে তারা একটুও সঙ্কোচবোধ করছে না। সুতরাং ভয় দেখিয়ে মানুষকে বোকা বানানোর চেষ্টা করবেন না। একদিন নিজেই বোকা হয়ে যাবেন। যে মানুষ আপনাকে সম্মান করে সেই সম্মানের মূল্য রাখতে শিখুন। জাত-পদ ভেদে মানুষের বিচার করবেন না। ন্যায়ের ভিত্তিতে তাকে দেখুন। মানুষের প্রতি মানবিক হয়ে উঠতে চেষ্টা করুন।
আপনি দায়িত্বশীল, তাই মানুষ আপনার কাছে আসে। এখানে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব খুঁজবেন না। বরং যে আপনার কাছে এসেছে তাকে আপনি প্রাপ্য পাওনাটুকু দিতে পেরেছেন কি না সেই কথা ভাবুন। মানুষ সবার কাছে যায় না, তারা আপনার কাছে এসেছে; এটিকে নিজের সৌভাগ্য মনে করে এর সঠিক ব্যবহার করুন। দায়িত্বকে কখনোই ওপরের ওঠার সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করবেন না। মানুষের প্রতি যতœবান হোন। মানুষই আপনাকে সম্মানের জায়গায় বসিয়ে দেবে। মনে রাখবেন, অনেকে সম্মানের চেয়ারে বসেও সম্মান পায় না।
আপনার অনেক টাকা আছে। নাম আছে। পদমর্যাদায়ও আপনি অনেক বড়; কিন্তু আপনি মানুষের জন্য কিছু করে যেতে পারেননি, প্রাাপ্তির জায়গায় আপনি শূন্যতে পড়ে আছেন। আশেপাশে চোখ রাখুন। দেখতে পাবেন, সম্পদশালী মানুষের অভাব নেই। অঢেল সম্পদ থাকার পরও অনেকে ভালো কাজ করে যেতে পারেন না। আবার সীমিত সম্পদ নিয়ে অনেকে মহৎ কাজ করে চলেছেন। যদি আপনি প্রথম সারির দলে হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার জন্য আফসোস। আর যদি আপনি দ্বিতীয় সারির দলে নাম লেখিয়ে থাকেন, তাহলে আপনি সৌভাগ্যবান। অন্তত নিজের জন্য নিজে কিছু করতে সক্ষম হয়েছেন।
আমরা মানুষ। অনেক সময় এই কথাগুলো ভুলে যাই। এমন সব আচরণ করতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ি, এগুলো যেন আমার জীবনের সাথে স্থায়ী হয়ে যাবে। আমি যে পদটি আজকে অলঙ্কৃত করে রয়েছি, সেখানে অন্য কেউও একদিন আসবে। তার কাজটি যদি আমার থেকে উত্তম হয়, সে হবে মানুষের জন্য ভালো কাজের উপমা। আর আমি হবো তাদের জন্য একটি নিন্দিত উদাহরণ। এখন ভাবুন, আপনি নিজেকে কোন জায়গায় নিয়ে দাঁড় করাবেন। এমন না হয়, আপনার পরবর্তী প্রজন্ম আপনার নাম নিলে লজ্জায় মুখ ঘুরিয়ে নেয়। তাহলে এটিই হবে আপনার জীবনের চরম ব্যর্থতা। যাকে কোনোদিন সফলতায় রূপ দেয়া আপনার জন্য সম্ভব হবে না। কারণ জীবনের স্বর্ণালী সময় বলতে যা বোঝায়, সবই আপনি ব্যয় করে ফেলেছেন।
লেখক : প্রাবন্ধিক ও গবেষক
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা