২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

গোড়ায় গলদ

- ছবি : নয়া দিগন্ত

আমাদের দেশে কতেক রাজনীতিক এবং বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে একটা হাহাকার লক্ষ করি। তারা প্রায় এই বলে আক্ষেপ করেন যে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা দেশ থেকে লোপ পেতে বসেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যে দেশ থেকে লোপ পেতে বসেছে কথাটা সত্যি। আলাপে এবং পত্রপত্রিকায় এরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে নানাভাবে, বলা যায় যার যেমন খুশি বা সুবিধা তেমন করে উপস্থাপন করে থাকেন। কেউ বলেন এই চেতনা ‘অসাম্প্রদায়িকতা’ প্রতিষ্ঠার চেতনা; কেউ বলেন এই চেতনা ‘মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী’দের উৎখাত করার চেতনা; কেউ বলেন এই চেতনা ‘মৌলবাদকে নির্মূল’ করার চেতনা ইত্যাদি। আসলে এর কোনোটাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এই নানা ব্যক্তির ও গোষ্ঠীর নানাবিধ সংজ্ঞায়নের ধূম্রজালের আড়ালে বেমালুম হারিয়ে যায়। আর তাই এত হতাশা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আসলে একটি শোষণমুক্ত বৈষম্যহীন সমাজ ও দেশ গঠন প্রক্রিয়া।

মুক্তিযুদ্ধের মূল প্রেরণা ছিল বাংলাদেশের জনগণকে শোষণ বঞ্চনা থেকে মুক্তির লক্ষ্যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা। জাতির ওপর জাতির, মানুষের ওপর মানুষের শোষণ-বঞ্চনার অবসান করা। আমাদের অভিযোগ ছিল পাকিস্তান প্রশাসন আমাদের ওপর বৈষম্যমূলক আচরণ করছে। আজ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পরও ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে, সে ব্যাধির আছর থেকে আমরা মুক্তি পেলাম না; সেটাই আমাদের হতাশার কারণ। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর একটি সুস্থ ও ন্যায়ানুগ বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা গেল না। সেটাই আক্ষেপের কারণ। বাদবাকি সব রোগের লক্ষণ মাত্র। এই লক্ষণগুলোই অনেককে বিচলিত করে। মূল রোগের দিকে অনেকেই চোখ রাখেন না। এই রোগের বীজ মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের সাথে সাথেই মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ীদের চেতনায় প্রবিষ্ট হয়ে গেল। অনেকেই ভুলে যান মুক্তিযুদ্ধটা বাংলাদেশের মানবকল্যাণে সংঘটিত হয়েছিল; মানবসংহারের জন্য নয়। যেকোনো দেশের যুদ্ধ-বিগ্রহে পক্ষ-বিপক্ষ থাকে। বিজয়ী পক্ষ যুদ্ধ শেষে সে বিভেদ ভুলে গিয়ে যুদ্ধের ফলাফলকে সার্বিক মানবকল্যাণে নিবেদিত করে। এটাই যেকোনো যুদ্ধ বিজয়ের চেতনা। দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল একাধিক খণ্ডে ‘হিস্ট্রি অব দ্য ইংলিশ স্পিকিং পিপল’ শিরোনামে বই লিখেছেন। সে বইয়ের প্রতি খণ্ডের প্রথম মলাটের ভেতর তিনি চারটি আপ্তবাক্য লিখেছেন। তা হলোÑ ‘ইন ওয়্যার রিজিলিউশন; ইন ডিফিট ডিফাইয়েন্স; ইন ভিক্ট্র্রি ম্যাগনানিমিটি; ইন পিস গুড উইল’। এ নীতি রাসূলে করিম সা:কে চৌদ্দশ’ বছর আগে মক্কা বিজয়ের পর অনুসরণ করতে দেখা গেছে। ১৯৭১-এর যুদ্ধে বাংলাদেশের বিজয়ী নেতাদের ‘ইন ভিক্ট্রি ম্যাগনানিমিটি’ এবং ‘ইন পিস গুড উইল’ কথা দু’টি স্মরণে রাখা উচিত ছিল। কিন্তু তা হয়নি।

শোষণ মুক্তিই যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তা বুঝা গেছে বাংলাদেশের প্রথম সরকারের শোষণমুক্ত সমাজ গঠনের ঘোষণা থেকেই; যদিও সে সরকারের কর্তাব্যক্তিদের এবং তাদের অনুসারীদের কর্মকাণ্ড এই প্রমাণ করে যে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বাস্তবে রূপ দেয়া তাদের ইচ্ছাও ছিল না এবং তা বাস্তবায়নে তারা প্রস্তুত ছিলেন না। লোক দেখানোর জন্য হলেও সে সরকার শোষণমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার সঙ্কল্প ব্যক্ত না করে পারেননি। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির প্রথম সম্মেলনের সভাপতির ভাষণে অর্থনীতিবিদ ড. মাযহারুল হক সে সময়ের বাংলাদেশের আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক ও নৈতিক পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরে অতি মূল্যবান কিছু কথা বলেন। ড. হকের পুরো বাংলা ভাষণটি চড়ষরঃরপধষ ঊপড়হড়সু, ঠড়ষ.১. ঘড়.১. ঈড়হভবৎবহপব ১৯৭৪Ñএ পৃষ্ঠা ১-১১ ব্যাপী মুদ্রিত। ভাষণটির একপর্যায়ে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পরেই ‘লুটতরাজ যেমন বাধাহীন চলছে, তার সাথে সাথে সমাজতন্ত্রের দাবি, শোষণহীন সমাজব্যবস্থার শপথ সমান সমান চলছে।’ (পৃষ্ঠা-১০) এরপর তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কি সোস্যালিস্ট দল? সোস্যালিজম কী, এরা কী বোঝেন? এদের যে পার্টি ক্যাডার রয়েছে, তাদের কার্যকলাপ নিতান্তই সমাজতন্ত্রবিরোধী। অথচ আওয়ামী লীগ কেন যে, সোস্যালিজম চাই বলল, সেটা আমি কিছুতেই বুঝতে পারি না। এটা কি প্রহসন? প্রবঞ্চনা? না প্রহেলিকা?’ (পৃষ্ঠা-৯) তিনি এও লক্ষ করেন, ‘আমাদের শাসক গোষ্ঠী যেমন সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সম্পূর্ণ অযোগ্য তেমন আমাদের পরিবেশও সম্পূর্ণ অনুপযুক্ত।’ (পৃষ্ঠা-১০) তার এই উক্তির যৌক্তিকতা পাওয়া যায় যখন তিনি বলেন, ‘বস্তুত গত দু’বছরে সমাজকে শোষণহীন করার নামে বাংলাদেশে যে লুণ্ঠন চলেছে, তার নজির ইতিহাসে নেই। ... দু’বছর আগে যারা ছিল নিরন্ন আজ তারা লাখপতি। দুর্নীতি সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করেছে।’ (পৃষ্ঠা-৭) মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর পর আজো তা-ই চলছে। যেন মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশে একটি হরিলুটের ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। এখনো তাই।

আওয়ামী লীগ ‘সোস্যালিস্ট দল’ ছিল না সত্য কিন্তু সেদিন ‘সমাজতন্ত্র’ চাই ভিন্ন অন্য কোনো সেøাগান দেয়া তার পক্ষে সম্ভব ছিল না। সাধারণ মানুষ হয়তো সমাজতন্ত্র বোঝে না, কিন্তু ‘শোষণমুক্ত সমাজব্যবস্থা’ ঠিকই বোঝে। শতাব্দীর পর শতাব্দী এ দেশের সাধারণ মানুষ শোষণ বঞ্চনা ও এ দুয়ের নানাবিধ উপসর্গের শিকার। সমাজতন্ত্র শোষণমুক্ত সমাজ গঠনের একটি পদ্ধতি। শোষণমুক্ত সমাজ গঠনে ইসলাম আরো উন্নতমানের পদ্ধতি। দেশের ৯২ শতাংশ মানুষ, ধর্মভীরু মুসলমান এটি বুঝে। এ কথাটা মাথায় ছিল বলেই ছয় দফায় দেশের স্বাধীনতা বিষয়ে যেমন কিছু বলা ছিল না। তেমনি ‘সমাজতন্ত্র বা অসাম্প্র্রদায়িকতা’ বিষয়েও কোনো কথা ছিল না। ইসলামিক রিপাবলিক অব পাকিস্তানের বিভাজন বলেও কোনো কথা ছিল না। যুদ্ধকালে জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদে সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নের বাংলাদেশের পক্ষে উপর্যুপরি ভেটোর কৃতজ্ঞতাস্বরূপ আওয়ামী লীগকে ‘সমাজতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠার সেøাগান দিতে বাধ্য করেছিল; আর ভারতের সশস্ত্র সহযোগিতা ‘অসাম্প্রদায়িকতা’ উল্লেøখ করতে উদ্বুদ্ধ করেছিল। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং কিছু বামপন্থী নেতা আজো ক্রমাগত সে দাবি করে যাচ্ছেন। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সময়ের দাবি ‘সমাজতন্ত্রে’র ¯েøাগান দিলেও কাজ করেছিল উল্টোÑ বলা যায় পুরনো স্টাইলে। আজ ভারতের বিজেপি সরকার তাদের সংবিধানের ‘অসাম্প্রদায়িক’ চেতনা ছুড়ে ফেলে উগ্র হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক নীতির পথে হাঁটছে।

আজকের আওয়ামী লীগ বাজার অর্থনীতিকে গ্রহণ করে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সাথে তাদের পার্থক্যকে মুছে দিয়ে চিরায়ত রূপে আত্মপ্রকাশ করেছে। আজকের বিশ্বভঙ্গিতে আওয়ামী লীগের পক্ষে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অস্বীকার করা সম্ভব হলেও সে দিন তা সম্ভব ছিল না। তাই আওয়ামী লীগ ‘সোস্যালিস্ট’ দল না হওয়া সত্তে¡ও কাজে না হলেও সেøাগানে অন্তত মুক্তিযুদ্ধের শোষণ ও বৈষম্য নিরসনের চেতনাকে সে দিন জনসমক্ষে তুলে ধরতে বাধ্য হয়েছিল। আজকের রাশিয়া সে সময়ের সোভিয়েত রাশিয়া নয়। ৫০ বছর ধরে নানা চড়াই উতরাই পার হওয়ার পর আজ সে চেতনা মুমূূর্ষু। মুমূূর্ষুর ভার আওয়ামী লীগ নেবে কেন? আর এ লাশ তো তাদের নয়, একে নিয়ে তারা মিছিল করবে বা হরতাল ডাকবে।

মুক্তিযুদ্ধে পুঁজিবাদী ভারতের সশস্ত্র হস্তক্ষেপ সত্তে¡ও যুদ্ধজয়ের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘সমাজতন্ত্র’কে, আওয়ামী লীগ একটি উপাদান হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে পারল এর মধ্যেই আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের সার্থকতা এবং এ কারণেই মুক্তিযুদ্ধের বিজয় বাঙালির নিজস্ব বিজয় বলে চিহ্নিত। নতুবা ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের অভ্যুদয় হয়ে যেত যে ‘দ্বিজাতিতত্তে¡’র ভিত্তিতে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তাকে নাকচ করার ভারতের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্নের বাস্তবায়ন মাত্র। বাংলাদেশে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রæতির মাধ্যমে আওয়ামী লীগ দু’টি কথা প্রমাণ করতে চেয়েছিল। এক. বাঙালি কোনো বহিঃশক্তির নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধ করেনি এবং মুক্তিযুদ্ধে বিজয় একান্ত তাদেরই অর্জন ও দুই. জনজীবনে দীর্ঘদিন থেকে চলে আসা শোষণ-বঞ্চনার অবসান ঘটিয়ে বাঙালি একটি স্বতন্ত্র সত্তা নিয়ে আবিভর্‚ত হতে চেয়েছিল, যা এই উপমহাদেশে আর কোনো জাতি পারেনি। কিন্তু এর কর্মফল এমনই দাঁড়াল যে, তারা এর কোনোটিই বাস্তবায়ন করতে পারল না। কারণ আওয়ামী লীগ কোনো দিনই সমাজতান্ত্রিক দল নয়। উপরন্তু বর্তমানে পৃথিবীর কোথাও সমাজতন্ত্র নেই।

সে সময়ে বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য দেশে পরিবেশও ছিল না। তবে মানুষই পরিবেশ বদলায়। এই মানুষগুলোকে ভেতর থেকে বদলে দিতে পারলে যে কী অসাধ্য সাধন করা যায় তার উদাহরণ বিগত দিনের সোভিয়েত ইউনিয়ন ও আজকের রাশিয়া। ১৯১৭-এর বিপ্লবের পর এই মানুষ বদলের কাজটি সম্পন্ন করে ওই দেশটি এক অনুন্নত অবস্থা থেকে উন্নয়নের উচ্চশিখরে যেমন আরোহণ করেছিল, ঠিক তেমনি সেই মানুষগুলোকেই সোভিয়েত ইউনিয়নের শেষ প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচেভের আমলের (১৯৯০-১৯৯১) বেশ আগে থেকেই আবার উল্টো বদল করে ১৯৯১ সালে দেশটিকে পর্বতের উচ্চশিখর থেকে পর্বতের পাদদেশে নিক্ষিপ্ত করা গেল। শত্রæপক্ষের সমরাস্ত্রের বিপুল ভাণ্ডার এবং পরে আণবিক বোমার হুমকি কিছুই যেমন বিপ্লবের পরে নতুন সমাজের অগ্রগতিকে প্রতিহত করতে পারেনি, ঠিক তেমনি নিজ দেশের সমরাস্ত্রের বিপুল ভাণ্ডার ও আণবিক বোমার ব্যূহ কিছুই তাকে ভাঙনের লগ্নে রক্ষা করতে পারল না। কারণ উভয় কাজই হয়েছে ভেতর থেকে মানুষ বদলের মাধ্যমে। অস্ত্রের হাত ততদূর প্রসারিত নয়। সুতরাং যেকোনো লক্ষ্য অর্জনে মানুষ বদলের কাজটি যে কত জরুরি তার সাক্ষ্য ইতিহাসের পাতায়। সোভিয়েত ইউনিয়নের একটি উদাহরণ দিলাম মাত্র। আমাদের দেশে মানুষ বদলের কাজটি বিগত ৫০ বছরের কোনো পর্যায়েই হাতে নেয়া হয়নি। সেই ঔপনিবেশিক যুগের রাজনীতি নিয়েই তারা ব্যস্ত। স্বাধীন দেশের রাজনীতি তারা রপ্ত করতে পারেনি। তারা মানুষ বদলাবে কী করে? মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে গেল। সত্য এই যে, মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে, ইসলামের বিরুদ্ধে নয়।

বর্তমানে দেশে যে রাজনৈতিক সঙ্কট চলছে তার মূলেও এই শোষণমূলক ব্যবস্থাটাই দায়ী। ক্ষমতায় যেতে পারলে দেশের মানুষকে শোষণ করা যায়। বিদ্যমান ব্যবস্থায় ক্ষমতার বাইরে থাকলেও তা পারা যায়; তবে ক্ষমতায় যেতে পারলে বাড়তি সুবিধা আছে। দেশটি যেহেতু বিদেশী সাহায্যনির্ভর, দেশের মানুষকে শোষণ করার সুবিধা দুনো। দেশের লোকের দারিদ্র্য দেখিয়ে বিদেশ থেকে টাকা আনা যায় এবং আত্মসাৎ করা যায়। যদি সত্যিকার অর্থেই দেশে শোষণের ও আধিপত্যের অবসান হতো তবে সমাজে জবাবদিহিতারও প্রচলন হতো।

আর ক্ষমতা নিয়ে এত কাড়াকাড়িও হতো না। ক্ষমতায় গিয়ে যে যা খুশি তাই করতে পারে বলেই সবাই ক্ষমতায় যেতে চায়। উন্নত দেশের মতো দেশের বাইরের ভিন্ন দেশে শোষণমূলক আচরণ না করতে পারলেও দেশের ভেতর জনগণকে তা পারছে। ‘মেলে (সভায়) না পারলেও ঘরে বসে বউ পিটানো যায়’। সে জন্যই তো কেউ কাউকে বিশ্বাস করে না। ফলে দেশে বিশ্বাসের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এ বড় মারাত্মক ব্যাধি। বিশ্বাসের সঙ্কটে দেশ আজ এমনই নিমজ্জিত যে, বিরোধী দল নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চাচ্ছে, তেমন সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে যদি তারা হেরে যায়, তবে সে ফলাফল তারা মানবে বলে মনে হয় না। বর্তমান সরকারি দলও হেরে গেলে তা মানবে না। অতীত অভিজ্ঞতা তাই বলে।

বিদ্যমান শোষণমূলক সমাজব্যবস্থা রাজনীতিকদের বেসামাল করে দিয়েছে। দেশের মানুষ দেশের মানুষকে সম্মান করে না, মর্যাদা দেয় না, বিশ্বাস করে না। মিথ্যা, ঘুষ, দুর্নীতি, প্রবঞ্চনা, প্রতারণা, শোষণ, বঞ্চনা ইত্যাদি আজ বাধাহীন গতিতে চলছে। বিদেশীরা ঋণ দেয়, সাহায্য দেয়, খয়রাত দেয়। অহেতুক প্রশংসাপত্র দেয়। নেতাদের জন্য এই হচ্ছে বড় প্রাপ্তি। বিনিময়ে বিদেশীরা যা নিয়ে যায় তা কেউ গুনে না। কারণ শুধু বিশ^াসের সঙ্কটই নয়; দেশপ্রেমের সঙ্কটও প্রকট।
লেখক : অর্থনীতির অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর ও ভাইস প্রিন্সিপাল
মহিলা সরকারি কলেজ, কুমিল্লা


আরো সংবাদ



premium cement