গাজায় যুদ্ধবিরতি ও নেতানিয়াহুর ভাগ্য
- মুহাম্মদ খায়রুল বাশার
- ২০ ডিসেম্বর ২০১৮, ১২:০৩, আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৮, ১২:১২
ইসরাইলি সামরিক বাহিনী যখন গত ১২ নভেম্বর অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় একটি সামরিক হামলা চালিয়েছিল- প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ওই সামরিক উচ্চাভিলাষের পরিণাম কী হতে পারে তা মোটেই অনুমান করতে পারেননি। ওই উচ্চাভিলাষ যে তার সরকারকে অস্থিতিশীল এমনকি তার ডানপন্থী কোয়ালিশন সরকারকে পতনের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যেতে পারে তা তিনি মোটেই উপলব্ধি করতে পারেননি।
কিন্তু ওই উচ্চাভিলাষী নিয়ন্ত্রিত সামরিক আগ্রাসন নেতানিয়াহু সরকারকে পতনের মুখে ঠেলে দিয়েছে। এ ছাড়াও অনেকগুলো পুলিশি তদন্তে নেতানিয়াহু যে ব্যাপক দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত তা প্রমাণিত হয়েছে।
নেতানিয়াহু, তার পরিবার ও ঘনিষ্ঠজনেরা দুর্নীতির সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন। সেই দিনের জঘন্য হামলায় সাতজন ফিলিস্তিনি নিহত এবং একজন ইসরাইলি সেনা কমান্ডারের মৃত্যু হয়। কিন্তু হামলার পরিপ্রেক্ষিতে নেতানিয়াহুর কোয়ালিশন সরকারে বিভাজন দেখা দেয়। কোয়ালিশন সরকারে ফাটল ধরার পর অবস্থা এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে যে, একটি চূূড়ান্ত ধাক্কা দিলেই সরকারের পতন ঘটবে। ইসরাইলি সরকারের উগ্রপন্থী প্রতিরক্ষামন্ত্রী এভিগডোর লিবারম্যানের পদত্যাগের পরই সরকারের অবস্থা নড়বড়ে হয়ে যায়।
গাজা হামলার দুই দিন পর ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের কাছে ইসরাইলের ‘অত্মসমর্পণের’ প্রতিবাদে প্রতিরক্ষামন্ত্রী পদত্যাগ করেন। এমনকি চরম ডানপন্থী নেতা নাফতালি বেনিট এ সুযোগ লুফে নেন। তিনি এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে আকস্মিকভাবে সরকারের চূড়ান্ত কিংমেকার হয়ে ওঠেন।
নেতানিয়াহুর একসময়ের কোয়ালিশন সরকার এখন হুমকির মুখে। ১২০ সদস্যবিশিষ্ট পার্লামেন্ট নেসেটে সরকারের প্রতি সমর্থন রয়েছে মাত্র ৬২ জন সদস্যের। এর অর্থ হলো, কোয়ালিশনের সংখ্যাগরিষ্ঠতা এখন মাত্র একটি ভোটের ওপর নির্ভর করছে। এখন সামান্য ভুলের জন্য নেতানিয়াহুকে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে হতে পারে। সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারালে যেকোনো মুহূর্তে সরকারের পতন ঘটবে এবং নেতানিয়াহুকে নতুন করে নির্বাচনের মুখোমুখি হতে হবে।
নেতানিয়াহুর অপশন এখন অনেক সীমিত হয়ে পড়েছে। মনে হচ্ছে, ইসরাইলি ভোটারদের কাছ থেকে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য গাজায় হামলা চালানোর সময় সম্ভবত শেষ হয়ে গেছে। তেলআবিবের যুদ্ধে জয়লাভ করার সামর্থ্য এবং ফিলিস্তিনি ও আরবদের কাছ থেকে রাজনৈতিক সুবিধা লাভের সুযোগ এখন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিছু ইসরাইলি রাজনীতিবিদ সহিংসতার নমুনায় যে পরিবর্তন আসছে তা এখনো মানতে রাজি নন। অতীতে প্রতিবার ইসরাইলি হামলার পেছনে তাদের নিজস্ব রাজনীতিই ছিল বড় ফ্যাক্টর। গাজাকে নিয়ে ইসরাইল বহু খেলা খেলেছে। তারা সেখানে তাদের সর্বশেষ যুদ্ধ প্রযুক্তি প্রদর্শন করেছে।
২০১৪ সালের যুদ্ধ ‘অপারেশন প্রোটেক্টিভ এজ’ হচ্ছে অতিরিক্ত আস্থাশীল ইসরাইলি নেতাদের একটি জেগে ওঠার আহ্বান। ওই যুদ্ধে দুই হাজার ৩০০ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১৭ হাজার আহত হয়। আর এদের বেশির ভাগই হচ্ছে বেসামরিক নাগরিক। অন্য দিকে, ৬৬ জন ইসরাইলি সৈন্য নিহত হয়।
ইসরাইলের বেসামরিক লোক নিহত হয় খুব কম। এতে প্রমাণিত হয়, ফিলিস্তিনিরা বেসামরিক লোকদের ওপর নয়, বরং সাহসিকতার সাথে সুপরিকল্পিতভাবে ইসরাইলি সৈন্যদের ওপর হামলা চালিয়েছে এবং তাদের টার্গেট করেছে। ওই যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর থেকে ইসরাইল গাজায় যে কঠোর অবরোধ আরোপ করেছে, তাতে ফিলিস্তিনিদের অবস্থানে কোনো পরিবর্তন আসেনি। তারা তাদের নীতিতে অটল রয়েছে।
ইসরাইলের সর্বশেষ বর্বরতার নজির হলো তারা গাজায় ব্যাপক বোমা হামলা চালায়। গাজার যোদ্ধারা ট্যাংকবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে একটি ইসরাইলি সামরিক বাসকে টার্গেট করে হামলা চালায়। এর কয়েক ঘণ্টা পর মিসরের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে ইসরাইল। ফিলিস্তিনিরা হামাস ও ইসরাইলের মধ্যকার ওই যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত জানায়। ওই যুদ্ধবিরতিকে ফিস্তিনিদের অনেকেই তাদের ‘বিজয়’ হিসেবে বিবেচনা করে।
অপরিণামদর্শী কোনো বড় যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় নেতানিয়াহু যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ায় ইসরাইলের বাম-ডান সব পর্যায়ের নেতারা নেতানিয়াহুর সমালোচনায় মুখর হয়ে ওঠেন।
গাজার ব্যাপারে সর্বশেষ যুদ্ধে নেতানিয়াহুর ভূমিকায় ইসরাইলের ৭৪ শতাংশ জনগণ অসন্তোষ প্রকাশ করে। একটি ইসরাইলি টেলিভিশনের নিউজ কোম্পানি জরিপে এ তথ্য বেরিয়ে আসে।
ফিলিস্তিনি তথা গাজার অধিবাসীরা উপলব্ধি করতে পেরেছে, ইসরাইলকে পাল্টা হামলা চালিয়ে কাবু করা ছাড়া তাদের সামনে আর কোনো পথ নেই। তাই তারা মরিয়া হয়ে সুপরিকল্পিতভাবে ইসরাইলি সৈন্যদের টার্গেট করেছে। এতে ভালো কাজও হয়েছে। ইসরাইল বুঝতে পেরেছে, ফিলিস্তিনিদের সাথে যুদ্ধে করে জয়লাভ করা এখন আগের মতো তেমন সহজ নয়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা