শবেবরাত উদযাপন : প্রসঙ্গ কথা
- ড. আবদুল আলীম তালুকদার
- ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২১:০৫
শবেবরাতের আরবি হলো ‘লাইলাতুল বারাআত’। এটি হিজরি শাবান মাসের ১৫ তারিখে পালিত পুণ্যময় রাত। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে মুসলিমরা এ রাতটি ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সাথে পালন করেন। মুসলিম ধর্মবেত্তাদের মতে, এ রাতে মহান আল্লাহ তায়ালা তার রহমতের দ্বার খুলে দেন, পাপী বান্দাদের উদারচিত্তে ক্ষমা করেন, জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। এ জন্য ‘শবেবরাত’-এর অর্থ হলো মুক্তির রাত বা নিষ্কৃতির রাত।
‘শবেবরাত’ সম্পর্কে হাদিসে যে পরিভাষা ব্যবহার করা হয়েছে তা হলো ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’ তথা শাবান মাসের মধ্য রজনী। তবে এই রাত নিয়ে প্রচুর গবেষণা, মুসলিম মনীষীদের বিভিন্ন উক্তি ও এর পক্ষে বিপক্ষে নানা মত রয়েছে।
এই বিশেষ রাতের ব্যাপারে পবিত্র কুরআনের কোথাও সরাসরি উল্লেখ পাওয়া যায় না। তবে সিহাহ সিত্তাহ বা বিশুদ্ধ ছয়খানা হাদিসগ্রন্থের কোনো কোনো হাদিসে এই রাতের বিশেষত্ব নির্দেশক হাদিস বর্ণিত হয়েছে।
পবিত্র কুরআনের সূরা দুখানে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন ‘হা-মিম। শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের। আমি তো এটি অবতীর্ণ করেছি এক বরকতময় রাতে। আমি তো সতর্ককারী। এই রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থিরকৃত হয়।’ উল্লিখিত আয়াতগুলোতে বর্ণিত একটি বিশেষ রাতের ব্যাখ্যায় তাফসিরকারদের কেউ কেউ বলেছেন, ‘লাইলাতুম মুবারাকা’ বা বরকতময় সে রাতটি হচ্ছে মধ্য শাবানের পূর্ণিমা রাত তথা শবেবরাত। (তাফসিরে মাজহারি, রুহুল মায়ানি ও রুহুল বায়ান)
প্রখ্যাত তাফসিরকার হজরত ইকরামা রহ: ‘এক বরকতময় রাত’-এর ব্যাখ্যায় বলেছেন, এ রাতটি হলো মধ্য শাবানের রাত। হজরত ইকরামার রহ:-এর ব্যাখ্যার সাথে অধিকাংশ তাফসিরকারই একমত পোষণ করেননি। তাদের সবাই পবিত্র কুরআনের উপর্যুক্ত আয়াতে বর্ণিত ‘এক বরকতময় রাত’ বলতে শবেকদরকে বুঝানো হয়েছে বলে মত প্রকাশ করেছেন। এ মতের পক্ষে রায় দিয়েছেন হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা:, ইবনে কাসির রহ:, ইমাম কুরতুবি রহ: প্রমুখ তাফসিরকারক। তবে ইমাম কুরতুবি রহ: তার তাফসির গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, ‘কোনো কোনো তাফসিরকার বলেছেন, লাইলাতুম মুবারাকাহ দ্বারা বোঝানো হয়েছে মধ্য শাবানের রাতকে (শবেবরাত)।’
এই রাত সম্পর্কে একটি সহিহ হাদিস যা সুনানে ইবনে মাজাহ-এর ইকামাতুস সালাত অধ্যায়ে হজরত আবু মুসা আশয়ারি রা: থেকে বর্ণিত যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা মধ্য শাবানের রাতে সমস্ত সৃষ্টির দিকে বিশেষ নজর দেন ও মুশরিক ও হিংসুক ব্যতীত সবাইকে ক্ষমা করে দেন।
হজরত আয়েশা রা: থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী করিম সা: এ রাতে মদিনার কবরস্থান জান্নাতুল বাকিতে এসে মৃতদের জন্য দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। তিনি আরো বলেন, নবী সা: তাকে বলেছেন, ‘এ রাতে বনি কালবের ভেড়া-বকরির পশমের পরিমাণের চেয়েও বেশিসংখ্যক গুনাহগারকে আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা করে দেন।’ (তিরমিজি-৭৩৯)
হজরত আলী রা: থেকে বর্ণিত নবী করিম সা: বলেছেন, ‘১৪ শাবান দিবাগত রাত যখন আসে, তখন তোমরা এ রাতটি ইবাদত-বন্দেগিতে কাটাও এবং দিনের বেলায় রোজা পালন করো; কেননা এ দিন সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন এবং আহ্বান করেন : কোনো ক্ষমাপ্রার্থী আছো কি? আমি ক্ষমা করব; কোনো রিজিকপ্রার্থী আছো কি? আমি রিজিক দেবো; আছো কি কোনো বিপদগ্রস্ত? আমি তাকে উদ্ধার করব। এভাবে ভোর পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালা বান্দার বিভিন্ন প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে আহ্বান করতে থাকেন।’ (ইবনে মাজাহ-১৩৮৪)
শবেবরাতের রজনীটি মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা: বা তাঁর সাহাবিরা জীবদ্দশায় কখনো পালন করেছেন বলে সহিহ সনদে বর্ণিত কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। তবে বেশ কিছুকাল আগে থেকেই মুসলিম বিশ্বে সাড়ম্বরে রজনীটি উদযাপিত হয়ে আসছে।
বছরের অন্যান্য দিবসের মতো মধ্য শাবান তথা শবেবরাত উপলক্ষেও রোজা পালন, নফল নামাজ আদায়, কুরআন তিলাওয়াত, দোয়া-দরুদ, তাসবিহ-তাহলিল, জিকির-আসকার, ইস্তিগফার পড়া, কবর জিয়ারত করা এবং সর্বোপরি নিজের জন্য, পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন তথা সব মুমিন-মুসলমান, দেশ-জাতির কল্যাণ কামনায় দোয়া করা দোষের নয়; বরং এগুলো অবশ্যই পুণ্যের কাজ। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সঠিক দ্বীন অনুধাবনের ও সে অনুযায়ী জীবন পরিচালনার তৌফিক দিন।
লেখক : কবি, প্রাবন্ধিক ও কলেজ শিক্ষক
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা