আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অংশ নিতে জামায়াতের দ্বিধা
- এহসান এ সিদ্দিক
- ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২০:৩৭
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যখন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নেতাদের বিচার শুরু হয়, তখন ডিফেন্স টিমের বিচারিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা উচিত কি না তা নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিতর্ক দেখা দেয়। জামায়াতে ইসলামীর একটি অংশ দৃঢ়ভাবে প্রতিরক্ষা কৌঁসুলিদের বিচারিক কার্যক্রমে জড়িত করার বিষয়ে বিরোধিতা করে। তাদের যুক্তি ছিল, এটি করা হলে আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক পরিচালিত রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিচারের বিষয়টি বৈধতা পাবে। তারা দাবি করেন, প্রতিরক্ষা আইনজীবীরা যদি বিচারিক কাজে অংশ নেন তাহলে সরকার দাবি করতে পারে, অভিযুক্তদের আত্মপক্ষ সমর্থনের ন্যায্য সুযোগ দেয়া হয়েছে। এতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় পর্যবেক্ষকদের চোখে ট্রাইব্যুনালের বিশ্বাসযোগ্যতা শক্তিশালী হবে।
এই অংশটির মতে, আইনি প্রক্রিয়ার সরাসরি প্রত্যাখ্যান প্রতিবাদের আরো শক্তিশালী রূপ হিসেবে কাজ করবে, বিচারের কথিত রাজনৈতিক প্রকৃতিকে তুলে ধরবে। এমনকী এখনো দলের অনেকেই মনে করেন, ডিফেন্স কৌঁসুলিদের নিযুক্ত করা কৌশলগত ভুল ছিল, কারণ এটি শেষ পর্যন্ত নেতাদের সুরক্ষা দিতে পারেনি।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ডিফেন্স টিমের নেতা ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক অবশ্য ভিন্ন অবস্থান নেন। তিনি, জোর দেন যে সর্বোত্তম কৌশলটি হবে আইনি কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়া। তিনি বিশ্বাস করতেন, ট্রাইব্যুনালের সামনে উপস্থিত হওয়া ডিফেন্সকে ন্যায়বিচার দাবি করার এবং বিচারিক প্রক্রিয়ায় পক্ষপাতিত্ব ও পদ্ধতিগত ত্রুটিগুলো প্রকাশ করার সুযোগ এনে দেবে। বিচার কার্যক্রমের প্রথম থেকেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে, সরকার যেকোনো উপায়ে জামায়াত নেতাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে বদ্ধপরিকর।
এই বাস্তবতা স্বীকার করে প্রতিরক্ষা দল তাদের ক্লায়েন্টদের এটি স্পষ্ট করে যে, ট্রাইব্যুনালের দৃষ্টিভঙ্গি অত্যধিক মাত্রায় প্রতিকূল ও অভিযুক্তদের মুক্তি নিশ্চিত করা প্রায় অসম্ভব। এই পরিস্থিতিতে, ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক ও তার টিম নিজেদেরকে কেবল আইনি প্রতিনিধি হিসেবে নয়, বিচারিক কার্যধারার পেছনের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রকাশের দায়িত্ব পালনেও মনোনিবেশ করে।
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সামনে ব্যারিস্টার রাজ্জাকের প্রতিরক্ষা টিমের কৌশল দু’টি মূল স্তম্ভের উপর তৈরি হয়েছিল। এ দু’টি স্তম্ভ হলো ‘বিলম্ব’ এবং ‘প্রকাশ করা।’ এই জোড়া উদ্দেশ্য পুরো কার্যধারাজুড়ে প্রতিরক্ষা দলের প্রতিটি পদক্ষেপকে অবয়ব দেয়। তাদের আইনি যুক্তি, পদ্ধতিগত আপত্তি ইত্যাদি আদালতের কৌশলগুলোকে প্রভাবিত করে। তাদের এক্সপোজারের লক্ষ্য ছিল যথাযথ প্রক্রিয়ার প্রতিটি লঙ্ঘন এবং ন্যায্য বিচারের মান থেকে প্রতিটি বিচ্যুতিকে নথিভুক্ত করা, যাতে ট্রাইব্যুনালের পক্ষপাতিত্ব ও পদ্ধতিগত ত্রুটির রেকর্ড সংরক্ষণ নিশ্চিত হয়। প্রতিরক্ষা টিম সতর্কতার সাথে ট্রাইব্যুনালের প্রতিটি লঙ্ঘন রেকর্ড করেছে, যখনই আইনি নীতিগুলো উপেক্ষা করা হয়েছে তখন লিখিত আপত্তি দাখিল করেছে। উদাহরণস্বরূপ, যখন ট্রাইব্যুনাল প্রসিকিউশনের সাক্ষীদের যথাযথভাবে জেরা করা থেকে প্রতিরক্ষা কৌঁসুলিকে বাধা দেয়, তারা পরের দিনই একটি আনুষ্ঠানিক আবেদন পেশ করে এর সাড়া দেয়। যে পরিস্থিতিতে তারা সাক্ষীদের প্রশ্ন করার অধিকার থেকে বঞ্চিত হন তার বিশদ বিবরণ তারা আবেদনে তুলে ধরেন এবং সেই প্রশ্নগুলো করার সুযোগ চান।
এই নিরলস ডকুমেন্টেশন এবং পদ্ধতিগত ন্যায্যতার উপর জোর দেয়ার বিষয়টি ট্রাইব্যুনালকে এমনভাবে হতাশ করে যেÑ এক পর্যায়ে, বিচারকরা ভবিষ্যতে একই ধরনের আবেদন দাখিল করা হলে প্রতিরক্ষা দলকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করার হুমকি দেন। যদিও এ ধরনের জরিমানা কখনো আরোপ করা হয়নি। এ কৌশলে দু’টি বিষয় ছিল। প্রথমত, যাতে এটি একটি বিস্তৃত আইনি রেকর্ড তৈরি করে যা ট্রাইব্যুনালের মামলাগুলোর অন্যায্য পরিচালনাকে প্রকাশ করে। ডিফেন্স টিম যদিও জানত, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে এ ধরনের আপত্তি সফল হওয়ার সম্ভাবনা কম, এরপরও তাদের উদ্দেশ্য ছিল উত্তরসূরি ও ভবিষ্যতের আইনি চ্যালেঞ্জের জন্য রেকর্ড সংরক্ষণ করা। যাতে এই নথিগুলো পরে উচ্চতর বিচার বিভাগীয় ফোরামে উপস্থাপন করা যেতে পারে। প্রকৃতপক্ষে, প্রতিরক্ষা দল ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে এ টি এম আজহারুল ইসলামের রিভিউ আবেদনের শুনানির সময় আপিল বিভাগের সামনে এই অ্যাপ্লিকেশনগুলোর কিছু ব্যবহার করার পরিকল্পনা করছে। দ্বিতীয়ত, এই কৌশলটি বিচারিক কার্যধারাকে ধীর করে দেয়, প্রসিকিউশনকে দোষী সাব্যস্ত করার বিষয়টি দ্রুত সম্পন্ন করতে বাধা দেয়। এ জন্য প্রতিটি আবেদন সতর্কতার সাথে খসড়া করা হয়েছিল এবং জাতিসঙ্ঘ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্ত দ্বারা সমর্থন করা হয়েছিল। এটি প্রসিকিউশনকে আবেদনগুলোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে বাধ্য করে, যা দীর্ঘ আইনি বিতর্কের দিকে মামলাকে পরিচালিত করে। ফলে ট্রাইব্যুনালের সামনে আত্মপক্ষের আপত্তি প্রত্যাখ্যান করে বিস্তারিত রুল জারি করা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। আর এভাবে বিচার কাজে সময় ব্যয় হয়।
স্টিভেন কে কেসির নেতৃত্বে আইনজীবীদের আন্তর্জাতিক দলও ডিফেন্স টিমকে বয়কট করার পরিবর্তে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রমে অংশ নেয়ার জন্য জোরালোভাবে সমর্থন জানায়। তাদের যুক্তি ছিল, প্রক্রিয়াটির সাথে জড়িত থাকার মাধ্যমে, ডিফেন্স টিম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মধ্যকার গভীর পক্ষপাত এবং মৌলিক ত্রুটিগুলো বিশ্বের কাছে প্রদর্শনের গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ পাবে। তারা যুক্তি দেন, বয়কট করার অর্থ হবে সরকার ও প্রসিকিউশনকে প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকার সুযোগে বর্ণনাকে তাদের মতো করে নিয়ন্ত্রণ করার অবকাশ করে দেয়া, আর ডিফেন্স টিমের জন্য সরকারের ওইসব অন্যায় প্রকাশের একটি প্ল্যাটফর্ম থেকে বঞ্চিত হওয়া।
এই কৌশলটি বিশেষ করে বিচারের সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনাগুলোর একটি উন্মোচন করার জন্য অমূল্য বলে প্রমাণিত হয়। সেটি ছিল ডিফেন্সের সাক্ষী সুখরঞ্জন বালিকে অপহরণের ঘটনাটি প্রকাশ করা, যা প্রসিকিউশন দ্বারা সাজানো হয়েছিল। ডিফেন্স টিম যদি বিচারিক প্রক্রিয়া বয়কট করত, তাহলে আইনের এই গুরুতর লঙ্ঘনটি সম্পূর্ণভাবে তুলে ধরা যেত না। বয়কটের পরিবর্তে উপস্থিত থেকে এবং সক্রিয়ভাবে বিচারিক কার্যধারায় জড়িত থাকার মাধ্যমে, ডিফেন্স টিম ট্রাইব্যুনালে হস্তক্ষেপ এবং অসদাচরণের বিষয় তুলে ধরে এই সমস্যাটি প্রকাশ্যে আনতে সক্ষম হয়েছিল। ফাউল প্লের সুস্পষ্ট প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও ট্রাইব্যুনালের তৎকালীন চেয়ারম্যান বিচারপতি মো: নিজামুল হক, প্রতিরক্ষা টিমের উদ্বেগ সরাসরি খারিজ করে দিয়েছিলেন। তিনি খোলা আদালতে দাবি করেছিলেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করেছেন এবং অপহরণের কোনো ইঙ্গিত তিনি খুঁজে পাননি। এই স্পষ্ট প্রত্যাখ্যান শুধু প্রকাশিত নিরপেক্ষ রিপোর্টের বিরোধিতাই করেনি; বরং গুরুতর পদ্ধতিগত লঙ্ঘন স্বীকার করতে ট্রাইব্যুনালের অনাগ্রহের একটি উদাহরণ হয়ে দাঁড়ায়।
প্রতিরক্ষা দল উপস্থিত না থাকলে কোনো আইনি চ্যালেঞ্জ বা প্রসিকিউশনের অসদাচরণের পাবলিক রেকর্ড ছাড়াই এ ধরনের ঘটনাগুলো ঢাকা পড়ে যেত। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় আইন বিশেষজ্ঞের উপস্থিতি এই অনিয়মগুলোর নথিভুক্ত করা নিশ্চিত করেছে, অনিয়মগুলোকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী আইনি সম্প্রদায়ের কাছে তা প্রকাশ করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের বিচার পরিচালনা করা ইতোমধ্যেই তাৎপর্যপূর্ণ আন্তর্জাতিক তদন্তের বিষয়ে পরিণত হয় এবং এ ধরনের মুহূর্তগুলো পুরো বিচারিক প্রক্রিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতা ও ন্যায্যতা সম্পর্কে উদ্বেগ আরো জোরদার করে। এভাবে ট্রাইব্যুনালের সামনে উপস্থিত হওয়া শুধু আইনি প্রতিনিধিত্বের বিষয় ছিল না এটি ছিল বিচারের আসল প্রকৃতি উন্মোচন করার একটি কৌশলগত পদক্ষেপ, যাতে ইতিহাস থেকে অন্যায়কে উপেক্ষা করা বা মুছে ফেলা না যেতে পারে।
জাতিসঙ্ঘের বিভিন্ন ট্রাইব্যুনালের রায়ে প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন কার্যপ্রণালীতে প্রয়োগ করার বিষয়টি নিশ্চিত করা ডিফেন্স কৌশলের এক্সপোজারের একটি মূল উপাদান ছিল। শুরু থেকেই, ডিফেন্স টিম ট্রাইব্যুনালকে রুয়ান্ডার জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটিআর), প্রাক্তন যুগোস্লাভিয়ার জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটিওয়াই) এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) মতো আন্তর্জাতিক আদালতের আইনি নজিরগুলোর জন্য জবাবদিহি করতে চেয়েছিল। এই পদ্ধতিটি দু’টি উদ্দেশ্যে করা হয়েছিল প্রথমত, এটি একটি আইনি কাঠামো প্রদান করে যা ট্রাইব্যুনাল সহজেই উপেক্ষা করতে পারে না এবং দ্বিতীয়ত, এটি আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আইন মোকাবেলায় প্রসিকিউশন ও ট্রাইব্যুনাল উভয়েরই অনভিজ্ঞতা ও দক্ষতার অভাব প্রকাশ করে দেয়।
ডিফেন্স টিম প্রসিকিউশনের হতাশার জন্য বারবার আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের যুগান্তকারী রায়গুলো উদ্ধৃত করেছে, যা বিচারকদের প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক আইনি নীতির সাথে জড়িত হতে বাধ্য করেছে। যেহেতু আন্তর্জাতিক অপরাধের বিষয়ে কোনো স্থানীয় বাংলাদেশী রায় ছিল না, তাই ট্রাইব্যুনালের কাছে এই আন্তর্জাতিক নজির গ্রহণ করা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। ফলে, যদিও ট্রাইব্যুনাল অজ্ঞাতসারে আন্তর্জাতিক আদালতের দ্বারা বিকশিত আইনি ধারণাগুলো গ্রহণ করেছিল, তবে প্রসিকিউটর বা তদন্তকারীদের এই কাঠামোর মধ্যে তাদের মামলা চালানোতে যথাযথভাবে যুক্তি দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় আইনি প্রশিক্ষণ বা দক্ষতা তার ছিল না।
আইনি বোঝাপড়ার এই ফাঁক প্রসিকিউশনের জন্য একটি গুরুতর দুর্বলতা হয়ে দাঁড়ায়। ট্রাইব্যুনাল আনুষ্ঠানিকভাবে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধকে একটি আন্তর্জাতিক আইনি ধারণা হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও প্রসিকিউশন প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক আইনশাস্ত্র দ্বারা সংজ্ঞায়িত এ ধরনের অপরাধের প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়। ট্রাইব্যুনালের আন্তর্জাতিক আইনের গ্রহণযোগ্যতা ও প্রসিকিউশনের সঠিকভাবে প্রয়োগে অক্ষমতার মধ্যে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়া একটি দ্বন্দ্ব তৈরি করে যা পুরো বিচারিক প্রক্রিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতাকে ক্ষুণ্ন্ন করে।
আন্তর্জাতিক আইনের প্রয়োগের উপর জোর দিয়ে ‘এক্সপোজার’-এর প্রতিরক্ষা কৌশলটির কথা তৎকালীন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো: নিজামুল হক উল্লেখ করেছিলেন। তিনি আন্তর্জাতিক আইনের উপর খুব বেশি নির্ভর করার জন্য বিচারপতি মো: শাহিনুর ইসলামকে ব্যক্তিগতভাবে সমালোচনা করেন। এই মতপার্থক্যটি স্কাইপ স্ক্যান্ডালের সময় প্রকাশ্যে আসে, যা দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ৯ ডিসেম্বর ২০১২ সংখ্যায় রিপোর্ট করা হয়েছিল।
অধিকন্তু, তৎকালীন আপিল বিভাগের বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা আন্তর্জাতিক আইনের প্রয়োগে আবদুল কাদের মোল্লার মামলায় ট্রাইব্যুনাল ও প্রসিকিউটরদের মধ্যে ব্যবধান নিরসনের চেষ্টা করেন। একটি বিতর্কিত রায়ে তিনি বলেছিলেন, বাংলাদেশের আইনি ব্যবস্থায় আন্তর্জাতিক আইন প্রযোজ্য নয়। ডিফেন্স টিম যুক্তি দিয়েছিল, এই সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক আইনকে যথাযথভাবে সংহত করতে প্রসিকিউশনের ব্যর্থতার ফলে করা হয়েছে। এই ত্রুটি উন্মোচন করে তারা বিচারের ন্যায্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং আইনি প্রক্রিয়ার ফাঁকফোকর তুলে ধরেন।
ডিফেন্সের ক্ষেত্রে ‘বিলম্ব’ করার কৌশলটি শেষ পর্যন্ত খুব বেশি সফল হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকার ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার জন্য নির্বাচনে এভাবে কারচুপি করবে তা কেউ আন্দাজ করতে পারেননি। আশা করা হয়েছিল, ২০১৪ সালের জানুয়ারির মধ্যে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। রাজনৈতিক নেতারা ডিফেন্স আইনজীবীদের আশ্বস্ত করতেন, ২০১৩ সালের শেষ পর্যন্ত যদি বিচার বিলম্বিত হতে পারে, তাহলে রাজনৈতিক দৃশ্যপটে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। ডিসেম্বর ২০১৩ নাগাদ আসামি পক্ষের আইনজীবীরা সফলভাবে বেশির ভাগ বিচার বিলম্বিত করতে পেরেছিলেন। যদি ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতো, তবে সম্ভবত এই রাজনৈতিক বিচারগুলো খারিজ হয়ে যেত। শুধু একজন আবদুল কাদের মোল্লার বিষয়টি ছাড়া। তাকে ১২ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে জাতীয় নির্বাচনের মাত্র কয়েক দিন আগে তড়িঘড়ি করে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।
অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ত্রুটি এবং পক্ষপাতগুলো তুলে ধরার ক্ষেত্রে ‘এক্সপোজার’ কৌশলটি একটি সূক্ষ্ম পদ্ধতি হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে, প্রতিরক্ষা দল পদ্ধতিগত অনিয়ম এবং ন্যায্য বিচারের অধিকার অস্বীকারের বিষয়টি নথিভুক্ত করতে সক্ষম হয়। এ বিষয়গুলো প্রকাশ করার উপর তাদের ফোকাস বিচারের রাজনৈতিক প্রকৃতি এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে ট্রাইব্যুনালের অক্ষমতা সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা বাড়াতে সাহায্য করেছে। এই কৌশলটি কেবল ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জগুলোর জন্য আইনি রেকর্ড সংরক্ষণ করেনি; বরং বিচারিক প্রক্রিয়ার ন্যায্যতা ও সততাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এই রেকর্ডগুলো বাংলাদেশের সাবেক আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এবং এর রায়ের বৈধতার উপর এখনকার জন্য আক্রমণের ভিত্তি তৈরি করবে।
লেখক : বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এবং হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের নিবন্ধিত কৌঁসুলি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা