০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ অগ্রহায়ন ১৪৩১,
`

স্বৈরাচারের প্রেতাত্মাদের উৎপাটন জরুরি

- প্রতীকী ছবি

‘কয়লা ধুলে ময়লা যায় না’। পুরনো এ প্রবাদ মিথ্যা নয়। বহু মানুষের বহু দিনের তিক্ত অভিজ্ঞতার ফল এটি। আর এতে রয়েছে অনেক শিক্ষণীয় বিষয়। পৃথিবীতে যত বিপ্লব হয়েছে তার মধ্যে সফলতম বিপ্লব হলো মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা:-এর সংঘটিত মদিনায় ইসলামী রাষ্ট্র গঠনের বিপ্লব। বাংলাদেশের ইতিহাসে ও ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট একটি সফল বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে। এই বিপ্লবে অগণিত হত্যার ঘটনা ঘটতে পারত; কিন্তু বিপ্লবীরা ধৈর্যের পরিচয় দেয়ায় তেমনটি ঘটেনি। বিপ্লবের সময় যে হাজারও হত্যার ঘটনা ঘটেছে তার সবটুকুই ঘটে স্বৈরাচারী সরকারের পেটুয়া বাহিনীর হাতেই। এ দিক থেকে ৫ আগস্টের বিপ্লব অসাধারণ ও ঐতিহাসিক। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ রহমতের এবং নিয়ামতের নিদর্শন বৈকি!

গণবিপ্লব-উত্তর ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত সরকারের খুঁটিনাটি কিছু ভুলভ্রান্তি থাকা স্বাভাবিক। সেই সুযোগে পতিত স্বৈরাচারী সরকারের প্রেতাত্মারা প্রতিনিয়ত কোনো-না-কোনোভাবে জাতির মধ্যে দ্বিধা-বিভক্তি, সন্দেহ-সংশয় ও বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। বিগত ১৬ বছর স্বৈরাচারী সরকার স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষ বিতর্ক এবং জঙ্গিবাদের নাটকের মাধ্যমে জাতিকে দ্বিধাবিভক্তির কাজ সার্বক্ষণিকভাবে চালিয়ে গেছে। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর চক্রান্ত অনুযায়ী দেশের আইন, বিচার ও শাসন বিভাগ এমনকি প্রতিরক্ষা বিভাগের তথা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ লেভেল থেকে সর্বনিম্ন লেভেল পর্যন্ত মানুষের মন-মগজে দ্বিধাবিভক্তি ও বিভ্রান্তির জাল পেতে রেখেছে।

গত প্রায় ১৬ বছরের মধ্যে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে, পুলিশ, বিচার ও শিক্ষা বিভাগে সব ক্ষেত্রে স্বৈরাচারী হাসিনা তার দলীয়করণের মাধ্যমে রন্ধ্রে রন্ধ্রে মেধাশূন্য, অথর্ব দলকানা এবং ইন্ডিয়ান ‘র’-এর লোক এত বেশি পরিমাণ নিয়োগ দিয়েছে যে, এদের হয়রানি থেকে জাতির খুব সহজে মুক্তি পাওয়া অসম্ভব।

গণবিপ্লবের পর গঠিত সরকার যতই মানুষকে সেবা দেয়ার চেষ্টা করছে, কোনোটিই সহজে করে উঠতে পারছে না। কেননা, ইন্ডিয়ান ‘র’ এবং শেখ হাসিনার রেখে যাওয়া প্রেতাত্মারা বর্তমান বিপ্লবী সরকারকে এবং সামগ্রিকভাবে পুরো জাতিকে এক দিনের জন্যও চিন্তামুক্ত বা স্থির থাকতে দিতে রাজি নয়। ভারতীয় ‘র’-এর সহযোগী বিভিন্ন মিডিয়া ও স্বৈরাচারের দোসর ছাত্রলীগ, যুবলীগ এবং আওয়ামী লীগ সার্বক্ষণিকভাবে ষড়যন্ত্রের জাল বুনছে এবং একটার পর একটা ষড়যন্ত্রের ট্রাম্পকার্ড ফেলছে। কখনো সংখ্যালঘু কার্ড, কখনো আনসার কার্ড, কখনো পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের কার্ড, কখনো মব জাস্টিসের কর্মকাণ্ড করে পাশাপাশি প্রথম আলোসহ তাদের বিভিন্ন মিডিয়া দিয়ে প্রচার ও প্রসার ঘটিয়ে জাতির সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপকভাবে, বিভ্রান্তি, মতদ্বৈধতা, সন্দেহ-সংশয় সৃষ্টির মাধ্যমে বিপ্লবী সরকারকে কোনো-না-কোনোভাবে ব্যর্থ প্রমাণের অপচেষ্টায় ও আপতৎপরতায় বিরতিহীনভাবে ক‚টকৌশল চালিয়ে যাচ্ছে। মানুষ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় সেবা পেতে অনেক বেশি বিড়ম্বনা ও হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। আসল উদ্দেশ্য হলো, বিগত দিনে মানুষ যেভাবে হয়রানির শিকার হয়েছে স্বৈরাচারের পতনের পর তার প্রেতাত্মাদের দিয়ে মানুষকে যদি ওইভাবে হয়রানির মধ্যে রাখা যায় তাহলে বর্তমান সরকারের প্রতি মানুষের বিরূপ মনোভাব তৈরি করা সম্ভব।

অন্তর্বর্তী সরকারকে মনে রাকতে হবে, অসংখ্য মানুষ আহত হয়ে, পঙ্গু হয়ে, অন্ধ হয়ে, বিধবা হয়ে, সন্তান হারিয়ে, রক্ত দিয়ে, জীবন দিয়ে সর্বদলীয় ঐক্যের ম্যান্ডেট দিয়ে আপনাদেরকে ক্ষমতায় বসিয়েছে। আপনারা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে স্বৈরাচারের দোসর ও প্রেতাত্মাদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করবেন, যাতে তারা কোনোরকম অস্থিরতা সৃষ্টির দুঃসাহস না পায়। বিভিন্নভাবে নিরাপদে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচারের দোসররা কিন্তু দেশ-বিদেশে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রচেষ্টায় লিপ্ত আছে এবং যেকোনো সময় বিপ্লবী সরকারকে ব্যর্থ করার জন্য ওঁৎ পেতে আছে। তাদেরকে যত তাড়াতাড়ি সমূলে উৎপাটিত করবেন, তত তাড়াতাড়ি সংস্কারের কাজ করতে পারবেন নির্বিঘ্নে। এগোতে পারবেন নির্বাচনের রোডম্যাপ তৈরির পথে।

এ জন্য পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে পরিপূর্ণরূপে সক্রিয় করা জরুরি। বিগত দিনের অশান্তি সৃষ্টিকারী ও লোপাটকারী চোর, বাটপাড়, লুণ্ঠনকারী এবং দুর্বৃত্তদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো সময়ের অপরিহার্য দাবি। স্বৈরাচারের দোসররা সরকারের বিভিন্ন স্তরে ঘাপটি মেরে বসে আছে এবং সুযোগের সন্ধান করছে। গোয়েন্দা বিভাগের বিভিন্ন শাখায় নির্ভরযোগ্য লোকদেরকে দায়িত্ব দিয়ে ঘাপটি মেরে থাকা লোকদের খুঁজে বের করা, চাকরিচ্যুত করা, বিচারের মুখোমুখি করা জরুরি। বিগত দিনে সৎ ও দক্ষ পুলিশ, সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা বিভাগের ক্ষতিগ্রস্ত এবং বঞ্চিত কর্মকর্তাদেরকে এখন কাজে লাগানো যেতে পারে। যারা বিগত দিনে ঘুষ-দুর্নীতির সাথে সম্পৃক্ত না হওয়ার কারণে, বিভিন্ন জায়গায় কোণঠাসা অবস্থায় ছিলেন, পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত ছিলেন এবং চাকরিও হারিয়েছেন বা ওএসডি করেছে, তাদের মতো কিছু সৎ ও যোগ্য লোক এখনো স্বৈরাচারের দোসররা তাদের বেষ্টনীতে বিভিন্ন জায়গায় কোণঠাসা অবস্থায় রেখেছে।

অপরাধীদের আশকারা দিলে তারা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিশ্বজোড়া যে খ্যাতি রয়েছে এবং তার নেতৃত্বে গঠিত সরকারের বিশ্বের কাছে যে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে সেটি ধূলিসাৎ করে দেবে। স্বৈরাচারের প্রেতাত্মাদের সমূলে উৎপাটন করতে দেরি করলে বিপ্লব ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। সেই আলামত কিন্তু অস্পষ্ট নয়।

লেখক : সেক্রেটারি, ঢাকা বিভাগ, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সাংবাদিক সংস্থা


আরো সংবাদ



premium cement
চোরতন্ত্রে পরিণত হয় দেশ বাংলাদেশে সুইডেনের বিনিয়োগ বৃদ্ধির আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা বিএনপি ক্ষমতা পেলে ফ্যামিলি ও ফার্মার্স কার্ড দেয়া হবে পশ্চিমতীরকে যুক্ত করে নিতে ইসরাইলের খসড়া পরিকল্পনা তৈরি দেশ স্থিতিশীল রাখতে জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই : ডা: শফিক তাঁবেদার রেজিম উৎখাতে ভারতের নীতিনির্ধারকরা এখন বেসামাল বাংলাদেশী সংখ্যালঘুদের দলে দলে ভারত পালানোর তথ্য সঠিক নয় ৫ আগস্টের পর ভারতের সাথে সম্পর্কে সমস্যা চলছে : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বাংলাদেশে শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠাতে মোদির কাছে আবদার মমতার মুক্তিযুদ্ধ চূড়ান্ত অধ্যায়ে রূপ নেয়

সকল