আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল
মিডিয়ার নীরবতা ও সংস্কার দাবি- এহসান এ সিদ্দিক
- ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১৯:৫০
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে বেআইনি হত্যাকাণ্ডে দায়ীদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ সংশোধনের আহ্বান জানানোর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মিডিয়া ল্যান্ডস্কেপ একটি মোড় নিয়েছে। একজন মন্তব্যকারী যুক্তি দিয়েছেন, বর্তমান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) নিয়োগ করা বিচারকদের অভিযুক্তদের বিচারে প্রয়োজনীয় আন্তর্জাতিক মানের দক্ষতার অভাব রয়েছে। একই ভাষ্যকার মো: তাজুল ইসলামের প্রধান কৌঁসুলি হিসেবে নিয়োগকে ‘ভয়াবহ সিদ্ধান্ত’ বলে অভিহিত করেছেন। যদিও, আমরা কিছু সমালোচনার সাথে একমত নই, তবে মনে করি যে আইসিটির ত্রুটিগুলো সম্পর্কে মিডিয়া খোলামেলা সমালোচনার যে দ্বার খুলে দিয়েছে তা দীর্ঘদিন ধরে প্রতিক্ষিত ছিল।
খোলামেলা আলোচনা শুধু আইসিটির বিশ্বাসযোগ্যতা শক্তিশালী করতে পারে এবং সেই দিনগুলো ফিরে আসা রোধ করতে পারে যখন সমালোচকদের আদালত অবমাননার অভিযোগে অভিযুক্ত করার হুমকি দেয়া হয়েছিল। অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতিতে আইসিটির সামনে হাজির হওয়া একজন ডিফেন্স কৌঁসুলি হিসেবে আমি তাকে সাহায্য করতে পারিনি। তবে এখন মিডিয়ার অবস্থানের সতেজ পরিবর্তনটি লক্ষ্য করতে পারি। আর এটি অবলোকন করে বিস্মিত হয়েছি যে, এ পরিবর্তন ন্যায়বিচারের প্রকৃত আকাক্সক্ষার দ্বারা অনুপ্রাণিত নাকি শুধু রাজনৈতিক স্বার্থ পরিবর্তনের কারণে এটি হয়েছে।
আইসিটির আইনি কাঠামোতে আকস্মিক আগ্রহের এ ঢেউ সম্পর্কে বিশেষত কৌত‚হল সৃষ্টি হয় বাংলাদেশের মিডিয়ার সমালোচনার উদ্দীপনা দেখে। মাত্র কয়েক মাস আগেও এ উৎসাহ উল্লেখযোগ্যভাবে অনুপস্থিত ছিল। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগে মিডিয়া আইসিটির সমালোচনা নয়, কার্যত প্রশংসামুখর ছিল। এম রফিকুল ইসলামের বিষয়টি ধরুন, যিনি জুলাই বিপ্লবের মাত্র এক সপ্তাহ আগে, যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্টের সমালোচনার বিষয়ে আইসিটি ট্রায়ালকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করেছিলেন। তিনি আইসিটির সমালোচনাকে ‘ইউরোকেন্দ্রিক’ বলে খারিজ করে দিয়েছিলেন এবং এটি ‘ইউরোপীয় সাম্রাজ্যিক মূল্যবোধ’ সর্বস্ব বলে দাবি করেছিলেন। খুব বেশি দিন আগে নয়, ডেইলি স্টারের মতো মিডিয়ার লেখায় যুক্তি দেখানো হয়েছিল যে আইসিটির আন্তর্জাতিক সমালোচনা ‘বাংলাদেশের জনগণের অনুভ‚তিতে আঘাত করেছে।’ আগস্ট ২০২৪-এ এসে এ অনুভ‚তিগুলো সম্পূর্ণ ১৮০ ডিগ্রি উল্টে গেছে বলে মনে হয়।
৫ আগস্টের পর থেকে শুধু আইসিটির আইনি কাঠামোর সমালোচনা বেড়েছে তাই নয়, গণমাধ্যমগুলোও এ ধরনের সমালোচনা প্রকাশ করতে বেশ আগ্রহী হয়ে উঠেছে। ১৫ বছর ধরে, আইসিটি মূলত স্থানীয় মিডিয়ার কোনো কঠোর সমালোচনা ছাড়া পরিচালিত হয়ে আসছিল। এ সময় আইসিটির সমালোচনামূলক লেখা ছিল বিরল এবং সাধারণত হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, বা বিদেশী মিডিয়ার উদ্বেগের খবর প্রচার করার সময় বাধ্যবাধকতা হিসেবে কিছু খবর বের হয়েছে মিডিয়ায়। এ ইস্যুতে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা তখন প্রায় ছিল না বললেই চলে। গভীরে অনুসন্ধানের বিষয়ে এ অনাগ্রহ বিশেষভাবে আশ্চর্যজনক ছিল, কারণ এ বিষয়ে বেশির ভাগ একাডেমিক মূল্যায়ন ছিল গুরুতর। এ সময় আইসিটিকে ‘অন্তর্বর্তীকালীন বিচারের সবচেয়ে অন্ধকার দৃষ্টান্তগুলোর মধ্যে একটি’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল এবং ডেসমন্ড ডি সিলভা কিউসির মতো সম্মানিত কণ্ঠ এ বিচারকে রাজনৈতিক হিসেবে দেখে এটিকে সমর্থন করার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। লর্ড কার্লাইল কেসি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে কারারুদ্ধ করা এবং মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে আইসিটিকে একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের জন্য অভিযুক্ত করেছেন এবং জিওফ্রে রবার্টসন কেসি তার বিশদ প্রতিবেদনে এখানকার বিচারের ন্যায্যতার গুরুতর সমস্যাগুলো তুলে ধরেন।
এটি সত্য যে, বিগত সরকারের আমলে বিচার নিয়ে মতামত প্রকাশ করা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ ছিল, এতে আদালত অবমাননার দায়ে কারাদণ্ড পর্যন্ত হতে পারতো। এ জন্য আসামিপক্ষের আইনজীবীদের দেশ ছাড়তে হয়েছে এমন ঘটনাও রয়েছে। ন্যায়বিচারে লবিং এবং অ্যাডভোকেসির জন্য গুমের শিকারও হতে হয়। তবে বিশ্বস্তভাবে আদালতের কার্যক্রম জনসাধারণের জন্য রিপোর্ট করার ক্ষেত্রে কোনো বাধা দৃশ্যত ছিল না। মিডিয়া এক ধরনের স্ব-সেন্সরশিপের অনুশীলন করত এ সময়। ডিফেন্সের সাফল্যের বিষয়ে তখন খুব কম রিপোর্ট করা হতো এবং প্রায়ই প্রসিকিউশনের ব্যর্থতার কথা আড়াল করে রাখা হতো। এ সময় অভিযুক্ত পক্ষের সাফল্যের বিষয় ছিল বিরল সংবাদ, যখন প্রসিকিউশনের একের পর এক ভুল পদক্ষেপগুলো নিঃশব্দে অদৃশ্য হয়ে যেত। একজন ডিফেন্স আইনজীবী হিসেবে, আমি প্রায় এমন সাজানো কাজ দেখে বিস্মিত হই যেখানে সাক্ষীদের বিবৃতির অসত্যতা স্পষ্ট হয়। এসব কিছু বড় রকমের অবিচার সত্ত্বেও আইসিটি ও সরকারকে অভিযুক্তদের মৃত্যুদণ্ড দিতে সাহায্য করে।
‘সেফ হাউজ’ কেলেঙ্কারিটি বেশির ভাগ মিডিয়ার আড়ালে থেকে যায়, মামলায় এর প্রভাব থাকা সত্ত্বেও এ কেলেঙ্কারিকে কার্যত উপেক্ষা করা হয়। প্রসিকিউশন সাক্ষীদের উপস্থিতি খুব ব্যয়বহুল এবং সময়সাপেক্ষ হবে বলে দাবি করে। আইসিটির নিজস্ব তদন্তকারীদের কাছে সাক্ষ্য সরাসরি দাখিল করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু দেখা যায়, অনেক ‘নিখোঁজ’ সাক্ষীকে প্রকৃতপক্ষে আইসিটির অবস্থান থেকে কয়েক মাইল দূরে একটি তথাকথিত ‘সেফ হাউজে’ বন্দী করে রাখা হয়েছিল। যাদের মধ্যে কেউ শপথ করে মিথ্যা বলতে অস্বীকার করেছিলেন এবং কিছু সাক্ষীকে ক্রস পরীক্ষা মোকাবেলা করতে যথেষ্ট প্রশিক্ষণ দেয়া যায়নি। সাধারণ ডায়েরি, উপস্থিতির লগ এবং ‘সেফ হাউজের’ খাদ্য রেজিস্টারসহ রেকর্ডগুলো এসবের প্রমাণ দেয়। এ কেলেঙ্কারি যেকোনো বিশ্বাসযোগ্য বিচারকে হাস্যকর করতে পারত যদি মিডিয়া কেলেঙ্কারিটি সঠিকভাবে প্রকাশ করত।
২০১২ সালে আইসিটির গেট থেকে ডিফেন্সের একজন প্রধান সাক্ষী সুখরঞ্জন বালিকে অপহরণের বিষয়ে মিডিয়া তেমন কোনো অনুসন্ধান করেনি। আইসিটি চেয়ারম্যান আপাতদৃষ্টিতে এ ঘটনায় জড়িত বলে বলে মনে হয়। তিনি আসামিপক্ষের আইনজীবীদের সিসিটিভি পর্যালোচনা করার অনুমতি দিতে অস্বীকার করেন। এ অনুমতি পাওয়া গেলে অপহরণে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার মতো ফুটেজ পাওয়া যেত। তবে, বিষয়টি বিদেশী মিডিয়া ও সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে উল্লেখযোগ্য কভারেজ পেয়েছে, যা কিছু স্থানীয় মিডিয়াতে কাভার হয়েছে।
মিডিয়া শুধু দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ফাঁস করা স্কাইপ কেলেঙ্কারির দিকে মনোযোগ দিয়েছিল। এতে প্রকাশ হয় আইসিটি চেয়ারম্যান, বিচারপতি মো: নিজামুল হক গোপনে বেলজিয়াম-ভিত্তিক বিশেষজ্ঞ আহমেদ জিয়াউদ্দিনের সহযোগিতা নিয়ে আসছিলেন। এমনকি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ভারী অভিযোগ যোগ করতে প্রসিকিউশন নথি চেয়েছিলেন। এতে প্রসিকিউশনের সাথে বাইরের অনাকাক্সিক্ষত যোগাযোগের প্রমাণও ছিল। কিন্তু বেশির ভাগ মিডিয়া এ বিষয়গুলোর গভীর দিকসমূহ অনুসন্ধান করা থেকে দূরে থাকে, যা ন্যায়বিচারের মানদণ্ডের স্পষ্টত লঙ্ঘন। শেষ পর্যন্ত, আমার দেশের ফাঁস করা কেলেঙ্কারিতে আইসিটি চেয়ারম্যান পদত্যাগ করতে বাধ্য হলে কেলেঙ্কারির নাটকীয় উপসংহার ঘটে।
বাংলাদেশের একাডেমিক ব্যক্তি যারা পূর্ববর্তী শাসনামলে আইসিটিকে সমর্থন করেছিলেন, তাদের দুর্বল ট্র্যাক রেকর্ড প্রমাণ করতে একটি কঠিন সময় এখন হাজির হয়েছে। তারা কিন্তু এখনো পুরনো ডিফেন্স অব্যাহত রেখেছেন আর সংবাদমাধ্যমের সমর্থনের আচ্ছাদন তারা পাচ্ছেন। এই একাডেমিকদের বেশির ভাগের মনোভাব বিনা ডি কস্তার ওয়ার ক্রাইমস, জাস্টিজ অ্যান্ড দ্য পলিটিক্সস অব মেমোরি (যুদ্ধাপরাধ, বিচার এবং স্মৃতির রাজনীতি) শীর্ষক নিবন্ধে প্রতিফলিত হয়েছে। ডি কস্তা বিনীতভাবে তার পর্যবেক্ষণ উপস্থাপন করেছেন যেখানে কীভাবে ‘সুসজ্জিত, উচ্চ শিক্ষিত এবং স্পষ্টবাদী জামায়াতের অনুগত ব্যক্তি ও আইনজীবীরা আন্তর্জাতিক নিয়ম ও মানদণ্ডের দৃষ্টান্ত ব্যবহার করে একটি সুষ্ঠু বিচার পরিচালনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সক্ষমতা ও ইচ্ছার বিষয়ে সন্দেহ জাগিয়েছেন সেটি তুলে ধরা হয়েছে। যদিও আশা করা হয়েছিল যে তারা আইনি নীতি ও বিধিবিধানের পরিবর্তে ধর্মগ্রন্থ থেকে উদ্ধৃত করে তাদের যুক্তি তুলে ধরবেন। নিঃসন্দেহে, তার সামনে সাধারণভাবে জামায়াতের আইনজীবীদের গ্রামের মোল্লা, ধুলোময় পোশাক পরা লোক হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছিল। আন্তর্জাতিক আইনের সূক্ষ্ম পয়েন্টগুলোতে তাদের তর্ক করার বিষয়টি কল্পনা করা তাদের জন্য কঠিন বিষয় ছিল। তার সামনে ডিফেন্স টিম সম্পর্কে ব্রিটিশ রাজের সময় ভারতীয় যারা ভালোভাবে ইংরেজিও বলতে পারতেন না তাদের মতো অবজ্ঞার এক চিত্র তুলে ধরা হয় বলে মনে হয়, অরওয়েলের বার্মিজ ডেসে (বার্মিজ দিনগুলোতে) ঠিক যেভাবে তুলে ধরা হয়েছিল। এটি ডি কস্তাকে বিস্মিত করে যে অভিযুক্তরা বিচারকে চ্যালেঞ্জ করতে নির্ভর করছে আন্তর্জাতিক আইনে এবং যদি পারা যেত তাহলে সম্ভবত তাদের এ সুযোগ দিতেও অস্বীকার করা হতো।
ডি কস্তা আরো মনে করেন, অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত করা হবে সুষ্ঠু বিচারের মান গৃহীত হয়েছে কিনা বা অভিযোগের ‘অপ্রতিরোধ্য প্রমাণ’ আছে কিনা তা বিবেচনা নির্বিশেষে। আইসিটি সমর্থকদের দ্বারা এ পৌরাণিক কাহিনীটি প্রচার করা হয়েছে, যদিও আইসিটিতে প্রমাণগুলো এতটা নড়বড়ে ছিল যে, জেরা-পরীক্ষার উপর নানা বিধিনিষেধ এবং একটি মিশ্রিত যৌথ অপরাধমূলক এন্টারপ্রাইজের সংজ্ঞা প্রবর্তন করতে হয়েছিল যে শুধু ১৯৭১ সালের সংবাদ প্রতিবেদনগুলো দিয়ে যেন অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করা সম্ভব হতে পারে। কোনো কোনো সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, কোনো আসামিকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সমর্থনে বক্তৃতা করার প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। তবে এগুলো প্রমাণ করতে প্রসিকিউশনের প্রয়োজন ছিল বক্তৃতাগুলো নির্দিষ্ট অপরাধমূলক কাজকে প্ররোচিত করেছিল কিনা, এটি একটি নির্দিষ্ট অপরাধের মধ্যে ‘পর্যাপ্ত সংযোগের’ প্রমাণ ছিল কিনা। তবে, প্রসিকিউশন বিবেচ্য ক্ষেত্রে প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয়েছে যে অপরাধের সাথে অভিযুক্তদের কোনো ধরনের সংযোগ বিদ্যমান ছিল।
আইনের অপ্রতুলতা নিয়ে সাম্প্রতিক উদ্বেগের বাছাই করা প্রকৃতি সবচেয়ে বেশি সমস্যাজনক। এখন স্বীকার করা হচ্ছে যে, বিচারগুলো ন্যায্যতারের চেয়ে কম ছিল, কিন্তু বিচারের ঘটনা পুনঃপরীক্ষায় আইনে কোনো সংশোধনী আনার আহ্বান নেই। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ছয়জনের ইতোমধ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। সন্দেহজনক ব্যাখ্যা এবং মিথ্যা প্রমাণের উপর (এবং একটি ক্ষেত্রে অন্তত প্রমাণটি আপিল বিভাগ তৈরি করেছে) ভিত্তি করে এটি করা হয়েছে।
২০১৩ সালে, আবদুল কাদের মোল্লা আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩-এর অধীনে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত প্রথম রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠেন। তাকে মৃত্যুদণ্ড দিতে, আপিল বিভাগ জেরা-পরীক্ষার নিয়ম পরিবর্তন করে, প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইনকে অকার্যকর করে এবং যৌথ অপরাধমূলক উদ্যোগ নীতির পুনর্ব্যাখ্যা করে। কিন্তু আইনের হালনাগাদ করার এবং এমনকি বিদেশী বিচারক আমদানির আহ্বান থাকলেও ভুল বিচারের শুধরে নিতে আইন সংশোধনের কোনো পরামর্শ নেই। আইন যদি ত্রুটিপূর্ণ হয়, তাহলে কি এর অধীনে প্রতিটি দোষী সাব্যস্ততার পুনর্মূল্যায়ন করা উচিত নয়? যুক্তরাজ্যের মতো একটি ফৌজদারি মামলা পর্যালোচনা কমিশন প্রতিষ্ঠায় একটি সংশোধনী আনা এ অন্যায় মোকাবেলায় একটি পরিণামদর্শী পদক্ষেপ হবে।
আমরা সর্বোতভাবে ন্যায়বিচারের পক্ষে এবং বিদেশী বিশেষজ্ঞদেরও স্বাগত জানাই। কিন্তু গণমাধ্যমের কিছু অংশ যখন আইসিটি প্রতিষ্ঠার ১৫ বছর পর সুষ্ঠু বিচার দাবিতে নিবন্ধ বা মতামত প্রকাশ করে এবং তাও যখন ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের হত্যাকাণ্ডে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিচারের সম্ভাবনা প্রবল, তখন এ দাবির সততা খতিয়ে দেখা দরকার। অতীতের ন্যায়বিচারের বিকৃতি সংশোধনে পরিবর্তনের দাবির সাথে আইন সংশোধনেরও একটি দাবি থাকা উচিত ছিল।
অবশেষে, এটি বাস্তব সত্য যে, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) বর্তমান সমালোচনাগুলো প্রায় এক দশক আগে ডিফেন্স আইনজীবী এবং মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর দ্বারা উত্থাপিত সমস্যাগুলোর প্রতিধ্বনি করে, যেগুলো মূলত তখন উপেক্ষা করা হয়েছিল। নতুন চিফ প্রসিকিউটর, ডিফেন্স কাউন্সেল হিসেবে তার অতীতের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এ সংশোধনের অনেকগুলো সামনে এগিয়ে দিচ্ছেন। আইন পরিবর্তনে সাম্প্রতিক এ দাবি সম্পর্কে নতুন সারবত্তা কিছু নেই। আব্দুর রাজ্জাক ইন ২০১৫ সালে ‘ট্রায়ালস ফর ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ইন এশিয়া’ (এশিয়ায় আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচার)- শীর্ষক লেখায় জোর দিয়েছিলেন, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) ন্যায্যতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করতে বিদেশী বিচারকরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুপ্রিম কোর্টে তিনি সংবিধানের নির্দিষ্ট কিছু বিধানকে সংশোধন করতে যুক্তিও দিয়েছিলেন যেগুলো কেবল অসাংবিধানিক ছিল না, একই সাথে তা একটি ন্যায্য বিচারকে বাধাগ্রস্ত করার মতো ছিল। কারণ এটি অভিযুক্তদের মৌলিক অধিকার অস্বীকার করেছে। ১০ বছর পরে এখন একই দাবি করা হচ্ছে। যদিও এসব দাবি তখন আরো প্রাসঙ্গিক ছিল, যখন পুরোনো প্রমাণের ভিত্তিতে দায় নির্ধারণে দক্ষতার প্রয়োজন ছিল। ট্রাইব্যুনালের কয়েক দশক পুরোনো মামলায় জটিল প্রমাণমূলক নিয়ম (শুনানি, বিচারিক নোটিশ, লিখিত সাক্ষী বিবৃতি বিধি ইত্যাদি) প্রয়োগ করার প্রশিক্ষণ ছিল না এবং প্রায়ই গুরুতর ভুল করা হয়। এখন, এক দশকের ত্রুটিপূর্ণ আইনশাস্ত্র এবং একটি কলঙ্কিত ঘটনার সাথে, মনে হচ্ছে ন্যায়বিচারের প্রতি প্রকৃত প্রতিশ্রুতির পরিবর্তে সুষ্ঠু বিচারের আহ্বান কিছু রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য আসছে। শেষ পর্যন্ত, এ চাপ কাজ না করা কঠিন যদিও ওভারডিউর প্রেরণা কিছুটা উদ্দেশ্যমূলক।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট হত্যার বিচার শুরু হওয়ার সাথে সাথে, মিডিয়াকে আইন ও বিচারের অসঙ্গতি এবং ত্রুটিগুলো সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রকাশে উৎসাহিত করা হচ্ছে। তবে, এটি করার সময় তাদের অতীতে ন্যায়বিচারের গুরুতর বিকৃতি সম্পর্কে রিপোর্ট করতে ত ব্যর্থতাও (এবং প্রায়ই ইচ্ছাকৃতভাবে প্রত্যাখ্যান) তুলে ধরা উচিত এবং তা করতে ব্যর্থ হলে তারাও আইসিটির অবিচারে অবদান রেখেছিল কি না সে প্রশ্ন উঠবে।
লেখক : আইনজীবী, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে একজন ডিফেন্স কনসালটেন্ট ছিলেন এবং হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের কৌঁসুলি হিসেবে নথিভুক্ত
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা