২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গণসভাপতি যখন ডিসি ইউএনও

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গণসভাপতি যখন ডিসি ইউএনও - ফাইল ছবি

দ্বিতীয় বিপ্লবের পর বিপ্লবী সরকার বিপ্লবের আতিশয্যে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতিদেরকে গণহারে পদচ্যুৎ করে ডিসি ও ইউএনওদেরকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়। ডিসিরা তাদের বিশাল সরকারি দায়িত্বের পাশাপাশি আগে থেকেই প্রায় অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠানের সভাপতির পদ অলঙ্কৃত করে আছেন। তারপরও আরো শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতির দায়িত্ব তারা কিভাবে পালন করবেন তা আমাদের কাছে বোধগম্য নয়।

একই অবস্থা ইউএনওদের বেলায়ও। তারা সরকারি কাজের পাশাপাশি উপজেলার উন্নয়নকাজে সময় দেয়ার পর উপজেলার শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতির দায়িত্ব কিভাবে পালন করবেন, তা বোধ করি সরকারের সংশ্লিষ্টদের মাথায় নেই। অনুসন্ধানে জানা যায়, ইউএনওরা কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটির সভা আহ্বান না করেই নিজে নিজে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। আর মিটিং করার সময়ই বা তার কোথায়? এমপিও বেতন-বিলে স্বাক্ষরের মধ্যেই তাদের দায়িত্ব সীমিত রেখেছেন।

বলা যায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পড়ালেখা ও শৃঙ্খলা কার্যত ভেঙে পড়েছে। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার হুমকির মুখে রয়েছে।

স্থানীয় বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তিরা স্ব-উদ্যোগে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন এবং বছরের পর বছর ধরে বিভিন্নভাবে অর্থ সংগ্রহ করে শিক্ষক-কর্মচারীদের যৎকিঞ্চিৎ বেতন দিয়ে আসছিলেন, সেসব প্রতিষ্ঠানের এই যৎকিঞ্চিৎ বেতনও বন্ধ হয়ে গেছে। সাধারণত প্রতিষ্ঠাতা অথবা দাতা সভাপতি হিসেবে এসব নন-এমপিও স্কুল-কলেজ, মাদরাসা পরিচালনা করে আসছেন এবং নানাভাবে অর্থ সংগ্রহ করে তারা কিছুটা বেতন জোগান দিতেন।

আগামীতে এমপিও হবে এই আশায় শিক্ষক-কর্মচারীরা শিক্ষাক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এখন হঠাৎ করে সভাপতি না থাকায় তাদের সেই সামান্য অর্থের উৎসও বন্ধ হয়ে গেছে।
এই অবস্থা চলতে থাকলে আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই এই শিক্ষক-কর্মচারীরা অন্য চাকরি বা ব্যবসার পথ খুঁজবেন। অথবা এনটিআরসিএর মাধ্যমে অপর কোনো এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলে যাওয়ার চেষ্টা করবেন। ফলে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনিবার্যভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। এতে করে গ্রামীণ দরিদ্র ছেলে-মেয়েদের ঝরে পড়ার হার বিপুলভাবে বৃদ্ধি পাবে। ফলে সরকারের এসডিজি (ঝঁংঃধরহধনষব উবাবষড়ঢ়সবহঃ এড়ধষ) অর্জন দারুণভাবে ব্যাহত হবে। পাশাপাশি নারী শিক্ষা ও নারীর ক্ষমতায়নও বহুলাংশে পিছিয়ে পড়বে।

ইতোমধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় গ্র্যাজুয়েট পর্যায়ের কলেজগুলোর সভাপতি বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তিদের মধ্যে থেকে মনোনয়ন দেয়া সম্পন্ন করেছে। কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে মাধ্যমিক স্কুল, মাদরাসা ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের কলেজ কমিটির সভাপতি পদ এখনো উন্মুক্ত করা হয়নি।

অনতিবিলম্বে স্কুল, মাদরাসা ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের কলেজের যেসব কমিটির মেয়াদ আছে ওই সব কমিটির সভাপতি, যাদের আওয়ামী-সংশ্লিষ্টতা নেই অথবা যাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই, তাদেরকে পুনর্বহাল করা যেতে পারে। আর যেসব কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে বা ছয় মাস মেয়াদ আছে, সেসব কমিটি পুনর্গঠন করা যেতে পারে।
সেই সাথে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতি আছে, সেসব প্রতিষ্ঠানকে দ্রুত এমপিওভুক্ত করা যেতে পারে। এতে করে বিপ্লবে নেতৃত্ব দানকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষার অগ্রাধিকারকে স্বীকৃতি দেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement