সংবিধান ও বিএনপির ক্ষমতা
- শাহীদ কামরুল
- ২১ অক্টোবর ২০২৪, ২০:৪৩, আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২৪, ২৩:০৩
কিছু দিন ধরে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের মধ্যে হরদম একটা কথা খুবই চাউর হচ্ছে, যা আমি বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ঠাহর করলাম, এমনকি ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে সাংবাদিকদের কেউ দেখি প্রশ্ন করতে বিভিন্ন দায়িত্বশীল ব্যক্তিদেরকে- এই সরকারের মেয়াদ কতদিন বা এ সরকারের বৈধতা কী? তখন মনে হলো যে, এই বিষয়টা একটু ক্লিয়ার করা দরকার। একটি বিষয় আমি খেয়াল করেছি আর কিছু মানুষ অবরে সবরে-গোচরে-অগোচরে বুঝে-না বুঝে এই সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বলছেন, এটা ভুল সম্বোধন, এটা কোনো তত্ত্বাবধায়ক সরকার নয়, এটা হচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, যা আমরা গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে পেয়েছি। অনেকে মনে করছেন বাংলাদেশে গণ-অভ্যুত্থান বা বিপ্লব হঠাৎ করে ঘটে গেছে। আসলে কথাটি সঠিক নয়। জগৎবিখ্যাত জার্মান দার্শনিক বলেন, বিপ্লব কখনো হঠাৎ করে ঘটে না। এর জন্য একটা দীর্ঘ প্রস্তুতি দরকার হয়। আসলে বাংলাদেশ অনেক দিন ধরেই একটি বিপ্লবের অবস্থায় ছিল এবং সেই রকম একটি অবস্থান বাংলাদেশ করছিল সেটি ২০২৪ সালের ৩৬ আগস্টে ঘটে গেল।
পৃথিবীতে আমরা বিভিন্ন ধরনের বিপ্লব দেখেছি যেমন- ১৭৭৯ ফরাসি বিপ্লব, ১৭৭৬ আমেরিকান বিপ্লব, ১৯১৭ রুশ বিপ্লব, ১৯৭৯ ইরান বিপ্লব, ২০১০ আরব বসন্ত, সবশেষ আমাদের ২০২৪ আগস্ট বিপ্লব, বিপ্লবগুলোর সময় যে সরকার গঠিত হয়েছে ওই সরকারগুলো নিজেরাই একটা সংবিধান প্রণয়ন করেছিল। তবে কিছু কিছু সরকার এমনও দেখা গেছে, যারা প্রচলিত সংবিধানের কিছুটা পরিবর্তনের মাধ্যমেও নতুন সংবিধান প্রবর্তন করেছিলেন।
বস্তুত, গণ-অভ্যুত্থান বিদ্যমান সংবিধানকে অকার্যকর করে দেয়। তাতে উদ্বেগের কিছু নেই। দুনিয়ার বহু দেশে এমন ঘটেছে, ভবিষ্যতেও ঘটবে। গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জনগণ গাঠনিক ক্ষমতায় (constituent power) রূপান্তরিত হতে থাকে, যার আইনি-রাজনৈতিক তাৎপর্য বিপুল। এই গাঠনিক ক্ষমতার বলেই জনগণ নতুন গণতান্ত্রিক গঠনতন্ত্র (constitution) প্রণয়ন করে। ঘটনাটা ঘটে গঠনতন্ত্র সভায় (Constituent Assembly)।
তাহলে ইন্টেরিম পর্যায়ের আইনি (legal) ভিত্তি কী? অন্তর্বর্তী পর্যায়ে দৈনন্দিন কাজ বিদ্যমান আইনি বিধান মোতাবেকই চলতে পারে। তবে বিদ্যমান আইনের যেসব ধারা আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের সাথে সাংঘর্ষিক, সেগুলো অটোমেটিক্যালি বাতিল হয়ে যাবে।
গঠনতন্ত্র প্রণয়নের আগ পর্যন্ত অন্তর্বর্তী পর্যায়ে কাজ চালানোর জন্য ক্রান্তিকালীন ও অস্থায়ী বিধানাবলি প্রণয়ন করা যেতে পারে। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের প্রথম সংবিধান প্রণয়নের আগে এমন বিধান প্রণয়নের নজির রয়েছে। অথবা সাম্প্রতিক চিলির মতো অন্তর্বর্তী পর্যায়ে সামাজিক শান্তি সম্মতিপত্র (Agreement for Social Peace) বানানো যায়। আমাদের বাস্তবতায় আমরা এটাকে অন্তর্বর্তী আইনি ফ্রেমওয়ার্ক (interim legal framework) বলতে পারি।
গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সৃষ্ট সরকার গণক্ষমতার প্রতিনিধিত্ব করে। আর গণক্ষমতাই নতুন আইনি ও গঠনতান্ত্রিক কাঠামোর বৈধতার ভিত্তি। এটুকুই যথেষ্ট। তবু আইনি বৈধতার বিতর্কের মীমাংসার জন্য অস্থায়ী বিধানাবলি কিংবা অন্তর্বর্তী আইনি ফ্রেমওয়ার্ক কার্যকর পদ্ধতি হতে পারে, যার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায় করা সহজ হতে পারে।
গণ-অভ্যুত্থানের চেয়ে বড় কোনো সংবিধান নেই। কাজেই গণ-অভ্যুত্থানকে সংবিধান দেখিয়ে লাভ নেই। ‘সংবিধান’ কী? জনগণের সামষ্টিক ইচ্ছা ও অভিপ্রায়ের লিখিত দলিল। গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের সামষ্টিক ইচ্ছা ও অভিপ্রায় যেভাবে প্রকাশিত হয়েছে, তার সামনে লিখিত সংবিধান নস্যি। কাজেই সংবিধানের দোহাই দিয়ে গণ-অভ্যুত্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে কেবল প্রতিবিপ্লবী শক্তি।
অভ্যুত্থানকারী শিক্ষার্থী-জনতা অভ্যুত্থানের আগেই বলেছে- হয় শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন না হলে তাকে পতনের মুখোমুখি হতে হবে। হাসিনাপুত্র জয় দিল্লির এস্টাবলিশমেন্টের মদদে এই গণ-অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। সে বলেছে সংবিধান অনুযায়ী তার মা নাকি এখনো প্রধানমন্ত্রী।
আর অভ্যুত্থানকারী শিক্ষার্থী-জনতার দিক থেকে হাসিনা পদত্যাগ না করার মানে হচ্ছে গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তার পতন ঘটেছে। গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পতন ঘটার মানে হচ্ছে সংবিধান অপ্রাসঙ্গিক ও অকার্যকর। বাংলাদেশে নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধান রচিত হবে।
নতুন সরকারের বৈধতার ভিত্তি গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রকাশিত গণ-অভিপ্রায় ও ইচ্ছা; সংবিধান নয়। শপথ গ্রহণের পরের বক্তৃতায় বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস পরিষ্কারভাবে বলেছেন ‘গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এই সরকার সৃষ্ট’।
মানে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা দিয়ে এই সরকারকে বোঝা যাবে না, গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত গণরায়কে আমলে নিতে হবে। কাজেই ‘as far as the constitution goes’ বলে কোনো লাভ নেই। কারণ শেখ হাসিনার পতনের মাধ্যমে এই সংবিধানেরও পতন ঘটেছে।
তবু যারা আইন, সংবিধান ইত্যাদি নিয়ে ফ্যাটিশে ভোগেন; ‘সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা’র দোহাই দেয়া মাত্র কুপোকাত হয়ে যান, তাদের জন্য বলছি। বাংলাদেশের আইন বিশেষজ্ঞদের একটা বড় অংশ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির তথাকথিত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার নির্বাচন থেকেই আওয়ামী লীগ সরকারকে অবৈধ ও অসাংবিধানিক বলে আসছেন।
কেন? কারণ ২০১১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার সংসদীয় ব্রুট মেজরিটির বলে আদালতকে দিয়ে সংবিধানে থাকা তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করেছিল; কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ তখন বলেছিল, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আরো দু’টি সংসদ নির্বাচন হতে পারে। সাতজন অ্যামিকাস কিউরির মধ্যে চারজন তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাখার পক্ষে মত দিয়েছিলেন; কিন্তু শেখ হাসিনা তা মানেননি।
কাজেই গায়ের জোরে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার উঠিয়ে দিয়ে তৎকালীন শেখ হাসিনা সরকার ‘অসাংবিধানিক’ কাজ করেছিল। অর্থাৎ ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালে দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত ভুয়া নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করা আওয়ামী লীগ সরকার তখন থেকেই অবৈধ ও অসাংবিধানিক।
আজকে তারা আমাদেরকে সংবিধান শেখাচ্ছেন! সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে তারা কিভাবে বলপূর্বক দেশছাড়া করেছিল স্মরণ করুন। তার ‘অপরাধ’ কী ছিল? তিনি শেখ হাসিনার নির্বাহী হুকুমের বাইরে গিয়ে একটা রায় দিয়েছিলেন মাত্র (ষোড়শ সংশোধনীকে অবৈধ ও সংবিধান পরিপন্থী ঘোষণা করা রায়)।
সংবিধান জনগণের ইচ্ছা ও অভিপ্রায়ের লিখিত দলিল। কার্যকর ও অবিতর্কিত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গঠিত সংসদ জনগণের ইচ্ছা ও অভিপ্রায়ের প্রতিনিধিত্ব করে মাত্র। ইচ্ছা ও অভিপ্রায়ের প্রতিনিধি কি খোদ ইচ্ছা ও অভিপ্রায় বদলে দিতে পারে? না, পারে না। কিন্তু এতদিন তাই করা হয়েছে। অর্থাৎ, সংসদের আসনভিত্তিক সংখ্যাগরিষ্ঠতার, যা আবার ভোট পার্সেন্টেজে সংখ্যাগরিষ্ঠ নয় বলে সংবিধান সংশোধন করা একটা অসাংবিধানিক ও গণবিরোধী কাজ। সেই হিসাবে ত্রয়োদশ সংশোধনী তথা তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করাটা ছিল অসাংবিধানিক।
সংবিধান অনুযায়ী আমার মা এখনো প্রধানমন্ত্রী, জয়ের এই বক্তব্যে বিভ্রান্ত হবেন না। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধানের শপথপরবর্তী বক্তব্য খেয়াল করুন : ‘গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এই সরকার সৃষ্ট’। আগেই বলেছি গণ-অভ্যুত্থানের চেয়ে বড় কোনো সংবিধান নেই। গণ-অভ্যুত্থান নতুন সংবিধানের বৈধতার ভিত্তিও বটে।
সব প্রতিবিপ্লবী তৎপরতা রুখে দিন। শহীদের রক্তে অর্জিত বাংলাদেশের জনগণের বিজয়কে হেফাজত করুন।
বিএনপির মহাসচিব বললেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধানের বক্তব্যে নির্বাচনের কোনো রোডম্যাপ নেই। তার কিছুদিন আগে তিনি বললেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস আমাদের লোক তো। আমার প্রশ্ন হলো- ড. মুহাম্মদ ইউনূস যদি আপনাদেরই লোক হয় তাহলে উনার ওপর নির্ভর করতে বিশ্বাস রাখতে এবং ধৈর্য ধারণ করতে আপনাদের সমস্যা কোথায় আসলে বিএনপির সমস্যা হলো অন্য জায়গায়, যা দেশের সচেতন নাগরিক খুব ভালোভাবে জানে।
আদতে বিএনপির সমস্যাটা হলো নির্বাচন করতে যত বিলম্ব হবে জামায়াতে ইসলামীর ভোট তত বাড়তে থাকবে। আর বিএনপির ভোটের যে তরঙ্গ আছে সেটি আর থাকবে না। কারণ বিএনপি বড় দল হিসেবে নেতাকর্মীদের অপরাধগুলো কখনো নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না, ফলে তাদের সুনামহানি হবে এবং দিনে দিনে ভোট কমতে থাকবে।
বস্তুত প্রফেসর ইউনূস তার কথাই তিনি স্পষ্ট করেছেন; তিনি ছাত্রদের ডাকে রাষ্ট্রের দায়িত্ব নিয়েছেন সুতরাং ছাত্ররা যদি বলে অথবা দেশের আপামর জনতা যদি বলে তখনই তিনি দায়িত্ব ছাড়বেন। আসলে বিএনপির কথায় সরকারপ্রধানের তেমন কিছু আসে যায় না। আমার ধারণা উনার সরকার আইনশৃঙ্খলা পুরাপুরি নিয়ন্ত্রণ করার পরে বিএনপির যারা অপরাধ করছেন তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করবে এবং তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে। পাঠক, আপনারা একটা বিষয় খেয়াল করলে বুঝতে পারবেন, এ প্রফেসর ইউনূসকে ২০০৭ সালে কিন্তু সরকারপ্রধান হওয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল, এমনকি সেনাবাহিনী উনার বাসায় সারা রাত ছিল উনাকে কনভিন্স করার জন্য; কিন্তু রাজি হননি, এরপর সেনাবাহিনী বলল আবার পরের দিন আসবে তিনি তখনো বলেছিলেন যে, আপনারা এলে একই উত্তরই পাবেন, অথচ তিনি ২০২৪ সালে ছাত্রদের কথায়ই দায়িত্ব নিতে রাজি হয়েছেন।
এর পেছনে করে কয়েকটা কারণ আছে আমার ধারণা যেহেতু বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা সম্পূর্ণ ভিন্ন, একটা বিপ্লব তথা গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে, এখন অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে সরকারটি এসেছে এ সরকার গোটা মানুষের বলতে গেলে শতকরা ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ সমর্থন নিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে এবং মানুষের মন-মানসিকতা পরিবর্তন হয়েছে। তা ছাড়া ২০০৭ সালে এমন কোনো শক্তিশালী গ্রæপ ছিল না যারা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সমর্থন জোগাবে। যেমন এখন আছে সফল বিপ্লব সংঘটিত করা সারা বাংলাদেশের বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের বিশাল একটা অংশ যারা প্রফেসর ইউনূসকে সমর্থন দেবেন, আর তা ছাড়া জামায়াত, এবি পার্টি, ইসলামী আন্দোলন, গণতান্ত্রিক মঞ্চ ও অন্যান্য ইসলামিক দল সময় দিতে চায় এবং সমর্থন করবে এবং দেশের সাধারণ মানুষও ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সমর্থন দিচ্ছেন কারণ তারা জানেন বিএনপির চরিত্র কেমন এবং তারা আগে কেমন রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো যেসব শহীদের রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীনতা অর্জন করেছে এবং ফ্যাসিস্ট সরকারের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করেছে, তাদের অনেক আশা-আকাক্সক্ষা আছে এই সরকারের কাছে। সুতরাং এ সরকার অল্প সময়ের মধ্যে থেকে এ কাজগুলো করতে পারবে না, এ কাজগুলো করতে হলে সরকারের লম্বা সময় প্রয়োজন আছে। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো এই সরকার তো আগেকার কেয়ারটেকার সরকারের মতন না। এটা হলো মূলত বিপ্লবপরবর্তী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং দেশের মানুষ অলরেডি রাস্তায় নেমে সংহতি জানিয়ে এই সরকারকে সম্মতি দিয়েছে, তিনি অবৈধ নন; বরং এ সরকার যতদিন মন চাইবে ততদিন থাকবে, যখন মনে করবে যে বাংলাদেশে একটা নির্বাচন দেয়ার মতো পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, তখনই নির্বাচনের ডেট ঘোষণা করবে।
তা ছাড়া সরকারপ্রধান যিনি আছেন তিনি খুব ভালো করেই জানেন উনার সরকারকে বিপদে ফেললে একমাত্র বিএনপি ফেলবে, এ জন্য আমার ধারণা উনি বিএনপির সবগুলো মামলা খারিজ করবেন না, বিশেষ করে তারেক রহমানের অনেকগুলো মামলা ঝুলিয়ে রাখবেন বিএনপিকে চাপে রাখার জন্য এবং সামনের দিনগুলোতে বিএনপি নেতাকর্মীরা যেসব জায়গায় অন্যায় কাজ করবে, চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে যত কাজ করবে এগুলোর বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেয়া শুরু করবেন।
আসলে বিএনপি তর্জন-গর্জন করেই ক্ষান্ত হবে। আদতে আওয়াজে আওয়াজরঙ্গজেব ছাড়া আর কিছুই না, বিএনপি তেমন কিছুই করতে পারবে না, কারণ দেশের মানুষ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সব বিপ্লবী ছাত্র এবং কিছু কিছু রাজনৈতিক দল এই সরকারকে সমর্থন দিয়ে যাবে সুতরাং বিএনপি হালে পানি পাবে না।
তা ছাড়া সারা পৃথিবীতে ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসের একটা ফেস ভেলু রয়েছে, তিনি আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব হওয়ার কারণে ইউরোপ-আমেরিকা তথা সারা পৃথিবীর মানুষের কাছ থেকে সমর্থন পাবেন আর তার সরকার যদি ভালো করতে থাকে তাহলে দেশের মানুষ এমনিতেই উনাকে সমর্থন দেবে। আর নির্বাচন কয়েক বছর পরে হলে বিএনপি নির্বাচনে পাস করবে এটা শতভাগ বলা যায় না।
কারণ হলো বিগত বছরগুলোতে মানুষ বিএনপির শাসন দেখেছে বিএনপির সম্পর্কে মানুষ সম্মক অবগত রয়েছে। আর তরুণ প্রজন্ম বিএনপিকে সেভাবে পছন্দ করে না। আর তা ছাড়া জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে দেশের ইসলামিক দলগুলোর একটা জোট আত্ম প্রকাশ করতে যাচ্ছে, যদি ওরা সফলভাবে জোটবদ্ধ নির্বাচন করতে পারে, তাহলে নির্বাচনের হিসাবনিকাশ অন্য রকম হতে পারে। কারণ তারা বিশাল একটা শক্তি, আর যদি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কোনো রাজনৈতিক দল গঠন করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তাহলে হিসাবটা কিন্তু অন্যরকম হতে পারে।
এখানে আওয়ামী লীগ অনেক বড় একটা ফ্যাক্টর, আওয়ামী লীগ হয়তো সামনে নির্বাচন করতে পারবে না বা নির্বাচন করার মতো ওদের প্রার্থী থাকবে না সুতরাং আওয়ামী লীগের ভোটগুলো জামায়াতে ইসলামী পাওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। কারণ আওয়ামী লীগ বিএনপিকে প্রতিদ্ব›দ্বী মনে করে এবং অনিরাপদ মনে করে আর জামায়াতে ইসলামীকে। আওয়ামী লীগ যতই নির্যাতন করুক না কেন আওয়ামী লীগ অন্তত এইটুকু বোঝে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা সৎ এবং তুলনামূলক ভালো, তাদের কাছে আওয়ামী লীগের জান-মাল দু’টিই বেশি নিরাপদ; সেই ক্ষেত্রে আগামী সংসদে নির্বাচনের ফলাফল অন্য রকম হতে হবে।
আগামী নির্বাচনে বিএনপি একচেটিয়া কিছুই করতে পারবে না, কারণ নির্বাচনের আগে নতুন গঠনতন্ত্র রচনা করা হবে; ওই গঠনতন্ত্রে হয়তো আনুপাতিক হারে ভোটের সিস্টেম থাকতে পারে সুতরাং কোনো দল নির্বাচনে সরকার গঠন করতে না পারলেও তারা সংসদে খুব জোরালোভাবে ভূমিকা রাখতে পারবে এবং তাদের সংসদীয় এলাকাগুলোতেও জোরালো ভ‚মিকা রাখতে পারবে। আর বিএনপির যেই রাজনীতির সিস্টেম, এই সিস্টেম যদি বিএনপি পরিবর্তন না করে তাহলে বিএনপি বড়জোর একবার ক্ষমতায় আসতে পারে, পরেরবার নিশ্চিভাবে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে ইসলামী দলগুলো ক্ষমতা চলে আসবে বলে মনে করি। কারণ বিএনপির রাজনৈতিক কর্মীরা অপরাধ-চাঁদাবাজি করবেই, কারণ ওদের রাজনীতির কাঠামোটাই এমন। আর এসব কারণে এরা দেশের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারাবে, দেশের মানুষ বিকল্প খুঁজবে আর বিকল্প হিসেবে মানুষের সামনে হাজির থাকবে জামায়াতের নেতৃত্বে একটা বড় ইসলামিক জোট।
লেখক : বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ও কলামিস্ট
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা