২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি

পুনর্বিবেচনার প্রয়োজনীয়তা

- ছবি : সংগৃহীত

পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের একটি প্রান্তিক এলাকা, যেখানে বিভিন্ন উপজাতি গোষ্ঠী ও মূল ধারার বাঙালি জনগোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছেন। ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যা এ অঞ্চলের সঙ্ঘাত নিরসনে গৃহীত হয়েছিল। কিন্তু আজ ২৫ বছর পরও পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বরং উপজাতি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর সহিংসতা এবং সাধারণ বাঙালি ও শান্তিকামী উপজাতি জনগোষ্ঠীর ওপর হামলা আরো তীব্র হয়েছে। বিভিন্ন পত্রিকায় পাওয়া তথ্য অনুসারে, সাম্প্রতিক সময়ে উপজাতি গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতিত ও নিহত বাঙালির সংখ্যাক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা শান্তিচুক্তির অকার্যকারিতা স্পষ্ট করে। এ ক্ষেত্রে শুধু বাঙালিরা নয়, সাধারণ ও দেশের প্রতি অনুগত শান্তিকামী উপজাতিরাও এ ধরনের হয়রানি, হামলা ও নির্যাতনের শিকার।

শান্তিচুক্তির মূল উদ্দেশ্য ছিল উপজাতি ও বাঙালি জনগোষ্ঠীর মধ্যে সঙ্ঘাত নিরসন। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, এ চুক্তির মাধ্যমে উপজাতি সম্প্রদায়ের জন্য বিভিন্ন সুবিধা নিশ্চিত হলেও, সাধারণ বাঙালিরা ভ‚মি অধিকার এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। ফলে পার্বত্য অঞ্চলে সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য আরো বেড়েছে। বাঙালিদের এ বঞ্চনা শুধু সামাজিক ক্ষেত্রে নয়, তাদের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত, যা মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র-১৯৪৮ এবং বাংলাদেশের সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক।

ঐতিহাসিক বাস্তবতা : উপজাতিরা আদিবাসী নয় : পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতি গোষ্ঠীগুলোর দাবি, তারা এই অঞ্চলের আদি বাসিন্দা বা আদিবাসী। কিন্তু এ দাবি ঐতিহাসিকভাবে অসত্য। পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতি সম্প্রদায় মূলত ভারত ও মিয়ানমার থেকে আসা অভিবাসী। তারা দীর্ঘসময় ধরে এ অঞ্চলে বসবাস করছে বটে, তবে তারা কোনোভাবে আদিবাসী নয়। বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো এখানেও বাঙালি জনগোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছেন। মূলত ১৭০০ থেকে ১৮০০ সালের মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামে এ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর আগমন শুরু। ভারত, মিয়ানমার, নেপাল, ভুটান, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশ থেকে উপজাতি গোষ্ঠীর আগমন। সময়ের বিবর্তনে তারা আজ পার্বত্য চট্টগ্রামের বাসিন্দা।

পার্বত্য অঞ্চলের উপজাতি গোষ্ঠী আদিবাসী হিসেবে নিজেদের উপস্থাপন করলেও, ইতিহাসবিদদের মতে, তারা আদিবাসী নয়। গবেষক ড. মোহাম্মদ আলী তার গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, পার্বত্য অঞ্চলের উপজাতি সম্প্রদায় এ অঞ্চলের আদি বাসিন্দা নয় বরং তারা আসামের বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসকারী গোষ্ঠী যারা মঙ্গোলীয় জাতির সাথে সম্পর্কিত। দ্য চিটাগং হিল ট্র্যাক্ট অব বাংলাদেশ: দ্য আনটোল্ড স্টোরি বইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, উপজাতি সম্প্রদায় মূলত ব্রিটিশ শাসনামলে এ অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে। তৎকালে বাঙালি কৃষকদের সাথে সঙ্ঘাতের সূচনা হয়। ফ্রান্সিস বুকানন তার দক্ষিণ-পূর্ব বাংলায় ফ্রান্সিস বুকানন (১৭৯৮) শীর্ষক গ্রন্থে উল্লেখ করেন, এ অঞ্চলের উপজাতি সম্প্রদায় মঙ্গোলীয় বংশোদ্ভূত, যারা ব্রিটিশ শাসনামলে এ অঞ্চলে আগমন করেন। তথ্যটি পরবর্তীকালে আরো গবেষণায় সমর্থিত হয়েছে, যা প্রমাণ করে, উপজাতি গোষ্ঠী এ অঞ্চলের প্রাচীন বাসিন্দা নয়। ফলে, তাদের আদিবাসী দাবি শুধু একটি রাজনৈতিক এবং কৌশলগত স্বার্থে গৃহীত হয়েছে, যার মাধ্যমে তারা বিশেষ সুবিধা ভোগ করছে। এ অঞ্চলের বাঙালিদের অধিকার হরণ করছে।

আদিবাসী সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সংজ্ঞা অনুযায়ী, আদিবাসী জনগোষ্ঠী হতে হলে তাদের ওই অঞ্চলে প্রথম বসবাসকারী হতে হবে। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতি গোষ্ঠীগুলো সীমান্তবর্তী দেশগুলো থেকে অভিবাসী হয়ে আসায় তাদের আদিবাসী দাবিটি ইতিহাস এবং বাস্তবতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী কার্যক্রম এবং নাগরিকদের বঞ্চনা : গণমাধ্যমে সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২২-২৩ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর হাতে ৫৭ বাঙালি খুন ও ৩৪ নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, এ অঞ্চলের উপজাতি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর দ্বারা নির্যাতিত হয়ে অন্তত ৪০০ বাঙালি পরিবারের লোকজন জমি হারিয়েছেন। চরম অর্থনৈতিক সঙ্কটে পড়েছেন। উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে বান্দরবানে দুইজন বাঙালি কৃষককে হত্যা করা হয়। তারা নিজেদের জমিতে কৃষিকাজ করতে গেলে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হামলা চালিয়ে তাদের হত্যা করে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা। এ ছাড়া ২০২৩ সালের এপ্রিলে খাগড়াছড়িতে উপজাতি সন্ত্রাসীদের হাতে আরো সাতজন বাঙালি নিহত হন। এসব ঘটনার পরও প্রশাসন এবং সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকরী পদক্ষেপের অভাব লক্ষ করা যাচ্ছে।

উপজাতি গোষ্ঠীর দখলদারি কার্যকলাপের শিকার শুধু বাঙালি কৃষক বা সাধারণ মানুষ নন, বরং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরাও আক্রান্ত হচ্ছেন। ২০২৩ সালের মে মাসে উপজাতি সন্ত্রাসীদের হাতে তিনজন সেনাসদস্য প্রাণ হারান, যাদের মধ্যে একজন ক্যাপ্টেন পদমর্যাদার কর্মকর্তা ছিলেন। পরবর্তী জুন মাসেও বান্দরবানে খাবার, পানি ও স্যালাইন বিতরণকালে আরেক সেনাসদস্য নির্মম হত্যার শিকার হয়েছেন। সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো শুধু নিজেদের ক্ষমতা কায়েম করতে এসব হামলা চালায় না, বরং বাঙালি এবং উপজাতি উভয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে ভীতি ছড়াতে নৃশংস কার্যকলাপ চালায়। দৈনিক ইত্তেফাকের একটি প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েক দশকে উপজাতি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর হাতে প্রায় ৩৮ হাজার বাঙালি নিহত হয়েছেন। পার্বত্য চট্টগ্রামে পিসিজেএসএস এবং ইউপিডিএফ নামে দু’টি সশস্ত্র গোষ্ঠী সবচেয়ে সক্রিয়। দৈনিক যুগান্তরের ২০২৩ সালের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২-২৩ সালে উপজাতি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর দ্বারা অন্তত ৮০ জন বাঙালি নিহত হয়েছেন। ৩৪ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। শুধু হত্যাকাণ্ড নয়, জমি দখল, অর্থনৈতিক ক্ষতি এবং বাঙালি জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সামগ্রিক সহিংসতাও বেড়েছে। ইত্তেফাকের আরেকটি প্রতিবেদনের তথ্য, গত পাঁচ বছরে পার্বত্য অঞ্চলে সাত হাজার বাঙালি পরিবার তাদের জমি হারিয়েছেন। অনেক পরিবারকে তাদের বসতি ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে হয়েছে। এ জমি দখলের ঘটনাগুলো সাধারণত উপজাতি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর সহিংসতায় ঘটে। বাঙালি জনগোষ্ঠী স্থানীয় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত, তাদের এ বঞ্চনা দীর্ঘমেয়াদি সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব ফেলছে।

মানবাধিকার এবং সংবিধানের দৃষ্টিকোণ থেকে : পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের মাপকাঠিতে বিতর্কিত। মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্রের (ইউডিএইচআর) ১৭ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রত্যেক মানুষের সম্পত্তির অধিকার রয়েছে। তা থেকে তাকে বিনা কারণে বঞ্চিত করা যাবে না। তবে, পার্বত্য চুক্তির ফলে বাঙালি জনগোষ্ঠীর জমির অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। তাদের সম্পত্তি অবৈধভাবে দখল করা হয়েছে। এমনকি রাষ্ট্রের অপরাপর নাগরিকরা চাইলেও সমতল জেলাগুলোর নিয়মে পার্বত্য চট্টগ্রামে জমি কিনতে পারেন না। বাংলাদেশের সংবিধানের ২৭ এবং ২৮ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সব নাগরিকের সমান অধিকার রয়েছে। ধর্ম, বর্ণ, জাতি নির্বিশেষে বৈষম্যহীনতার নীতি মেনে চলতে হবে। কিন্তু পার্বত্য চুক্তির ফলে উপজাতি সম্প্রদায়ের জন্য বিশেষ সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে বাঙালিরা বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সবাই আইনের দৃষ্টিতে সমান। রাষ্ট্রের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবেন বলে সংবিধানের ১৯ অনুচ্ছেদে বিবৃত রয়েছে। মানবাধিকারে সর্বজনীন ঘোষণাপত্রের আর্টিক্যাল-২ অনুযায়ী, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে মৌলিক মানবাধিকারের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে।

শান্তিচুক্তির ব্যর্থতায় নতুন সমঝোতার প্রয়োজনীয়তা : ২৫ বছর পরও পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি চুক্তির উদ্দেশ্য পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। এ চুক্তি সম্পাদিত হলেও শান্তির বদলে সন্ত্রাস, সহিংসতা এবং নির্যাতনের ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। আসলে এই চুক্তি বলে শুধু উপজাতি সম্প্রদায় সুবিধা পেয়েছে, অথচ বাঙালিদের অধিকার হরণ করা হয়েছে। তাদের সুযোগ-সুবিধা ও দাবি পূরণে বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির প্রতিনিধি জোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমার (সন্তু লারমা) সাথে ৭২টি ধারা ও ৯৯টি উপধারাসহ ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি’ স্বাক্ষর করে। চুক্তির ৭২টি ধারার মধ্যে, সরকার ৪৮টি সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করেছে, ১৫টি আংশিকভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে। ৯টি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। অন্য দিকে জনসংহতি সমিতির মাত্র দু’টি ধারা বাস্তবায়ন করার কথা ছিল, যার একটি ছিল তাদের সব আগ্নেয়াস্ত্র সমর্পণ করা এবং অন্যটি ছিল সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিত্যাগ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা। কিন্তু চুক্তি স্বাক্ষরের এত বছর পরও তারা এর কোনোটি বাস্তবায়ন করেনি। উল্টো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সেনাবাহিনীর ওপর হামলা করতে দেখা যায় তাদের।

চুক্তির অকার্যকারিতায় মোটা দাগে কিছু বিষয় চিহ্নিত : প্রথমত, চুক্তির আওতায় উপজাতি গোষ্ঠীগুলোকে বিশেষ সুবিধা দেয়া হলেও, তারা সহিংস কার্যকলাপ বন্ধ করেনি। বরং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তি অর্জনে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অস্ত্রসহ তাদের আটক করছে। আর তারা নতুন অস্ত্রশস্ত্র জোগাড় করছে।

দ্বিতীয়ত, শান্তিচুক্তির ফলে বাঙালি জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন বেড়েছে। সংবিধানের ২৭ এবং ২৮ নং অনুচ্ছেদের অধীনে সব নাগরিকের সমান অধিকার থাকলেও বাঙালিরা মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। জমি কেনার অধিকার থেকে শুরু করে চাকরিবাকরি পর্যন্ত এটি সম্প্রসারিত।

তৃতীয়ত, পার্বত্য অঞ্চলে ব্যবসায়ীরা প্রতিনিয়ত উপজাতি সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর চাঁদাবাজির শিকার হচ্ছেন। এই চাঁদাবাজি সন্ত্রাসীদের কার্যকলাপ আরো শক্তিশালী করছে। শান্তিচুক্তির কারণে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো আরো ক্ষমতাশালী হয়েছে।

চতুর্থত. উপজাতি গোষ্ঠীগুলোর ‘আদিবাসী’ দাবির ওপর ভিত্তি করে স্বায়ত্তশাসনের দাবি জানায়, যা ঐতিহাসিকভাবে মিথ্যা। ফ্রান্সিস বুকানন এবং অন্যান্য গবেষণায় এ দাবি মিথ্য প্রমাণিত হয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে চুক্তির পুনঃমূল্যায়ন এবং নতুন সমঝোতার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। এ অঞ্চলে শান্তি এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সবার জন্য সমানাধিকার এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। শান্তি চুক্তির ব্যর্থতা শুধু উপজাতি-বাঙালি সম্পর্ককে সঙ্কটে ফেলে দেয়নি, এটি দেশের সার্বভৌমত্ব এবং জাতিগত ঐক্যের জন্যও হুমকিস্বরূপ। তাই পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠায় নতুন আলোচনার মাধ্যমে উভয় সম্প্রদায়ের জন্য সমতা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের প্রতিষ্ঠার মাত্র একমাস পর গত ১৯ ও ২০ সেপ্টেম্বরের সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো স্পষ্ট প্রমাণ করে, এ চুক্তি কার্যকরভাবে বাঙালি জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। অন্য দিকে উপজাতি সন্ত্রাসীদের সন্তুষ্ট করতে পারছে না। উল্টো পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের অস্ত্রের ঝনঝনানিতে দেশের সার্বভৌমত্ব আজ হুমকির মুখে।

পার্বত্য চুক্তির দীর্ঘমেয়াদি ব্যর্থতার আলোকে কিছু নির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। ফ্যাসিস্ট শাসনের অবসানের পর নতুন যে সম্ভাবনার দুয়ার উন্মোচিত হয়েছে তার আলোকে অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা ও টেকসই উন্নয়নে উদ্যোগ নিতে পারে। এটি নেয়া জরুরিও বটে। প্রস্তাবিত কিছু পদক্ষেপ উল্লেখ করা হলো-

১. আলাদা কমিশন করে চুক্তি পর্যালোচনা : উদ্ভুত পরিস্থিতির আলোকে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে যৌথ কমিশন গঠন করা যেতে পারে। কমিশন তদন্ত ও গবেষণা শেষে যৌক্তিক সমাধানের ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করবে।
২. উপজাতি সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর কার্যকলাপ বন্ধ করা : পার্বত্য চুক্তির ফলে উপজাতি সন্ত্রাসীদের কার্যক্রম বেড়েছে। তারা সহিংসতার মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান সুসংহত করছে। তাই তাদের সশস্ত্র কার্যক্রম বন্ধ করতে শান্তিচুক্তির পরিবর্তে নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।
৩. বাঙালিদের জমি অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা : পার্বত্য অঞ্চলে বাঙালি জনগোষ্ঠীর জমির অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। তাদের প্রতি বৈষম্যমূলক নীতি বাতিল করতে হবে।
৪. মানবাধিকার রক্ষা : আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের আলোকে সব জনগোষ্ঠীর সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। দেশের সংবিধান অনুযায়ী বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
৫. নতুন শান্তিপ্রক্রিয়া শুরু করা : শান্তিচুক্তির অকার্যকারিতায় নতুনভাবে আলোচনার মাধ্যমে উভয় জনগোষ্ঠীর জন্য কার্যকরী সমাধান খুঁজে বের করা প্রয়োজন।
৬. অবৈধ চাঁদাবাজি ও অপহরণ বন্ধ করা : উপজাতি সন্ত্রাসীদের অবৈধ কার্যকলাপ বন্ধে শক্তিশালী আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে। বাঙালি ও সাধারণ উপজাতি জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
৭. বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিষোদাগার বন্ধ করা : বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে পাহাড়িদের অব্যাহত অপপ্রচার বন্ধ করতে হবে। প্রয়োজনে আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়


আরো সংবাদ



premium cement