জম্মু ও কাশ্মিরে বিধানসভা নির্বাচন : ৩৭০ ধারা ফিরবে কি
- আহমদ মতিউর রহমান
- ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ১৯:৪১, আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ১৯:৪৩
এক দশক পরে ভারতের জম্মু ও কাশ্মিরে আবারো বিধানসভা ভোট হচ্ছে। তবে এবার পরিস্থিতি অনেকটাই আলাদা। ২০১৪ সালের মতো পূর্ণরাজ্য হিসেবে নয়; ভোট হচ্ছে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে। ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিলের ফলে বিশেষ মর্যাদা হারানোর পাশাপাশি রাজ্যের তকমাও হারিয়েছে জম্মু ও কাশ্মির। লাদাখ অঞ্চলটিও রাজ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। পাঁচ বছর আগে সংবিধানের ৩৭০ ধারা রদ করার মধ্যে দিয়ে জম্মু ও কাশ্মিরের বিশেষ স্বীকৃতি বিলুপ্ত করা হয়। ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ ৩৭০ ধারা এবং ৩৫ (ক) ধারাকে অকার্যকর করে জম্মু ও কাশ্মিরের বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা ও সুযোগ সুবিধা খর্ব করেন। এবং জম্মু ও কাশ্মিরকে দু’টি ভাগে বিভক্ত করে সেই দু’টিকে ভারতের দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করা হয়। নরেন্দ্র মোদি সরকারের সেই বিতর্কিত পদক্ষেপের পর এ প্রথম ওই অঞ্চলে বিধানসভার ভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ক্ষমতাসীন বিজেপি বরাবরই বিরোধীদের সমালোচনা করে বলেছে, যতই চেষ্টা করা হোক, ৩৭০ ধারা আর কোনো দিন ফেরানো যাবে না। তবে নির্বাচনে যারা ভোট যুদ্ধে নেমেছে তারা সবাই প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এ ধারা ফিরিয়ে আনার। এবার জম্মু ও কাশ্মিরে তিন দফায় ভোটগ্রহণ হচ্ছে। ৯০টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ১৮ সেপ্টেম্বর প্রথম দফায় ২৪টি আসনে ভোটগ্রহণ হয়। প্রথম দফায় ২১৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। দ্বিতীয় দফায় ২৫ সেপ্টম্বর ২৬ আসনে ভোটগ্রহণ হয়েছে এবং ১ অক্টোবর তৃতীয় তথা শেষ দফায় ৪০ আসনে ভোটগ্রহণ হবে। ৮ অক্টোবর ফল ঘোষণার কথা রয়েছে।
বিবিসির বিশ্লেষক অরুণোদয় মুখার্জি বলছেন : ১৯৯০-এর দশক থেকে এ অঞ্চলে ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে একটি সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহে বেসামরিক ও নিরাপত্তা বাহিনী সদস্যসহ হাজার হাজার লোক নিহত হয়েছে। এর আগে নির্বাচন সহিংসতা ও বয়কটের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। কারণ বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ভোটকে দিল্লির নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা এবং বৈধতা দেয়ার একটি উপায় হিসেবে দেখেছিল। উচ্চ ভোটার উপস্থিতি এখন একটি পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়Ñ এখানকার লোকেরা বলে যে, তারা তাদের কথা শোনার জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা করেছে। প্রথম দফায় ভোট দেয়ার পর ৫২ বছর বয়সী মোহাম্মদ ইউসুফ গানাই বলেন, ‘আমাদের এলাকায় দারিদ্র্যের মাত্রা মারাত্মক। তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছেন যে, চাকরির অভাবে শিক্ষিত তরুণ কাশ্মিরিদের ‘ঘরে বসে থাকতে’ বাধ্য করেছে। তার এ বিশ্লেষণ থেকে পরিস্থিতি কিছুটা স্পষ্ট। বিচ্ছিন্নতাবাদী বলতে কাশ্মিরি মুসলিমদের বুঝানো হয়েছে। কিন্তু তারা যতটা না বিচ্ছিন্ন হতে চায়, তার চেয়ে বেশি চায় আগের অধিকার আর কাশ্মিরের আলাদা বৈশিষ্ট্য পুনর্বহাল।
এবারে আরো কিছু তথ্য দিয়ে নিই। বুঝতে সুবিধা হবে। জম্মু ও কাশ্মির ভারতের সাবেক মুসলিমপ্রধান রাজ্য ও বর্তমানে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। এর দক্ষিণে হিমাচল প্রদেশ ও পাঞ্জাব রাজ্য। শ্রীনগর গ্রীষ্মকালীন রাজধানী এবং জম্মু শীতকালীন রাজধানী। জনসংখ্যা এক কোটি ৫৬ লাখ। কাশ্মিরের জনসংখ্যার ৯৫ শতাংশ মুসলিম আর জম্মুর হিন্দু জনসংখ্যা ৭০ ভাগ, বাকি ৩০ শতাংশ মুসলিম। কাশ্মির উপত্যকা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। এ জন্য একে বলা হয় ভূস্বর্গ। ভারতের একটি বিখ্যাত ট্রাভেল স্পট কাশ্মির। পর্যটন থেকে বিপুল আয় হয়। তবে সহিংসতা আর সরকারের বিধিনিষেধের কারণে তা প্রায়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিগত পাঁচ বছর ধরে এমনটিই দেখা গেছে। জম্মু অঞ্চলে অনেক হিন্দু মন্দির থাকায় এটি হিন্দুদের কাছে একটি পবিত্র তীর্থক্ষেত্র। দেশ বিভাগের সময় ভারত বর্ষের মুসলিমপ্রধান এলাকাগুলো পাকিস্তানভুক্ত হলেও কাশ্মির বাইরে থেকে যায়। কী কারণ? ১৯২৫ সালে হরি সিং কাশ্মিরের রাজা হন। ১৯৪৭ সালে ভারত-বিভাজনের অন্যতম শর্ত ছিল ভারতের দেশীয় রাজ্যের রাজারা ভারত বা পাকিস্তানে যোগ দিতে পারবেন অথবা তারা স্বাধীনতা বজায় রেখে শাসনকাজ চালাতে পারবেন। বলা হয়, ১৯৪৭ সালের ২২ অক্টোবর বিদ্রোহী নাগরিক এবং পশতুন উপজাতিরা কাশ্মির রাজ্য আক্রমণ করে। ভিন্ন মতও আছে। যাই হোক, কাশ্মিরের রাজা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করলেও গভর্নর-জেনারেল লর্ড মাউন্টব্যাটেনের কাছে সহায়তা চান। কাশ্মিরের রাজা ভারতভুক্তির পক্ষে স্বাক্ষর করবেন এ শর্তে মাউন্টব্যাটেন কাশ্মিরকে সাহায্য করতে রাজি হন।
১৯৪৭ সালের ২৬ অক্টোবর হরি সিং কাশ্মিরের ভারতভুক্তির চুক্তিতে সই করেন। ২৭ অক্টোবর তা ভারতের গভর্নর-জেনারেল কর্তৃক অনুমোদিত হয়। চুক্তি সই হওয়ার পর ভারতীয় সেনা কাশ্মিরে প্রবেশ করে অনুপ্রবেশকারীদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। ভারত বিষয়টি জাতিসঙ্ঘে উত্থাপন করে। জাতিসঙ্ঘ ভারত ও পাকিস্তানকে তাদের অধিকৃত এলাকা খালি করে দিয়ে তার অধীনে গণভোটের প্রস্তাব দেয়। ভারত প্রথমে এ প্রস্তাবে সম্মত হয়েছিল। কিন্তু ১৯৫২ সালে জম্মু ও কাশ্মিরের নির্বাচিত গণপরিষদ ভারতভুক্তির পক্ষে ভোট দিলে ভারত গণভোটের বিপক্ষে মত দেয়। ভারত ও পাকিস্তানে রাষ্ট্রসঙ্ঘের সামরিক পর্যবেক্ষক গোষ্ঠী উভয় রাষ্ট্রের মধ্যে যুদ্ধবিরতি তত্ত্বাবধানে আসে। এ গোষ্ঠীর কাজ ছিল যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা ও তদন্তের রিপোর্ট প্রত্যেক পক্ষ ও রাষ্ট্রসঙ্ঘের মহাসচিবের কাছে জমা দেয়া। যুদ্ধবিরতির শর্ত হিসেবে কাশ্মির থেকে উভয়পক্ষের সেনা প্রত্যাহার ও গণভোটের প্রস্তাব দেয়া হয়। কিন্তু ভারত গণভোটে অসম্মত হয় এবং এজন্য পাকিস্তান সেনা প্রত্যাহারে অসম্মত হয়। ভারত গণভোট আয়োজনে অসম্মত হয় এ জন্য, এটা নিশ্চিত ছিল যে, গণভোটে মুসলিম-অধ্যুষিত কাশ্মিরের বেশির ভাগ ভোটারই পাকিস্তানের পক্ষে ভোটদান করবেন ও এতে কাশ্মিরে ভারত ত্যাগের আন্দোলন আরো বেশি জোরালো হবে। মুসলিমপ্রধান কাশ্মির ও অন্যান্য কারণকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ক‚টনৈতিক সম্পর্ক খারাপ হয়। এরপর ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ ও ১৯৯৯ সালের কার্গিল যুদ্ধ হয়। এ হলো কাশ্মিরের বিগত ৭৫ বছরের ইতিহাস। মুসলিমপ্রধান কাশ্মির হিন্দুপ্রধান ভারতের সাথে মিশে গেলেও সেখানকার জনগণ তা মনে-প্রাণে মেনে নেয়নি। আরো কয়েকটি যুদ্ধ হলেও বিষয়টি শক্তিপ্রয়োগের মাধ্যমেও নিষ্পপ্তি হয়নি। ফলে এর একাংশ ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মির ও অপর অংশ পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মির নামে পরিচিত। ৩৭০ ধারা বিলোপের ফলে কাশ্মিরের মুসলিম জনগণ আরো শোষিত হচ্ছে।
ভারতের সংবিধানে ৩৭০ ধারা অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল ১৯৪৯ সালের ১৭ অক্টোবর। এ ধারাবলে জম্মু-কাশ্মিরকে ভারতীয় সংবিধানের আওতামুক্ত রাখা হয় (অনুচ্ছেদ-১ ব্যতিরেকে) এবং ওই রাজ্যকে নিজস্ব সংবিধানের খসড়া তৈরির অনুমতি দেয়া হয়। এ ধারা বলে ওই রাজ্যে সংসদের ক্ষমতা সীমিত। ভারতভুক্তিসহ কোনো কেন্দ্রীয় আইন বলবৎ রাখতে রাজ্যের মত নিলেই চলে। কিন্তু অন্যান্য বিষয়ে রাজ্য সরকারের একমত হওয়া আবশ্যক। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারতকে ভারত ও পাকিস্তানে বিভাজন করে ভারতীয় সাংবিধানিক আইন কার্যকর হওয়ার সময়কাল থেকেই ভারতভুক্তির বিষয়টি কার্যকরী হয়। ভারতভুক্তির শর্ত হিসেবে জম্মু কাশ্মিরে ভারতীয় সংসদ প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র ও যোগাযোগ- এ তিনটি বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপারে ক্ষমতাধর।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ধারণা করা হচ্ছে কাশ্মিরের জনগণ শেষ পর্যন্ত তাদের রায় জানাতে সক্ষম হচ্ছেন। আগের নির্বাচনে সেখানে একটি জোট সরকার গঠিত হয়েছিল। সেই সরকার ভেঙে যায় ২০১৮ সালে। তার পর নতুন নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভারতীয় জনতা পার্টি নেতৃত্বাধীন সরকার সেখানকার স্বায়ত্তশাসন বাতিল করে। তাতে কাশ্মিরিদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দেয়। তার পর থেকে পাঁচ বছর ধরে জম্মু ও কাশ্মির আছে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণের অধীনে। সেখানে কোনো স্থানীয় প্রতিনিধি নেই। ফলে এ নির্বাচনে নিজেদের প্রতিনিধি বেছে নেয়ার দীর্ঘ প্রতীক্ষা পূরণ হবে তাদের।
কাশ্মির উপত্যকায় চিরাচরিতভাবে প্রভাব বেশি দু’টি আঞ্চলিক দলের; তা হচ্ছে ফারুক আবদুল্লাহর ন্যাশনাল কনফারেন্স (এনসি) ও মেহবুবা মুফতির পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (পিডিপি)। এরা দু’জনই একসময় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। আবার মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন ফারুক আবদুল্লাহর ছেলে ওমর আবদুল্লাহও। ৩৭০ ধারা রদ হওয়ার পর সাবেক শীর্ষ কাশ্মিরি নেতা মুফতি সাঈদের মেয়ে সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মুফতি মেহবুবা কয়েক বছর কারাগারে কাটিয়েছেন। কারাগারে ছিলেন আরো অনেক নেতা। ন্যাশনাল কনফারেন্স ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের সাথে জোট ও আসন সমঝোতা করে এবার ভোটে লড়ছে। অপর প্রধান দল পিডিপি ও কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি আলাদা করে লড়ছে। তারা ২০১৪-এর নির্বাচনের পর একসাথে সরকার গড়েছিল। ২০১৪ সালে কাশ্মির রাজ্যের বিধানসভায় আসন ছিল ৮৭টি। সবচেয়ে বেশি আসন পায় পিডিপি ২৮ আসন। বিজেপি ২৫, এনসি ১৫ এবং কংগ্রেস পায় ১২ আসন। তিনটি ছোট দল চারটি ও নির্দলীয়রা পান তিন আসন। কিন্তু এ বছর সে পরিস্থিতি নেই। ফলে ভোট ও আসন প্রাপ্তি কমবেশি হবে বলে মনে করা হচ্ছে। বিজেপি নেতা রবিন্দর রায়না মনে করেন, তার দল এবার আরো ভালো করবে। রাজ্যের মর্যাদা ছিনিয়ে নেয়ার বিষয়টি ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মতো দলগুলো তাদের প্রচারণার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে। বিবিসি জানাচ্ছে, পুলওয়ামা থেকে এ দলের প্রার্থী হয়েছেন ওয়াহিদ পারা। তিনি বলেন, এ নির্বাচন হলো কাশ্মিরিদের কাছে আত্মরক্ষার মতো একটি বিষয়। এটি এমন একটি পদক্ষেপ যার মাধ্যমে আমরা কী হারিয়েছি, তা দাবি করা এবং যা আছে তা সংরক্ষণের সুযোগ এসেছে। নিষিদ্ধ ঘোষিত একটি বিদ্রোহী গ্রুপকে সহায়তা করার অভিযোগে ২০২০ সাল থেকে প্রায় দুই বছর জেল খেটেছেন ওয়াহিদ পারা।
জম্মু ও কাশ্মিরের নির্বাচনে আরো এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে শেখ আবদুর রশিদের আওয়ামি ইত্তেহাদ পার্টি। তারা অনানুষ্ঠানিকভাবেই ‘নিষিদ্ধ’ জামায়াতে ইসলামীর সাথে কৌশলগত জোটে গেছে। এবারের নির্বাচনে কাশ্মির জামায়াত ভোটে লড়ছে। হয়েছে ‘জামায়াত-ইঞ্জিনিয়ার’ জোট। এ ইঞ্জিনিয়ার হচ্ছেন লোকসভা নির্বাচনে বিজয়ী রশিদ ইঞ্জিনিয়ার। তারা কাশ্মিরের পুরনো দু’টি প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল আবদুল্লাহ পরিবারের নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল কনফারেন্স (এনসি) ও মুফতি পরিবারের নেতৃত্বাধীন পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (পিডিপি) বিরুদ্ধে লড়ছে। তারা ওই দু’টি দলকে পেছনে ফেলে দিতে পারে কি না, সে দিকে সবাই সাগ্রহে তাকিয়ে আছেন। জামায়াত ১৯৮৭ সালে রাজ্য বিধানসভার ভোটে শেষবারের মতো লড়েছিল। পর্যবেক্ষকরা বলেন, সেই ভোটে তাদের ভালো ফল করার সম্ভাবনা থাকলেও কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকারের মদদে নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি করে ফারুক আবদুল্লাহর ন্যাশনাল কনফারেন্সকে জিতিয়ে দেয়া হয়েছিল। ২০১৯-এ পুলওয়ামাতে যে জঙ্গি হামলায় ৪০ জনের বেশি ভারতীয় আধা সামরিক সেনা নিহত হয়, তারপর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জামায়াতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। রশিদ ইঞ্জিনিয়ার কারাগারে থেকে লোকসভা নির্বাচনে আওয়ামী ইত্তেহাদ পার্টি (এআইপি) থেকে এমপি নির্বাচিত হন। তিনি সন্ত্রাসে অর্থায়নের অভিযোগে ২০১৯ সাল থেকে জেলে ছিলেন। এবার নির্বাচনী প্রচারণার জন্য অন্তর্বর্তী জামিন পেয়েছেন তিনি।
বিজেপি সরকারের দাবি জম্মু-কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বা স্বায়ত্তশাসন বাতিল করা এবং তা কেন্দ্রীয় শাসনের সরাসরি অধীনে আনার ফলে শান্তি ও উন্নয়ন এসেছে। গত মার্চে সেখানে সফরে যান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি এ সময় সেখানকার বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য ৭০ কোটি ডলার ব্যয় করার কথা ঘোষণা করেন। এর আগে বিজেপি এখানে নির্বাচন করেনি। কাশ্মির উপত্যকায় বিধানসভার আসন সংখ্যা ৪৭। তার মধ্যে মাত্র ১৯টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে তারা। দলটির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে জম্মুকে মনে করা হচ্ছে। এখানকার বিধানসভার আসন ৪৩টি। এটি হিন্দু-অধ্যুষিত। ফলে বিজেপি সেখানে ভালো করবে বলে মনে করা হচ্ছে। লড়াইটা মূলত হবে বিজেপি আর কংগ্রেসের মধ্যে।
বিজেপি যত ভালো কথাই বলুক কাশ্মিরের বেশির ভাগ মানুষই বিজেপিকে দেখে এমন একটি দল হিসেবে, যারা তাদের স্বায়ত্তশাসন কেড়ে নিয়েছে। এমন ঘটনায় অনেকে হতাশাগ্রস্ত। তারা অনেকে ভোট না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে পত্রপত্রিকা সূত্রে জানা যাচ্ছে। তাদের স্বায়ত্তশাসন কেড়ে নেয়া প্রসঙ্গে একজন ভোটার বলেন, আমাদেরকে কিছুই বলতে দেয়া হয়নি। এ বলতে না দেয়া তথা কাশ্মিরে ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের দীর্ঘ অভিযোগ আছে ভারতের বিরুদ্ধে। কিন্তু ভারত সরকার তা অস্বীকার করে। কিন্তু সমালোচকরা বলেন, এ অধিকার লঙ্ঘন গত কয়েক বছরে তীব্র হয়েছে। বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল অভিযোগ করে, ভারত সরকার সেখানে ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করছে। জম্মু ও কাশ্মিরে ভিন্ন মতাবলম্বীদের মুখ বন্ধ করতে সন্ত্রাসবিরোধী আইন ব্যবহার করে খেয়ালখুশিমতো আটক বন্ধ করার আহ্বান জানায় তারা। এ বিষয়ে সবসময়ই কঠোর অবস্থান নিয়েছে বিজেপি সরকার। নির্বাচনের কারণে কড়া নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হয়েছে উপত্যকা। বিগত কয়েক দিন ধরে বার বার জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছে জম্মু ও কাশ্মিরে। সেই কথা মাথায় রেখেই নিরাপত্তা সাজিয়েছে প্রশাসন। সশস্ত্র আধা সামরিক বাহিনী (সিএপিএফ) থেকে শুরু করে জম্মু ও কাশ্মিরের পুলিশ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে সাজানো হয়েছে বহু স্তরে।
বিজেপি ছাড়া সব দল ওই অঞ্চলের বিশেষ স্বীকৃতি ফিরিয়ে দেয়ার কথাও বলছে, আর এ নির্বাচনকে দেখা হচ্ছে এ প্রশ্নে একটা গণভোট হিসেবে। যদিও দেশের কেন্দ্রীয় সরকার একাধিকবার জানিয়ে দিয়েছে তা আর কখনোই হওয়ার নয়! রাজ্যের স্বশাসনের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার দাবি নাকচ করে দিলেও ভারতের শাসকদল বিজেপি অবশ্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, ‘নির্বাচনের পরে একটা উপযুক্ত সময় দেখে’ জম্মু ও কাশ্মিরের পূর্ণ অঙ্গরাজ্যের মর্যাদা পুনর্বহাল করা হবে। এ নির্বাচনে ন্যাশনাল কনফারেন্সের ইশতেহারে ৩৭০ ধারা ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি রয়েছে। এ দিকে কংগ্রেস ৩৭০ ধারা নিয়ে ‘নীরব’। তবে তারা জম্মু ও কাশ্মিরের পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা ফেরানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ইশতেহারে। এ দিকে একলা পথ চলা পিডিপি দাবি করছে, বিজেপি-বিরোধী একটি সরকার গঠনে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এ নির্বাচনে। ৮ অক্টোবর ফল ঘোষণার পর বিষয়টি স্পষ্ট হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা