২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১, ২১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`
দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন

কারিগরি শিক্ষা-সংস্কার অপরিহার্য

-

দেশের কারিগরি-বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থায় প্রভ‚ত সমস্যা। আধুনিক বিশ্বের সব উন্নত এবং দ্রুত উন্নয়নশীল দেশে কারিগরি-বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ (টিভিইটি) ব্যবস্থাকে শিক্ষাব্যবস্থার অতীব গুরুত্বপূর্ণ অংশ বিবেচনা করা হয়। ইউনেস্কোর সংজ্ঞানুসারে কারিগরি-বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ বলতে পাঁচটি বিষয়কে সমন্বিতভাবে বোঝানো হয়; এটি সাধারণ শিক্ষার একটি অখণ্ড অংশ (Integral Part) যা পেশা ও কর্মজগতের জন্য শিক্ষার্থীকে প্রস্তুত করে, জীবনব্যাপী শিক্ষা ও দায়িত্ববান নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার সুযোগ দেয়, পরিবেশ-প্রতিবেশ সুরক্ষা ও শান্তি নিশ্চিত করে এবং জীবনমান ও আর্থসামাজিক টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করে। বিশ্বের সব উন্নত এবং দ্রুত উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলো যেমন, ফিনল্যান্ড, সিঙ্গাপুরসহ অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টভুক্ত (OECD) দেশগুলোয় প্রায় ৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থী সরাসরি কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ধারায় অংশগ্রহণ করে। কিন্তু বাংলাদেশে স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরেও এ শিক্ষাধারাটি বিভিন্ন মানদণ্ডে অবহেলিত ও অকিঞ্চিৎকর (Marginalized) হওয়ার কারণে এখনো রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরে দক্ষতার ভীতিকর ঘাটতি দৃশ্যমান। দুঃখজনক বিষয় হলো দক্ষতা ঘাটতিকে আর্থসামাজিক উন্নয়নে সবচেয়ে বড় বাধা হিসেবে চিহ্নিত হলেও এ খাতের প্রতি নীতিনির্ধারকদের উদাসীনতা রয়েছে।


সারা দেশে পাঁচ শতাধিক পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসহ প্রায় ১২ হাজারের অধিক কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে এবং এসব প্রতিষ্ঠানে ১৫ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী প্রশিক্ষণার্থী আছে। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার সাথে প্রায় ২৩টি মন্ত্রণালয় এবং ৩০-এর অধিক বিভাগ/অধিদফতর/সংস্থা জড়িত যারা প্রশাসনিক ও অ্যাকাডেমিক পরিচালন, নিয়ন্ত্রণ, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন প্রভৃতি কাজ সম্পন্ন করে। জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এসব কর্মসূচির সমন্বয়কারী প্রতিষ্ঠান এবং বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের প্রাতিষ্ঠানিক অনুমোদন, মান নিয়ন্ত্রণ ও সনদ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিরাজ করছে নানা মাত্রায় দ্বৈধতা, সমন্বয়হীনতা, কর্মসূচি বাস্তবায়নে প্রাতিষ্ঠানিক কর্তৃত্বের সঙ্ঘাত ও বৈপরীত্ব।

বাংলাদেশে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় অংশগ্রহণের হার ২০২২ সালে মাত্র ৪.৮৩ শতাংশ, যদিও সরকারিভাবে ১৭.৮৮ শতাংশ দাবি করা হয় যা পরিসংখ্যানগত বিভ্রাট ছাড়া কিছু নয়। গুরুত্বপূর্ণ এ খাতে নীতিনির্ধারক ও শিক্ষাবিদদের সংস্কার ও উন্নয়ন চিন্তাও খুবই গতানুগতিক ও উপরি আলোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। যদিও সরকার কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় অংশগ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা ২০২০ সালের মধ্যে ২০ শতাংশ, ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ নির্ধারণ করেছে; কিন্তু বাস্তবে তা কাগজে কলমে সীমাবদ্ধ। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কার্যকর কর্মপরিকল্পনা ও পথরেখা (রোডম্যাপ) এখনো দৃশ্যমান নয়। ভারত ২০১৫ সালে ঘোষিত স্কিল ডেভেলপমেন্ট মিশন কর্মসূচি ঘোষণা করে যার মাধ্যমে ২০২২ সালের মধ্যে ৪০ কোটি এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ৭০ কোটি কর্মক্ষম জনশক্তিকে দক্ষ করে গড়ে তোলার বিশাল কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষা প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাকে তারা এমনভাবে সংস্কার ও লক্ষ্যমুখী করেছে যে, ২০৩০ সালের মধ্যে সমগ্র বিশ্বের ব্যবস্থাপক এবং তদূর্ধ্ব পর্যায়ে প্রতি চারজনের মধ্যে একজন ভারতীয় পাওয়া যাবে। একইভাবে ভারত মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজারে দক্ষ শ্রমশক্তি প্রেরণের লক্ষ্যে আরবি ভাষায় যোগাযোগ দক্ষতা উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে। অথচ বাংলাদেশে এ খাতের শিক্ষাকে বিশ্বশ্রমবাজার বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজারের চাহিদার সাথে সমন্বয়ের কার্যত কোনো কর্মকৌশল গৃহীত হয়নি।
কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা এখন সর্বব্যাপী। সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, বৈষম্য, ক্ষোভ ও অসন্তোষ। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বিপজ্জনক যে হঠকারী সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তার শুরু ২০১৮ সালে জারিকৃত বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড আইন এবং জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন শিরোনামে দু’টি পরস্পরবিরোধী ও সাংঘর্ষিক আইন। মূলত এ দু’টি আইনের মাধ্যমেই এ খাতে জটিলতার সূচনা হয়। বর্ণিত দু’টি আইনের মাধ্যমে এক দিকে যেমন বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডকে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের (Statutory Bodz) মর্যাদা থেকে অবনমন করে কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের একটি অধীনস্থ দফতরে রূপান্তর করা হয়, অন্য দিকে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন-২০১৮ এর মাধ্যমে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (এনএসডিএ) কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের প্রতিপক্ষ হিসেবে প্রশিক্ষণ ও সনদ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করা হয়। অথচ প্রধানমন্ত্রীর দফতর হিসেবে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এনএসডিএ) দায়িত্ব ছিল এ খাতের সাথে সম্পর্কিত মন্ত্রণালয় ও দফতরগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধন। এখন তারা নিজেরাই প্রশিক্ষণ ও সনদ প্রদান করেছে। এতে সমন্বয়ের পরিবর্তে সমন্বয়হীনতা তৈরি হয়েছে। জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আরো একটি হঠকারী সিদ্ধান্ত হলো জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন নীতিমালা ২০১১ বহাল রেখেই সমান্তরাল আরো একটি জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন নীতিমালা ২০২২ জারি। এহেন আইনি জটিলতা ও প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয়হীনতা নজিরবিহীন। এর ফলে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ উপ খাতে রীতিমতা মাৎস্যন্যায় চলছে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরে ধসের জন্য দায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সদ্য পদত্যাগী গভর্নর অর্থ সচিব থাকাকালে প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে কারিগরি শিক্ষা প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়ন খাতে এসব আইনি পরিবর্তন ঘটান। বিশেষ করে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন নীতি ২০২২ প্রণয়নে অর্থ সচিব হিসেবে তার প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ ছিল এ খাতের বহুল আলোচিত একটি ঘটনা। সাবেক এই গভর্নর তথা সচিবের কারিগরি শিক্ষা খাতে আরো একটি অবদান রয়েছে, তা হলো তিনি দীর্ঘ দিন অর্থ মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগের মাধ্যমে বাস্তবায়নাধীন স্কিলস ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রকল্পের (SEIP) নির্বাহী পরিচালক এবং জাতীয় পরিচালকও ছিলেন! যা আদৌ সমীচীন ছিল না। এ ধরনের আমলাতান্ত্রিক খবরদারির কারণে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাব্যবস্থায় প্রজন্মব্যাপী অভিঘাত তৈরি হয়। আমলারা নিয়োগবিধি রাতারাতি পরিবর্তন করে কারিগরি দক্ষতাসম্পন্ন এসএসসি ভোকেশনাল বা এইচএসসি ভোকেশনাল উত্তীর্ণদের জন্য নির্ধারিত ক্রাফট ইন্সট্রাক্টর পদকে পদার্থ রসায়ন ও প্রকৌশল বিজ্ঞানে স্নাতক মাস্টার্সদের যোগ্যতা অন্তর্ভুক্ত করেছেন। আর অন্যটি হলো, শিক্ষকতার পদে তিনি পিএসসির চেয়ারম্যানের সাথে যোগসাজশ করে বিসিএস প্রার্থীদের মধ্যে অপেক্ষমাণ তালিকায় স্থান পেলেও যারা কাক্সিক্ষত বিসিএস ক্যাডার পদে চূড়ান্ত সিলেকশন পেতে ব্যর্থ হয়েছেন তাদের কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থায় ইনস্ট্রাক্টর পদে (প্রথম শ্রেণীর গেজেটেড অফিসার সমতুল্য নবম গ্রেডের পদ) যোগদানের সুযোগ দেন এবং পিএসসির মাধ্যমে প্রতি ব্যাচ থেকে শত শত জেনারেল ক্যাডার পদের প্রার্থীদের শিক্ষকতা পেশায় নিয়োগের ব্যবস্থা করেন। এসব কারণে কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় জটিলতা সৃষ্টি হয়। নিয়োগকৃত উচ্চ শিক্ষিত পদার্থ রসায়ন এবং প্রকৌশলে স্নাতকরা ইতোমধ্যে বুঝে ফেলেছেন, এই প্রক্রিয়াটি শুধু তাদের জন্য ১৩তম গ্রেডে ক্রাফট ইন্সট্রাক্টর পদ দখলের জন্য নয়, রবং শিক্ষকতার পদে দশম থেকে ঊর্ধ্ব গ্রেডের পদে আরোহণের একটি ধাপ মাত্র। সুতরাং যখন পলিটেকনিক এবং টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হলো তখন এই উচ্চশিক্ষিত ক্রাফট ইন্সট্রাক্টররা আদালতের দ্বারস্থ হয়ে দাবি করলেন, যেহেতু তারা উচ্চশিক্ষিত সুতরাং তাদেরকে পদোন্নতির মাধ্যমে এসব পদে পদায়ন করতে হবে।

কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় আরো একটি ভয়াবহ সমস্যা তৈরি হরা হয়েছে, তাহলো প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষ পদগুলোয় পেশাগত দক্ষ অভিজ্ঞ এবং বিশেষজ্ঞ নেতৃত্বের চরম সঙ্কট! কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শীর্ষপদগুলো আমলারা একচেটিয়া অধিগ্রহণ করে বসে আছেন। কারিগরি শিক্ষা অধিদফতর, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড, আঞ্চলিক পরিচালকের দফতরগুলো সর্বত্র কারিগরি শিক্ষা খাতের দক্ষ অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের পরিবর্তে সাধারণ জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদেরকে বিদ্যমান বিধিবিধানের তোয়াক্কা না করে অথবা ক্ষমতার অপব্যবহার করে একচ্ছত্রভাবে পদায়ন করা হয়েছে। এর কুফল এখন ফলতে শুরু করেছে। ডিপ্লোমা ও বৃত্তিমূলক কোর্সের মেধাবী শিক্ষার্থীরা দেখতে পাচ্ছে তাদের ভবিষৎ অন্ধকার! সে জন্য তারা ক্লাস ছেড়ে আন্দোলনে নেমে পড়েছে!

কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষকদের বিদ্যমান পদের ৮২ শতাংশ পদ শূন্য, অর্থাৎ ১৮ শতাংশ শিক্ষক দিয়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের কাজ চলছে। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ অনুসারে শিক্ষার্থী বনাম শিক্ষক অনুপাত ১২:১ এর স্থলে এখন ৯২:১ তে উন্নীত হয়েছে (ব্যানবেইস রিপোর্ট-২০১৫)। এ হার সম্ভবত গোটা বিশ্বেই বিরল। শিক্ষক নিয়োগে স্বতন্ত্র শিক্ষক নিয়োগ কমিশনের কর্মপরিকল্পনা এবং এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের তুমুল চাপ থাকলেও মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো এ বিষয়ে নিশ্চুপ। শিক্ষক বিপর্যয়ের এহেন পরিস্থিতির ফল হলো, কারিগরি শিক্ষায় গ্র্যাজুয়েটদের কর্মসংস্থানের হার ১৯৯৭ সালে যেখানে চিল ৮৫ শতাংশ তা ২০২০ সালে নেমে এসেছে ৫৪ শতাংশে। এটি খোদ কারিগরি শিক্ষা অধিদফতরের তথ্য। শিক্ষার্থীরা এখন আর পলিটেকনিক শিক্ষাকে পেশাগত শিক্ষা হিসেবে মনে করছেন না। এ ধাপ উত্তীর্ণ হয়ে সবাই এখন উচ্চতর প্রকৌশল শিক্ষায় যেতে চান। অর্থাৎ দক্ষ জনশক্তি তৈরির লক্ষ্য ব্যর্থ হতে চলেছে।

কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থায় বিগত প্রায় এক যুগ ধরে চলা এসব হঠকারী সিদ্ধান্তের জঞ্জাল এবং অদক্ষ প্রশাসনের সৃষ্ট দুষ্টচক্রকে ভেঙে ফেলতে হলে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার একটি মৌলিক পুনঃগঠন প্রক্রিয়া অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। সে জন্য নীতিনির্ধারককে টিভিইটি শাসনকার্য (TVET Governance) সংস্কারে মনোযোগী হতে হবে। আইনি সংস্কার, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা তৈরি এবং শ্রমবাজারের চাহিদাভিত্তিক সমন্বিত দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি প্রণয়ন করতে হবে। এজন্য সর্বাগ্রে যে কাজটি করতে হবে বলে মনে করি তা হলো- একটি কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন। এ কমিশন গঠিত হতে হবে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থায় অভিজ্ঞ এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নে দক্ষ এবং পেশাগত অভিজ্ঞজনদের দ্বারা। দেশের জনশক্তিকে জনসম্পদে রূপান্তর করতে যারা কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাকে একটি কার্যকর টুল হিসেবে পুনর্গঠন করতে চান এমন দক্ষ ও অভিজ্ঞ কারিগরি শিক্ষা বিশেষজ্ঞ এ দেশে অবহেলিত অবস্থায় আছে। নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ তথা দারিদ্র্যবিমোচন, এন্টারপ্রেনিয়র/টেকনোপ্রেনিয়র তৈরির মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, পরিবেশ প্রতিবেশের সুরক্ষা, অর্থনৈতিক সুরক্ষা ও সমৃদ্ধির জন্য কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাকে একটি কার্যকর টুল হিসেবে ব্যবহার করা এখন সময়ের দাবি।

গত ১০ আগস্ট রংপুরে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে ছাত্র প্রতিনিধিদের মতবিনিময় অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থায় বিরাজমান দুর্দশা ও শিক্ষা ও প্রশিক্ষণে দুরবস্থার কথা তুলে ধরেন। প্রধান উপদেষ্টা বিরাজমান সমস্যা দূর করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন মর্মে আশ্বস্ত করেন। ইতোমধ্যে কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন স্তরে অস্থিরতা আরো বেড়েছে এবং তা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে পড়ছে। শিক্ষার্থী-শিক্ষকরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন, বিক্ষোভ এমনকি সড়ক অবরোধ করে কর্মসূচি পালন করছেন। গত ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা রাজধানীর সাতরাস্তায় সড়ক অবরোধ করে। তখন কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিব ড. ফরিদ উদ্দিন আহমদ ছাত্রদের উপস্থাপিত দাবির অধিকাংশ মেনে নেয়ার ঘোষণা দেন। কিন্তু ছাত্র-শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট মহলে অসন্তোষ ও ক্ষোভ এখনো আছে।

কারিগরি বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ এবং দক্ষতা উন্নয়ন খাতে চলমান এ ধরনের অচলাবস্থা জরুরি ভিত্তিতে নিরসন না করা গেলে তা দেশের দক্ষতা উন্নয়ন কার্যক্রম এবং আর্থসামাজিক উন্নয়ন ব্যাহত হবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের নীতিনির্ধারকরা যদি এ খাতে সত্যিই কার্যকর পরিবর্তন আনতে চান তাহলে সঠিক ব্যক্তিকে যথাসময়ে সঠিক কাজে ব্যবহার করতে হবে।

লেখক : কারিগরি শিক্ষা বিশেষজ্ঞ
ই-মেল : syedaziz61@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement