২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

বিপ্লব সুরক্ষায় করণীয়

- ফাইল ছবি

বাংলাদেশের তারুণ্য অর্জন করেছে যুগান্তকারী বিপ্লবের শিরোপা। তবে স্মরণে রাখা দরকার, পরিপূর্ণ বিজয় এখনো আসেনি। বিপ্লবের প্রথম ধাপ স্বৈরাচারী হাসিনা শুধু বিদায় নিয়েছে। কারা কোন বন্দোবস্তের কলকাঠিতে মানবতার শত্রু স্বৈরাচারী শেখ হাসিনাকে নিরাপদ প্রস্থানের ব্যবস্থা করে দিলেন জাতির কাছে তাদের সেই জবাব দিতে হবে। মাফিয়া সম্রাজ্ঞী হাসিনা দেশ থেকে ভেগেছেন কিন্তু স্বৈরাচারের বীজ এখনো রয়ে গেছে। বিপ্লবের পর প্রতিবিপ্লবের কুশীলবরা সুযোগের অপেক্ষায় আছে। রয়েছে তক্কে তক্কে। বাংলাদেশের প্রমাণিত ও পরীক্ষিত দুশমন ভারত ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করা থেকে এখনো নিবৃত্ত হয়নি। সেই আলামত ভারতীয় গণমাধ্যম ও সে দেশের নেতৃত্বের প্রতিক্রিয়ায় ফুটে উঠেছে। তাই আমাদের সদা সতর্ক থাকতে হবে, যাতে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রে চব্বিশের এই বিপ্লব বেহাত না হয়ে যায়।

জুলাই মহাজাগরণে অর্জিত সাফল্য ধরে রাখতে হলে গত সাড়ে ১৫ বছরের সব অপকর্ম, অপরাধ ও গণতন্ত্র হত্যা করে নিকৃষ্টতম স্বৈরাচারী শাসনের মূলোৎপাটন করে একটি গণতান্ত্রিক ও স্বাধীন রাষ্ট্র বিনির্মাণের এখনই সময়। সে জন্য কী করতে হবে আমাদের? মনে রাখা দরকার, এ জন্য আমাদের জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে হবে; গণদুশমন, লুটেরা ও উৎপীড়কদের ধরে এনে আইনের সামনে দাঁড় করাতে হবে; তাদের লুট করে বিদেশে পাচার করা ৯৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দেশে ফেরত এনে জনগণের ওপর চাপানো ৯৯ দশমিক ৩ বিলিয়ন বিদেশী ঋণের ভার থেকে মুক্ত করতে হবে; ইসলামী মূল্যবোধ ও বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের দর্শনের ওপর দেশকে আবার দাঁড় করাতে হবে; স্বৈরাচারের সুবিধাভোগী লেজুড় সামরিক-বেসামরিক প্রশাসন ঢেলে সাজাতে হবে; কোটা আন্দোলনে শহীদদের রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দিয়ে কোষাগার থেকে তাদের পরিবারকে প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ দিতে হবে; সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে সংখ্যালঘুদের জানমালের।

ব্যাংক লুটেরা ও বাণিজ্য সিন্ডিকেটগুলো গুঁড়িয়ে দিতে হবে; বদলাতে হবে স্বৈরাচারী সংবিধান; খাত ভাগ করে সংস্কারের জন্য এবং স্বৈরাচারের বিষবৃক্ষ উৎপাটনে গঠন করতে হবে টার্স্কফোর্স। নজরদারি কাঠামোগত ব্যবস্থা; সংবিধান সংস্কারে স্মরণে রাখতে হবে, বিপ্লবের সাফল্য আইনের ভিত্তি রচনা করে; ভারতীয় পণ্য বর্জনের গণজোয়ার জাগাতে হবে; বন্ধ করতে হবে ভারতীয় পণ্য এমনকি দেশটির তৈরি বহুজাতিক পণ্যের বিপণন ও বিজ্ঞাপন; তদন্ত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে পিলখানা হত্যাকাণ্ড; ২০১৩ সালে হেফাজতের সমাবেশে ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম গণহত্যাসহ প্রতিটি আইন বহিভর্‚ত খুন, গুম, কারাদণ্ড ও গোয়েন্দা গারদে দুর্বিষহ নির্যাতন; অপরাধীদের সোপর্দ করতে হবে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে; ট্রেড ইউনিয়ন ও বণিক সংগঠনগুলো থেকে স্বৈরাচারের মদদপুষ্টদের বহিষ্কার করতে হবে। ২০০৮, ২০১৪ ও ২০২০-এর সংসদ নির্বাচনে ভোটডাকাতির বিচার করতে হবে; তদন্ত করতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোষাগার লুট করা কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের মতো অপরাধ; খুন করে লাশ গুম করার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ; এগুলো করতে প্রয়োজন ছাত্র-সেনা-জনতার অটুট ঐক্য ও সোচ্চার কণ্ঠ। সে দিকে জাতি তাকিয়ে আছে। যেমন তাকিয়ে আছে গোটা জাতি এই নতুন তারুণ্যের দিকে।

স্বৈরাচারের জগদ্দল পাথর সরাতে পারেনি রাজনৈতিক দলগুলো, যা পেরেছে নতুন তারুণ্য। তবে এ কথাও সত্যি, এ অভ্যুত্থানে গণতন্ত্রকামী সব পক্ষের সমান অংশগ্রহণ ছিল। তা না হলে এই বিজয় ছিল দূরপরাহত। এবারের তরুণ-কিশোর জাগরণ যে বার্তাটি দিয়ে গেছে তা যেন আমরা ভুলে না যাই। কী সেই বার্তা? বার্তাটি হলো- দুঃশাসন রুখে দাঁড়ানোর নতুন বার্তা, যা নানা দিক থেকে বৈশিষ্ট্যের দাবি রাখে। প্রথমত, রাজনৈতিক ঐক্য। খেয়াল করে দেখুন, ছাত্ররা তাদের ন্যায্য ও মর্যাদার লড়াইতে শুধু বিবেকবান শিক্ষকদের শামিল করেনি, তারা তাদের পরিবার ও অভিভাবকদেরও সফলভাবে শামিল করেছে। শামিল করেছে দেশের জনগণের প্রমাণিত ও পরীক্ষিত সেনাবাহিনী তথা দেশের গোটা প্রতিরক্ষা বাহিনীকে।

আমাদের দেশের এই সেই সেনাবাহিনী, এ দেশের সংগ্রামী ও দেশপ্রেমিক যোদ্ধা যারা এক দিন গর্জে উঠেছিলেন ভারতীয় মুৎসুদ্দী-মাড়োয়ারি সুদখোর ও ব্রিটিশের দালালদের বিরুদ্ধে ১৮৫৭ সালে সিপাহি বিদ্রোহ ঘটিয়েছিলেন; ১৯৭১ সালে অকুতোভয় সম্মুখযুদ্ধ পরিচালিত করেছিলেন এবং জনগণের সাথে মিশে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সম্মুখযুদ্ধ ও গেরিলা যুদ্ধ চালিয়ে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাস্ত করেছিলেন। তাদের উত্তরসূরি বর্তমান বাংলাদেশের সেনাবাহিনী আরো একবার তাদের দেশপ্রেম ও জনসংহতির প্রমাণ রাখল। তারা ব্যারাক ত্যাগ করে ছাত্র-জনতার ন্যায্য সংগ্রামের সাথে নৈতিক ও আদর্শিক একাত্মতা প্রদর্শন না করলে স্বৈরাচারী হাসিনার পুলিশ, পেটোয়া বাহিনী ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আরো যে কত হাজার মায়ের কোল খালি করে হলেও ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার অপচেষ্টা করত, তার অনুমান করা কঠিন কিছু নয়।

হাসিনা সীমা লঙ্ঘন করেছিলেন। তিনি নিজের বিবেকহীন পেটোয়া বাহিনীকে দিয়ে বৃষ্টির মতো গুলি চালিয়ে, প্রকাশ্যে নির্মম গণহত্যা ঘটিয়ে হলেও ক্ষমতায় টিকে থাকার শেষ চেষ্টা করেন। ছাত্ররা বুকের রক্ত ঝরিয়ে দেশকে ফ্যাসিবাদমুক্ত করেছে। বিপ্লব-উত্তর পুলিশবিহীন শহরাঞ্চলে ঘরের খেয়ে রাস্তায় নেমে ময়লা সাফ করেছে, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করেছে। তাদের এই দেশপ্রেম আমরা ঘুণাক্ষরেও কোনো দিন উপলব্ধি করিনি। ভেবেছি টিকটক, ফেসবুক, এক্স, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব জেনারেশন। আমরা বুঝতেও পারিনি তাদের পুঞ্জীভ‚ত ক্ষোভ ও দ্রোহের কথা। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে অফিসে বা কাজে না গিয়ে এই বৃদ্ধ বয়সেও রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে দেখেছি ছাত্রদের মহৎ সেই দৃশ্য। দেখেছি তাদের মনোবল, দেশপ্রেম ও ভেদাভেদহীন সংগ্রামী তারুণ্য। গানের সুরে সুরে তারা সারা দেশে তরঙ্গের মতো ছড়িয়ে দিয়েছে তাদের সংগ্রাম।

এক দিকে পুলিশ ও অস্ত্রধারী ছাত্রলীগের পেটোয়া বাহিনী আর অন্য দিকে স্লোগানে স্লোগানে ফেটে পড়া শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে অর্থাৎ এ রণক্ষেত্রের মধ্যে যখন জোহর, আসর কিংবা মাগরিবের আজান শুনেছে; ওই অবস্থাতে তারা স্লোগান থামিয়ে আজান দিয়ে রাজপথে নামাজের কাতার বানিয়েছে। এ যে এক নতুন বাংলাদেশ, এক নতুন তারুণ্য, এক নতুন প্রজন্ম। এরা আজ ও আগামীর বাংলাদেশের সংগ্রামী প্রতিচ্ছবি। এরাই পারবে বিশ্বকে অবাক করে এক ঐক্যবদ্ধ নতুন বাংলাদেশ উপহার দিতে।

সেই কাঙ্ক্ষিত নতুন বাংলাদেশ গড়তে হলে আমাদের বাংলাদেশের সর্বনাশের শত্রুপক্ষকে শনাক্ত করতে হবে নির্মোহভাবে। সে শত্রুপক্ষের মধ্যে রয়েছে হাসিনাকে আশ্রয়দাতা ও মদদদাতা ভারত এবং আওয়ামী লীগের দুর্বৃত্ত নেতাকর্মী, বুদ্ধিজীবী, দলদাস সাংবাদিক ও গণমাধ্যম, সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী নামধারী উদ্যোক্তা, শিল্পপতি, সামরিক-বেসামরিক প্রশাসনে আওয়ামী কর্মকর্তা ও ট্রেড ইউনিয়ন, চাঁদাবাজ পুলিশ, কূটনীতিক, দলদাস শিক্ষক, ক্রীড়াঙ্গনের তারকা, চিত্র জগৎ ও সাংস্কৃতিক লাঠিয়াল, ব্যাংকার নামধারী ব্যাংক লুটেরা ও তাদের ভাগিদার ব্যবসায়ী নামধারী জগৎশেঠ, উমিচাঁদ, রায় বল্লভরা।

তাই বলতে চাই, রাষ্ট্র সংস্কারের বৃহৎ এই অর্জনের স্বপ্ন সফল করতে হলে স্বৈরাচারের রেখে যাওয়া দানবগুলোর ওপর ২৪/৭ জনতার হাতে এক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ঐতিহাসিক দায়িত্ব বর্তেছে। দেশটা কারো বাপের নয়। এদেশ সবার। দেশের জনগণের। জনগণকে বেছে নিতে দিতে হবে কাদের দ্বারা তারা শাসিত হতে চান। তার আগে সব জায়গা আওয়ামী স্বৈরাচারমুক্ত করতে হবে। উপড়ে ফেলতে হবে স্বৈরাচারের বীজ ও বীজতলা। গণতন্ত্রের সুযোগ নিয়ে স্বৈরাচার যেন আর কখনো দেশে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে।


আরো সংবাদ



premium cement
বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে যা বললেন মমতা ব্যানার্জি, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ‘যুদ্ধবিরতি ইসরাইলের জন্য কৌশলগত পরাজয়’ ডেসটিনির রফিকুল আমীনসহ ১৯ জনের মামলার রায় ১৫ জানুয়ারি আবারো হাসনাত আবদুল্লাহর গাড়িতে ট্রাকের ধাক্কা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ শ্রমিকদের ইসকন ইস্যুতে কঠোর অবস্থানে সরকার : হাইকোর্টকে রাষ্ট্রপক্ষ উজিরপুরে রিকশা ও ইজিবাইকের ব্যাটারি চুরির হিড়িক ৯ দফা দাবিতে সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমাবেশের ডাক চট্টগ্রাম আদালতে দ্বিতীয় দিনের কর্মবিরতি চলছে আত্মসমর্পণ করে জামিন পেলেন বরখাস্ত ম্যাজিস্ট্রেট উর্মি শ্রীলঙ্কায় আকস্মিক বন্যায় পানিতে ডুবে ৪ শিশুর মৃত্যু

সকল