প্রথম বিতর্কে কমলার চাপে রক্ষণাত্মক ট্রাম্প
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
- দ্বিতীয় বিতর্ক চায় ডেমোক্র্যাট প্রচারশিবির
- ফক্স নিউজ বলছে, বিতর্কে কমলা জিতেছেন
- গাজা যুদ্ধের অবসান ও ইসরাইলের আত্মরক্ষার পক্ষে কমলা
- কমলা সবচেয়ে খারাপ ভাইস প্রেসিডেন্ট : ট্রাম্প
বহুল প্রতীক্ষিত প্রথম টেলিভিশন বিতর্কে মুখোমুখি হলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস। দেশটির আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জনমত জরিপে এগিয়ে রয়েছেন এই দুই প্রার্থী। যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলীয় সময় গত মঙ্গলবার রাতে পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের বৃহত্তম শহর ফিলাডেলফিয়ায় বিতর্কটি অনুষ্ঠিত হয়। এই অনুষ্ঠানেই ট্রাম্পের সাথে কমলার প্রথম সরাসরি সাক্ষাৎ হয় এবং কমলা এগিয়ে গিয়ে ট্রাম্পের সাথে করমর্দন করেন। ৫ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আট সপ্তাহ আগে অনুষ্ঠিত এ বিতর্ক টেলিভিশনে সরাসরি প্রত্যক্ষ করেন যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক কোটি ভোটার।
বিতর্কে স্বভাবসুলভাবে আক্রমণাত্মক রিপাবলিকান দলীয় প্রার্থী ট্রাম্পকে রক্ষণাত্মক অবস্থানে ঠেলে দেন সাবেক আইনজীবী ও ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা। বিতর্কের শুরু থেকেই ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনের মতো শারীরিক সামর্থ্য তার আছে কি না, তার অগণিত আইনি সমস্যা ও গর্ভপাতের সীমা নিয়ে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করেন কমলা। অপ্রত্যাশিত এ আক্রমণের মুখে রক্ষণাত্মক অবস্থানে গিয়ে বিতর্ক চালিয়ে যান ট্রাম্প।
বিভিন্ন জনমত জরিপগুলোতে হোয়াইট হাউজের দৌড়ে এ দুই প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস মিলছে। এ পরিস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এ মুখোমুখি বিতর্ক একটি প্রচার পরিবর্তনকারী মুহূর্ত ছিল। এই সুযোগকে নিজের পক্ষে আনার চেষ্টায় উভয় প্রার্থীই জোরালোভাবে নিজ নিজ অবস্থান তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। রয়টার্স জানিয়েছে, সাবেক আইনজীবী কমলা(৫৯) বারবার ট্রাম্পকে বিরক্ত করে তাকে মিথ্যা ভরা জবাব দিতে প্ররোচিত করেছেন, আর তাতে ট্রাম্প (৭৮) দৃশ্যতই ক্ষুব্ধ হচ্ছিলেন।
বিতর্কের একপর্যায়ে কমলা বলেন, লোকজন ‘একঘেয়েমিতে ভোগে ক্লান্ত হয়ে’ আগে ভাগেই ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণার জনসমাবেশগুলো ছেড়ে চলে যায়। ট্রাম্প উত্তেজিত হয়ে উঁচু গলায় এর জবাব দেন। কমলার জনসভাগুলোতে উপস্থিত লোকজনের পরিমাণ দেখে হতাশ হয়ে ওঠা ট্রাম্প এদিন বলেন, “আমাদের জনসমাবেশগুলো, আমাদের জনসমাবেশগুলোই সবচেয়ে বড়, রাজনীতির ইতিহাসে সবচেয়ে অবিশ্বাস্য সব সমাবেশ।” “আবারো সীমা ছাড়া কথাবার্তা,” উত্তরে হাসতে হাসতে বলেন কমলা।
দুই প্রার্থী অভিবাসন, পররাষ্ট্রনীতি ও স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে বিতর্কে জড়ান; কিন্তু সুনির্দিষ্ট নীতিগত বিবরণের গভীরে কেউই প্রবেশ করেননি। কমলার আক্রমণাত্মক ধরন ট্রাম্পকে চাপে রাখতে সফল হয়। কমলাকে সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে বর্ণবাদী ও লিঙ্গবাদী আক্রমণের মতো ব্যক্তিগত আক্রমণ করে আসা ট্রাম্প বিতর্কের প্রথম দিকে এ ধরনের অপমান করা থেকে অনেকটা বিরত ছিলেন, কিন্তু সময় যত গড়িয়েছে কমলার আক্রমণের মুখে তিনি ততই উত্তেজিত হয়ে উঠেছিলেন।
এরই এক পর্যায়ে তিনি প্রতিপক্ষের বর্ণ নিয়ে মন্তব্য করলে জবাবে কমলা বলেন, “এটি একটি শোচনীয় ঘটনা যে আমাদের একজন যিনি প্রেসিডেন্ট হতে চান তিনি তার পুরো ক্যারিয়ারজুড়ে মার্কিন জনগণকে জাতিগতভাবে বিভক্ত করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।” একজন পর্ণ তারকাকে গোপনে অর্থ প্রদান নিয়ে অপরাধী সাব্যস্ত হওয়া, তার বিরুদ্ধে থাকা অন্যান্য অভিযোগ ও যৌন নিপীড়নের দায়ে দোষী হওয়ার বিষয়ে ট্রাম্পের সমালোচনা করেন কমলা।
এর জবাবে ট্রাম্প কোনো অন্যায় করার কথা অস্বীকার করেন এবং কোনো প্রমাণ ছাড়াই তার বিরুদ্ধে এসব মামলা করার জন্য ফের কমলা হ্যারিস ও ডেমোক্র্যাট পার্টিকে অভিযুক্ত করেন। প্রতারণার কারণে ২০২০ সালের নির্বাচনে তিনি পরাজিত হয়েছিলেন বলে ফের দাবি করেন ট্রাম্প। কমলাকে ‘মার্কসবাদী’ বলে অভিহিত করেন এবং অভিবাসীরা সহিংস অপরাধের বিস্তার ঘটাচ্ছে বলে মিথ্যা দাবি করেন।
দ্বিতীয় বিতর্ক চায় কমলার শিবির
এ দিকে আলজাজিরার খবর অনুসারে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিপক্ষে প্রথম মুখোমুখি নির্বাচনী বিতর্কে কমলার নৈপুণ্যে স্পষ্টতই সন্তুষ্ট তার নির্বাচনী প্রচারশিবির। এখন তারা ট্রাম্পের সাথে কমলার দ্বিতীয় বিতর্ক আয়োজনের আহ্বান জানিয়েছেন। কমলার প্রচারশিবিরের মুখপাত্র জেন ও’ম্যালি ডিলন এক বিবৃতিতে আগামী মাসে ওই বিতর্ক আয়োজনের পরামর্শ দিয়েছেন। ডিলন লেখেন, ‘ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস দ্বিতীয় বিতর্কের জন্য প্রস্তুত। ডোনাল্ড ট্রাম্প কি রাজি?’
বিতর্কে কমলা জিতেছেন
অন্য দিকে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, দুই প্রতিদ্বন্দ্বী যুক্তি উপস্থাপন, পাল্টাপাল্টি আক্রমণে একে-অপরকে নাস্তানাবুদ করার চেষ্টা করেন। বিতর্কে শেষে প্রশ্ন উঠেছে, জিতলেন কে? কয়েকজন বিশ্লেষকের বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজ বলছে, ‘আজ রাতে, কমলা জিতেছেন।’ ফক্স নিউজের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ব্রিট হিউম বলেন, ‘বিতর্ক শুনে মনে হয়েছে, কমলা খুব ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিলেন। সেভাবেই প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। তিনি কী বলছেন, তা নিয়ে সচেতন ছিলেন।’ এই রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে, বিতর্কজুড়ে বিভিন্ন বিষয়ে ট্রাম্পকে লক্ষ্যচ্যুত করতে সক্ষম হয়েছেন কমলা। ব্রিট হিউম আরো বলেন, ‘আজ ট্রাম্পের জন্য খারাপ একটি রাত।’
গাজা যুদ্ধের অবসান চান কমলা
অপর দিকে বিবিসি বলেছে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে প্রথম মুখোমুখি টেলিভিশন বিতর্কে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস ইসরাইলের ‘আত্মরক্ষার’ অধিকারের পক্ষে কথা বলেছেন। পাশাপাশি গাজা যুদ্ধের অবসান চেয়েছেন তিনি। বিতর্কে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রে নারীদের গর্ভপাতের অধিকারসহ নানা বিষয়ের পাশাপাশি ইসরাইল-হামাস যুদ্ধের প্রসঙ্গও উঠে আসে।
বিতর্কে কমলার কাছে জানতে চাওয়া হয়, নির্বাচনে জিতলে তিনি কিভাবে গাজায় ইসরাইলের চলমান যুদ্ধ এবং এ সংক্রান্ত (গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা) স্থবিরতার বিষয় মোকাবেলা করবেন। জবাবে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা এ বিষয়ে তার অতীতে করা মন্তব্যগুলোর কয়েকটির পুনরাবৃত্তি করেন। তিনি বলেন, ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। তবে এটি কিভাবে করবে, সেটি একটি বিষয়। কমলা বলেন, ‘এ যুদ্ধ অবশ্যই থামাতে হবে। অবিলম্বে এটির অবসান ঘটাতে হবে।’ ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠারও আহ্বান জানান। এ ছাড়া গাজা পুনর্গঠনে ইসরাইল ও ফিলিস্তিন দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের পক্ষে মত দেন তিনি।
সবচেয়ে খারাপ ভাইস প্রেসিডেন্ট
এ দিকে বিতর্কে কমলাকে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ‘সবচেয়ে খারাপ ভাইস প্রেসিডেন্ট’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন ট্রাম্প। নিজের বক্তব্যে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘কমলা ইসরাইলকে ঘৃণা করেন। তিনি নিজের মতো করে আরব জনগণকেও ঘৃণা করেন।’ তিনি কিভাবে গাজায় চলমান যুদ্ধ শেষ করবেন এবং হামাসের হাতে আটক থাকা বন্দীদের ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হবেন জানতে চাওয়া হলে ট্রাম্প দাবি করেন, ‘তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট থাকলে এ যুদ্ধই হতো না। কমলা ইসরাইলকে ঘৃণা করেন। যদি তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, আমার বিশ্বাস দুই বছরের মধ্যে ইসরাইলের অস্তিত্বই থাকবে না।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা