ইউক্রেনে যাচ্ছে ইসরাইলের সমরাস্ত্র গুরুতর পরিণতির হুমকি রাশিয়ার
- আরটি
- ০৩ জুলাই ২০২৪, ০০:০৫
ইউক্রেনকে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা সিস্টেম প্রদান নিয়ে ইসরাইলকে হুমকি দিয়েছে রাশিয়া। জাতিসঙ্ঘে নিযুক্ত রাশিয়ার দূত ভাসিলি নেবেনজিয়া বলেছেন, ইসরাইল যদি সত্যিই ইউক্রেনকে এই সমরাস্ত্র প্রদান করে, তাহলে গুরুতর পরিণতি ভোগ করতে হবে বিশ্বের একমাত্র এই ইহুদি রাষ্ট্রকে।
৩০ বছরেরও বেশি সময় আগে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে আটটি প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা সিস্টেম কিনেছিল ইসরাইল। এই সিস্টেমগুলোর সবই এম ৯০১ পিএসি-২ ব্যাটারি মডেলের। গত এপ্রিল মাসে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ঘোষণা দেয় যে পুরনো হয়ে যাওয়ায় এই সমরাস্ত্রগুলো আর ব্যবহার করবে না দেশটির সেনাবাহিনী। এগুলোর স্থানে আনা হবে নতুন আধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঘোষণার পর এই প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা সিস্টেমগুলো ইউক্রেনের প্রতিরক্ষাবাহিনীকে প্রদানের জন্য অনুরোধ জানায় কিয়েভ। এই ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল ও ইউক্রেনের মধ্যে সম্প্রতি কয়েক দফা আলোচনাও হয়েছে। সম্প্রতি ব্রিটেনভিত্তিক দৈনিক ফিন্যান্সিয়াল টাইমস এ নিয়ে খবরও প্রকাশ করেছে। সেই খবরে বলা হয়েছে, পুরনো এই আটটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা সিস্টেম প্রথমে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠাবে ইসরাইল, তারপর সেখান থেকে সেগুলো ইউক্রেনে পাঠানো হবে।
সোমবার জাতিসঙ্ঘের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর সংস্থা নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে এ ব্যাপারটি তোলেন ভাসিলি নেবেনজিয়া। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইউক্রেনে যে কেউ যত শক্তিশালী অস্ত্রেই পাঠাক না কেন, তা ধ্বংস হবে। গত দুই বছরে ইউক্রেনে অনেক শক্তিশালী অস্ত্র পাঠিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা। সেগুলোর প্রায় সবই ধ্বংস হয়েছে। আর একটি কথা আমি বলব- যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের বাইরে কোনো নতুন রাষ্ট্র যদি ইউক্রেনকে অস্ত্র সহায়তা দেয়, সেক্ষেত্রে তার পরিণতি গুরুতর হবে।
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরু করে রুশ সেনাবাহিনী, যা এখনো চলছে। এই অভিযানের শুরু থেকে ইউক্রেনকে সামরিক ও আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা। পাশাপাশি অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারিসহ রাশিয়ার বিরুদ্ধে বিভিন্ন শাস্তিমূলক পদক্ষেপও নিয়েছে পশ্চিমা বিশ্ব। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরাইল এই ইস্যুতে এ পর্যন্ত প্রকাশ্যে কোনো পক্ষ অবলম্বনের ঘোষণা দেয়নি, রাশিয়ার বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক পদক্ষেপও গ্রহণ করেনি।
এ পর্যন্ত ইউক্রেনে কয়েক দফা সহায়তা পাঠিয়েছে ইসরাইল, তবে সেসব সহায়তার সবই ছিল খাদ্য, চিকিৎসা ও অন্যান্য মানবিক ত্রাণ। গত বছর ইসরাইলের কাছে আয়রন ডোম ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা চেয়েছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, তবে সেই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু।
রাশিয়ার হামলায় ইউক্রেনের ৫টি যুদ্ধবিমান ধ্বংস
এ দিকে সাম্প্রতিক সময়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে হামলা বেশ জোরদার করেছে রাশিয়া। এরই অংশ হিসেবে সর্বশেষ হামলায় ইউক্রেনের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ধ্বংস করেছে রুশ সামরিক বাহিনী। ধ্বংস করা এসব যুদ্ধবিমানের সবই এসইউ-২৭ মডেলের। এ ছাড়া এই হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরো দু’টি যুদ্ধবিমান। গতকাল মঙ্গলবার এই তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স।
খবরে বলা হয়েছে, রাশিয়ার সামরিক বাহিনী ইউক্রেনের পাঁচটি এসইউ-২৭ যুদ্ধবিমান ধ্বংস করেছে বলে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার জানিয়েছে। এ ছাড়া ইস্কান্দার-এম ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে ইউক্রেনের পোলতাভা অঞ্চলের মাইরোরোড এয়ারফিল্ডে চালানো এই হামলায় আরো দু’টি যুদ্ধবিমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় হামলার যে ফুটেজ প্রকাশ করেছে সেটিতে একটি বিমানঘাঁটি থেকে ধোঁয়া ও আগুনের শিখা উঠতে দেখা যাচ্ছে। মন্ত্রণালয় বলেছে, রাশিয়ান হামলার ফলে এসইউ-২৭ মডেলের পাঁচটি সক্রিয় বহুমুখী যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়ে গেছে এবং আরো দু’টি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
রয়টার্স বলছে, রাশিয়া ইউক্রেনের বিমানঘাঁটিগুলোকে এমন এক সময়ে লক্ষ্যবস্তু করছে যখন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি অত্যাধুনিক এফ-১৬ যুদ্ধবিমান হাতে পাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে কিয়েভ। যদিও মার্কিন এসব যুদ্ধবিমান ধ্বংস করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে রাশিয়া।