অস্ত্রের অভাবে পরাজয়ের আশঙ্কা জেলেনস্কির
- ডয়েচে ভেলে
- ০৯ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০৫
মার্কিন সামরিক সহায়তার অভাবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি পরাজয়ের আশঙ্কা দেখছেন। তার মতে, মার্কিন কংগ্রেস সেই সহায়তা প্যাকেজ অনুমোদন না করলে রাশিয়া আরো জমি দখল করতে পারে। যুদ্ধক্ষেত্রে গোলাবারুদ ও অস্ত্রের অভাবে ইউক্রেন পরাজয়ের মুখ দেখতে পারে বলে মনে করছেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। রোববার তিনি বলেছেন, মার্কিন কংগ্রেসে সামরিক সহায়তার প্যাকেজ আটকে থাকায় রাশিয়ার পক্ষে আরো জমি দখল সহজ হয়ে উঠছে বলে তিনি সতর্ক করে দেন। এক ভিডিও বার্তায় তিনি নির্দিষ্টভাবে মার্কিন কংগ্রেসের কাছে সেই বার্তা পৌঁছে দেয়ার আর্জি জানান। তার মতে, সেই সহায়তা ছাড়া ইউক্রেনের পক্ষে টিকে থাকা সহজ হবে না। গত দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে রাশিয়ার হামলা সত্ত্বেও ইউক্রেন প্রতিরোধ চালিয়ে যাচ্ছে। দেশের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ দখল করতে সক্ষম হলেও রাশিয়া সাম্প্রতিককালে নতুন করে বেশি জমি দখল করতে পারেনি। কিন্তু এবার নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছে চারসিভ ইয়ার নামের এলাকা সে দেশের হাতে চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা বাড়ছে। ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ শহর ক্রামাটর্স্ক নামের শহরের ৩০ কিলোমিটারেরও কম দূরে অবস্থিত সেই এলাকা হাতছাড়া হলে ইউক্রেন কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়বে বলে ধরে নেয়া হচ্ছে। রাশিয়া সেই এলাকার ওপর ক্রমাগত হামলা চালিয়ে যাচ্ছে বলে সেনাবাহিনী জানিয়েছে। চারসিভ ইয়ারের বাইরে দু’টি ছোট শহরের ওপর সরাসরি হামলা চলছে। উত্তর-পূর্বে খারকিভ শহরেও রাশিয়ার হামলা বাড়ছে। আকাশপথে হামলা প্রতিরোধ করার জন্য যথেষ্ট এয়ার ডিফেন্স সরঞ্জামের অভাবের কারণে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে বলে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট দাবি করেন।
অন্য দিকে রাশিয়ার ভূখণ্ডে ইউক্রেনের ড্রোন হামলা বেড়ে গেছে। রাশিয়া অবশ্য বেলগোরোদ ও ব্রিয়ানস্ক অঞ্চলে ১৫টি ড্রোন হামলা বানচাল করেছে বলে দাবি করেছে। বিচ্ছিন্ন হামলার মাধ্যমে ইউক্রেন কিছু সাফল্য পেলেও সার্বিকভাবে রাশিয়ার হামলার মাত্রা কমাতে সক্ষম হচ্ছে না। ইস্টারের বিরতির পর চলতি সপ্তাহে মার্কিন কংগ্রেসের অধিবেশন আবার শুরু হচ্ছে। সিনেটের অনুমোদন সত্ত্বেও নিম্ন কক্ষে এখনো ইউক্রেন, ইসরাইল ও তাইওয়ানের জন্য সামরিক প্যাকেজ পেশ করা হয়নি। চলতি সপ্তাহে সে ক্ষেত্রে অগ্রগতিরও কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত : আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) জানিয়েছে, ড্রোন হামলায় ইউক্রেনের রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত জাপোরিজ্জিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ পোস্ট করা এক বিবৃতিতে আইএইএ বলেছে, ‘হামলা সত্ত্বেও স্থাপনাটির পারমাণবিক নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েনি। তবে গুরুতর এই ঘটনায় পারমাণবিক চুল্লির নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ধারাবাহিকতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারতো।’
আইএইএর মহাসচিব রাফায়েল গ্রসি জানিয়েছেন, এ ড্রোন হামলার সময় বিদ্যুৎকেন্দ্রটির পারমাণবিক চুল্লিটির প্রধান নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিতে সরাসরি তিনটি আঘাত হানা হয়। এ হামলায় একজন নিহত হয়। গ্রসি বলেন, ‘এটি ইউরোপের বৃহত্তম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটির সুরক্ষার মূলগত নীতিগুলোর পরিষ্কার লঙ্ঘন। এ ধরনের বেপরোয়া হামলা বড় ধরনের পারমাণবিক দুর্ঘটনার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে তোলে। এ ধরনের হামলা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া উচিত।’
পারমাণবিক কেন্দ্রটির রুশ কর্তৃপক্ষ এ হামলার জন্য ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীকে দায়ী করেছে। বাহিনীটি ‘আত্মঘাতী ড্রোন’ ব্যবহার করে কেন্দ্রটিতে ধারাবাহিক হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে তারা। এক বিবৃতিতে জাপোরিজ্জিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র্র বলেছে, হামলায় কেন্দ্রটিতে খাদ্য সরবরাহ করতে আসা একটি ট্রাক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কেন্দ্রটির মাল বন্দর এলাকায়ও আঘাত হানা হয়েছে। বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘জাপোরিজ্জিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প ও এর অবকাঠামোতে গোলাবর্ষণ অগ্রহণযোগ্য। বিশ্বের কোনো পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রই সশস্ত্রবাহিনীর পূর্ণ মাত্রার গোলাবর্ষণের মধ্যে দঁড়িয়ে থাকার মতো করে নকশা করা হয় না। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র্রটি নিরাপদে পরিচালনা করার ক্ষেত্রে স্থাপনাটির অবকাঠামো ক্ষতি হওয়া প্রভাব ফেলতে পারে।’ রাশিয়ার অভিযোগের পর ইউক্রেন এ হামলায় কোনোভাবে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার মুখপাত্র আন্দ্রে ইউসোভ বলেছেন, ‘আগ্রাসী রাষ্ট্রটি আবার ওই পারমাণবিক কেন্দ্রটি, বেসামরিকদের ও পুরো ইউরোপের পরিবেশকে বিপন্ন করেছিল।’ সিএনএন জানিয়েছে, তারা রাশিয়া বা ইউক্রেন, কারো অভিযোগ বা দাবি স্বতন্ত্রভাবে যাচাই করে দেখতে পারেনি।