১৫০ দেশে বিশ্ব জলবায়ু আন্দোলন শুরু
- আলজাজিরা ও বিবিসি
- ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০
আগামী সোমবার জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে জাতিসঙ্ঘের সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে। সম্মেলনটির আগে শুরু হয়েছে বিশ্ব জলবায়ু আন্দোলন। ১৬ বছর বয়সী পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গের উদ্যোগে গতকাল শুক্রবার থেকে যাত্রা শুরু করেছে এই আন্দোলন। সব মিলিয়ে ১৫০টি দেশের এ আন্দোলনে অংশ নেয়ার কথা রয়েছে।
গতকাল থেকে সপ্তাহব্যাপী আন্দোলন শুরু হয়ে শেষ হবে আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর। এ উপলক্ষে বিভিন্ন দেশের স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পরিবেশবাদী ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। যোগ দেয়া আন্দোলনকর্মীদের বেশির ভাগই স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। বিশ্বের পাঁচ হাজারেরও বেশি স্থানে এই আন্দোলন অনুষ্ঠিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
লাখ লাখ আন্দোলনকারী জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিতে রাস্তায় নেমে আসে প্রশান্ত-মহাসাগরীয় অঞ্চলের কয়েক শ’ শহরে। সিডনি থেকে শুরু করে সিউল ও সাওপাওলো পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিশু-কিশোররা তাদের ক্লাস বাদ দিয়ে নিজ নিজ অবস্থান থেকে আন্দোলনে নামে। আন্দোলনকারীদের বেশির ভাগই স্কুল শিক্ষার্থী। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়ও স্কুল-শিক্ষার্থীরা এই আন্দোলনের সাথে সংহতি প্রকাশ করেছে। উৎসাহ, উদ্দীপনা উৎসবমুখর ও আবেগঘন পরিবেশের মধ্য দিয়ে আন্দোলন চলছে।
প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের সম্মুখভাগে রয়েছে। সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়লে ডুবে যাবে অসংখ্য শহর। তাই জলবায়ু পরিবর্তন থামাতে বৈশ্বিক পর্যায়ে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা আবশ্যক। সরকারের প্রতি পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়ে শুক্রবার নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও থাইল্যান্ডসহ রাস্তায় নেমে আসে ওই অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ।
টুইটারে আন্দোলনের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেছেন থুনবার্গ। এক টুইটে লিখেছেন, অবিশ্বাস্য সব ছবি দেখতে পাচ্ছি। সিডনিতে জনতার সমাবেশ বড় হয়ে ওঠছে। অস্ট্রেলিয়া আন্দোলনের মানদণ্ড ঠিক করে দিচ্ছে। প্রসঙ্গত, শুক্রবার নিউ ইয়র্ক থেকে বিক্ষোভের নেতৃত্ব দেয়ার কথা রয়েছে তার। উল্লেখ্য, পরিবেশ নিয়ে কাজ করার অবদানস্বরূপ থুনবার্গকে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছে ইতোমধ্যে। এই আন্দোলনের শুরু হয় তার হাত ধরেই। এই স্কুলপড়–য়া বিশ্বখ্যাত পরিবেশকর্মীই প্রথম ক্লাস পালিয়ে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে প্রতিবাদ করতে সুইডিশ পার্লামেন্টের বাইরে জড়ো হয়েছিলেন। তার ভাষ্য, বেশির ভাগ বড়রা এখনো বুঝতে পারে না জলবায়ু সঙ্কট মোকাবেলা কেবলমাত্র আমাদের মতো তরুণদের পক্ষে সম্ভব নয়। এটা একটি নির্দিষ্ট কোনো প্রজন্মের কাজ নয়। এটা আমাদের পুরো মানবজাতির দায়িত্ব।
সব মিলিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ১১০টি শহরে এই আন্দোলন অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্বের সবচেয়ে বড় কয়লা ও তরল প্রাকৃতিক গ্যাস রফতানিকারী দেশ অস্ট্রেলিয়া। আন্দোলনকারীরা দেশটির সরকারকে ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছে। আন্দোলনের অংশ নেয়ার জন্য দেশটির অন্তত দুই হাজার প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের সাময়িক ছুটি দিয়েছে।
শুক্রবার সর্বমোট ১৫০টি দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে আন্দোলন হওয়ার কথা। সবশেষে নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠিত হয় শুক্রবারের সমাপনী আন্দোলন। থুনবার্গের নেতৃত্বে এদিন শহরজুড়ে আন্দোলন হবে। আন্দোলন শেষে পদযাত্রা হবে জাতিসঙ্ঘের সদর দফতরের উদ্দেশে। নিউ ইয়র্কে এদিন ১১ লাখ শিশু জড়ো করার কথা জানান আয়োজকরা। এক হাজার ৮০০টি সরকারি স্কুলের শিক্ষার্থীদের এদিন ক্লাস বাদ দেয়ার অনুমতি দেয়া হয়। ২৩ সেপ্টেম্বর শহরটিতে জাতিসঙ্ঘের সম্মেলনে অংশ নেবেন বিশ্বের শীর্ষ নেতারা। জলবায়ু পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করবেন তারা।