২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯ মাঘ ১৪৩১, ২২ রজব ১৪৪৬
`

ইউক্রেন নিয়ে পুতিন আলোচনায় না বসলে নিষেধাজ্ঞার হুমকি ট্রাম্পের

ইউক্রেন নিয়ে পুতিন আলোচনায় না বসলে নিষেধাজ্ঞার হুমকি ট্রাম্পের -

- যুদ্ধবিরতি চুক্তির নথি তৈরির কাজ চলছে
- নিরাপত্তায় ২ লাখ শান্তিরক্ষী চান জেলেনস্কি

রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, প্রেসিডেন্ট পুতিন ইউক্রেন নিয়ে আলোচনা না করলে তিনি রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবেন। এক দিন আগেই ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন এবং এরপরই এই হুমকি দেন তিনি। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যদি ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধ অবসানের বিষয়ে আলোচনা করতে অস্বীকার করেন তাহলে দেশটির বিরুদ্ধে তিনি (ট্রাম্প) সম্ভবত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবেন বলে মঙ্গলবার জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ট্রাম্প অবশ্য সম্ভাব্য এই অতিরিক্ত নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানাননি। তবে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন আক্রমণের জন্য রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে ব্যাপকভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্প বলেন, তার প্রশাসন ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠানোর বিষয়টিও দেখছে। ইউক্রেনকে সমর্থন করার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নকে আরো কিছু করা উচিত বলেও এ সময় নিজের দৃষ্টিভঙ্গির জানান দেন তিনি।
ট্রাম্প বলেন, আমরা (ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির) জেলেনস্কির সাথে কথা বলছি, আমরা খুব শিগগিরই প্রেসিডেন্ট পুতিনের সাথেও কথা বলতে যাচ্ছি। ট্রাম্প আরো বলেছেন, তিনি ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে হস্তক্ষেপ করার আহ্বান জানিয়ে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকেও চাপ দিয়েছিলেন। ট্রাম্পের ভাষায়, ‘তিনি (শি জিনপিং) এ বিষয়ে খুব বেশি কিছু করেননি। তার অনেক ক্ষমতা আছে, যেমনটা আমাদেরও অনেক ক্ষমতা রয়েছে। আমি বলেছিলাম আপনাকে, এটি নিষ্পত্তি করা উচিত। আমরা এটি নিয়ে আলোচনা করেছি।’

উল্লেখ্য, গত ২০ জানুয়ারি সোমবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেয়ার আগে ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তিনি আশা প্রকাশ করেছিলেন, কিয়েভকে রাশিয়ার প্রতি ছাড় দিতে বাধ্য করার জন্য চাপ দেবেন। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ শুরু করে। শপথ নেয়ার পর ট্রাম্প সোমবার বলেছেন, পুতিনের একটি চুক্তি করা উচিত। আমি মনে করি তিনি চুক্তি না করে রাশিয়াকে ধ্বংস করছেন। ট্রাম্প আরো বলেন, ভলোদিমির জেলেনস্কি তাকে বলেছেন- যুদ্ধের অবসান ঘটাতে তিনি একটি শান্তি চুক্তি চান।
চুক্তির নথি তৈরি চলছে : ইউক্রেনে যুদ্ধ থামাতে ইতোমধ্যে ট্রাম্প প্রশাসন একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির নথি তৈরি করছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন রুবিও। এর মাধ্যমে দেশটির বিদায়ী পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের উত্তরসূরি হন তিনি। শপথ গ্রহণের পর সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে রুবিও বলেন, ‘আমাদের প্রেসিডেন্ট আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যুর মধ্যে ইউক্রেনে যুদ্ধের অবসানকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছেন। এ লক্ষ্যে শিগগিরই দাফতরিক তৎপরতা শুরু করবেন তিনি। একটি খসড়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির নথি তৈরির কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। এই যুদ্ধটি খুবই জটিল হয়ে উঠেছে এবং গত প্রায় তিন বছরে প্রচুর রাক্তপাতও হয়েছে এ যুদ্ধে। এটা শেষ হওয়া প্রয়োজন।’ সম্ভাব্য সেই যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে কী কী ধারা থাকছে- সাংবাদিকদের এ প্রশ্ন এড়িয়ে রুবিও বলেন, ‘নথিটি এমনভাবে তৈরি করা হচ্ছে যে, আমাদের বিশ্বাস- মস্কো ও কিয়েভ উভয়েই অন্তত এর কয়েকটি ধারার সাথে একমত হবে। সম্পূর্ণ নথিটি প্রস্তুত করা হবে দুই দেশের কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে।’

নিরাপত্তার জন্য শান্তিরক্ষী : ভবিষ্যৎ রুশ হামলা প্রতিরোধে ইউরোপীয় শান্তিরক্ষী বাহিনীর অন্তত দুই লাখ সদস্য মোতায়েন করা প্রয়োজন বলে মঙ্গলবার মন্তব্য করেছেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। সুইজারল্যান্ডের ডাভোস শহরে আয়োজিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে বক্তৃতা দানকালে ইউরোপের প্রতিরক্ষা নিশ্চিতের জন্য মহাদেশটির নেতাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। ভাষণের পর এক সাক্ষাৎকারে শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে জেলেনস্কি বলেছেন, পুরো ইউরোপ থেকে অন্তত দুই লাখ সদস্য প্রয়োজন। এ ছাড়া কোনো লাভ হবে না। তড়িঘড়ি কোনো যুদ্ধবিরতিতে গেলে তা ইউক্রেনের জন্য উল্টো ক্ষতির কারণ হতে পারে বলে ধারণা অনেকের। ভবিষ্যৎ রুশ হামলা প্রতিহত করার জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিভিন্ন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা চলছে কিয়েভ ও তার পশ্চিমা মিত্রদের মধ্যে। সেখান থেকেই শান্তিরক্ষী মোতায়েনের বিষয়টিও উঠে আসে। প্রায় পুরো ফরাসি সেনাবাহিনীর সমানসংখ্যক সদস্য চেয়ে বসেছেন জেলেনস্কি। ২০২০ সালে ফরাসি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশটির সশস্ত্রবাহিনীর সদস্য সংখ্যা দুই লাখের কিছু উপরে।

 


আরো সংবাদ



premium cement