আমরা অনেক কিছুই জানি, কিন্তু নিজ দেহের অভ্যন্তরের কথা ক'জনেরই বা জানা...
- ওলগা টোকারজুক
- ০৩ জুন ২০১৮, ১৫:৪৩
ওলগা টোকারজুক। তিনি পোল্যান্ডোর একজনর নামকরা লেখক। তার শিল্পকর্মের মাধ্যমেই তিনি এখন সারাবিশ্বে পরিচিতি পেয়েছেন। কেননা, চলতি বছর এ নারী লেখক পেয়েছেন ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ। তিনি এ পুরস্কার পেয়েছেন তার লেখা ‘ফ্লাইটস’ উপন্যাসের জন্য। আর এই প্রথম দেশটির (পোল্যান্ড) কোনো লেখক জয় করলেন সম্মানজনক বা মর্যাদাপূর্ণ এ পুরস্কার।
এখন তিনি একজন বেস্ট সেলার বা শীর্ষ বিক্রির লেখকও। শুধু এবারই নয়, এর আগেও তিনি লাভ করেছেন বেশ কয়েকটি সম্মানজনক পুরস্কার। সম্প্রতি পুরস্কার বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হয় লন্ডনে- ২২ মে ২০১৮। জেনিফা ক্রফট উপন্যাসটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন। পুরস্কারের নিয়ম মোতাবেক এর অর্থমূল্য ৫০ হাজার পাউন্ড, যা ভাগ করে প্রদান করা হবে লেখক টোকারজুক ও অনুবাদক ক্রফটকে।
বিচারসংশ্লিষ্টরা বলেছেন, তিনি এমন সম্মানজনক পুরস্কার পেলেন তার এ সংক্রান্ত সার্বিক গুণাবলী আছে বিধায়। বলা যেতে পারে, তিনি যেমন কল্পনাপ্রবণ তেমনি চমৎকার বা উন্নত প্রাণশক্তির অধিকারী। সব মিলিয়ে তিনি একজন উন্নত সাহিত্যিকমনা বা বোধসম্পন্ন লেখক।
ওলগা টোকারজুক বর্তমানে নারীবাদী লেখক হিসেবেও বিশেষভাবে পরিচিত। তার লেখার পাঠকের সংখ্যাও বহু। তিনি লেখালেখি শুরু করেন কিশোরী বয়স থেকেই। সেই সময়ে টোকারজুকের ভালো লাগত ফ্রয়েডীয় তত্ত্ব। তার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, ওই তত্ত্ব বা লেখা দ্বারা তিনি খুবই প্রভাবিত হয়েছেন। অবশ্য এক সময়ে মানুষ তাকে চিনত মনোবিজ্ঞানী হিসেবে। টোকারজুক বলেন, ‘আমার বেশি ভাল লাগে জ্যোতির্বিদ্যা ও শারীরবিদ্যা। মনে হয় এ কারণেই তার লেখায় এ উভয় বিষয়ের মিশেল বা উপস্থিতি রয়েছে। সে যাই হোক, এখন তিনি কেবলই লেখক হিসেবে বেশি পরিচিত বিশ্বে। তিনি আরো যাদের দ্বারা প্রভাবিত হন তারা হলেন- ডানিলো কিস, মিলান কুন্ডেরা প্রভৃতি উঁচু দরের লেখক।
দ্য বুকস অব জ্যাকব। এটি তার শুধু নামকরাই নয় বরং সাড়া জাগানো মহাকাব্যিক উপন্যাস। এটি প্রকাশ পায় ২০১৪ সালের দিকে। এ দিকে ‘নাইক অ্যাওয়াড’ হচ্ছে পোল্যান্ডের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্য পুরস্কার। তিনি এ পুরস্কার পেয়েছেন ২০০৮ সালে ও ২০১৫ সালে। এ পর্যন্ত তিনি লিখেছেন আটটি উপন্যাস। পাশাপাশি রয়েছে তার ছোটগল্প সঙ্কলন। এর সংখ্যা দু’টি। আর ‘জ্যাকব’স স্ক্রিপচারস’ টোকারজুকের নতুন লেখা উপন্যাস। আগামী বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে এটি প্রকাশিত হওয়ার কথা।
তার পছন্দের পাঠকরা বলছেন, ম্যান বুকারজয়ী ফ্লাইটস উপন্যাসটি এখন দেখা যাবে ঘরে ঘরে। এটি প্রকাশিত হয়েছিল পোলিশ ভাষায় ২০০৮ সালের দিকে। আর ২০১৭ সালে প্রকাশ প্রায় এর ইংরেজি অনুবাদ।
ওলগা তার ফ্লাইটসে মানবদেহের ব্যবচ্ছেদ নিয়ে গল্পে মেতেছেন। টোকারজুক বলেন, ‘এত বড় তালিকায় আমার এ উপন্যাসটি স্থান পাওয়ায় আমি যারপরনাই অভিভূত। আশা করি এটি দ্রুত পৌঁছে যাচ্ছে সারা বিশ্বের পাঠকদের কাছে। এর অনুবাদ হতেও কম সময় লাগেনি। খণ্ড খণ্ড অংশে ভাগ করা হয়েছে উপন্যাসটি। চরিত্রগুলোর সবাই যার যার স্থানে থেকে দ্রুত শেষ করেছে অসম্পূর্ণ কাজ। মনে হয় এসব বিষয় ভালো লেগেছে বিচারকদের কাছে। তারপরও সবকিছু ওপরে রয়েছে পাঠকসমাজ।
পৃথিবীর নানা স্থান ঘুরে বেড়ানোর সময়ই উপন্যাসটি লেখা হয়। লেখায় যে গতি লক্ষ করা যায় সেটা তারই প্রমাণ। এতে আছে প্রাচীনকালের কথা। আবার পুরনো আমলের কথাও রয়েছে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, সময়ের হেরফের বা পার্থক্য মূল্য বিষয় নয়। ফলে একই রকম থেকে যায় জীবনের সঙ্কটগুলো। তবে এতে কল্পনার যে বিষয় রয়েছে তা বলা যেতে পারে বাস্তবতার নিরিখেই। অবশ্য একটা দেয়াল টানা হয়েছে বাস্তবতা ও কল্পনার মধ্যে, যা করা হয়েছে ইচ্ছা করেই।
টোকারজুক বলেন, বর্তমানে মানুষ অভিবাসনে যেমন বিশ্বাসী তেমনি ভ্রমণেও আত্মপ্রত্যয়ী। তা ছাড়া, এখন বিশ্বায়নের যুগ। এমন সময়ে স্থায়ী বা পাকাপোক্ত জীবনের কল্পনা করা যায় না। স্থীর জীবন বলেও তেমন কিছু নেই। এমন প্রমাণ মেলে উক্ত উপন্যাসের নানা স্থানে বা চরিত্রগুলোতে। মোট কথা হলো- কোনোদিক দিয়েই পরিপূর্ণ নয় মানুষের জীবন।
তিনি বলেন, নানা দেশ ভ্রমণের পাশাপাশি আমাকে যেতে হয়েছে বেশ কিছু যাদুঘরে। এর লক্ষ হচ্ছে- শারীরবিদ্যাবিষয়ক নানা গ্রন্থ পড়া ও এ সংক্রান্ত দর্শনীয় বা জিনিসগুলো লক্ষ করা। এমন সময় এসেছে, যখন মৃত্যুকে জয় করতে চায় মানুষ। আর এ জন্য যারপরনাই চেষ্টাও লক্ষ করা যায়। শারীরবিদ্যা বা দেহ ব্যবচ্ছেদ বিদ্যাকে আমরা আমাদের জীবন থেকে আলাদা করতে পারি না। কারণ, ‘আমরা বিশ্বের অনেক কিছু জানি, কিন্তু নিজ দেহের অভ্যন্তরের খবর ক'জনেরই বা জানা’ এমন মন্তব্যও করেছেন এ পোলিশ কথাসাহিত্যক ওলগা টোকারজুক।
- মো: আবদুস সালিম
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা