০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৮ মাঘ ১৪৩১, ১ শাবান ১৪৪৬
`
সচিবালয়ের আগুন

দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা : জনমনে উদ্বেগ নানা প্রশ্ন

আগুন নিভে যাওয়ার পর সচিবালয়ের অবস্থা। - ছবি : নয়া দিগন্ত

সচিবালয়ে আগুনের নথিপত্র পুড়ে যাওয়ার ঘটনায় সংকিত হয়ে পড়েছেন রাজনৈতিক ও সাধারণ মানুষ। গতকাল দিবাগত রাত ১ টা ৫০ পঞ্চাশ মিনিটে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত ঘটে। প্রায় ৬ ঘন্টার এই আগুন নিভাতে গিয়ে সচিবালয়ের মূল ফটকের সামনের রাস্তার ট্রাক চাপায় একজন ফায়ার সার্ভিস কর্মী নিহত হয়েছেন। সারাদিন উদ্বেগ থেকে হাজারো সাধারণ মানুষের ভিড় দেখা গেছে সচিবালয় এলাকায়, সবার চোখে মুখে উদ্বেগ আর প্রশ্নের ছাপ পরিলক্ষিত হয়েছে। অনেকে এটিকে দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা সেটি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা বের হবে বলে বিশ্বাসের কথা বলেছেন।

দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে ক্রাইমসিনের একটি টিম সচিবালয়ে প্রবেশ করে, প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র ভয়াবহ আগুনে পুড়ে যাওয়া ভবন পরিদর্শন করে ফরেনসিক নিয়েছে তারা। পুড়ে যাওয়া সাত নম্বর ভবনের আটতলা থেকে আগুনে পুড়ে যাওয়া মৃত একটি কুকুর পাওয়া গেছে।

ঠাকুরগাঁও এক অনুষ্ঠানে সচিবালয়ের আগুনে পোড়া কুকুরের মরদেহ বলে দেয় এটি একটি ষড়যন্ত্র বলে মন্তব্য করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। সচিবালয়ের আগুন নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘আগুন শুধু আমাদের দুই সহযোদ্ধা আসিফ মাহমুদ ও নাহিদ ইসলামের রুমে লাগানো হয়েছে। সেখানে কুকুরের মরদেহ প্রমাণ করে এটি ষড়যন্ত্র। সচিবালয়ে আমলারা খুনি হাসিনাকে বসিয়ে রেখেছিল। গণঅভ্যুত্থানের আগে কিছু আমলানামক দাস ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় স্লোগান দিয়েছে খুনি হাসিনার পক্ষে। তারা এখনো সচিবালয়ে চাকরি করে। তারা চাকরি করলে সচিবালয় কীভাবে নিরাপদ থাকবে? হয় সাদা নইতো কালো। তাদের চেয়ারে বসিয়ে রাখলে তাদের দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পাওয়া সম্ভব না। সে কারণে এখন অপকর্ম হচ্ছে, দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়ন হচ্ছে।

এর আগে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন যুব ক্রীড়া, ডাক টেলিযোগাযোগ, গণপূর্ত, সমাজকল্যাণ, স্বরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টারা। পরিদর্শনকালে সচিবালয়ে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন তারা। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে নৌবাহিনী, সেনাবাহিনীও। আগুনের ঘটনা তদন্তে কমিটি সাত সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে।

সচিবালয়ের অগ্নিকাণ্ড নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ডক্টর ফয়জুল হক নামে একজন অনলাইন এক্টিভিটিস বলেন, দেশে যত ষড়যন্ত্র চক্রান্তের পেছনে শেখ হাসিনার হাতে রয়েছে। আমরা বারবার সরকারকে বলেছিলাম, স্বৈরাচারের দোসরদের অপসারণ করুন যত সেক্টরে আছে। এদের নিয়ে দেশ চালাতে পারবেন না। এদেরকে অপসারণ করুন। ১৬ বছর ধরে যারা নিয়োগ পেয়েছে, তারা সবাই আওয়ামী লীগের এবং স্বৈরাচারের দোসর। এদেরকে অপসারণ না করলে প্রতিটি জায়গায় ছোবল মারবে। এমন ঘটনা অস্বাভাবিক নয়, এ ঘটনার সাথে আওয়ামী লীগ জড়িত আছে।

ডক্টর কাজী মনির নামে একজন বলেন, এ ঘটনাটি পরিকল্পিত এতে কোনো সন্দেহ নেই । কারণ একসাথে তিন জায়গায় সার্কিট হওয়ার কথা নয়। এক্ষেত্রে ভারত ও শেখ হাসিনার দোসরদের হাত রয়েছে মত প্রকাশ করেন তিনি। তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা বের করারও আহ্বান জানান তিনি।

সচিবালয়ের লাগা আগুন শর্টসার্কিটে নয়, বরং পরিকল্পিতভাবে কেউ হয়তো আগুন লাগিয়েছে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সিনিয়র চীফ পেটি অফিসার মো: আমিনুল ইসলাম। সকালে সচিবালয়ের ভিতরে পরিদর্শন শেষে বেরিয়ে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। আমিনুল ইসলাম বলেন, ভিতরের পরিস্থিতি দেখে ধারণা করছি শটসার্কিট থেকে আগুণ লাগেনি। এখানে দেখা গেছে বিভিন্ন স্থান থেকে আগুনটা লেগেছে বলে আমাদের প্রাথমিক ধারণা।

তিনি বলেন, আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে এখনও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। রাতে সংবাদ পাওয়ার পর আমাদের ফায়ার টিম সচিবালয়ে চলে আসি৷

সচিবালয়ে মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে একটা ভবনের নানান জায়গায় কিভাবে আগুন লাগলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি তো দেখিনি কিভাবে আগুন লেগেছে। তবে আমরা ভিতরের পরিস্থিতি দেখে ধারণা করছি কোনো শটসার্কিট থেকে আগুন লাগেনি। যদি শর্টসার্কিট থেকে আগুন লাগতো তাহলে নানান স্থানে আগুন লাগতো না। কে, কারা বা কিভাবে আগুন লাগলো সেটা সঠিক তথ্য এখনও আমাদের হাতে আসেনি। প্রাথমিকভাবে আমার মনে হয় কেউ পরিকল্পিতভাবে এই কাজটি করেছে।

আজ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক আলোচনা সভায় রিজভী বলেন, চারদিকে বিভিন্ন ঘটনায় আমরা শংকিত, আমরা ভয়ার্ত , ব্যক্তিগত ভয়ার্ত নই, রাষ্ট্র নিয়ে আমরা ভয়ার্ত। আমরা এর আগেও দেখেছি, যখন কোন সচিব, মন্ত্রীর বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিবাদ আসে। তখনই সচিবালার মধ্যে ফাইল গায়েব হয়ে যায়, আগুন ধরে। গতকাল সচিবালয়ে মধ্যরাতে যে আগুন, আমরা কোনো মুখরোচক কথা বলতে চাই না। সচিবালয়ে আগুনে অনেক নথিপত্র পুড়ে গেল। একটি ঘটনা আরেকটি ঘটনাকে সন্দেহ তৈরি করে। গতকালই আমরা সংবাদপত্রে দেখেছি, কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নথি চেয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। এই নথি চাওয়ার পরেই গভীর রাতে আগুন। এটা জনমনে বিরাট প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

এক বিক্ষোভ সমাবেশে ১২ দলীয় জোটের জোট প্রধান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেছেন, সচিবালয়ের আগুনের ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এর পেছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের ছাত্র সমাজ, রাজনৈতিক সমাজ আজ দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছে। সময় এসেছে, জুলাইয়ের চাইতেও কঠিন ও শক্তিশালী জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা। অন্তবর্তীকালীন সরকারকে বলতে চাই, আমরা আপনাদের শত্রু নই। কিন্তু আপনারা যদি জনগণের পালস (অনুভূতি) বুঝতে ব্যর্থ হন, তাহলে ভয়াবহ পরিণতি অপেক্ষা করছে।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল