বইমেলায় ‘বেআইনি’ অনুবাদের বই
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২৩:১৮
অমর একুশে গ্রন্থমেলায় এবারেও বেশ কিছু প্রকাশনী ইংরেজি সাহিত্যের অনুবাদের বই নিয়ে এসেছে। বেশিভাগ ক্ষেত্রেই মূল লেখকের অনুমতির ধার ধারেননি প্রকাশক।
কপিরাইট আইন না মানার কারণে মূল লেখক এই বইগুলো থেকে গ্রন্থস্বত্ত্ব পাচ্ছেন না। বাংলা একাডেমি ও কপিরাইট অফিস মাঝে মধ্যে অভিযান চালালেও এই প্রবণতা বন্ধ হয়নি।
কপিরাইটের অনুমতি নেয়ার ক্ষেত্রে অনুবাদকদের এই অনীহা কেন? কিংবা সমস্যাটা আসলে কোথায়?
অনন্যা প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী মনিরুল হক বলেন, ‘আমরা যে বইগুলো প্রকাশ করি, সেগুলোর কপিরাইট অনুবাদক নিজেই সংগ্রহ করেন। বেশিভাগ ক্ষেত্রে যেটা হয়, লেখকের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা কঠিন হয়ে পড়ে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে লেখক এত বেশি গ্রন্থস্বত্ত্ব দাবি করেন, সেটা পূরণ করা কঠিন হয়ে যায়। আমাদের এখানে একটা ভালো অনুবাদের বই বেশি বিক্রি হলেও হাজার খানেক কপি বিক্রি হয়। এর থেকে তাকে আপনি কত টাকা গ্রন্থস্বত্ত্ব দেবেন? ফলে কপিরাইটের অনুমোদন নেয়ার ক্ষেত্রে অনেকেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।’
এবারের বইমেলায় অনুবাদের কতগুলো বই এসেছে তার কোনো পরিসংখ্যান বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষের কাছে নেই। বইমেলা ঘুরে দেখা গেছে, সন্দেশ প্রকাশনী শুধুই অনুবাদের বই প্রকাশ করছে। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকার মারা গেছেন। এখন প্রকাশনা দেখছেন মিজানুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘এবার এখন পর্যন্ত আমরা মাত্র তিনটি নতুই বই এনেছি।’
সেইগুলোর কপিরাইট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অনুবাদকের কাছে থাকতে পারে।’
তবে কিছু বইয়ের কপিরাইট আছে বলে দাবি করেন তিনি।
বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসের ডেপুটি রেজিস্টার আবুল কাশেম মোহাম্মদ ফজলুল হক বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা টাস্কফোর্সের দু’টি অভিযান চালিয়েছি। আর বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ তিনটি অভিযান চালিয়েছে। কপিরাইট না থাকার কারণে আমরা তিন শতাশিক বই জব্দ করেছি। বইমেলায় অনুবাদের বই প্রকাশের আগে মূল লেখক বা প্রকাশকের অনুমতিপত্রের কপি কপিরাইট অফিসে জমা দেয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু হাতেগোণা কয়েকজন প্রকাশক ছাড়া কেউ এই তা জমা দেন না। এটা আমরা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি।’
কপিরাইট আইন অনুযায়ী, লেখকের মৃত্যুর পরবর্তী ৬০ বছর তার পরিবার গ্রন্থস্বত্ত্ব হিসেবে রয়্যালিটি পায় প্রকাশকের কাছ থেকে। ৬০ বছর পরে সেগুলো পাবলিক প্রপার্টি হয়ে যায়। তখন কেউ যদি সে লেখকের কোনো বই প্রকাশ করতে চান তাতে কোনো বাধা নেই।
বাংলা একাডেমির অনুবাদ শাখার দায়িত্বে আছেন উপ-পরিচালক সায়েরা হাবীব।
তিনি বলেন, ‘বাংলা একাডেমি যে অনুবাদের বইগুলো প্রকাশ করে, সেগুলোর কপিরাইট নিশ্চিত করার পরই প্রকাশ করা হয়। অনুবাদক সেগুলো সংগ্রহ করেন। এবার আমরা বিদেশী কোনো লেখকের বই অনুবাদ করিনি। প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহে আমাদের লেখকদের সাতটি বই আমরা ইংরেজিতে অনুবাদ করেছি। যেগুলো বিদেশীদের কাছে আমরা দিতে পারব।’
কপিরাইট নেয়ায় সমস্যার দিকগুলো সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মূল বাধা লেখকের সাথে যোগাযোগ করা। দ্বিতীয়ত, আমাদের মধ্যে আইন মানার প্রবণতা কম। আর তৃতীয়ত, এমন গ্রন্থস্বত্ত্ব তারা দাবি করেন, সেটা অনেক সময় হয়তো আমাদের প্রকাশকদের পক্ষে পূরণ করা সম্ভব হয় না।’
বইমেলা ঘুরে একাধিক প্রকাশকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অনুবাদের বইয়ের গ্রন্থস্বত্ত্ব যদি লেখককে দিতে হয়, তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নানা নিয়মনীতির মধ্যে যেতে হয়। সেসব নিয়মনীতি সহজ হলে অনুমতি নেয়ার আগ্রহ বাড়তো।
বাংলাদেশ ইন্টেলেকচুয়েল পোপার্টি ফোরামের সিইও মনজুরুর রহমান বলেন, ‘আমাদের দেশে আইন মানার প্রবণতা কম। অনেক প্রকাশক এই আইনই জানেন না। যেমন, কোনো ইংরেজি বই, যেটার অনুবাদ বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজন বা বাংলাদেশে এর আগ্রহ রয়েছে, সেই বইয়ের লেখককে খুঁজে পাওয়া না গেলে কপিরাইট অফিসে অনুমোদনের জন্য আবেদন করা যেতে পারে। কপিরাইট অফিস তাদের অনুমোদন দিতে পারে। এভাবেও কোনো প্রকাশক কখনো আবেদন করেননি। কারণ, তিনি এটা জানেন না। সবচেয়ে বড় কথা হলো, লেখকের অনুমতি ছাড়া অনুবাদ করা, সরাসরি চুরি করার শামিল। কপিরাইট আইনে জেল-জরিমানার বিধান আছে। এটা বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ, এটা কেউ নিতে পারবে না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. নেভিন ফরিদা বলেন, ‘সাহিত্যে অনুবাদ ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে উঠছে। সেখানে এভাবে বিদেশী লেখকদের অনুবাদ বিনাঅনুমতিতে প্রকাশ করা তো অপরাধ। অনুমতিহীন গ্রন্থ প্রকাশ যে আমাদের সাহিত্যকেই অমর্যাদা করে। অনৈতিক কাজটি মানসম্মানও ক্ষুণ্ন করে। মানসম্মত অনুবাদ একেবারেই কম। তারপর বেশি করে অনুবাদের বই আসা উচিত। অনুবাদের বই লেখকের অনুমতি ছাড়া প্রকাশ করা শুধু অন্যায় নয়, এটা বড় অপরাধও।’
সূত্র : ডয়চে ভেলে
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা