২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

ঈশ্বরগঞ্জে উচাখিলা স্কুল অ্যান্ড কলেজ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

ঈশ্বরগঞ্জে উচাখিলা স্কুল অ্যান্ড কলেজ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ - ছবি : নয়া দিগন্ত

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে উচাখিলা উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ এম এ হালিমের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ উঠেছে।

সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বিষয়টি নিয়ে বিদ্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে ছাত্র-ছাত্রীসহ অভিভাবকগণ।

উচাখিলা উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজে ১১ মার্চ ২০০২-এ অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন মোহাম্মদ আবদুল হালিম।
জানা যায়, যোগদানের পর থেকে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি। ইতোপূর্বে তার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে একাধিকবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়। উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও সাবেক এমপি মাহমুদ হাসানের আস্থাভাজন হওয়ায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন অভিভাবকগণ।

কলেজটিতে শিক্ষার্থী রয়েছে দুই হাজার ২০০’র মতো। শিক্ষক কর্মচারী আছেন ৫৬ জন। তার মধ্যে ৪৫ শিক্ষক-কর্মচারীই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে ৫ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়। অদ্যাবধি তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

প্রতিষ্ঠানের শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক মো: আমিনুল হক বলেন, ২০২৩ সালের ১০ আগস্ট শিক্ষামন্ত্রণালয় একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। ওই প্রজ্ঞাপন অনুসারে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের নিয়ে পাঁচটি উপ-কমিটি গঠন করা হয়। এগুলো হচ্ছে অর্থ ও ক্রয়, আভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা, উন্নয়ন সংক্রান্ত , বেতন ফি আদায় ও শিখন অর্জন মূল্যায়ন উপকমিটি। বিশেষ করে অর্থ ও ক্রয় উপকমিটি ও আভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা উপকমিটির সদস্যরা কার্যক্রম শুরু করার পর থেকে অধ্যক্ষের সাথে বিবাদ শুরু হয়।

আমিনুল হক আরো বলেন, অধ্যক্ষ এম এ হালিম অর্থ ও ক্রয় উপ-কমিটির সাথে কোনো আলোচনা না করে প্রতিষ্ঠানে লাখ লাখ টাকা খরচ করে আসছেন। অথচ নগদ ১৫ হাজার টাকার বেশি অর্থ অধ্যক্ষের হাতে রাখার নিয়ম নেই। খরচের জন্য বেশি অর্থের প্রয়োজন পড়লে অর্থ ও ক্রয় উপ-কমিটির অনুমোদন নিতে হবে।

আভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা উপ-কমিটির সদস্য শিক্ষক মো: এমদাদুল হক বলেন, নিরীক্ষার সময় অধ্যক্ষ এম এ হালিমের বিরুদ্ধে ছয় লাখ টাকার বেশি আপত্তি উঠে। কিন্তু আপত্তি নিষ্পত্তি না করে কমিটির সদস্যদের নিরীক্ষা প্রতিবেদন দেয়ার জন্য চাপ দেন অধ্যক্ষ। কিন্তু শিক্ষকেরা এ বিষয়ে প্রতিবাদ করেন।

প্রতিষ্ঠানের কলেজ শাখার শিক্ষক মো: মিজানুর রহমান বলেন, উপ-কমিটি গঠিত হওয়ার পর থেকে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে কমিটিকে উপেক্ষা করার প্রবণতা দেখা দিয়েছে। এতে করে প্রতিষ্ঠানে এক ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। অধ্যক্ষ শিক্ষকদের সাথে খারাপ আচরণ করেন। গত ১৯ অক্টোবর প্রতিষ্ঠানটি সরকারের কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা অনুদান প্রাপ্ত হয়। সেই অনুদানটি সংগ্রহ করার জন্য অধ্যক্ষ ৪০ হাজার টাকা ঘুষ দিয়েছেন বলে শিক্ষকদের জানান। কিন্তু কাকে ঘুষ দিয়েছেন নাম জানতে চাইলেও বলেননি।
এছাড়া অনুদান থেকে শিক্ষক ও গরিব শিক্ষার্থীদের বরাদ্দ বিতরণ করে বাকি তিন লাখ ২৫ হাজার টাকা নিজের পকেটে রেখে দেন বলে অভিযোগ করেন শিক্ষক মো: মিজানুর রহমান।

আরো কয়েকজন শিক্ষকের সাথে কথা বলে জানা যায়, এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে গেলে অধ্যক্ষ সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করা শুরু করেন। এসব আচরণের মধ্যে শিক্ষকদের গুণ্ডা বলে আখ্যায়িত করা, শিক্ষক পরিষদের সভায় উপস্থিত হয়ে শিক্ষকদের দিকে তেড়ে গিয়ে মারমুখি আচরণ করার পাশপাশি নানা ধরনের হুমকি প্রদান করার অভিযোগও রয়েছে অধ্যক্ষ এম এ হালিমের বিরুদ্ধে।

উচাখিলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও কলেজটির দাতা সদস্য আনোয়ারুল হাসান খান সেলিম জানান, ঐতিহ্যবাহী কলেজটির বর্তমান অচলাবস্থার জন্য দায়ী অধ্যক্ষ। তার উপযুক্ত বিচার না হলে কলেজটির ভবিষ্যত অন্ধাকার।

অভিযোগ প্রসঙ্গে অধ্যক্ষ এম এ হালিমের সাথে যোগাযোগ করা হলে ফোনটি তার ছেলে রিসিভ করে এবং তার বাবা কথা বলতে পারবেন না বলে অপারাগতা প্রকাশ করেন।

ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সারমিনা সাত্তার বলেন, দুই-তিনদিন আগে কলেজটির অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আবদুল হালিমেরর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি অভিযোগ জমা হয়েছে। অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখার জন্য একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement