জামালপুরে মাঠে মাঠে দোল খাচ্ছে সোনালী ধান
- খাদেমুল বাবুল, জামালপুর
- ১৫ মে ২০২৪, ১০:৩৪, আপডেট: ১৫ মে ২০২৪, ১৯:১৫
যমুনা-ব্রহ্মপুত্র বিধৌত কৃষি নির্ভর জেলা জামালপুরের মাঠে মাঠে দোল খাচ্ছে সোনালী ধানের শীষ। সোনালী ধানের মাঠের দিকে তাকালেই ভরে উঠে কৃষকের বুক।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে ৪৮ হাজার টন ধান-চাল সংগ্রের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ধান ১২ হাজার ৬০১ টন, সিদ্ধ চাল ৩৪ হাজার ৪১৪ টন, আতপ চাল এক হাজার ৩৪ টন সংগ্রহ করা হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসাণ অধিদফতরের বরাত দিয়ে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো: আসাদুজ্জামান জানান, এ পর্যন্ত ২৮ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। গত সোমবার ইসলামপুর, মেলান্দহ ও বকশীগঞ্জ উপজেলায় সংগ্রহ অভিযানের উদ্বোধন করা হয়েছে।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অফিস সূত্র জানায়, চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে জামালপুর সদর উপজেলায় ধান তিন হাজার ৪৩৩ টন, সিদ্ধ চাল ১৭ হাজার ১১২ টন, আতপ চাল ২৬৪ টন, গম ৫৯ টন, সরিষাবাড়ী ধান এক হাজার ৭৫৬ টন, সিদ্ধ চাল এক হাজার ৪৩৩, আতপ এক হাজার ৪৩৩ টন, দেওয়ানগঞ্জ ধান ৮৪৮ টন, সিদ্ধ চাল দুই হাজার ১৩০ টন, আতপ ৫৩ টন, গম ৫৮ টন, ইসলামপুরে ধান এক হাজার ৬১৯ টন, পাঁচ হাজার ৭৮৭ টন, গম ১১২ টন, মেলান্দহে ধান দুই হাজার ১৬ টন, সিদ্ধ চাল ছয় হাজার ৫২৫ টন, আতপ ৭১৭ টন, গম ৩৮ টন, মাদারগঞ্জ এক হাজার ৫৫৪ টন, সিদ্ধ চাল ৭৭৩ টন এবং বকশীগঞ্জ উপজেলায় ধান এক হাজার ৩৭৫ টন, সিদ্ধ চাল ৬৫৪ টন সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো: আসাদুজ্জামান (ভারপ্রাপ্ত) জানান, প্রতি কেজি ধান ৩২ টাকা, সিদ্ধ চাল ৪৫ টাকা, আতপ চাল ৪৪ টাকা এবং গম প্রতি কেজি ৩৪ টাকা দরে সংগ্রহ করা হবে। আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত এই ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান চলমান থাকবে।
তবে গম সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হওয়ার সম্ভাবনার কথাও জানান এই কর্মকর্তা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জেলায় মোট ২২৯টি চালকল রয়েছে। এর মধ্যে অটোমেটিক ৩৫টি, হাস্কিং ১৭৫টি এবং আতপ চালের আটটি চালকল রয়েছে। এসব মিলের মধ্যে দু’টি আতপ চালকল স্বয়ংক্রিয় এবং ছয়টি আতপ চালকল আংশিক স্বয়ংক্রিয় রয়েছে।
জানা গেছে, খাদ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে চালকল মালিক ও ধানচাল সরবরাহকারীদের ৩০ কেজির বস্তা ৫৫ টাকা ও ৫০ কেজির বস্তা ৯০ টাকায় মূল্যে সরবরাহ করা হবে।
তিনি নয়া দিগন্তকে আরো বলেন, চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূল থাকায় ধান চাষ ভালো হয়েছে। এছাড়া আশা করা হচ্ছে, সরকার ভালো দাম নির্ধারণ করায় সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা শত ভাগ অর্জিত হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, জেলার সাত উপজেলায় চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে এক লাখ ২৯ হাজার ৩৭০ হেক্টর জমিতে রূপসী, হাইব্রিট, কালো বোরোসহ বিভিন্ন জাতের ধান চাষ হয়েছে। এসব ধানের মধ্যে হাইব্রিড ৫০ হাজার ৮০০ হেক্টর, উপশী ৭৮ হাজার ২৩০ এবং স্থানীয় জাতের ২৩০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, হাইব্রিড প্রতি হেক্টর ৪ দশকিম ৯৮ টন, উফশী ৩ দশমিক ৯৯ টন এবং স্থানীয় জাত ১ দশমিক ৯৬ টন।
সূত্র জানায়, জেলায় গত মৌসুমের ১০৯টি কম্বাইন হারভেস্টার মেশিনসহ চলতি মৌসুমে আরো ৩০টি কম্বাইন হারভেস্টারযুক্ত হওয়ায় ১৩৯টি কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন ধানকাটা মাড়াইয়ের কাজ করছে। মেশিনে প্রতি বিঘা জমির ধান তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকায় মাড়াই করছেন কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন মালিকরা। কম্বাইন হারভেস্টার মেশিনে প্রতি বিঘা জমির ধান কাটতে এক ঘণ্টা সময় লাগে।
ইসলামপুর উপজেলার গোয়ালের চর ইউনিয়নের বোলাকীপাড়া গ্রামের প্রান্তিক কৃষক আব্দুল কাদির বলেন, ‘বর্তমানে ধান কাটা কামলা (মজুরের) মূল্য ৭০০ থেকে সাড়ে ৭০০ টাকা।
তিনি বলেন, এক বিঘে জমির ধান কাটা মাড়াই করতে ছয় থেকে সাতজন কামলা লাগে।
তিনি আরো বলেন, মেশিন দিয়ে ধান কাটলে ধান ও খের (খড়) নষ্ট হয়। তাই আমার কামলা দিয়েই ধান কাটতাছি।
জামালপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ জাকিয়া সুলতানা বলেন, দেশে শ্রমিক সঙ্কট ও দ্রুত সময়ে ধান কাটা-মাড়াইয়ের জন্য কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন আমদানি করেছে সরকার।
তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা শত ভাগ অর্জনের আশা করছে কৃষি বিভাগ।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা