২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

ভরাট আর দখলের কবলে ঐতিহাসিক পাথরঘাটা খাল

ভরাট আর দখলের কবলে ঐতিহাসিক পাথরঘাটা খাল - ছবি : নয়া দিগন্ত

জামালপুরের ইসলামপুর পৌর এলাকার ঐতিহাসিক পাথরঘাটা খাল। এটি মূলত পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের একটি শাখা। বিশাল গভীরতার এই খালে ঘাটে অতীতে একসময় ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য আসতো ছোট বড় অসংখ্য পালতোলা নৌকা । ওই সময়ের খরস্রোতা এই খাল প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট নানা প্রতিকূল কর্মকাণ্ডের কারণে নাব্যতা হারিয়ে এখন প্রায় মৃত।

এই খালের পাশেই ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ রেলপথ। কোনো একসময় খালের প্রচণ্ড স্রোতের কারণে ভয়াবহ ভাঙনের মুখে পড়ে ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ রেলপথ। ওই সময় খালের ভাঙন থেকে রেলপথ রক্ষার জন্য খালের গভীর পানি ও পাড়ে ডাম্পিং করা হয় বিশাল বিশাল পাথর। এরপর এই খালের নামকরণ হয় পাথরঘাটা।

পাথরঘাটাকে (ঘাট) কেন্দ্র করে গড়ে উঠে ময়মনসিংহ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় কৃষি পণ্যের হাট ধর্মকুড়া হাট। প্রাকৃতিক মানব সৃষ্ট কর্মকাণ্ডে কালের পরিক্রমা পাথরঘাটা খালের নাব্যতা হারানোর কারণে ঘাটে নৌকা আসা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বিলুপ্ত হতে শুরু করেছে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী ধর্মকুড়া হাট-বাজার ।

এলাকাবাসী জানান, এই ঘাটে ২ হাজার মণ, হাজার মণ, ৫০০ মণসহ অসংখ্য ছোট বড় পালতোলা নৌকা আসতো। জমজমাট ছিল ধর্মকুড়া হাট।

স্থানীয় সাদা খান লোহানী বলেন, চৈত্র মাসেও এই খালে ৮-১০ হাত গভীর পানি থাকতো। চৈত মাসেও নৌকা দিয়ে পারাপার হতে হতো। নানা কারণে বর্তমানে এটি মরে গেছে। সাথে সাথে বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্ত এসে দাড়িয়েছে ধর্মকুড়া হাট।

ভূমি অফিসের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী ছোহরাফ হোসেন বলেন, এই পাথর ঘাটিতে শত শত মানুষের স্মৃতি জড়িয়ে আছে। আমরা এই ঘাটের বড় বড় পাথরে বসে আড্ডা দিছি। বরশি দিয়ে মাছ ধরেছি। ধর্মকুড়া হাটের দিন হাজার হাজার নৌকা আসতো। আমরা ওইসব নৌকায় চড়ে চড়ে খেলা করতাম।

২০০২-০৩ অর্থবছর তৎকালীন সরকারের বিএনপি দলীয় স্থানীয় এমপি সুলতান মাহমুদ বাবু ইসলামপুর পৌর শহরের যানজট নিরসনে মেলান্দহ উপজেলার সীমান্ত চাঙ্গা মোড় থেকে ইসলামপুর উপজেলার সামনে দিয়ে পাথরঘাটা খালের পাড় দিয়ে বেপারীপাড়া (পৌর কবরস্থান) মোড় পর্যন্ত সড়ক ও জনপদের অর্থায়নে সড়ক এবং পাথরঘাটা রেলসেতু সংলগ্ন পাটনি পাড়া এলাকায় একটি সেতু নির্মাণ করেন। এতে ইসলামপুর পৌরশহর যানজট মুক্ত হয়। স্থাপিত হয় জামালপুর-দেওয়ানগঞ্জের মধ্যে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ। এরপর থেকে সড়কের পাশ দিয়ে একের পর এক অবৈধ দখলের কবলে পড়েছে ঐতিহাসিক পাথরঘাটা খালে জমি।

স্থানীয় প্রভাবশালী কতিপয় ব্যক্তি পাথরঘাটা খালের জমি নিজের জমি দাবি করে খালের জমি দখল করে দোকান ও মিল কারখানা স্থাপন করেছে ।

এ ব্যাপারে ইসলামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: সিরাজুল ইসলামের সাথে মোবাইলফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ওইসব জমি রেলের না খালের খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে ।

ইসলামপুর পৌর সভার মেয়র আব্দুল কাদের শেকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পাথরঘাটা খাল একটি শিশু পার্ক করার পরিকল্পনা রয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষের।


আরো সংবাদ



premium cement