২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

ভালুকার এসকিউ কারখানার দু’টি ইউনিটই বন্ধ ঘোষণা

ভালুকার এসকিউ কারখানার দু’টি ইউনিটই বন্ধ ঘোষণা - ছবি : নয়া দিগন্ত

ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার এসকিউ কারখানার সেলসিয়াস নামের আরেক ইউনিট সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। চার দিন আগে বিরিকিনা-২ সাময়িক ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল।

রোববার (২১ জানুয়ারী) থেকে ময়মনসিংহের কলকারখানা অধিদফতরের শ্রম পরিদর্শক (স্বাস্থ্য) এর নির্দেশে সেলসিয়াস ইউনিট সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

প্রশাসন, পুলিশ ও কলকারখানা অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার জামিরদিয়া এলাকার এসকিউ কারখানায় সেলসিয়াস, ফিউস, বিরকিনা-১ ও বিরকিনা-২ নামে চারটি ইউনিট রয়েছে। কারখানায় ডাইং, গার্মেন্টস, সুইংয়ের কাজ করা হয়। চারটি ইউনিটে ২০ হাজারের অধিক শ্রমিক কাজ করেন। এর মধ্যে ৮০ শতাংশই নারী শ্রমিক। গত ১০ জানুয়ারি নারগিস আক্তার (৪৫) ও ১২ জানুয়ারি রিফাত হাসান (৩০) নামের দুই শ্রমিক অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান। পরের দিন শনিবার (১৩ জানুয়ারি) এ বিষয়টি কারখানায় ছড়িয়ে পড়ে। এতে বেশ কয়েকজন শ্রমিকের শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা দেখা দেয়। তখন কারখানার অন্য লোকজন খোঁজ পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ৩২ জন শ্রমিককে শ্রীপুরের মাওনা আল হেরা হাসপাতালে নিয়ে যান। তাদের মধ্যে আটজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করেন রোগীরা।

গত মঙ্গলবার সেলসিয়াস ইউনিটের ১২ জনশ্রমিক অসুস্থ হন। পরে শিউলী আক্তার (৩৬) নামের এক শ্রমিক অসুস্থ হয়ে হাসাপাতালে নেয়ার পথে মৃত্যু হয়। তিনি এসকিউ কারখানার সেলসিয়াস বিভাগে কর্মরত ছিলেন। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে শিউলী আক্তরের ময়না তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। তবে নারগিস আক্তার ও রিফাত হাসানের লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে কারখানা কর্র্তৃপক্ষ।

কারখানায় শ্রমিক অসুস্থতার ঘটনায় ১৩ জানুয়ারি ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসন, সিভিল সার্জন ও শিল্প পুলিশের পক্ষ থেকে আলাদাভাবে তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এই তিন কমিটির সদস্যরা সরেজমিনে পরিদর্শন করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন তারা।

১৭ জানুয়ারি শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কলকারখানা পরিদর্শন অধিদফতরের সেইফ অধিশাখা থেকে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির প্রধান করা হয় যুগ্ম মহাপরিদর্শক বুলবুল আহম্মেদকে। আর সদস্য সচিব করা হয়েছে সহকারী মহাপরিদর্শক (সেইফটি) তাম্মিন হককে।

কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন উপমহাপরিদর্শক (প্রশাসন) মেহেদী হাসান, উপমহাপরিদর্শক (ইন্ডাস্ট্রিয়াল সেফটি ইউনিট) মো: আকিদ-উল-হাসান, সহকারী মহাপরিদর্শক (স্বাস্থ্য) ডা. বিশ্বজিৎ রায়, সহকারী মহাপরিদর্শক (সেফটি) মো: এসএম শাহাজাদ কবির ও শ্রম পরিদর্শক (সাধারণ) মো: আব্দুল্লাহ আল মামুন।

এই কমিটিকে আগামী ১০ কর্মদিবসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (মহাপরিদর্শক) সাইফ উদ্দিন আহমেদ।

শনিবার (২০ জানুয়ারি) বেলা ১১ থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৫টা পর্যন্ত কারখানায় অবস্থান করে বিভিন্ন বিষয়ের খোঁজ নেন ওই কমিটির সদস্যরা। কারখানা থেকে বেড় হয়ে প্রধান ফটকে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন মেহেদী হাসান।

তদন্ত কমিটি কারখানায় অবস্থানের সময়ে সেলসিয়াস ইউনিটে ছয়জন শ্রমিক অসুস্থ হন। এই বিষয়টি কারখানা কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটির নিকট গোপন করেন। রোগী অসুস্থতার তথ্য সাংবাদিকদের কাছ জেনে ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে খোঁজ নিয়ে এর সত্যতা পান শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কলকারখানা পরিদর্শন অধিদফতরের তদন্ত কমিটি। পরে রাতেই এসকিউ কারখানা কর্তৃপক্ষকে সেলসিয়াস বিভাগ সাময়িক বন্ধ রাখার লিখিত নির্দেশ দেন ময়মনসিংহের কলকারখানা অধিদফতরের শ্রম পরিদর্শক (স্বাস্থ্য) মোকছেদুল হাসান।

এসকিউ কারখানার সেলসিয়াস বিভাগ বন্ধের বিষয়টি নিশ্চত করেন ময়মনসিংহের কলকারখানা পরিদর্শন অধিদফতরের উপমহাপরিদর্শক আরিফুজ্জামান। তিনি মোবাইলফোনে বলেন, সেলসিয়াস বিভাগে আবার রোগী অসুস্থ হওয়ায় বিভাগটি সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শ্রমিকদের স্বাস্থ্যের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই এমনটি করা হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement