২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

প্লিজ আমার মাকে বাঁচান, নইলে আমি আর খেলায় ফিরতে পারব না

প্লিজ আমার মাকে বাঁচান, নইলে আমি আর খেলায় ফিরতে পারব না - ছবি : নয়া দিগন্ত

আমার মাকে বাঁচান। কেউ একজন আমার মায়ের পাশে দাঁড়ান। ২০ কোটি মানুষের মাঝে কেউ কি নেই যে আমার মায়ের চিকিৎসা খরচ মিটাতে পারে? প্লিজ আমি সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকব। আমি আর পারছি না। মায়ের কষ্টটা আমার হাড়গুলো সব ভেঙ্গে দিচ্ছে আমি আর খেলতে পারব না। অসুস্থ মায়ের পাশে ডুকরে কেঁদে ওঠে কথাগুলো বলছিলেন তরুণ ফুটবলার বাঁধন (২০)।

বাঁধনের বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার সরিষা ইউনিয়নের এনায়েত নগর গ্রামে। মা বিলকিছ বেগম দীর্ঘদিন যাবৎ কিডনি রোগে ভুগছেন। দুটো কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে তার। এতোদিন ফুটবল খেলার আয় থেকে মায়ের চিকিৎসা চালিয়ে গেলেও করোনা মহামারি সেই পথ বন্ধ করে দেয়ায় বন্ধ হওয়ার পথে মায়ের চিকিৎসাও। ইতিমধ্যে ফুটবল খেলায় সংশ্লিষ্টদের নজর কাড়লেও মায়ের চিকিৎসায় তেমন কোনো সহযোগিতা পাচ্ছেনা বাঁধন।

ওই সময় বাঁধনের মায়ের সাথে কথা বললে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। বাঁচার আকুতি নিয়ে করুণ কণ্ঠে বাঁধনের মা বিলকিছ বেগম বলতে শুরু করেন "আমি বাঁচতে চাই। দেশবাসীর কাছে অনুরোধ, আমাকে আপনারা বাঁচান। আমার তিনটা সন্তান। আমি না থাকলে ওদের দেখার কেউ নেই। আমার খুব আশা ছিলো স্টেডিয়ামে গিয়ে আমার ছেলের ফুটবল খেলা দেখবো। আমি আমার ছেলের খেলা দেখতে চাই।"

বাঁধনের মায়ের এমন করুণ আকুতিতে উপস্থিত জনতার চোখের জল আটকাতে পারেনি কেউ। দীর্ঘ তিন বছর যাবত কিডনীরোগে ভুগছেন তিনি।

ফুটবলার বাঁধনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ছোট বেলা থেকেই ফুটবলের পিছনে দৌড়ঝাঁপ করেছি অনেক। মায়ের স্বপ্ন পূরনের জন্যই ফুটবল খেলাকে খুব আপন করে নিয়েছি। সবসময়ই চেষ্টা করেছি কিভাবে ভালো ফুটবলার হওয়া যায়। মায়ের দোয়া আর চেষ্টার ফসল হিসেবে আমি ময়মনসিংহ জেলা টিমে এবং ১ম বিভাগে বেশ কয়েকটি ক্লাবে খেলতে পেরেছি। ঢাকায় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের অনুর্ধ ১৮ টিম ও সিটি ক্লাবের হয়ে খেলে দর্শকের প্রশংসা পেয়েছি। এভাবেই ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু হয়েছে আমার। বর্তমানে ঢাকার প্রথম বিভাগের একটি দলে ডাক পেয়েও করোনায় স্তব্ধ হয়ে পড়া খেলা আর মায়ের চিকিৎসার ব্যস্ততায় খেলার অনুশীলন বন্ধ রয়েছে।

বাঁধনের এ পর্যন্ত আসার পেছনে রয়েছে মায়ের সহযোগিতার করুণ গল্প। তাই মায়ের এমন অসুস্থতায় তাকে বাঁচানোর আকুতি জানিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে বাঁধন । বাঁধন জানান, অনেকের কাছ থেকে অল্প স্বল্প সহযোগিতা পেয়েছেন, তবে সেটা মায়ের চিকিৎসার জন্যে যথেষ্ট নয়।

বাঁধনের পরিবারে রয়েছে ছোট এক ভাই ও ছোট এক বোন। সংসারে সহযোগিতা করার মতো আর কেউ না থাকায় তার ফুটবল খেলার আয় থেকেই চলে তাদের সংসার। প্রায় তিন বৎসর ধরে বাঁধন তার মাকে নিয়ে হাসপাতালে দৌড়াচ্ছে। বর্তমানে তার মায়ের দুটি কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে। সারা বিশ্বে করোনা ভাইরাসের কারণে সকল কার্যক্রম স্থবির হওয়ার পাশাপশি খেলাধুলা বন্ধ হয়ে পরায় বন্ধ হয়ে গেছে বাঁধনের আয়। এত দিন ফুটবল খেলার আয় থেকে মায়ের চিকিৎসা খরচ চালিয়ে গেলেও করোনা মহামারীর কারণে তা আর পারছেন না বাঁধন। ফলে তার মায়ের অবস্থা দিন দিন আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে। প্রতি সপ্তাহে তিনবার ডায়ালাইসিস করাতে খরচের খাতায় যোগ হয় ১০ হাজার টাকা। এ টাকা জোগাড় করা এখন তার পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাঁধনের মাকে একেবারে সুস্থ করে তুলতে চাইলে প্রয়োজন নতুন কিডনি সংযোজনের। কিডনি প্রতিস্থাপনের ব্যয় বাঁধনের পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তাই মাকে বাঁচাতে সমাজের বিত্তবানদের দিকে তাকিয়ে আছে তরুণ এই ফুটবলার। বাঁধনের মা গাজীপুরের চৌরাস্তায় অবস্থিত কেয়ারহোম ডায়ালাইসিস সেন্টারের অধিনে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement