কালচার শেখানোর নামে জুনিয়রদের অমানুষিক নির্যাতন : অভিযুক্তদের শোকজ
- (এস এম মোজতাহীদ প্লাবন, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়)
- ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬:৪৪
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ১৭তম আবর্তনের সিনিয়রদের মাধ্যমে ১৮তম আবর্তনের শিক্ষার্থীদের র্যাগিংয়ের অভিযোগ উঠেছে।
মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ৩০ জন শিক্ষার্থী র্যাগিংয়ের বিচার চেয়ে প্রক্টর বরাবর একটি অভিযোগ পত্র জমা দেয়।
অভিযোগ পত্রে বলা হয়, আমরা ১৮তম আবর্তনের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। বিভাগের ১৭তম আবর্তনের শিক্ষার্থীরা আমাদেরকে 'চেইন অফ কমান্ড' ও 'ভার্সিটির কালচার' শিখানোর নামে অমানুষিক নির্যাতন করে থাকেন। ম্যানার শিখানোর নামে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আমাদেরকে আটকে রাখা হয়। কারোর অসুস্থতা বা কোনো অসুবিধা বিবেচনা করা হয় না। ছেলেদেরকে রাতে বঙ্গবন্ধু হলের ৪১৬ ও ৮২৪ নম্বর কক্ষে ও জঙ্গল বাড়িতে নিয়ে হেনস্তা করে ফজরের সময় ছাড়া হয়।
অভিযোগ পত্রে আরো বলা হয়, বিকেল ৫টা থেকে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত আমাদের ব্যাচের ৩২ জন শিক্ষার্থীকে ডেকে নিয়ে আমাদের উপর মানসিক অত্যাচার করা হয়। যার ফলে সেখানে উপস্থিত দু’জন মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এরকম মিটিংয়ের আগেও অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। ছেলেদেরকে বেশি অত্যাচার করা হয় শারীরিক ও মানসিকভাবে।
এসব কাজে জড়িত উল্লেখযোগ্য সিনিয়ররা হলেন আশরাফ, মাসুম, ইমরান, জিসান, মারুফ, নিঝুম, তামান্না, ডানা, জীম, ফারিহা, পুনম, অর্পিতা ও লিজা তালুকদার।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা জানায়, আমাদের সিনিয়রদের জেলাসহ নাম মুখস্থ করতে হয়। এমনকি কোনো সিনিয়রের কী পছন্দ তাও মনে রাখতে বলা হয়। জোরপূর্বক ছেলেদেরকে নারী সিনিয়রের নাম্বার দিয়ে বলা হয় প্রপোজ করে কুপ্রস্তাব দিতে। এছাড়া বিভিন্নভাবে মেয়েদেরকে হেনস্তা করা হয়। এমনকি অকথ্য ভাষায় গালাগাল করা হয়। এসব কারণে আমরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। আমাদের সহপাঠী লাইজু একবার এসব বিষয়ের ভিডিও সাংবাদিকদের জানাতে চায়। এই খবর জেনে আমাদের উপর জোর করা হয় যেন আমরা তার সাথে কথা না বলি। তাকে যেন আমরা বয়কট করি। এর জন্য সিনিয়ররা আমাদেরকে চাপ দেয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নারী শিক্ষার্থী জানায়, আমাদের সিনিয়ররা ডেকে রাত ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত আটকে রেখে নানানভাবে মানসিক নির্যাতন করে। দাঁড় করিয়ে অপমান করা হয়। অকথ্য ভাষায় গালাগাল করা হয়। এমনকি বিভিন্ন ইঙ্গিতে আমাদেরকে অসম্মান করা হয়। এক দিন একজন ছেলেকে আমাদের একজনের দিকে ইঙ্গিত করে বলা হয় ‘তুই কি ওর সাথে শুবি নাকি?’।
আরেক নারী শিক্ষার্থী বলেন, আমরা অনেকেই রান্না করে খাই। আমাদের রাত পর্যন্ত আটকে রাখায় খাওয়া-দাওয়াও ঠিক মতো হয় না। এসব বিষয়ে আমরা কাউকে যেন কিছু না জানাই সেজন্য সবসময় বয়কট করে দেয়ার ভয় দেখানো হয়। বলা হয়, বিভাগীয় প্রধান-প্রক্টরদের আমরা পকেটে নিয়ে ঘুরি। তাই আমরা এসব বিষয়ে কাউকে জানানোর সাহস করতে পারিনি। আজকে আমাদের মাঝে চারজন অসুস্থ হয়ে পড়ে। কারোর অসুস্থতার কথা বললে বলা হয়, এগুলো আমরা অজুহাত দেখাই।
এ বিষয়ে সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মাসুদুর রহমান জানায়, বিভাগ থেকে ইতোমধ্যে অভিযুক্তদেরকে কারণ দর্শানোর জন্য বলা হয়েছে। এছাড়া বিভাগ থেকে ভুক্তভোগীদের উত্থাপিত দাবিগুলো বাস্তবায়নে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এমন পরিস্থিতিতে প্রক্টর ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, আমরা রাতে এরকম একটি অভিযোগ পেয়েছি। তবে বিভাগ থেকে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে শিক্ষার্থীরা এসে অভিযোগপত্রটি তুলে নেয়ার জন্য আবেদন জানায়। তবে অভিযুক্তদের প্রক্টর অফিস থেকেও দেয়া হবে কারণ দর্শানোর নোটিশ।
উল্লেখ্য, এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২২ জানুয়ারি সমাজবিজ্ঞান বিভাগের পক্ষ থেকে অভিযুক্ত ১৩ শিক্ষার্থীকে আগামী ৭ কর্মদিবসের মাঝে কেন তাদের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে না সে বিষয়ে লিখিতভাবে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়।