জামালপুরে আ.লীগ নেতার অপকর্ম ও নির্যাতনের বর্ণনা দিলেন ছাত্রলীগ নেতা
- খাদেমুল বাবুল, জামালপুর
- ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৮:৪৯
জামালপুর শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র ছানোয়ার হোসেন ছানুর নির্যাতন থেকে রক্ষা পাননি ছাত্রলীগ নেতাও।
শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে প্রেসক্লাব জামালপুরের সভা কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখত বক্তব্যে নির্যাতনের শিকার ভুক্তভোগী শহর ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক নুর হোসেন আবাহনী বলেন, জোরপূর্বক ভূমি দখলের প্রতিবাদে ফেইসবুকে লাইভ করায় সাবেক মেয়র ছানোয়ার হোসেন ছানু তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে আমাকে হত্যার উদ্দেশে নির্যাতন করেছে। এছাড়া আমার বিরুদ্ধে নিরাপত্তা আইনে মামলা দিয়েছে।
শিক্ষানবিশ আইনজীবী ও ছাত্রলীগের সাবেক এই নেতা বলেন, নির্যাতনের পর আমার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে।
এরই প্রতিবাদে জামালপুরে সন্ত্রাসীর গডফাদার, ভূমিদস্যু শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদ্য অপসারিত পৌর মেয়রের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন ভুক্তভোগী ও তার বাবা-মা ।
ভুক্তভোগী নূর হোসেন আবাহনী জামারপুর শহরতলী পাথালিয়া গুয়াবাড়িয়া এলাকার আব্দুর রশিদের ছেলে।
সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নুর হোসেন আবাহনী সেই বিভীষিকাময় নির্যাতনের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সেদিন ছিল ২০২৩ সালের ২৯ মার্চ ৬ রমজান। জোরপূর্বক মানুষের জমি দখলের প্রতিবাদে ও মেয়র ছানোয়ার হোসেন ছানুকে সর্তক করার উদ্দেশে আমি ফেইসবুকে একটি লাইভ করি। এটাই আমার জীবনের কাল হয়ে দাঁড়ায়।
তিনি আরো বলেন, লাইভ দেখে মেয়র তার লোক দিয়ে আমাকে প্রথমে পৌরসভায় ডেকে নিয়ে যায়। পরে মেয়র আমার হাত ধরেন এবং পিস্তল ঠেকিয়ে গাড়িতে তুলেন। মেয়র ছানু আমার নাকে একটি ঘুষি মারেন। এতে রক্ত দিয়ে আমার সাদা পাঞ্জাবি লাল হয়ে যায়। পরে মেয়রের বাড়ির পাশে একটি ঘরে (টর্চারসেল) নিয়ে হাত-পা বেঁধে নির্মমভাবে নির্যাতন করে। ইফতারের সময় আমাকে শুধু পানি খেতে দেয়। পরে সেখান থেকে মেয়রের বড় ভাই আনোয়ার হোসেন আনু ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রধান তাজুসহ কয়েকজন আমাকে ইটের ভাটায় নিয়ে পুনরায় নির্মমভাবে মারধর ও মাথা ন্যাড়া করে দেয়। এ সময় আমার চোখের ভ্রু ফেলে দেয়া হয়। লোহার রড, হকিস্টিক ও বাঁশের গুড়ালি দিয়ে কয়েক শ’ পিটুনি দেয়। শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে মারধর করে তারা।
তিনি আরো অভিযোগ করেন, আমাকে জবাই করার জন্য প্রস্তুতিও নেয়া হয়। তখন আমি পানি খেতে চাইলে আমাকে পানিও দেয়নি তারা। আমি তখন শুধু আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার বলছিলাম। এ সময় হঠাৎ করে সন্ত্রাসী তাজুর ফোনে কল আসে। তখন আমাকে জবাই না করে মেয়রের মামা হাসানের বাড়িতে নেয়া হয়। সেখানে আমার চার হাত-পা ভেঙ্গেছে কিনা দেখা হয়। এরপর আবারো মারধর করা হয়। পরে পুলিশ ডেকে আমাকে তাদের হাতে তুলে দিতে চায় মেয়র। আমার উপর নির্যাতনের অবস্থা দেখে পুলিশ নিতে চায়নি। কিন্তু জোরপূর্বক তাদের কাছে দেয়া হয়। পরে আমাকে পুলিশের মাধ্যমে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়।
নির্যাতনের শিকার নুর হোসেন আবাহনীর বাবা আব্দুর রশিদ বলেন, মেয়র পৌরসভায় আমার ছেলেকে ডেকে নিয়ে যায়। বাড়িতে নিয়ে মারধর করেছে। পরে মেয়রের বাড়িতে গেলে আমার ছোট ভাতিজাকেও মারধর করে। আমাদের বাড়ি থেকে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়। এরপর হাসপাতালে চিকিৎসা না দিয়ে তাকে জেলখানায় পাঠিয়ে দেয়।
তিনি আরো বলেন, আমাদেরকে নানা ভয়-ভীতি দেখিয়ে জোর করে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জামালপুরের প্রভাবশালী নেতা মির্জা আজমের বাসায় নিয়ে মিমাংসা করায়। কিন্তু আমার ছেলের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাটি প্রত্যাহার করা হয়নি। ছেলে আমার জামিনে জেলখানা থেকে বের হয়। কিন্তু পরে মেয়র মামলায় নারাজি দেয়। মির্জা আজম মিমাংস করে দেয়ার পরেও মামলাটি মেয়র উত্তোলন না করে আমার ছেলেকে হয়রানি করছে। আমি এই সন্ত্রাসী মেয়রের বিচার ও আমার ছেলের বিরুদ্ধে দেয়া মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাই।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা