এলআরবি নাম পরিবর্তনে বাচ্চু পরিবারকে হুমকি, নেপথ্যে কী
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১৬ এপ্রিল ২০১৯, ১৭:৩৫, আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৯, ১৯:০৪
আইয়ুব বাচ্চু নেই। এখন তার গড়া ব্যান্ড দলের কী হবে? এই প্রশ্ন যখন ভক্তদের মনে ঘুরপাক খাচ্ছিল তখনই সামনে আসে এলআরবি’র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ঢাকার একটি রেস্টোরেন্টে গত ৫ এপ্রিল এ নিয়ে একটি আয়োজনও করা হয়েছিল। যেখানে এলআরবির সদস্যরা হাজির হয়েছিলেন বালাম কে সাথে নিয়ে। জানানো হয়, বালামকে নিয়ে এলআরবি নতুনভাবে যাত্রা শুরু করছে, তিনিই এখন থেকে এই ব্যান্ডের নতুন ভোকাল। এই ঘোষণার পর এলআরবি-ভক্ত ও শ্রোতাদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। শামীম আহমেদ তখন বলেন, ‘ব্যান্ডটিকে আমরা চালু রাখতে চেয়েছি। বসের (আইয়ুব বাচ্চু) ভালোবাসা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা। তার সবকিছুই আমাদের সঙ্গে আছে। তিনি আছেন, থাকবেন আমাদের মাঝে।’
তবে পরিবারের সদস্যরা বলছেন অন্য কথা, এলআরবি যে নতুনভাবে গঠন করা হয়েছে, এসবের নাকি কিছুই জানেন না তারা। এমনকি গত কয়েক মাসে এলআরবি নামে বিভিন্নজনকে দিয়ে স্টেজ পারফরম্যান্স করেছে, এ বিষয়টিও ছিল তাদের অজানা। এলআরবি নাম নিয়ে ব্যান্ড এগিয়ে নেয়ার ব্যাপারে পরিবার থেকেও আগেই নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। আইয়ুব বাচ্চুর মেয়ে ফাইরুজ সাফরা জানান, আইয়ুব বাচ্চু তার অবর্তমানে এলআরবি ব্যান্ডের কী হবে, তা নিয়ে দুই সন্তানকে কিছু নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। যার মর্ম কথা হচ্ছে, আইয়ুব বাচ্চু না থাকলে এলআরবিও থাকবে না।
বাচ্চু পরিবার থেকে এরকম সিদ্ধান্ত শুনার পর নতুন নামে এগোনোর সিদ্ধান্ত নেন। এই ঘটনার পর আইয়ুব বাচ্চুর স্ত্রী আর তার মেয়েকে নাকি হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে, এমনটাই দাবি করেছেন ছেলে আহনাফ তাজওয়ার আইয়ুব।
তিনি এখন আছেন কানাডায়। পড়াশোনা করছেন ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায়। সেখান থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আজ মঙ্গলবার দুপুরে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তিনি আরও লিখেছেন, ‘আমার বাবা আমার ব্যক্তিগত সম্পত্তি নন। তিনি আমার বোনেরও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নন। তিনি বাংলাদেশের জাতীয় সম্পদ। ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন। তার গানগুলোর ভেতর দিয়ে তিনি মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন।’
এলআরবি নামটি আর কেউ ব্যবহার করতে পারবে না—এলআরবির প্রধান প্রয়াত ব্যান্ড তারকা আইয়ুব বাচ্চুর পরিবারের এই আপত্তির মুখে ব্যান্ডটির নাম পরিবর্তন করেছেন সদস্যরা। নতুন নাম হয়েছে ‘বালাম অ্যান্ড দ্য লিগ্যাসি’। এই ব্যান্ডের অন্যতম সদস্য মাসুদ গতকাল সোমবার বলেন, ‘এলআরবির প্রাণ পুরুষ আইয়ুব বাচ্চুর প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা আর সম্মান রেখে তাঁর স্মৃতিকে অম্লান রাখতে, আমাদের সবার প্রিয় ব্যান্ডকে বাঁচিয়ে রাখতে এই উদ্যোগ নিয়েছি।’
এদিকে এলআরবির নাম পরিবর্তনের পর তা ভক্তদের মধ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। অনেকেই আইয়ুব বাচ্চুর হাতে গড়া দেশের অন্যতম জনপ্রিয় এই ব্যান্ডের মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকেই সমালোচনা করছেন, সিদ্ধান্তটি আবারও বিবেচনার জন্য আইয়ুব বাচ্চুর পরিবার আর বালাম অ্যান্ড দ্য লিগ্যাসি ব্যান্ডের সদস্যদের অনুরোধ করেছেন। কেউ কেউ এতটাই কষ্ট পেয়েছেন যে যাঁরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁদের নানা ধরনের হুমকি দিয়েছেন। আহনাফ তাজওয়ার লিখেছেন, ‘আমি এ রকম এক হাজার মন্তব্য পড়েছি, যেখানে বলা হয়েছে, আমার বাবা আমার ব্যক্তিগত সম্পত্তি নন, তিনি জাতীয় সম্পদ।’ তিনি আরও লিখেছেন, ‘কিন্তু দিন শেষে তিনি আমার বাবা।’
যারা আইয়ুব বাচ্চুর পরিবারকে সমালোচনা করছেন, তাদের জন্য আহনাফ তাজওয়ার আইয়ুব লিখেছেন, ‘আমার শুভকামনা তাঁদের জন্য, যাঁরা আমার মা, বোন আর আমাকে প্রতিনিয়ত গালমন্দ করে আনন্দ পাচ্ছেন। আপনাদের অভিশাপে কিছু আসে যায় না। আমাদের কষ্ট, আমাদের পাশে আজ বাবা নেই।’
বাবাকে স্মরণ করে আহনাফ তাজওয়ার আইয়ুব লিখেছেন, ‘বাবার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে আমার কাছে এলআরবিরও মৃত্যু ঘটেছে। কিন্তু তার মানে এই না যে বাবার গানগুলো শেষ হয়ে যাবে। আমি কিন্তু তা বলছি না।’
৫ এপ্রিল এলআরবির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর একটি রেস্তোরাঁয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে এলআরবির নতুন লাইনআপ ঘোষণা করা হয়। সেখানে কণ্ঠশিল্পী বালামকে এলআরবির মূল ভোকাল হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। তখন মাসুদ বলেছেন, ‘আমরা বালামকে লাইনআপে ফ্রন্টম্যান হিসেবে গিটার আর ভয়েসে নিয়ে এসেছি।’ আজ আহনাফ তাজওয়ার আইয়ুব লিখেছেন, ‘এই ব্যান্ডে বাবার শূন্যতা কেউ কোনো দিন পূরণ করতে পারবে না।’
আহনাফ তাজওয়ার আইয়ুব এলআরবির সাথে যুক্ত হতে চান? তিনি লিখেছেন, ‘যদি আপনারা ভেবে থাকেন, আমার উদ্দেশ্য আমার বাবার স্থান নেওয়া, তাহলে ভুল করছেন। আমার বাবা যে মাপের মানুষ ছিলেন, আমি যদি তাঁর ১০০ ভাগের এক ভাগও হতে পারতাম, তাহলে নিজেকে নিয়ে গর্ব করতাম। আর শিল্পী বাবার কথা বাদ দিচ্ছি। আমি কোনো দিন তাঁর জায়গা নিতে পারব না।’
সম্প্রতি প্রয়াত আইয়ুব বাচ্চুর ফেসবুক প্রোফাইল হ্যাক করা হয়। আহনাফ তাজওয়ার আইয়ুব অভিযোগ করে বলেন, যাঁরা এই কাজটি করেছেন, অবশ্যই তারা কোনো খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে কাজটি করেছেন। সেখানে সন্তানদের প্রতি আইয়ুব বাচ্চুর দেওয়া অনেকগুলো ভয়েস মেসেজ আছে। বাবার মৃত্যুর পর প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার আগে সেই ভয়েস মেসেজগুলো শোনা হতো। আহনাফ তাজওয়ার আইয়ুব লিখেছেন, ‘বাবার কণ্ঠ শোনার একমাত্র উপায় তাঁরা বন্ধ করে দিয়েছেন।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা