০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৮ মাঘ ১৪৩১, ১ শাবান ১৪৪৬
`

ইইউ অর্থনীতিতে ব্রেক্সিট ও বাণিজ্যযুদ্ধের প্রভাব

-

বিশ্ব অর্থনীতির ঘটনাপ্রবাহে দু’টি বিষয় এখন আলোচনার তুঙ্গে। একটি ব্রেক্সিট বা ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়া। এই প্রক্রিয়া নির্বিঘেœ সম্পন্ন না হওয়ার বিরাট প্রভাব পড়েছে ব্রিটেনের রাজনীতিতে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পদ হারিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। তারপর দায়িত্ব নিয়েছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। তারও পদ টলটলায়মান। এদিকে চীনের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য যুদ্ধে নতুন মাত্রা যোগ করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রে রফতানিকৃত প্রায় দুই হাজার কোটি ডলারের চীনা পণ্যের শুল্ক বৃদ্ধি করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। গত শুক্রবার থেকে তা কার্যকর হয়েছে। চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশে বৃদ্ধি করা হয়েছে। মাছ, হাতব্যাগ, পোশাক, জুতাসহ এ পণ্যগুলোর শুল্ক ১০ থেকে বেড়ে ২৫ শতাংশ হয়েছে বলে জানিয়েছে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে এর জবাব দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে চীন। ফলে এতে করে বিশ্ব অর্থনীতি বড় এক ধাক্কা খেতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
আগামী এক মাসের মধ্যে চীন যদি কোনো বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়, তাহলে দেশটির সব ধরনের পণ্য আমদানিতে শুল্ক বৃদ্ধির হুমকি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। শুক্রবার ওয়াশিংটনে চীনের প্রতিনিধি দলের সাথে আলোচনা চলাকালে এ কথা জানিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
চীনের ২০ হাজার কোটি ডলারের পণ্য আমদানিতে দ্বিতীয় দফা শুল্ক আরোপের ঘোষণার পর বেইজিংকে এ হুঁশিয়ারি দিলো ওয়াশিংটন। বিশ্বের শীর্ষ দুই অর্থনীতির মধ্যে বাণিজ্য আলোচনা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে আসছিল বিশ্ব অর্থবাজার। আলোচনা ইতিবাচক চলাকালে যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারসহ বিশ্বের বিভিন্ন শেয়ারবাজারে চাঙ্গাভাব লক্ষ করা গিয়েছিল। কিন্তু শুক্রবার সর্বশেষ দফা আলোচনায় নীতিনির্ধারণীমূলক অগ্রগতি না আসায় ফের থমকে দাঁড়িয়েছে বাণিজ্য আলোচনা।
গত সপ্তাহে ট্রাম্পের বেশ কয়েকটি টুইটে বাজারে চাঙ্গাভাব দেখা গিয়েছিল। এমনকি শুক্রবার ট্রাম্প এক টুইটে বাণিজ্য আলোচনা ‘খোলামেলা ও গঠনমূলক’ হচ্ছে বলে জানিয়েছিলেন। ওই টুইটে তিনি উল্লেখ করেন, ‘প্রেসিডেন্ট শির (জিনপিং) সাথে আমার সম্পর্ক বেশ মজবুত রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও আলোচনা অব্যাহত থাকবে।’ কিন্তু সমঝোতা প্রক্রিয়ায় জড়িত ছিলেন এমন এক ব্যক্তি জানান, পরবর্তী ধাপের আলোচনা কখন হবে, সে বিষয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।
চীনের উপপ্রধানমন্ত্রী লিয়ু হির নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দলকে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা জানিয়ে দেন, আগামী তিন থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে বেইজিং যদি কোনো বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছতে ব্যর্থ হয়, তাহলে আরো ৩২ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের চীনা পণ্যে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। সূত্রগুলো আরো জানায়, ওয়াশিংটনে দুই দিনব্যাপী চলা বাণিজ্য আলোচনায় উভয়পক্ষ অর্থপূর্ণ সমঝোতায় পৌঁছতে ব্যর্থ হওয়ায় ট্রাম্প প্রশাসনের কাছ থেকে এ হুঁশিয়ারি এসেছে।
শুক্রবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি রবার্ট লাইটহাইজার বলেন, চীনের ৩০ হাজার কোটি ডলারের পণ্য আমদানিতে শুল্ক আরোপের বিস্তারিত পরিকল্পনা আগামী সোমবার জানানো হবে।
এদিকে শুক্রবার চীনের রাষ্ট্রীয় টিভি মাধ্যম সিসিটিভিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে লিয়ু হি জানান, উভয়পক্ষ আলোচনা চালিয়ে যেতে সম্মত রয়েছে, যদিও কিছু সাময়িক প্রতিবন্ধকতা ও ঝামেলার মুখোমুখি হতে হয়েছে। তিনি বেইজিংয়ে পরবর্তী দফা আলোচনা আয়োজনের ব্যাপারে আশা প্রকাশ করেন। আলোচনা ভেঙে গেছে, এ রকম ধারণা উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেন, সমঝোতা প্রক্রিয়া চলাকালে কিছুটা হোঁচট খেতে হয়। এটা অনিবার্য।
আলোচনায় যে কিছুটা জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে, সে বিষয়টি সামনে এনেছেন লিয়ু। তিনি বলেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের স্বার্থ এবং বিশ্বের সব মানুষের স্বার্থ বিবেচনায় আমরা যৌক্তিকভাবে চুক্তি সম্পন্ন করব। কিন্তু চীন কিংবা চীনের জনগণ বীতশ্রদ্ধ নয়। তিনি আরো বলেন, চীন এমন চুক্তি চায়, যা হবে সহযোগিতামূলক এবং যার ভিত্তি হবে সমতা ও মর্যাদা।
এদিকে বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছানোর ব্যাপারে ওয়াশিংটন যেকোনো তাড়াহুড়োর মধ্যে নেই, সে বিষয়টি অন্য একটি টুইটে উল্লেখ করেছেন ট্রাম্প। চীনের পণ্য আমদানিতে আরোপিত অতিরিক্ত শুল্ক থেকে আয় দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষকদের পণ্য ক্রয় করা হবে এবং দরিদ্র দেশগুলোকে আর্থিক সহায়তা হিসেবে পাঠানো হবে। ইউরোপীয় কমিশন (ইসি) সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, মার্কিন-চীন বাণিজ্যযুদ্ধের মাত্রা বৃদ্ধির হুমকি ও ব্রেক্সিট ঘিরে তৈরি অনিশ্চয়তা ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) অর্থনীতিতে ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে।
ইইউর ২০১৯ সালের প্রবৃদ্ধি নিয়ে নিজেদের পূর্বাভাস কমিয়েছে ইসি। সংস্থাটি বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে বৈশ্বিক বাণিজ্যে যে শথগতি তৈরি হয়েছে, তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে এ মহাদেশের ওপর। ইসির নতুন পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি বছর ২৮ দেশের ইইউর জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ১ দশমিক ৪ শতাংশ। এর আগে ১ দশমিক ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিল সংস্থাটি।
বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন ফের আলোচনায় থাকা অবস্থায় চীনা পণ্যে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিলো ট্রাম্প প্রশাসন। চীনা পণ্যের ওপর নতুন করে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণা পরিস্থিতি বেশ উত্তপ্ত করে তুলেছে। মার্কিন-চীন আলোচনা চূড়ান্ত রূপ না পাওয়ায় চীনা পণ্যের ওপর ট্রাম্পের নতুন করে শুল্কারোপের ঘোষণা শুক্রবার থেকে কার্যকর হয়। ট্রাম্পের এ ঘোষণার পর সতর্কবার্তা নিয়ে হাজির হলো ইসি। আগামী দিনে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে জানিয়ে কমিশন সতর্ক করে দিয়ে বলছে, বিশ্বজুড়ে বাণিজ্যযুদ্ধ বৃদ্ধি পেলে ইইউর অর্থনীতি বড় ধাক্কা খেতে পারে। তবে অনেক বিশ্লেষক বলেছিলেন, এ শুল্ক বৃদ্ধিকে আলোচনায় দরকষাকষির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন ট্রাম্প, তাই আদতে এটি কার্যকর হবে না। ট্রাম্পের এ ঘোষণার পর বিশ্বজুড়ে শেয়ারবাজারগুলোয় দরপতন দেখা দেয়। এফটিএসই ১০০-এর পতন হয় ১২০ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৬৩ শতাংশ, ডাও জোনসের পতন হয় ১ দশমিক ৭ শতাংশ বা ৪৪২ পয়েন্ট।


আরো সংবাদ



premium cement
সুনামগঞ্জে ১৭ বছর পর স্বাধীনভাবে জামায়াতের কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত আজ থেকে সেন্টমার্টিনে পর্যটক যাতায়াত বন্ধ কঙ্গোতে বিদ্রোহীদের সাথে সংঘাতে ৫ দিনে নিহত ৭০০ সুস্থ হয়ে সৌদি আরবের উদ্দেশে দুবাই ছেড়েছেন বাবর ঘন কুয়াশায় ফেরি বন্ধের সুযোগে চলে ট্রলার, ঝুঁকি নিয়ে যাত্রী পার টি-টোয়েন্টিতে ধবলধোলাই বাংলাদেশ টঙ্গী ইজতেমায় আরো এক মুসল্লির মৃত্যু যুক্তরাষ্ট্রে ২ দিনের ব্যবধানে আবারো বিমান দুর্ঘটনা, ৬ জনের মৃত্যুর আশঙ্কা টানা শৈত্যপ্রবাহে থমকে গেছে কুড়িগ্রামের শ্রমজীবীদের জনজীবন দুই নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ, অপেক্ষায় ৫ শতাধিক যানবাহন কুড়িগ্রামে আওয়ামী লীগের দুই নেতা গ্রেফতার

সকল