টঙ্গীতে বস্তি উচ্ছেদ আতঙ্কে ছিন্নমূল মানুষ
- টঙ্গী সংবাদদাতা
- ২৪ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০১
টঙ্গীতে বস্তি উচ্ছেদ আতঙ্কে ভুগছেন শত শত ছিন্নমূল মানুষ। বস্তিবাসীর ক্ষতিপূরণের টাকা প্রভাবশালীরা ভাগভাটোয়ারা করে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল শনিবার বিনা নোটিশে স্থানীয় কাঁঠালদিয়া বস্তি উচ্ছেদ শুরু হলে বস্তিবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ও উত্তেজনা দেখা দেয়। খবর পেয়ে সাংবাদিকরা তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর সেলিম মিয়া সাংবাদিকদের প্রতি তেড়ে আসেন।
বস্তিবাসীরা জানান, প্রভাবশালীদের উচ্ছেদের হুমকিতে টঙ্গীর জিনাত মহল্লা বস্তি ও কাঁঠালদিয়া বস্তির ছিন্নমূল পরিবারগুলোর মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। প্রভাবশালীরা বস্তিবাসীর জন্য বরাদ্ধকৃত ক্ষতিপূরণের টাকা ভাগাভাগি করে নিয়ে বর্তমানে ছিন্নমূল পরিবারগুলোকে অন্যায়ভাবে জোরপূর্বক উচ্ছেদের চেষ্টা করছে। একজন একজন করে বস্তির বাসিন্দাদেরকে প্রভাবশালীদের বাসা বা অফিসে ডেকে নিয়ে বস্তি ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার হুমকি দেয়া হচ্ছে। তাদেরকে মালামাল স্থানান্তরের জন্য গাড়ি ভাড়া বাবদ কিছু টাকাও ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে। স্বেচ্ছায় চলে না গেলে হাত-পা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়া হবে বলেও হুমকি দেয়া হচ্ছে। প্রভাবশালীদের এসব হুমকিতে তারা নিরাপত্তহীনতায় ভুগছেন বলে অভিযোগ করেন। কাঁঠালদিয়া বস্তির আবুল হোসেন বলেন, ৪০ বছর ধরে এই বস্তিতে সপরিবারে বাস করছি। এখন আমাদেরকে পুনর্বাসন বা কোনোরূপ ক্ষতিপূরণ দেয়া ছাড়াই উচ্ছেদ করার হুমকি দেয়া হচ্ছে। সরকারের প্রয়োজন হলে জায়গা ছেড়ে দিতে রাজি আছি। কিন্তু আমাদেরকে বিনা নোটিশে ও ক্ষতিপূরণ দেয়া ছাড়াই খোলা আকাশের নিচে নিক্ষেপ করার ষড়যন্ত্র চলছে।
গতকাল শনিবার দুপুরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর সেলিম মিয়ার সহযোগিতায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের লোক পরিচয়ে চারজন ব্যক্তি কাঁঠালদিয়া বস্তির রাজিয়ার ঘর উচ্ছেদ করতে গেলে বস্তিবাসীর মধ্যে আতঙ্গ ও উত্তেজনা দেখা দেয়। খবর পেয়ে স্থানীয় সাংবাদিকরা সংবাদ সংগ্রহের জন্য ঘটনাস্থলে ছুটে যান। এ সময় চারজন লোক রাজিয়ার ঘর অপসারণ করছিলেন। সাংবাদিকরা তাদের পরিচয় জানতে চাইলে তারা শিল্প মন্ত্রণালয়ের লোক বলে দাবি করেন। সাংবাদিকরা বস্তির ঘর উচ্ছেদের ছবি তুলার সময় উক্ত উচ্ছেদকারীরা কৌশলে কেটে পড়েন। পরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর সেলিম মিয়া ঘটনাস্থলে এসে সাংবাদিকদের সাথে চরম দুর্ব্যবহার করেন। তিনি সাংবাদিকদেরকে ঘটনাস্থল থেকে চলে যাওয়ার হুমকি দিয়ে বলেন, ‘পুলিশ কমিশনার, মন্ত্রী ও মেয়রসহ সবাইকে অনুলিপি দিয়েই বস্তি উচ্ছেদ করা হচ্ছে। প্রয়োজনে পুলিশ কমিশনারের কাছে যান, ওসিকে ফোন দেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘যার ঘর ভাঙা হচ্ছে তার স্বামী ও ছেলেকে আমার বাড়িতে ডেকে নিয়ে ক্ষতিপূরণের কিছু টাকা দিয়েছি। ফলে তারা স্বেচ্ছায় ঘর ভাঙতে রাজি হয়েছে।’ তার এই বক্তব্যের সময় রাজিয়া প্রতিবাদ করে বলেন, আমি কোনো টাকা পাইনি; জোরপূর্বক আমার ঘর ভাঙা হচ্ছে। আমি বাধা দিয়েছি; কিন্তু আমার বাধা মানা হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে মোবাইল ফোনে আলোচিত আওয়ামী লীগ নেতা সেলিম মিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এটি শিল্প মন্ত্রণালয়ের জায়গা। এই বস্তিতে এমনো কেউ আছেন, যারা দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ভাড়া পান। তবে ক্ষতিপূরণ ছাড়া কাউকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে না। যাদের ঘর সংখ্যা কম তাদেরকে ২৫ হাজার টাকা করে এবং যাদের ঘর সংখ্যা বেশি তাদেরকে ৪০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিচ্ছি। শিল্প মন্ত্রণালয় কাঁঠালদিয়া বস্তি উচ্ছেদ করে সেখানে গোডাউন বানিয়ে ক্যামিকেল ব্যবসায়ীদের কাছে ভাড়া দেবে বলেও তিনি জানান।
এ দিকে নিশাত মহল্লা বস্তির বাসিন্দারা জানান, একটি শিল্পগোষ্ঠী বস্তির জমি কিনেছে বলে তারা শুনেছেন। ওই শিল্পগোষ্ঠীর পক্ষ হয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বস্তিটি উচ্ছেদের পাঁয়তারা করছেন বলে তারা অভিযোগ করে জানান, টঙ্গী থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মনির আহমেদের অফিসে বস্তির ছিন্নমূল মানুষকে ডেকে নিয়ে বস্তি ছাড়ার মৌখিক নোটিশ দেয়া হচ্ছে। বস্তির ছিন্নমূল পরিবারগুলোর তালিকা প্রস্তুত করে তাদেরকে বস্তি ছাড়ার জন্য চাপ দেয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ নেতা মনির আহমেদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বস্তি উচ্ছেদের কথা স্বীকার করে বলেন, বস্তিতে কোনো ছিন্নমূল মানুষ থাকে না। বস্তিতে যারা বাস করে তারা প্রকৃত বস্তিবাসী নয়; তারা বস্তির ভাড়াটিয়া। একেক জন ৩০-৪০টি ঘর উঠিয়ে ভাড়া দিয়েছে। কেউ কেউ আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত ভাড়া পায়। এরপরও আমরা ৩০টি পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য চিহ্নিত করেছি। তালিকাভুক্তদের ঘরের প্রতি ফিট ৩০০ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে।
বস্তির চা দোকানি রফিকুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এদেশে রোহিঙ্গাদের জায়গা হবে, আমাদের জায়গা হবে না। আমাদের কথা প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত পৌঁছবে না। আমাদেরকে উচ্ছেদ করবেই।’ নিশাত মহল্লার ছিন্নমূল রুহুল আমিন (৫৬) বলেন, এই বস্তিতে আমার জন্ম হয়েছে। আমার জন্মের আরো প্রায় ৩৫ বছর আগে থেকে আমার মা-বাবা এই বস্তিতে ঘর উঠিয়ে বাস করেন। বর্তমানেও আমাদের পরিবারের সব সদস্য এই বস্তিতে বাস করছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা