অবশেষে সুদের হার বাড়ছে সঞ্চয়পত্রের

অবশেষে সঞ্চয়পত্রের সুদহার বাড়ানো হচ্ছে। এই সুদহার বাড়িয়ে বাজারভিত্তিক করা হচ্ছে। এতে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদহার এক-দেড় শতাংশ বাড়বে। বছরের দুইবার সঞ্চয়পত্রের সুদের হার পর্যালোচনা করা হবে। একবার করা হবে জানুয়ারি মাসে এবং অন্যবার করা হবে জুন মাসে। তবে সঞ্চয়পত্রে সাড়ে সাত লাখ টাকা বা এর কম বিনিয়োগকারীরা সুদ পাবেন বেশি। জাতীয় সঞ্চয় স্কিমগুলোর সুদের হার পুনর্নির্ধারণ সংক্রান্ত প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। শিগগিরই এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, যেদিনই সাকুর্লার জারি করা হোক না কেন, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে সঞ্চয়পত্রের সুদহার সংক্রান্ত নতুন নিয়মনীতি প্রযোজ্য হবে। এ ক্ষেত্রে সঞ্চয়পত্রের সুদহার পাঁচ বছর ও দুই বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের গড় সুদের হার (সর্বশেষ ৬ মাসের নিলামের ভিত্তিতে) অনুযায়ী নির্ধারণ করা হবে। তবে সাড়ে সাত লাখ টাকা বা এর কম বিনিয়োগকারীদের সর্বোচ্চ ৫০ বেসিস পর্যন্ত প্রিমিয়াম যোগ হবে। এতে সাড়ে সাত লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগে কিছুটা বেশি সুদ পাওয়া যাবে। জানা গেছে, নতুন পদ্ধতি প্রয়োগ করে জানুয়ারি থেকে আগামী জুন পর্যন্ত সময়ের জন্য সঞ্চয়পত্রের সম্ভাব্য সুদহার নির্ধারণ করেছে অর্থ বিভাগ। সে হিসেবে পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে সাড়ে সাত লাখ টাকা বা এ কম বিনিয়োগকারীদের সুদহার দাঁড়াবে ১২ দশমিক ৪০ শতাংশ। তবে সাড়ে সাত লাখ টাকা বেশি বিনিয়োগকারীদের সুদহার কিছুটা কমে দাঁড়াবে ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ। বর্তমানে সব ক্ষেত্রে সুদহার রয়েছে ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ।
এ ছাড়া তিন বছর মেয়াদি তিন মাস অন্তর মুনাফা সঞ্চয়পত্রে সাড়ে সাত লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ সুদহার পাওয়া যাবে ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ। আর সাড়ে সাত লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে সুদহার হবে ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ। বর্তমানে এ স্কিমে সুদহার হচ্ছে ১১ দশমিক ০৪ শতাংশ। একইভাবে পাঁচ বছর মেয়াদি পেনশনার সঞ্চয়পত্রে সাড়ে সাত লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ সুদহার পাওয়া যাবে ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। আর সাড়ে সাত লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে সুদহার হবে ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ। বর্তমানে এ স্কিমে সুদহার হচ্ছে ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
পাঁচ বছর মেয়াদি পরিবার সঞ্চয়পত্রে সাড়ে সাত লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ সুদহার পাওয়া যাবে ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ। আর সাড়ে সাত লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সুদহার হবে ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ। বর্তমানে এ স্কিমে সুদহার হচ্ছে সব ক্ষেত্রে ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ। এ ছাড়াও তিন বছর মেয়াদি পোস্ট অফিস ফিক্সড ডিপোজিটে সাড়ে সাত লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ সুদ পাওয়া যাবে ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ। আর সাড়ে সাত লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ সুদহার হবে ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ।
প্রধান উপদেষ্টা অনুমোদিত প্রস্তাবনায় বলা হয়, সরকারের নগদ ও ঋণ ব্যবস্থাপনা কমিটি (সিডিএমসি) জুন মাসে জুলাই-ডিসেম্বর সময়কালের জন্য এবং ডিসেম্বর মাসে জানুয়ারি-জুন সময়ের জন্য বিভিন্ন মেয়াদের সঞ্চয়পত্রের সুদের হার, মেয়াদপূর্তির পূর্বে নগদায়নের সুদহার এবং প্রিমিয়ান নির্ধারণ করবে। তবে ওয়েজ আর্নার বন্ড, ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড ও ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড এই সংস্কারের আওতাবহির্ভূত থাকবে।
২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে নিট ঋণ কমিয়েছে। ওই বছর সঞ্চয়পত্র থেকে নেয়া নিট ঋণের পরিমাণ ছিল ঋণাত্মক ৩ হাজার ৩৪৭ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে নিট ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১৮ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা ঋণাত্মক ৭ হাজার ৩১০ কোটি নির্ধারণ করা হয়। তবে চলতি অর্থবছরে তা বাড়িয়ে এ খাত থেকে ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।