২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
সিজিএস সংলাপে বক্তারা

স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্যে প্রেস কাউন্সিলকে ঢেলে সাজাতে হবে

-


স্বাধীন গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতার জন্যে প্রেস কাউন্সিলকে ঢেলে সাজানোর আহ্বান জানিয়েছেন গণমাধ্যম ব্যক্তিরা। পাশাপাশি স্বাধীন সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমের জন্য শক্তিশালী গণতন্ত্র প্রয়োজন।
গতকাল রোববার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য সংলাপ- গণমাধ্যম প্রসঙ্গ’ শীর্ষক সংলাপে তারা এসব কথা বলেন। অন্তর্বর্তী সরকারের করণীয় ও দিকনির্দেশনা নিয়ে ধারাবাহিক সংলাপের অংশ হিসেবে এ সংলাপের আয়োজন করা হয়।
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ বলেন, ‘গণমাধ্যমগুলোকে কিভাবে এগিয়ে নেয়া যায়, স্বাধীনতা ও অধিকার নিশ্চিত করা যায়, সে বিষয়ে কমিশন কাজ করছে। সেইসাথে গণমাধ্যমের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। অংশীজনের সাথে আলোচনা ও মতামতের ভিত্তিতে প্রতিবেদন বা সুপারিশ তৈরি করা হবে।’
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘গত ১৫ বছর গণমাধ্যম চাপের মুখে ছিল। তারা জনগণের কথা বলতে পারেনি। আমাদের নিজেদেরও আত্ম সমালোচনা করতে হবে, আয়নার সামনে দাঁড়াতে হবে। কারণ মিডিয়াগুলো বিচারবহির্ভূত হত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলে তুলে ধরতে পারেনি।’
মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে। তার আগে ইতিহাসের সংস্কার হওয়া উচিত। কারণ সরকার বদলে গেলে ইতিহাস বদলে যায়। সংস্কারের জন্য কমিশনগুলো দিনরাত পরিশ্রম করছে। কিন্তু রাজনৈতিক সরকার এসে সেটা বাস্তবায়ন না করলে কোনো লাভ হবে না। আর লক্ষ্যহীনভাবে সংস্কার করতে চাইলে কোনো কাজে আসবে না।’

সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান বলেন, ‘সাংবাদিকরা আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপির হয়ে যাওয়ার কারণে সাংবাদিকতার বর্তমান দুরবস্থা দেখা দিয়েছে। সরকারের হস্তক্ষেপ যত বাড়বে সংবাদপত্রের স্বকীয়তা তত নষ্ট হবে। ৫ আগস্টের পরও বিভিন্ন এজেন্সির শুভেচ্ছা সফর শুরু হয়েছে বিভিন্ন মিডিয়া হাউজে।’ তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কালাকানুন বাতিল করতে হবে। নির্বাচিত সরকার এলে কালাকানুন বাতিল হবে কি না তা সন্দেহ আছে। তাই অন্তর্বর্তী সরকারের আইসিটি আইন বাতিল করা উচিত।’ গণ সংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘সাংবাদিকদের অধিকার ও আত্মমর্যাদা নিশ্চিত করা ছাড়া সেই ধরনের সাংবাদিক পাবে না, যারা মুখের ওপর প্রশ্ন করতে পারবে। সব দুর্নীতি ও অন্যায়-অনিয়মের জবাব চাইতে পারবে।’
সিনিয়র সাংবাদিক এম এ আজিজ বলেন, ‘গণমাধ্যম স্বাধীন হওয়ার আগে শক্তিশালী গণতন্ত্র দরকার। সংবাদপত্র সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানকে একীভূত করতে হবে। তারপর তার দায়িত্ব দিতে হবে একজন সিনিয়র সাংবাদিককে কোনো আমলা বা রাজনীতিবিদকে নয়।’ তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকদের ইউনিয়ন দুইভাগে বিভক্ত, যা এক করতে হবে, তা না হলে তারা প্রেশারগ্রুপ হিসেবে থাকবে না। অস্বচ্ছ সাংবাদিকদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।’
সূচনা বক্তব্যে সংলাপের সঞ্চালক সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান বলেন, ‘গণতন্ত্র হত্যা ও মানবাধিকার লংঘনের ক্ষেত্রে গণমাধ্যম সহযোগী ভূমিকা পালন করেছে। ডিজিএফআই, এনএসআইসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কিভাবে গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং তা থেকে কিভাবে বের হওয়া যায়, সেটা ঠিক করতে হবে।’
সিজিএসের চেয়ারপারসন মুনিরা খানের সভাপতিত্বে সংলাপে আরো বক্তব্য রাখেন সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. এসএম শামীম রেজা, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মাসুদ কামাল, পারভীন এফ চৌধুরী, জায়মা ইসলাম, ডিজিটাল রাইট বিডির প্রতিষ্ঠাতা মিরাজ আহমেদ চৌধুরী, এএফপির ফ্যাক্টচেকার কদরুদ্দীন শিশির, নাগরিক কমিটির সদস্য তুহিন খান প্রমুখ।

 


আরো সংবাদ



premium cement