বিআইআইটির স্টলের গবেষণাধর্মী বইয়ে ক্রেতাদের নজর
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১৮ মার্চ ২০২৪, ১৩:১৭
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ চত্বরে জমে উঠেছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন আয়োজিত মাসব্যাপী ইসলামী বইমেলা। বিশেষ করে ছুটির দিনে মেলায় বিভিন্ন বয়সী ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিখ্যাত স্কলারদের বইয়ের সমাহার থাকায় বিআইআইটি পাবলিকেশন্স (বিপি)-এর ৪ নম্বর স্টল বইপ্রেমী ক্রেতাদের আলাদা নজর কেড়েছে।
বইমেলা উদ্বোধনের পর বিআইআইটি পাবলিকেশন্স এর স্টল পরিদর্শন করেন মাননীয় ধর্মবিষয়ক মন্ত্রী মো: ফরিদুল হক খান। তিনি বিআইআইটি পাবলিকেশন্স (বিপি) প্রকাশিত ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের ওপর মৌলিক ও গবেষণামূলক গ্রন্থগুলো নেড়েচেড়ে দেখেন এবং বইয়ের কনটেন্ট ও মান নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘স্টলে ভালো ভালো বই রয়েছে।’ তিনি বইয়ের পাঠক-ক্রেতা-বিক্রেতা ও প্রকাশকদের সাথে কথা বলেন এবং মানসম্মত বই প্রকাশের প্রশংসা করেন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ড. মুহাম্মদ বশিরুল আলম বিআইআইটি পাবলিকেশন্স (বিপি)-এর স্টল পরিদর্শন করেন। এ সময়ে তাকে বিআইআইটি পাবলিকেশন্স (বিপি) প্রকাশিত ‘মুহাম্মদ সা. অনন্য হয়ে ওঠার রোল মডেল’ বই উপহার দেয়া হয়। এটি হিশাম আল-আওয়াদির মুহাম্মদ: হাউ হি ক্যান মেক ইউ এক্সট্রাঅর্ডিনারি বইটির বাংলা অনুবাদ; অনুবাদ করেছেন সাংবাদিক মাসুমুর রহমান খলিলী।
পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে আয়োজিত এই বইমেলায় বিআইআইটি পাবলিকেশন্স (বিপি)-এর স্টলে দেখা যায়, বিশ্বের বিভিন্ন বিখ্যাত স্কলারদের বই। এর মধ্যে ইংরেজি ভাষার বইও রয়েছে। আবার পাঠকদের জন্য সহজবোধ্য করতে অনেক বই বাংলায় অনুবাদ করা হয়েছে। বিআইআইটির স্টলে যে বই পাওয়া যায় তাতে ইসলামের বৈশ্বিক ধারণা পাওয়া যায়। এ জন্য এবারের বইমেলায় এ স্টল থেকে অনেকেই বই কিনছেন।
বিশিষ্ট গবেষক ও কবি মুসা আল হাফিজ বলেন, বিআইআইটি পাবলিকেশন্সের বেশিভাগ বই আন্তর্জাতিক মানের। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশিষ্ট লেখক, বুদ্ধিজীবীদের বুদ্ধিবৃত্তিক, গবেষণামূলক, চিন্তার নানা মাত্রার সাথে বাংলাদেশের পাঠকদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে তারা। এভাবে প্রতিনিয়ত পাঠকদের মন জাগানো ও চিন্তাকে সম্মৃদ্ধ করছে। পাঠককে তার নিজের জায়গা থেকে আরো উচুস্তরে উঠিয়ে নেয়ার কাজ করে যাচ্ছে এ প্রতিষ্ঠানটি।
অধ্যাপক ও সম্পাদক ড. জসিম উদ্দিন বলেন, গবেষণামূলক বইয়ের পাঠকদের নজর কেড়েছে বিআইআইটি পাবলিকেশন্স। বইগুলোতে ইসলামের আধুনিক রূপ তুলে ধরা হয়েছে। এতে পাঠকদের পজিটিভ চিন্তার মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। যেসব বিদেশী বই অনুবাদ করছে তা খুবই মানসম্মতভাবে করছে। অনুবাদক, সম্পাদক থেকে শুরু করে চারটি ধাপ অতিক্রম করে বইগুলো বাজারে আসছে। যেসব শিশুতোষ বই আনা হচ্ছে তা শিশুদের পজিটিভ মানসিকতা ও নৈতিকভাবে গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখছে।
ডক্টর সৈয়দ শহীদ আহমাদ বলেন, বিআইআইটি বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চায় গুরুত্ব দিয়ে থাকে। এটি মেধা, মনন, চিন্তা, গবেষণা ও সর্বোপরি ইসলামি গবেষণাকে যুগোপযোগী ও সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। দেশ-বিদেশের গবেষকরা আমাদের সাথে কাজ করছে। গবেষণালদ্ধ মনোগ্রাফ, স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের পাঠ্য সহায়ক বই, বিশ্ববিখ্যাত ইসলামী পণ্ডিতদের লেখা আরবী ও ইংরেজি বইয়ের বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করছি।
গবেষক ও সাংবাদিক আনিসুর রহমান এরশাদ বলেন, ‘আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে ডিজিটাল স্ক্রিন আসক্তি থেকে বাঁচাতে- বই কিনুন, বই পড়ুন, বই কিনতে উৎসাহ দিন, হাতে উপহার হিসেবে বই তুলে দিন। আত্মশুদ্ধির শ্রেষ্ঠ উপায় ভালো বই। ভালো বই নিঃসঙ্গতা দূর করে। আত্মসচেতনতায় অন্যতম সহায়ক বইপড়া। বই শাশ্বত, বই চিরতরুণ। নিরাপদ সঙ্গী বই। আত্মশুদ্ধির পাথেয় বই। অনুপ্রেরণার উৎস বই। বই নির্মল আনন্দ দান করে, মানবিক ও মহৎ করে এবং আত্মোপলব্ধি ঘটায়। মনের কলুষতা দূর করে বই। ন্যায় অন্যায় বোধ প্রখর করে বই। বই জ্ঞান-ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করে, মানসিক চাপ কমায়, হৃদয়কে আলোকিত করে, অভিজ্ঞতার দিগন্ত প্রসারিত করে। পাঠাভ্যাস আত্মকেন্দ্রিকতা দূর করে। জ্ঞানচর্চা স্বার্থপরতা থেকে মুক্তি দেয়।
তিনি আরো বলেন, বই ছাড়া জ্ঞানভিত্তিক সমাজ কল্পনাই করা যায় না। বই প্রয়োজন আলোকিত মানুষ গড়তে, আলোকিত পরিবার গড়তে, আলোকিত সমাজ গড়তে। যে বই পড়ে না তাঁর চেতনা জাগে না, সে সক্রিয় থাকে না, সে সচেতন থাকতে পারে না। বই পড়া দরকার লেখালেখির জন্য, কল্পনার বিস্তৃতি ঘটাতে এবং শব্দভান্ডার সমৃদ্ধি করতে। যে পড়ে না সে দক্ষ হয় না। পাঠ আনন্দ না পেলে ইচ্ছা শক্তি বড় হয় না। বইয়ের সঙ্গে কাটানো সময়ে পবিত্র তৃপ্তি। বই পারে আশাবাদী করে তুলতে। বই পড়ার প্রবণতা কমে যাওয়া কুলক্ষণ। বই পড়ার ঝোঁক কমা স্পষ্ট অবনতি। বই বিমুখতায় কোনো কল্যাণ নেই। বই না পড়ার পরিণতি সুখকর নয়। বই না পড়লে তাঁর প্রভাব নেতিবাচক। বই পড়া জরুরি সুস্থ মানসিকতার জন্য, সৃজনশীলতার বিকাশের জন্য, মননশীলতার বিকাশের জন্য।
শিক্ষক ও প্রশিক্ষক ড. মো: ইবরাহীম খলিল আনোয়ারী বলেন, বিআইআইটি পাবলিকেশন্সের বইয়ে ইসলামের বৈশ্বিক ধারণা পাওয়া যায়। বিশ্বখ্যাত অসংখ্য ইসলামী স্কলারের লিখা অনেক গবেষণাধর্মী বই প্রকাশ করছে। পাঠকদের জন্য সহজবোধ্য করতে অনেক বই বাংলায় অনুবাদ করা হয়েছে। যত দিন যাচ্ছে মানুষের ইসলামী বই ও গবেষণার প্রতি আগ্রহ বাড়ছে।
বিআইআইটি পাবলিকেশন্স (বিপি)-এর বিক্রয় প্রতিনিধিরা জানান, ইসলামী বইমেলার ৪ নম্বর স্টলটিতে বিআইআইটি পাবলিকেশন্স (বিপি)-এর প্রকাশিত বই ছাড়াও একাডেমিয়া পাবলিশিং হাউজ লিমিটেড (এপিএল), বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক ফাইন্যান্স (বিআইআইএফ), বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক থট (বিআইআইটি), সেন্টার ফর এডুকেশন রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং (সিইআরটি) এবং ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক থট (আইআইআইটি) প্রকাশিত বইগুলোও বিশেষ মূল্যছাড়ে পাওয়া যাবে। বইমেলা পুরো রমজান মাসব্যাপী চলবে।
প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সবার জন্য মেলা উন্মুক্ত থাকে।
বিআইআইটির ৪ নম্বর স্টলটিতে রয়েছে শিশুদের উপযোগী অনেক বই, অ্যাকাডেমিক ও গবেষণাধর্মী বই, ইসলামিক ব্যাংকিং ও ফাইন্যান্সের বিশেষ সিরিজ এবং ইসলামিক বই। এছাড়া অমর একুশে বইমেলা ২০২৪ উপলক্ষে প্রকাশিত ১১টি নতুন বইও পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ মূল্যছাড়ে দেশী-বিদেশী বইগুলো পাওয়া যাচ্ছে। সবচেয়ে বেশি চাহিদা থাকা বইয়ের মধ্যে রয়েছে- স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও ইসলাম, প্রিয় নবির স. সাথে একদিন, সুবহে সাদিক: আধ্যাত্মিক ও আত্মোন্নয়ন ভাবনা, দ্য আনচ্যালেঞ্জেবল মিরাকলস অব দ্য কুরআন, দার্শনিক কবি আল্লামা ইকবাল, পয়গম্বর, প্যারেন্টিং (৩ খণ্ড), এসো সুন্দর জীবন গড়ি (৪ খণ্ড), জানার মাঝে অজানা, চল্লিশ হাদিস-গল্প, 40 Hadiths Tales for Kids এর বিশেষ চাহিদা রয়েছে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তি