অর্থের অনটনে ধুঁকছে যেসব খেলা
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১৯ মে ২০২৩, ২৩:২২
গুলিস্তানের ক্রীড়া কমপ্লেক্সে গেলে যে কারো মনে হতে পারে ইলেকট্রনিক্স পণ্যের বড়সড় কোনো বাজার দেখছেন। অথচ সেটা দেশের খেলাধুলার ‘হাব’। একই জায়গায় সন্ধ্যায় গেলে মনে হবে ভবঘুরেদের নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র।
পুঁতিগন্ধময় স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ বলতে যা বোঝায় ঠিক ওই অবস্থা ক্রীড়া কমপ্লেক্সের। স্টেডিয়ামের এই বাহ্যিক চিত্র দেশের ক্রীড়াঙ্গনেও প্রভাব ফেলে।
ছোট ছোট এক-দুই কক্ষের অফিস নিয়ে একেকটি ফেডারেশন, যাদের অনেকের খেলার নিজস্ব মাঠ নেই। অন্যের মাঠ ধার নিয়ে বছরে একবার জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ আয়োজন করা হয়। আন্তর্জাতিক আসরে খেলার সুযোগ পেলে সরকারি অনুদানে এক বা দুই মাসের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করে তাতে অংশগ্রহণ করতে হয়।
ঢাকার কয়েকটি ক্রীড়া ফেডারেশনের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে আর্থিক সঙ্কটে বিপর্যস্ত অবস্থার কথাই জানা গেছে। ‘জাদুর শহর’ ঢাকার ক্রীড়াঙ্গন বলতে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম আর মাওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে কিছু চেয়ার-টেবিলসর্বস্ব এক-দুই কক্ষের ছোট্ট অফিস।
বিশ্বের যেকোনো দেশ সম্পর্ক এখন মুহূর্তেই জানা যায় সার্চ ইঞ্জিনের সহায়তায়। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গন সম্পর্কে সার্চ ইঞ্জিনে ঢুঁ দিলে প্রতি ক্লিকেই থাকবে ক্রিকেট এবং ক্রিকেটারদের কথা। সেখানে বাংলাদেশের ক্রীড়াদূত সাকিব আল হাসান ও মুস্তাফিজুর রহমানরা।
অথচ বাংলাদেশে ৫২টি ক্রীড়া ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশন রয়েছে। বেশিরভাগ খেলাকে নিজস্ব মাঠ বা প্রশিক্ষণের সুযোগ-সুবিধা দিতে পারেনি রাষ্ট্র। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর না আছে আর্থিক সক্ষমতা, না আছে দক্ষ সংগঠক ও প্রশিক্ষক।
ফেডারেশনের কর্মকর্তারা মনে করেন, যুগের পর যুগ ধরে তাদের যে ব্যর্থতার গল্প, তার পেছনে রয়েছে আর্থিক অস্বচ্ছলতা। এ কারণে বছরের পর বছর কাজ করেও দীর্ঘমেয়াদে কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারেন না তারা।
কেন এই অনটন তার খোঁজ করতে গেলে বেরিয়ে আসে সরকারের অপ্রতুল অনুদান, পৃষ্ঠোপোষকতায় অনাগ্রহ ও খেলোয়াড়দের কর্মসংস্থান না থাকার মতো বিষয়গুলো। তবে বিপরীত চিত্রও দেখা যায়। সংগঠকরা নিজেদের গাঁটের পয়সা খরচ করে খেলা চালান এবং পৃষ্ঠপোষকতা করে থাকেন। অনেকটা নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মতোই।
অ্যাথলেটিক্স বিশ্বের বড় খেলাগুলোর একটি হলেও বাংলাদেশে নয়, এই খেলায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পৃষ্ঠপোষকতা করায় বড্ড অনিহা। কালেভদ্রে স্পন্সর পাওয়া গেলেও তা খুব একটা আকর্ষণীয় নয়। অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুর রকিব মন্টু জানান, পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকা দিতে রাজি থাকে পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান। অথচ একটি জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ করতেই খরচ হয় ১৮ থেকে ২০ লাখ টাকা। অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের বার্ষিক আয় এক কোটি টাকার মতো।
সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুর রকিব মন্টু বলেন, ‘আমরা ফেডারেশনের খরচ বাবদ ১৯ লাখ টাকা পাই জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) কাছ থেকে। উন্নয়ন কার্যক্রমের প্রস্তাবনা দেয়া হলে প্রশিক্ষণ। বিদেশের খেলায় অংশগ্রহণে বছরে আরো ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা দেয় এনএসসি। এই টাকা দিয়ে অ্যাথলেটিক্স চালানো যায় না। আন্তর্জাতিক অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশন থেকেও বছরে ৪০ থেকে ৫০ হাজার ডলার পাওয়া যায়। এই টাকা দিয়ে অ্যাথলেটিক্সের কার্যক্রম চলে। খেলার থেকেও বেশি বাজেট লাগে প্রশিক্ষণে ও বিদেশী কোচ নিয়োগ দিতে। স্পন্সর না থাকায় সবকিছু ছোট পরিসরে করতে হয়। এছাড়া আমাদেরকে সাশ্রয়ও করতে হয় ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে। কিছু অর্থ বাঁচিয়ে দুই কোটি টাকার মতো ফান্ড রেখেছি। কারণ, অস্বচ্ছল অ্যাথলেটদের আর্থিক সহযোগিতা দেয়ার প্রয়োজন পড়ে।’
মন্টু দাবি করেন, প্রতিটি টাকার হিসেব রাখতে হয়। সরকারি টাকার হিসাব সরকারকে বুঝিয়ে দিতে হয়। আন্তর্জাতিক অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশন তাদের হিসেব বুঝে নেয় নিজস্ব অডিট প্রক্রিয়ায়। তিনি বলেন, ‘আমরা আয়-ব্যয়ের হিসাব কমিটিতে উপস্থাপন করি। এজিএমএ উপস্থাপন করি। ক্রীড়া পরিষদ থেকে যে টাকা দেয়া হয় তা থেকে ট্যাক্স এবং ভ্যাট ১৫ শতাংশ কেটে রাখে। তারাও হিসেব নেয়। আন্তর্জাতিক ফেডারেশনকে আমরা কার্যক্রমের প্রস্তাবনা দিলে সে আনুযায়ী অনুদান দেয় এবং সেগুলো মনিটরিং করে।'
সে তুলনায় সাঁতার ফেডারেশনের অবস্থা বেশ ভালো। পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠানগুলো ভালো আর্থিক সুবিধা দিয়ে থাকে। সাঁতার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মোল্লা বদরুল সাইফ বলেন, ‘জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে বছরে ২০ থেকে ২২ লাখ টাকা আসে। আমরা স্পন্সর থেকে বাকি টাকা জোগাড় করি। আমাদের বিভিন্ন রকম প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পড়তে হয়। রাষ্ট্রীয় যে কাঠামো সেভাবে আমাদের চলা সম্ভব না। কয়েকটি ভালো মানের স্পন্সর থাকায় সাঁতারের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারি। আমরা যখন ক্যাম্প করি তখন অনেক টাকা লাগে। বছরে আমাদের বিদ্যুৎ বিলই আসে ৩৫ থেকে ৪০ লাখ টাকা। ক্যাম্প চললে তিন কোটি টাকার প্রয়োজন হয়। যেমন আমরা একটা প্রোগ্রাম করেছি ‘সেরা সাঁতারুর খোঁজে বাংলাদেশ।’ এজন্য তিন বছরে ১৪ কোটি টাকা লেগেছে। আমি বলব অন্য ফেডারেশনের থেকে অনেক ভালো আছি।’
পৃষ্ঠপোষকতা থাকার পরও ক্যাম্পের খেলোয়াড়দের হাত খরচ দেয়া হয় সপ্তাহে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা। এর বেশি দেয়া সম্ভব হয় না বলে জানান সাইফ। সাঁতার ফেডারেশনে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় আয়-ব্যয়ের হিসাব অডিট করা হয় বলে দাবি এই কর্মকর্তার। বিশেষ করে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর প্রধান সাঁতার ফেডারেশনের সভাপতি হওয়ায় তাদের দিক থেকেও অডিট হয়।
দলগত খেলা হ্যান্ডবলের খরচ বেশি হলেও বছরের বাজেট দুই কোটি টাকা রাখতে হয়, যার সিংহভাগ আসে স্পন্সর থেকে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে প্রাপ্ত ১৭ থেকে ১৮ লাখ টাকা দিয়ে অফিসের ব্যয় নির্বাহ করা সম্ভব হয় না বলে দাবি বাংলাদেশ হ্যান্ডবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান কোহিনুরের।
তিনি বলেন, ‘এনএসসি ছাড়াও মন্ত্রণালয় থেকে কিছু বরাদ্দ আসে। সে টাকা ছাড় করাতে অনেক ঝক্কি পোহাতে হয়। অনেক সময় পাওয়া যায় না। সব মিলিয়ে সরকারি অনুদান ৩০ লাখ টাকার মতো। যেখানে প্রতি মাসে স্টাফদের বেতন-ভাতা দিতে হয় দুই লাখ টাকার বেশি, সেখানে এই টাকায় কিছুই হয় না। আমরা স্পন্সর থেকে যে টাকা পাই সেগুলো দিয়ে কোনোরকমে খেলা চালাই। আমি যদি ফেডারেশনকে ভালোভাবে চালাতে চাই, তাহলে অনেক টাকা লাগবে। বাংলাদেশের বাস্তবতায় তা সম্ভব নয়। সরকার থেকে আমাদের প্রশিক্ষণের খরচ এবং আবাসন খরচ দিলে হ্যান্ডবল উন্নতি করবে। যদিও সবগুলো ফেডারেশনকে টাকা দিতে পারবে না সরকার। সেটা করতে হলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে খেলা বাছাই করতে হবে।’
টেনিস বিশ্বে দামি এবং জনপ্রিয় খেলা হলেও বাংলাদেশে এ খেলার বিশেষ কদর নেই। কারণ, আন্তর্জাতিক সাফল্য নেই বললে চলে। অথচ এই ফেডারেশনের দারুণ কিছু কোর্ট রয়েছে দেশজুড়ে। ঢাকার রমনা টেনিস কমপ্লেক্স মূল্যবান সম্পদ হলেও এর সুবিধা নিতে পারছে না ফেডারেশন। স্থায়ী আয়ের পথ না থাকায় কর্মকর্তাদের কেউ কেউ নিজেদের গাঁটের টাকা খরচ করে খেলা চালান।
বাংলাদেশ টেনিস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এ এস এম হায়দারের দাবি, বিগত সময়ে আয়-ব্যয়ের কোনো হিসেব উপস্থাপন কারা হতো না। সম্প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর অডিট করে তা সরকারি কর্তৃপক্ষ এবং নির্বাহী কমিটিতে উস্থাপন করা হয়। তার দাবি, ‘আমরা স্পন্সর থেকে টাকা বাঁচিয়ে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালাচ্ছি। বিদেশি কোচ নিয়োগ দিয়েছি। এনএসসিকে অনুরোধ করেছি টেনিসের আয়ের জন্য স্থায়ী একটা অবকাঠামো করে দেয়ার জন্য, যেহেতু আমাদের একটা বড় জায়গা রয়েছে। আমাদের কিছু টুর্নামেন্টে আন্তর্জাতিক সাফল্য পেলে স্পন্সর পাওয়া সহজ হবে। এখন আমাদের খরচ আকাশ-ছোঁয়া। কারণ, দল বিদেশে খেলতে যাচ্ছে। দেশে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট হচ্ছে। এই টাকা কোথায় পাব জানি না। আমার ব্যবসায়ী বন্ধুদের কাছ থেকে স্পন্সর নিয়েছি। আমাদের মন্ত্রী মহোদয় (শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী-ফেডারেশনের সভাপতি) কিছু স্পন্সর আনছেন। এভাবে আমরা চালিয়ে নিচ্ছি।’
অ্যাথলেটিক্স, সাঁতার, টেনিস বা হকি স্পন্সর থেকে আয় করে খেলা চালাতে পারলেও কুস্তি, বক্সিং, জুডো, কারাতে, শরীর গঠন, রাগবি, বাস্কেটবল ও উশুর মতো ‘ভাসমান' ফেডারেশনগুলোর কার্যক্রম চলে নামে মাত্র।
কুস্তি ফেডারেশনের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন আজাদের বক্তব্য হলো, ‘সরকারি অনুদান পাই বছরে পাঁচ লাখ টাকা, যা দিয়ে অফিস খরচ বহন করা হয়। খেলা চালাই কিছু স্পন্সর এনে। শুধু বছরে একটা-দুটা ইভেন্ট করা যায়, এর বেশি কিছু করার সুযোগ থাকে না। কারণ, স্পন্সরদের কাছেও আমাদের গুরুত্ব কম। ভেন্যু নেই, থাকার জায়গা নেই। অন্যের জায়গায় ইভেন্ট করতে হয়। শুধু রেসলিং না, আমাদের মতো যে সকল ফেডারেশন আছে সবগুলো একই রকম। আমরা কোনোরকমে আছি। স্পন্সর হলে খেলা চলে। না পেলে চলে না।’
এত শূন্যতার মাঝেও আশার আলো ছড়ায় কিছু কিছু খেলা। আর্চারি, স্যুটিং তার অন্যতম। দক্ষিণ এশিয়া এবং কমনওয়েলথ গেমস থেকে মাঝে মধ্যে পদক উপহার দেয় দেশকে।
এই জরাজীর্ণ অবস্থার কারণে প্রতিটি ফেডারেশন চায় বিকেএসপিতে তাদের খেলাটি অন্তর্ভুক্ত করতে। ক্রীড়া মন্ত্রণালয় কিছু কিছু খেলা প্রতিষ্ঠানটিতে সংযোজন করেছেও। দেশের এই ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতি বছর ভালো মানের কিছু খেলোয়াড় সৃষ্টি হলেও ধরে রাখা যাচ্ছে না। আন্তর্জাতিক গেমসে অংশগ্রণ করতে গিয়ে উন্নত জীবনের আশায় পালিয়ে অবৈধ শ্রমবাজারে ঢুকে পড়ছেন তারা। ১৯৯৩ সালের সাফ গেমসের দ্রুততম মানব বিমল চন্দ্র তরফদার, স্বর্ণজয়ী সাঁতারু কারার মিজান যেমন অ্যামেরিকায় পালিয়েছিলেন। একক গেমসগুলোতে খেলোয়াড়দের উপার্জনের ভালো ব্যবস্থা না থাকায় সম্ভাবনাময় আন্তর্জাতিক অ্যাথলেটদের উন্নত বিশ্বে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা এখনো থেমে নেই।
বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের বেহাল দশা নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন বাংলাদেশ অলিম্পক অ্যাসোসিয়েশন (বিওএ)-র মিডিয়া কমিটির সদস্যসচিব সিরাজউদ্দিন মোহাম্মদ আলমগীর, ‘আমি সংগঠক হিসেবে ক্রিকেট নিয়ে কাজ করেছি। অন্য খেলায় যখন যুক্ত হলাম, তখন ভিন্ন চিত্র দেখলাম। সম্প্রতি আমি ইসলামি সলিডারিটি গেমসে শেফ দ্য মিশন হয়ে গিয়েছিলাম। ১০০ অ্যাথলেট অংশগ্রহণ করেছিল। ওখানে আমার যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, ক্রিকেট ছাড়া দেশের বাকি ফেডারেশন লক্ষ্যহীন। আধুনিক প্রশিক্ষণ দেয়ার সুযোগ নেই। সুযোগ-সুবিধা বলতে কিছুই নেই। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভাব আছে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ, ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের নজরদারি নেই। অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন চাইলেও কিছু করতে পারে না। শুধু গেমসগুলোতে কিছু আর্থিক বরাদ্দ দিয়ে থাকে।’
তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে যে ইভেন্টগুলোতে কিছু পদক পাই, সেগুলো হাতে গোনা পাঁচ ছয়টি-আর্চারি, স্যুটিং, কারাতে, তাইকোয়ান্দো। কমনওয়েলথ লেভেলেও কিছু সফলতা আছে। বাংলাদেশে প্রশিক্ষণ সুবিধা একেবারে নেই। দেশের কোথাও স্পোর্টস সেন্টার তৈরি করা হয়নি।’
সিরাজ উদ্দিন মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘বিকেএসপিতে সুযোগ-সুবিধা আছে, কিন্তু কোচিং স্টাফ ভালো মানের না। যারা খেলে, তাদের প্রধান লক্ষ্য থাকে জাতীয় পর্যায়ে একটি পদক জিতে বাহিনীগুলোতে চাকরি নেয়া। এরপর তারা শুধু জাতীয় পর্যায়ে পদকের জন্য খেলে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যাওয়ার জন্য যা যা করতে হবে সে চেষ্টা থাকে না। অথচ অনেক প্রতিভা আছে, তাদের আধুনিক সুযোগসুবিধা এবং প্রশিক্ষণ দেয়া গেলে আন্তর্জাতিক ক্রীড়াবিদ পাওয়া যাবে। যারা এশিয়ান মানেও ভালো করতে পারবে।'
তিনি আরো বলেন, ‘ফেডারেশনগুলো চলছে পেটে ভাতে। তারা জাতীয় পর্যায়ের একটি টুর্নামেন্ট করে। বিদেশে খেলা থাকলে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে কিছু টাকা নিয়ে যায়। কোচদের কেউই আন্তর্জাতিক মানের না। বিশ্বের সব দেশ যেখান তিন বছর আগে থেকে একটি গেমসকে টার্গেট করে প্রশিক্ষণ দেয় সেখানে বাংলাদেশে প্রশিক্ষণ শুরু হয় একমাস আগে। ক্রিকেট ছাড়া বাংলাদেশের বাকি কোনো স্পোর্টস ফেডারেশেনের অবকাঠোমা নেই। আর্থিক সক্ষমতাও নেই।'
তিনি মনে করেন, এ পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসার একটাই পথ। ভারতের মতো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কিছু খেলাকে মোটা অঙ্কের টাকা রাষ্ট্রকে দিতে হবে এবং দেশে আন্তর্জাতিক মানের ক্রীড়া অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে।
এদিকে খেলোয়াড়রা মনে করেন ফেডারেশনের কর্মকর্তারা একযোগে স্পন্সরের জন্য কাজ করলে এবং আর্থিক সক্ষমতা বাড়লে বর্তমান অবস্থার পরিবর্তন হবে।
অ্যাথলেট মো: ইসমাইলের মতে, ‘সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী থেকে যারা খেলেন তারা প্রথমে সৈনিক তার পর খেলোয়াড়। এই বাহিনীগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকলে চলবে না। অ্যাথলেটিক্সে উন্নতি করতে হলে ফেডারেশনকে খেলোয়াড় তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে। এজন্য স্পন্সর আনতে হবে। ফেডারেশনের কর্মকর্তাদের বড় বড় কোম্পানিগুলোর কাছে যেতে হবে। কর্মকর্তাদের সবাইকে কাজ করতে হবে স্পন্সর আনার জন্য। তা না হলে আমাদের পিছিয়েই থাকতে হবে, কারণ আর্থিক কারণে ক্যাম্প করাতে পারে না বা খেলোয়াড়দের পুষতে পারে না। ক্রিকেট বোর্ড আগে কেমন ছিল এখন কোথায় গেছে! তাই সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর দিকে তাকিয়ে না থেকে ফেডারেশনের কর্মকর্তাদের একযোগে স্পন্সরের জন্য কাজ করতে হবে।’
বক্সার আল আমিন বলেন, ‘বক্সিং ফেডারেশন যে খেলাগুলো আয়োজন করে তা অ্যামেচার। এখান থেকে পদক প্রাপ্তি ছাড়া কোনো লাভ নেই। ফেডারেশন বক্সিংকে পেশাদার কাঠামো দিতে পারলে ভবিষ্যতে কিছু হতে পারে। তার জন্য টাকা লাগবে। আর টাকা আসবে স্পন্সর থেকে। এখানে যেটা নেই বললেই চলে।'
কারাতে খেলোয়াড় হুমায়রা অন্তরা বলেন,‘বাংলাদেশে কারাতের মতো খেলাকে পেশা হিসেবে নেয়ার সুযোগ নেই। খেলাটা শখ হিসেবে নিলে খেলে আনন্দ পাওয়া যাবে। আমি স্টুডেন্ট, লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলি। বাংলাদেশ দলে খেলার কারণে আনসারে চাকরি পেয়েছি, মাসে মাসে চলার মতো ভাতা পাই।’
সূত্র : ডয়চে ভেলে
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা