২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ভেপিং নিয়ে গবেষণায় নতুন তথ্য

ভেপিং নিয়ে গবেষণায় নতুন তথ্য - ছবি : সংগ্রহ

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকোটিন অ্যান্ড ট্যোবাকো রিসার্চ জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, অস্ট্রেলিয়ায় তামাকের ক্ষতিহ্রাস সহায়ক পণ্য যেমন ভেপ, ই-সিগারেট, ইত্যাদি গ্রাহকের কাছে সুলভ না করায় ২০৩০ সালের মধ্যে ধূমপায়ীর হার পাঁচ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

গবেষণা নিবন্ধে দেখা গেছে, ধূমপানের বিকল্প হিসেবে ভেপিং উৎসাহিত করা হলে ধূমপায়ী পুরুষের হার ৫ শতাংশের নিচে নেমে আসবে ২০৪২ সালের মধ্যে যা ভেপিং ছাড়া ২০৮০ এর মধ্যেও সম্ভব না। ভেপিং এর মাধ্যমে ধূমপায়ী নারীর হার ৫ শতাংশের নিচে নেমে আসবে ২০৩৬ সালের মধ্যে তবে ভেপিংয়ে কঠোর বিধিনিষেধ রাখা হলে ধূমপায়ী নারীর হার ৫ শতাংশের নিচে নেমে আসতে ২০৬৪ পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশেও ভেপিংকে বিধিনিষেধের মধ্যে নিয়ে এলে ধূমপায়ীর সংখ্যা হ্রাস কঠিন হয়ে পড়বে। যে কারণে হুমকির মুখে পড়তে পারে তামাক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাও। এ ব্যাপারে ভয়েস অব ভেপার্স এর মুখপাত্র সুমন জামান বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন। আমরাও তাই চাই। তবে ভেপিংকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে সহজলভ্য না করা হলে অস্ট্রেলিয়ার মত বাংলাদেশেও তামাক নিয়ন্ত্রণের ভিশন পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
ভয়েস অব ভেপার্স (Voice of Vapers Bangladesh) বিগত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের ভেপ এবং ই-সিগারেট ভোক্তাদের একটি সংগঠন হিসাবে কাজ করে চলছে এবং ভেপিংয়ের মাধ্যমে প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপায়ীদের ধূমপান ছাড়তে সাহায্য করছে। বাংলাদেশে ভেপিং যেন আইনি কাঠামোর মাধ্যমে প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপায়ীদের কাছে সহজলভ্য করা হয় এইজন্য তারা একটি পিটিশন তৈরী করেছে যেখানে ৪,০০০-এর অধিক মানুষ সাইনও করেছে।

সাতজন গবেষকের নিবন্ধ 'দ্য অস্ট্রেলিয়া স্মোকিং অ্যান্ড ভেপিং মডেল: দ্য পোটেনশিয়াল ইম্প্যাক্ট অব ইনক্রিসিং অ্যাকসেস টু নিকোটিন ভেপিং প্রোডাক্টস' গেল সেপ্টেম্বরে নিকোটিন অ্যান্ড ট্যোবাকো রিসার্চ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

অস্ট্রেলিয়ায় ২০১২ সাল থেকে ভেপিং পণ্যে কঠোর বিধিনিষেধ ছিল। এরপরও ২০১৯ সালের হিসাবে, দেশটিতে ভেপিং করতেন দুই লাখ মানুষ। তবে ২০২১ সালের অক্টোবরে নীতিমালায় পরিবর্তন আনে অস্ট্রেলিয়ান কর্তৃপক্ষ। চিকিৎসকের পরামর্শপত্রের ভিত্তিতে ভেপিং পণ্য বিক্রির অনুমতি দেয় দেশটি।

গবেষণা নিবন্ধে দেখা গেছে, ভেপিংয়ে কড়াকড়ির কারণে অস্ট্রেলিয়ায় ধূমপায়ী হ্রাসের হার কম। এর বিপরীতে ধূমপানের পরিবর্তে ভেপিং উৎসাহিত করার কারণে নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রে ধূমপায়ী হ্রাসের হার আশাব্যঞ্জক। নিউজিল্যান্ডে প্রাপ্তবয়স্কদের প্রায় ১২ শতাংশ ধূমপায়ী ছিলেন ২০২০ সালে। ২০২১ সালে তা সাড়ে নয় শতাংশে নেমে এসেছে।

গবেষণা নিবন্ধে দেখা গেছে, অস্ট্রেলিয়ায় ২০১৭ সালে প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপায়ী ছিলেন ১৬ শতাংশ। ধূমপানের বিকল্প হিসেবে ভেপিং উৎসাহিত করা হলে ২০২৬ সাল নাগাদ তা ১১ শতাংশে নেমে আসবে। আর ২০৮০ সাল নাগাদ ২ দশমিক ২ শতাংশে নেমে আসবে।

প্রতিবেদনে যুক্তরাজ্যের হেলথ সিকিউরিটি এজেন্সি (পূর্বের পাবলিক হেলথ অব ইংল্যান্ড হিসেবে পরিচিত) এর বরাত দিয়ে বলা হয়, প্রচলিত সিগারেটের তুলনায় ভেপিং ৯৫ শতাংশ নিরাপদ। কারণ প্রচলিত সিগারেটে থাকে তামাকের উচ্চমাত্রার ব্যবহার। আর ভেপিং মূলত নিকোটিননির্ভর।

দা গার্ডিয়ানের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী যুক্তরাজ্যে গত ১০ বছরে প্রায় ২৪ লাখ মানুষ ভেপিংয়ের মাধ্যমে ধূমপান ছাড়তে সক্ষম হয়েছে। ধূমপানের কারণে যুক্তরাজ্যে প্রতিবছর ৭৭ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা যায়। দেশটির উদ্বেগের কারণ এখানেই। যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (এনএইচএস’র) পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ধূমপায়ীদের সিগারেট ছাড়ার জন্য ভেপ, ই-সিগারেট, গামসহ বিভিন্ন বিকল্প ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তি


আরো সংবাদ



premium cement