ইউরোপ-আমেরিকায় ওমিক্রনের ঢেউ, রেকর্ড সংখ্যায় সংক্রমণ
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২৯ ডিসেম্বর ২০২১, ২১:০৩
মহামারী করোনাভাইরাসের শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত এক দিনে সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় কোভিড সংক্রমণ শনাক্তের রেকর্ড হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র এবং কয়েকটি ইউরোপীয় দেশে।
বিশ্ব জুড়ে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের অব্যাহত বিস্তার নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে সোমবার যুক্তরাষ্ট্রে ৪ লাখ ৪০ হাজার নতুন সংক্রমণ শনাক্ত করার তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। অন্য দিকে ফ্রান্স, ইতালি, গ্রীস, পর্তুগাল এবং ইংল্যান্ডেও সোমবার রেকর্ড সংখ্যায় নতুন সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়।
কর্মকর্তারা অবশ্য বলছেন, ক্রিসমাসের ছুটির কারণে কোভিড সংক্রমণের তথ্য আসতে দেরি হচ্ছে, সোমবার রেকর্ড সংখ্যায় নতুন সংক্রমণের তথ্য এসে পৌঁছানোর কারণ হয়তো সেটি।
বিভিন্ন গবেষণায় অবশ্য বলা হচ্ছ, এর আগের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় ওমিক্রন অনেক দুর্বল। কিন্তু তারপরও আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে, যেরকম হারে ওমিক্রন সংক্রমণ ঘটছে, তাতে হাসপাতালগুলো রোগীর চাপে হিমসিম খেতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে, ওমিক্রন এখনো এক মারাত্মক ঝুঁকি।
পোল্যান্ডে বুধবারের হিসেবে এক দিনে কোভিড সংক্রান্ত কারণে ৭৯৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। কোভিডের চতুর্থ ঢেউয়ে সেদেশে এটাই এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর সংখ্যা। যারা মারা গেছে, তাদের তিন চতুর্থাংশেরও বেশি কোনো টিকা নেয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) বলছে, ২৭ ডিসেম্বর সেদেশে পরীক্ষায় কোভিডে শনাক্ত মানুষের সংখ্যা আরো ৪ লাখ ৪১ হাজার ২৭৮ জন বেড়েছে। এটি সিডিসির হিসেবে এ পর্যন্ত এক দিনে সর্বোচ্চ শনাক্তের সংখ্যা।
সিডিসির একটি পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে, মার্কিন গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, গত সাত দিনের গড় হিসেব করলে, প্রতিদিন যত মানুষের কোভিড ধরা পড়েছে, এত বেশি এ বছরের জানুয়ারির পর আর দেখা যায়নি।
তবে সিডিসির একজন মুখপাত্র বলছেন, সংক্রমনের যে সর্বশেষ সংখ্যা অনুমান করা হচ্ছে, তা হয়তো আসল সংক্রমণের চেয়ে বেশি, কারণ ক্রিসমাসের সময় অনেক পরীক্ষা কেন্দ্র বন্ধ ছিল। আর ছুটির কারণে অনেক তথ্য দেরিতে এসে পৌঁছাচ্ছে। নতুন বছরে হয়তো এই সংখ্যা স্থিতিশীল হয়ে আসবে।
যুক্তরাষ্ট্র এখন ইউরোপের আরো কিছু দেশের জন্য ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এর মধ্যে রয়েছে মল্টা, মোলডোভা এবং সুইডেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মঙ্গলবার এক রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, যাতে বলা হয়েছে ইউরোপে ২৬ ডিসেম্বরের আগের সপ্তাহে কোভিডের সব ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ৫৭ শতাংশ বেড়েছে, আর আমেরিকায় বেড়েছে ৩০ শতাংশ।
মঙ্গলবার ফ্রান্স জানিয়েছে, সেদেশে এক দিনে সর্বোচ্চ ১ লাখ ৭৯ হাজার ৮০৭টি নতুন সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। ফ্রান্সের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে, জানুয়ারির শুরুর দিকে ফ্রান্সে দৈনিক সংক্রমণ আড়াই লাখে পৌঁছাতে পারে।
ফ্রান্সের হাসপাতালগুলোর ফেডারেশন বলেছে, সবচেয়ে খারাপ সময়টা হয়তো এখনো আসার বাকি আছে।
আরো কয়েকটি ইউরোপীয় দেশও রেকর্ড সংখ্যায় দৈনিক সংক্রমণের খবর দিয়েছে;
ইতালিতে দৈনিক সংক্রমণ এখন ৭৮ হাজারে পৌঁছেছে। মহামারী শুরুর পর হতে এটি ইতালিতে নতুন রেকর্ড। সেখানে গতকাল মারা গেছে ২০২ জন। এ নিয়ে ইতালিতে এপর্যন্ত মারা গেল ১ লাখ ৩৬ হাজার ৭৫৩ জন।
পর্তুগালে গতকাল রেকর্ড করা হয় ১৭ হাজার ১৭২টি নতুন সংক্রমণ।
গ্রীসে দৈনিক সংক্রমণ ২১ হাজার ছাড়িয়ে যাওয়ার পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী সবাইকে শান্তভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলার আহ্বান জানিয়েছেন।
ইংল্যান্ডের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ গতকাল এক দিনে ১ লাখ ১৭ হাজার নতুন সংক্রমণের হিসেব দিয়েছে, যা এক নতুন রেকর্ড। ক্রিসমাসের কারণে পুরো যুক্তরাজ্যের সংক্রমণের তথ্য পাওয়া যায়নি।
কোভিড পরিস্থিতির কারণে প্যারিস, লন্ডন এবং বার্লিন তাদের নববর্ষ উদযাপনের উৎসব বাতিল করেছে। তবে কোন কোন দেশের সরকার এখনো নতুন করে দেশজুড়ে বিধিনিষেধ জারিতে তেমন উৎসাহী নয়।
ফ্রান্স এবং ইংল্যান্ডে জনগণকে তাদের ‘সাধারণ বোধ-বুদ্ধি’ প্রয়োগ করে চলাফেরা করতে বলা হয়েছে। মাদ্রিদের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের নববর্ষের পরিকল্পনা বহাল আছে, তবে লোকসমাগম সীমিত রেখে তা করা হবে। অন্য দিকে ইতালি ঘরের বাইরের সব অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ করেছে এবং নৈশক্লাবগুলো বন্ধ করে দিয়েছে।
সূত্র : বিবিসি