সারা বিশ্বে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর সাথে লড়তে পারছে না বনের রাজা বাঘ
- আনলাইন ডেস্ক
- ১৭ ডিসেম্বর ২০২১, ২৩:২৫
জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে সারা বিশ্বে বাঘ ও জাগুয়ারের বসতি ধ্বংস হচ্ছে বলে নতুন এক রিপোর্ট বলছে।
গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন, জলবিদ্যুতের জন্য বাঁধ নির্মাণের ফলে বিশেষভাবে এশিয়ার দেশগুলোতে মোট বাঘের সংখ্যার এক পঞ্চমাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কোনো কোনো দেশের অরণ্যে বাঘের সংখ্যা নিশ্চিহ্ন হতে চলছে বলে এ গবেষণার ফলাফল বলছে।
দক্ষিণ আমেরিকার চিতাবাঘ যা জাগুয়ার নামে পরিচিত বাঁধ নির্মাণের ফলে তাদের বিচরণক্ষেত্রের ওপর হুমকি চারগুণ বৃদ্ধি পাবে বলে এই গবেষণার ফলাফল বলছে।
আধুনিক বিশ্ব বাঘের সাথে নির্মম আচরণ করেছে। একটি হিংস্র প্রাণী হিসেবে পরিচিত হলেও গত ১০০ বছরে বাঘের ৯০ শতাংশ আবাসভূমি ধ্বংস হয়েছে।
সম্প্রতি বছরগুলোতে বাঘের সংখ্যা কিছুটা বাড়লেও পরিবেশ সংস্থা আইইউসিএন একে বিপন্ন প্রাণীর তালিকায় রেখেছে। কমতে কমতে সারা বিশ্বে এখন বাঘের মোট সংখ্যা প্রায় ৩,৫০০।
একই ঘটনা ঘটেছে জাগুয়ারের বেলাতেও। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে শুরু করে আর্জেন্টিনা পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকায় বিচরণ করতো জাগুয়ার। তাদের সংখ্যা কমে এখন অর্ধেকে দাঁড়িয়েছে। নতুন এ গবেষণার ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর জন্য বাঘ ও জাগুয়ারের আবাসভূমি ধ্বংস হচ্ছে।
গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন, অন্তত ১০০ জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বাঘ ও জাগুয়ারের বিচরণক্ষেত্রগুলোকে কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলেছে।
অরণ্যের ভেতর নানা ধরনের নির্মাণকাজের জন্য যেসব ক্ষয়-ক্ষতি হয় গবেষকরা তা বিশ্লেষণ করেছেন এবং দেখতে পেয়েছেন, বাঁধের জন্য জলাধার তৈরি করতে গিয়ে বাঘের বিচরণক্ষেত্রের ১৩,০০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা পানিতে ডুবে গেছে।
বাঘের সংখ্যার ওপর এর গুরুত্বপূর্ণ নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে বলে গবেষকরা মনে করছেন।
এ গবেষকদের একজন ইউনিভার্সিটি অফ পোর্তোর অ্যানা ফিলিপা পামেরিম বলেন, ‘বাঁধ নির্মাণের ফলে জমি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় প্রতি পাঁচটি বাঘের একটি তার আবাসভূমি হারিয়েছে। এ আবাসভূমি নষ্ট হওয়ার ফলে সার্বিকভাবে বাঘের সংখ্যা কমেছে।’
চীনের শেনজেনে সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির শিক্ষক ড. লুক গিবসন বলেন, ‘বাঁধ নির্মাণ না করা হলে বাঘের সংখ্যা এখনকার চেয়ে ২০% বেশি হতো। তিনিও এ গবেষণার একজন অংশ।
তিনি বলেন, ‘অনেক নীতিনির্ধারক বিশ্বব্যাপী বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি এমনকি দ্বিগুণ করার লক্ষ্য স্থির করেছেন। তাই এ বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।’
কোনো কোনো দেশে বাঘের জনসংখ্যা নিশ্চিহ্ন হয়েছে। এর পেছনে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প একটি বড় ভূমিকা পালন করেছে বলে গবেষণায় বলা হচ্ছে।
একটু একটু করে বিপন্ন হচ্ছে বাঘ
জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের সময় রাস্তাঘাট তৈরি করতে হয়। এর ফলে যেসব অরণ্য অখণ্ড ছিল তা কেটে টুকরো টুকরো হয়ে যায়।
ড. গিবসন বলেন, উনিশশো আশির দশকে থাইল্যান্ডের চিউ লান প্রকল্পের চারপাশে ১৬৫ বর্গকিলোমিটার এলাকা পানিতে ভাসিয়ে দেয়া হয়। এর মাধ্যমে ছোট-বড় এক শ’ বেশি দ্বীপ সৃষ্টি হয়। এ ঘটনার কিছু দিন পর ওই এলাকা থেকে সব বাঘ পালিয়ে যায়। এর ফলে অরণ্যের একেবারে মাঝখানে একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জলাধার নির্মাণ করা হলে বাঘেরা আর খণ্ড খণ্ড জঙ্গলে আর টিকে থাকতে পারে না।’
জাগুয়ারদের জন্য ঝুঁকিটা আসছে ভবিষ্যতে
বর্তমানে নানা ধরনের নির্মাণের মধ্য দিয়ে জাগুয়ারের ২৫,০০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা ইতোমধ্যেই ধ্বংস হয়েছে।
জাগুয়ার যেসব এলাকায় বিচরণ করে সেখানে বাঁধের সংখ্যা চারগুণ বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এসব বাঁধের অনেকগুলোই তৈরি হবে অ্যামাজনের অরণ্যে। জাগুয়ার চড়ে বেড়ায় এমন এলাকায় ব্রাজিল অন্তত ৩০০টি বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা করছে।
সূত্র : বিবিসি