ছয় মাস পরেও পাওয়া যাচ্ছে করোনার লক্ষণ
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২০ জানুয়ারি ২০২১, ২২:১৬
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বেশিরভাগ রোগীর মধ্যেই অসুস্থ হওয়ার ছয় মাস পরেও অন্তত একটি লক্ষণ পাওয়া গেছে। উহানের একটি গবেষণায় এই তথ্য উঠে আসে।
চিকিৎসকরা ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত সময়ে শনাক্ত হওয়া এবং হাসপাতালে ভর্তি ১ হাজার ৭৩৩ জন রোগীদের পর্যবেক্ষণ করেছেন। ছয় মাস পর, ৭৬ শতাংশ রোগীর মধ্যে অন্তত একটি লক্ষণ ছিল, যেমন, ক্লান্তি বা পেশী দুর্বলতা (৬৩ শতাংশ রোগীর মধ্যে দেখা যায়), ঘুমের অসুবিধা এবং উদ্বেগ বা হতাশা।
যারা মারাত্মকভাবে অসুস্থ ছিলেন, তাদের মধ্যে বেশিরভাগের ফুসফুসের সমস্যা এবং বুকের অস্বাভাবিকতা দেখা গেছে, যা অঙ্গগুলোর ক্ষতি নির্দেশ করতে পারে। অন্যদিকে, কিডনির কোনো সমস্যা না থাকা ১৩ শতাংশ রোগীর পরবর্তীতে কিডনিতে সমস্যা দেখা দিয়েছে।
গবেষকরা শুক্রবার দ্য ল্যানসেট জার্নালে এসব তথ্য জানিয়েছেন। বেইজিংয়ের চীন-জাপান ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের বিন চাও একটি বিবৃতিতে বলেছেন, করোনার কিছু দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব আমরা কেবল বুঝতে শুরু করেছি। আমাদের বিশ্লেষণ থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে বেশিরভাগ রোগী হাসপাতাল ছেড়ে যাওয়ার পরেও ভাইরাসের কিছু প্রভাব নিয়ে বেঁচে থাকেন।
তিনি এসব কথা বলার সময় হাসপাতাল ছেড়ে যাওয়ার পরবর্তী সময়ে যত্ন নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
এদিকে, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া করোনা রোগীদের চিকিত্সার জন্য পরীক্ষামূলকভাবে ইন্টারফেরনের কোনো সীমাবদ্ধতা নাও থাকতে পারে, যা নিয়ে গবেষকরা শঙ্কিত ছিলেন। ইন্টারফেরনের একটি সম্ভাব্য সমস্যা হল, এটি এসিই২ নামক একটি প্রোটিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, যা নতুন করোনাভাইরাসটি কোষের প্রবেশদ্বার হিসেবে ব্যবহার করে।
টেস্ট টিউব পরীক্ষায় গবেষকরা এমন কোষগুলো পর্যবেক্ষণ করেছেন যা নাক থেকে ফুসফুস পর্যন্ত পথজুড়ে অবস্থান করে এবং তারা আবিষ্কার করেছেন যে প্রকৃতপক্ষে এসিই২-এর দুটি রূপ রয়েছে। এর মধ্যে একটি হল সুপরিচিত রূপটি, এবং অন্যটি একটি সংক্ষিপ্ত রূপ, যার মধ্যে ভাইরাসের ব্যবহৃত প্রবেশপথটি নেই।
ইন্টারফেরন এসিই২-এর এই সংক্ষিপ্ত রূপটির বৃদ্ধি ঘটায়, তবে অন্যটির নয়। যার অর্থ, এটি ভাইরাসের জন্য প্রবেশেপথ সৃষ্টি করে না। সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. জেন লুকাস বলেন, আমরা এসিই২-এর একটি নতুন রূপ আবিষ্কার করতে পেরে উত্তেজিত হয়েছিলাম। আমরা বিশ্বাস করি, করোনার সংক্রমণ পরিচালনার জন্য এর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব থাকতে পারে।
সিনেয়ারজেন পিএলসি-এর শেষ-পর্যায়ের একটি ইন্টারফেরন পরীক্ষা চলমান রয়েছে।
গবেষকরা বলেছেন, রোগীদের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে ডাক্তারদের সহায়তা করার জন্য নাক এবং গলার পিছনে প্রাপ্ত সোয়াব নমুনায় পাওয়া ভাইরাল লোডের চেয়ে লালায় পাওয়া নতুন করোনভাইরাসটির পরিমাণ আরো বেশি কার্যকর হতে পারে।
তারা ২৬ জন হালকা অসুস্থ করোনাভাইরাসের রোগীকে পর্যবেক্ষণ করেছেন। পাশাপাশি ১৫৪ হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগী, যাদের মধ্যে ৬৩ জন গুরুতরভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন এবং ২৩ জন মৃত্যুবরণ করেছেন।
এছাড়াও, ১০৮ জন অসংক্রমিত ব্যক্তিদের নিয়েও গবেষণা করেছেন তারা। নাক থেকে সংগৃহীত ভাইরাল লোড নয় বরং লালা ভাইরাসজনিত নমুনা বয়স এবং লিঙ্গের মতো করোনাভাইরাসের ঝুঁকির সঙ্গে এবং ইমিউন সিস্টেমের প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত।
গুরুতর অসুস্থতা ও মৃত্যুর পূর্বাভাস দেয়ার ক্ষেত্রেও নেসোফেরেঞ্জিয়াল ভাইরাল লোডের তুলনায় লালা ভাইরাল লোড বেশি কার্যকর, গবেষকরা বুধবার এই তথ্য জানিয়েছেন।
১৭ জানুয়ারি ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের আকিকো ইওয়াসাকি এক টুইট বার্তায় ব্যাখ্যা করেন, লালাতে শ্বাস-প্রশ্বাসের জীবাণু রয়েছে যা শরীরের প্রতিরক্ষামূলক প্রক্রিয়া দ্বারা ফুসফুস থেকে পরিষ্কার করা হয়। ফলস্বরূপ, লালা ভাইরাল লোডটি প্রদর্শন করে যে ভাইরাসটি শুধুমাত্র নাক ও গলার পিছনেই নয় বরং শ্বাসনালীর মাধ্যমে নাক থেকে ফুসফুস পর্যন্ত সমগ্র অঞ্চলে নিজের প্রতিলিপি তৈরি করে।
সূত্র: আহরাম অনলাইন